নিভৃতকে নিয়ে হসপিটালে আজ ৩দিন।

in আমার বাংলা ব্লগ6 months ago

♥️আসসালামুআলাইকুম♥️

আমি @bristy1, আমার বাংলা ব্লগ এর একজন সদস্য। আর আমার এই প্রিয় কমিউনিটির প্রিয় বন্ধুগণ, আশা করি সবাই ভালো আছেন।মনটা একদম ভালো নেই।তবুও সবার সুস্থতা কামনা করে আমার আজকের এই পোস্ট শুরু করলাম।

20240105_120852.jpg

গত ৩ দিন আগের ঘটনা। সেদিন ২য় বারের মত ডাক্তার দেখাবো বলে ভেবে রেখেছিলাম।আর সেজন্য আমরা দুপুরের দিকে খাওয়া দাওয়া করে বের হয়ে গিয়েছিলাম।কারণ ঐ যে বলেছিলাম দুপুর বেলায় ডাক্তার আসে।যাইহোক ডাক্তারের কাছে আসার পর ডাক্তারকে দেখালাম।বাবুকে দেখে তিনি কয়েকটা ওষুধ দিয়েছেন। আর বমির জন্য সিরাপ দিয়েছিল। যদি সিরাপে কাজ না করে তাহলে ইঞ্জেকশন দিতে হবে ৭দিনে ৩টি করে।এক্ষেত্রে তার লুজ মোশন যদি না কমে তাহলে তাকে স্যালাইন দিতে হবে।আর ওকে হসপিটালে ভর্তি করাতে হবে যদি ওষুধে কাজ না করে।

20240103_171659.jpg

যদিও খাওয়ার স্যালাইন হিসেবে ওর-স্যালাইন অথবা রাইস স্যালাইন দিয়েছিল।কিন্তু নিভৃত কোনোটাই খায় না। রাইস স্যালাইন দিলেই বমি করে ফেলে দেয়। আর যেকোনো খাবার বা ওষুধও খেতে পারতেছিল না।তাই ডাক্তার দেখানোর পরপরই আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম ওকে তখনই ভর্তি করিয়ে দেব।কারণ আগের দিন একবার ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খাওয়ানোর পরও যেন ওর সব অসুস্থতা বেড়ে গিয়েছিল।আর অনেক কাতর হয়ে গিয়েছে বিধায় আর বাড়িতে নেয়ার সাহস করি নি। যদি আবার কোনো সমস্যা হয়ে যায়।

20240105_120838.jpg

যাইহোক প্রথমত তাকে ভর্তি করিয়ে দিলাম।যাবতীয় প্রসেসিং করেছিল আমার হাজব্যন্ড। এরপর আমরা দোতলার একটা রুমে চলে যাই। সেখানে যাওয়ার পর প্রথমে নিভৃতকে ওষুধ খাওয়ানো হলো। সে সাথে সাথেই বমি করে দিয়েছিল। তারপর শুরু করল কান্নাকাটি । সে কোনোভাবেই বাকি ওষুধ খাবে না। যাইহোক কিছুক্ষণ পর নার্স এলো। এসেই বলছিল ওষুধ খাওয়াতে এত কান্নাকাটি করলে ও কিভাবে সুস্থ হবে। তখন আমরা নার্সকে বললাম, ও যদি ওষুধ খেত তাহলে তো ডাক্তারের কাছে নিয়ে আসা লাগতো না।

20240105_200021.jpg

যাইহোক পরে আমরা জিজ্ঞেস করলাম, ওকে স্যালাইন দিতে হবে কিনা। তখন বলল যে ডাক্তার তো লিখে নি স্যালাইনের কথা। আর যেহেতু ওষুধ দিয়েছে একরাত অপেক্ষায় করে দেখুন যদি কোনো উন্নতি না হয় তবে স্যালাইন দিতেই হবে। সেজন্যই প্রথমদিন আর রাত ওষুধের উপরেই ছিল। এদিকে প্যাম্পাস একটা পরালেই কিছুক্ষণ পর সেটা নষ্ট করে পেলে।সারারাত ধরে ৮/১০টা প্যাম্পাস নষ্ট করেছে। যদিও বিকেলের পর আর বমি করেনি।শুধুমাত্র পানি গিয়েছে লুজ মোশনে।এভাবে সকাল পর্যন্ত লুজ মোশনের কোনো উন্নতি নেই।আর বাবু তো একদম কাতর হয়ে গিয়েছিল।তাই সিদ্ধান্ত নিলাম স্যালাইন দিতেই হবে নাহলে ও আরো বেশি কাতর হয়ে যাবে।

