"আমার বাংলা ব্লগ" প্রতিযোগিতা -২৫ ||মজাদার স্বাদে কাঁচা কাঁঠালের টক-ঝাল-মিষ্টি আচার||
♥️আসসালামুআলাইকুম♥️
আমার বাংলা ব্লগ এর প্রিয় বন্ধুগণ, আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।আজকে বেশ আনন্দ নিয়েই এই পোস্টটি শেয়ার করতে যাচ্ছি।আশা করি ভালো লাগবে।
আমাদের প্রিয় এডমিন @hafizullah ভাইয়ার আয়োজনে আজকের এই রেসিপি পোস্ট তৈরি করলাম। কনটেস্ট অনুযায়ী সেখানে ছিল প্রিয় আচারের রেসিপি শেয়ার করার কথা। আজকে আমি যে রেসিপি আপনাদের