20240105_200029.jpg

তাই সেদিন আবার ডাক্তারকে দেখালাম।তিনি স্যালাইন দিতেই বলেছেন সাথে কিছু ইনজেকশন দিয়েছে। আর নিভৃতকে তো কোনোভাবেই জাগ্রত অবস্থায় স্যালাইন দেয়া যাবে না। প্রথমত ক্যানোলা লাগাতে হয়েছে। আলাদা একটা প্রোটেক্টেড রুমে ওকে নিয়ে যায়। সাথে আমি গিয়েছিলাম, কারণ নার্সদের পক্ষে ওকে হ্যান্ডেল করা সম্ভব হচ্ছিলো না।আমি গিয়েছিলাম ঠিকই কিন্তু ওর ক্যানোলা লাগানোর দিকে আমি তাকাতেই পারছিলাম না। সে যেভাবে কান্নাকাটি শুরু করেছে সেটা দেখেই তো খুব কষ্ট লাগছিল। একটা বাচ্চাকে এভাবে ধরে বেঁধে ক্যানোলা লাগানো আসলেই কষ্টকর।ক্যানোলা লাগিয়েই সেখানে একটা ইঞ্জেকশন দেয়া হয়েছিল।

20240104_185056.jpg

তারপর ওকে বাইরে এনে অনেক কষ্টে ঘুম পাড়িয়ে দিলাম।এরপর স্যালাইন লাগানো হয়েছিল। কারণ ঘুমানো ছাড়া ওকে ধরাও সম্ভব হচ্ছিলো না।এভাবে প্রায় ১ঘন্টার মত ও ঘুমিয়েছে এবং স্যালাইন চলেছে। আর বাকি ওষুধগুলোতো খুব জোর করেই খাওয়াতে হয়েছে। খাওয়া দাওয়া কিছুই করে না। যা যা ও আগে খেতে চাইতো সবই ওকে দিয়েছি, কিন্তু ও মুখই খুলেনি খাওয়ার জন্য।খাওয়ার তো আর জোর করে খাওয়ানো যায়না।
20240104_192507.jpg
যাইহোক এভাবেই আমরা আজ পর্যন্ত হসপিটালে আছি। গত ৩দিন যাবৎ হসপিটালে ভর্তি।যেন এক বন্ধী কারাগার।কিন্তু কি করা যাবে, ছেলের জন্য তো থাকতেই হবে।তবে একটা দিক থেকে অনেক শুকরিয়া, সেই প্রথম দিন থেকেই আমার ছোট বোন আমাদের সাথে হসপিটালে রয়েছে। তাই আমার চিন্তাও অনেকটা কম ছিল।ও না থাকলে আমার অনেক কষ্ট হয়ে যেত সবকিছু সামলাতে।তবে বিপদে পড়লে মানুষ চেনা যায় ভালোভাবে,সেটা আরো ভালো করে প্রমাণ পেলাম।এইমাত্র বাবুকে ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে পোস্টটা লিখছি।আশা করি বাবু সুস্থ হয়ে যাবে।আপনাদের কাছে দোয়া প্রার্থী।

সবাই অনেক অনেক ভালো থাকবেন,সুস্থ থাকবেন। সবার জন্য আন্তরিক ভালোবাসা রইল। সম্পূর্ণ পোস্টে আমার ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

♥️আল্লাহ হাফেজ♥️

মোবাইল ও পোস্টের বিবরণ

ক্যামেরাস্যামসাং গ্যালাক্সি
ক্যামেরা.মডেলএম১২
ফটোগ্রাফার@bristy1
লোকেশনফেনী

images (4).png

20221126_200743.jpg

আমি তাহমিনা আক্তার বৃষ্টি। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি বাংলায় কথা বলি,আমি বাংলায় নিজের মনোভাব প্রকাশ করি। আমি নিজের মত করে সবকিছু করার চেষ্টা করি। আমি অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী। পড়ালেখার পাশাপাশি আমি বিভিন্ন জিনিস আঁকতে পছন্দ করি। বিভিন্ন ধরনের ছবি আঁকা, রঙ করা, নতুন নতুন কিছু তৈরি করা আমার পছন্দের কাজ। তবে রান্নাবান্না আমার ভালোলাগা, চেষ্টা করি সবসময় নিজে নতুনভাবে কিছু রান্না করার। ভ্রমণপ্রেমীদের মত আমিও ঘুরতে পছন্দ করি। পরিবারের সবাইকে নিয়ে আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।

images (4).png

💦

💦 BRISTY 💦

💦

animasi-bergerak-terima-kasih-0078.gif

Sort:  
 6 months ago (edited)

ঠিক এমনই একটি পরিবেশে আমি একদিন পড়েছিলাম আমার ছেলেকে নিয়ে। সময়টাও ছিলো এই রকম শীতের সময়। তার প্রচুর পরিমাণে পাতলা পায়খানা হয়েছিল। এলাকার স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি হওয়ার পরও আমার ছেলে সুস্থ হচ্ছিল না। পরবর্তীতে যশোরের নিয়ে শিশু হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়ার পর দীর্ঘ ১২ দিন পর ছেলে আমার সুস্থ হয়। আপনার সন্তানের জন্য দোয়া করি সে যেন খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে আপনার কোলে ফিরে যেতে পারে।

Posted using SteemPro Mobile

Posted using SteemPro Mobile

 6 months ago 

বাবা মায়েদের কষ্ট একটাই,যদি বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে যায়।ধন্যবাদ ভাইয়া।

 6 months ago 

সু স্বাগতম আপু।

 6 months ago 

আপনার ছেলে অসুস্থ জেনে খুব খারাপ লাগলো। হাসপাতালে থাকা একটু কষ্টকর। বাবুর খেয়াল রাখুন আপু। সন্তানরা অসুস্থ হলে মা বাবার মন খারাপ থাকে। বেশি বেশি দোয়া করুন আপু। আশাকরি সব ঠিক হয়ে যাবে। মন থেকে দোয়া করি আপনার ছেলে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবে ইনশাআল্লাহ।

Posted using SteemPro Mobile

 6 months ago 

ধন্যবাদ ভাইয়া,দোয়া করবেন বাবুর জন্য।

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 6 months ago 

বাচ্চারা অসুস্থ হলে আসলেই কোন কিছুই ভালো লাগেনা । আপনি ওকে হসপিটালে ভর্তি করে ভালই করেছেন মুখে খেতে না পারলে তখন স্যালাইন দেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না । আমার বাচ্চাটারও ছোট বেলায় একবার এরকম হয়েছিল সবারই মনে হয় একবার করে এরকম ডায়রিয়ার কবলে পড়তে হয় বাচ্চাদেরকে নিয়ে । ওই যে বললেন মানুষ চেনা যায় আপনি হয়তো খারাপ মানুষদেরকে চিনেছেন আর আমি ভালো মানুষ পাশে পেয়েছিলাম বিধায় বাচ্চাটাকে হসপিটালে ভর্তি না করে বাসাতেই সুস্থ করতে পেরেছিলাম । বাচ্চাটার জন্য অনেক অনেক দোয়া রইল আপু । আল্লাহ ভরসা তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ ।

 6 months ago 

জি আপু,বাচ্চার অসুস্থতা মানেই অনেক কষ্ট।যাইহোক মানুষ তো আগে থেকেই চিনেছি, কিন্তু বাচ্চার এই বড় বিপদের সময়ও যে মানুষদের পাইনি,তারাও আমায় হারালো।

 6 months ago 

বিপদে পড়লে মানুষ চেনা যায় এটা আমিও বিশ্বাস করি তবে এটা জেনে খুবই খারাপ লাগলো যে আপনার ছেলে খুবই অসুস্থ এবং তাকে হসপিটালে ভর্তি করানো হয়েছিল। হাসপাতাল টা আসলেই বন্দি জেলখানার মতো মনে হয় তবে আপনার বোন সাথে থাকায় কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছিলেন। খুব দ্রুতই আপনার বাবুর সুস্থতা কামনা করছি সন্তান অসুস্থ হলে মা-বাবার চিন্তা অনেক বেশি থাকে এবং অনেক বেশি দুঃখ পায়। যাই হোক আশা করি খুব দ্রুতই সকল ধরনের অসুস্থতা কেটে যাবে শুভকামনা রইল।

Posted using SteemPro Mobile

 6 months ago 

দীর্ঘ ৪দিন হসপিটালে বন্ধী অবস্থায় ছিলাম।অবশেষে আল্লাহর রহমতে বাবু সুস্থ আছে।

 6 months ago 

বাচ্চা অসুস্থ থাকলে বাবা-মার খারাপ লাগাটা স্বাভাবিক আপু। বাচ্চাকে নিয়ে আপনাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে সেটা বুঝতে পারছি। যাইহোক, এই বিপদের সময়টাতে আপনার ছোট বোন প্রথম দিন থেকে আপনাদের সাথে রয়েছে জেনে ভালো লাগলো। আপনার বাচ্চার দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি আপু।

 6 months ago 

বিপদেই বন্ধুর পরিচয় কথায় আছে না,তাই দেখলাম ভাইয়া।

 6 months ago 

প্রথমে বাবুর সুস্থতা কামনা করছি। আসলে আপু বাচ্চারা অসুস্থ হলে মায়ের চেয়ে কষ্ট পৃথিবীর কারো হয় না। আর ছোট বাচ্চা সুই দিলে আসলে অনেক কষ্ট লাগে, আমি তো দেখতেই পারি না। সত্যি আপু বিপদে পড়লে মানুষ ভালো করে চেনা যায়। যাইহোক আপু আপনি তো আপনার বোনকে পেয়েছেন। দোয়াকরি তারাতাড়ি বাবুকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে আলে আসতে পারবেন।

 6 months ago 

বাবুকে ক্যানোলা লাগানোর সময় শুধু আমি ওর পাশে ছিলাম,তাকাতেই পারি নি।

 6 months ago 

প্রথমে বাবুর সুস্থতা কামনা করছি দোয়া করে যাতে ও তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যায়।আসলে সন্তান অসুস্থ হলে মা বাবার কাছে কোন কিছুই ভালো লাগেনা। আর কথাটি একদম ঠিকই বলেছেন আসলেই বিপদে পড়লে মানুষ চেনা যায়। যাইহোক এটা জেনে ভালো লাগলো যে আপনার ছোট বোন আপনার সাথে হাসপাতালে আছে বিধায় আপনার অনেকটাই হেল্প হচ্ছে।

 6 months ago 

যে মানুষদের চিনলাম তাদের স্বভাব আগে থেকেই জানি আপু,তবে একটা বাচ্চার প্রতিও যে এত হিংসে থাকে তার প্রমাণ পেলাম।

 6 months ago 

বাবুটার এমন সব ফটোগ্রাফি দেখে খুব কষ্ট পেলাম আপু।খারাপ লাগছে খুব। কত্ত টুকু একটি বাচ্চা তার এতে কষ্ট। তবে আপনারা খুব ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং ভর্তি করে দিয়েছেন হাসপাতালে। ছোট বাচ্চাদের নিয়ে কোন রিক্সা নেয়া ঠিক নয়।বাচ্চাদের সহ্য ক্ষমতাও ধৈর্য ক্ষমতা দুটোই অনেক কম।সৃষ্টি কর্তার কাছে প্রার্থনা করছি বাবুটা যেন খুব তারাতারি সুস্থ হয়ে যায়ও আবার দুষ্টমীতে ভরিয়ে তোলে বাড়ি।টেনশন করবেন না সব ঠিক হয়ে যাবে

 6 months ago 

ধন্যবাদ আপু খুব ভালো লাগলো আপনার মন্তব্য পেয়ে।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.14
JST 0.029
BTC 57899.47
ETH 3134.16
USDT 1.00
SBD 2.39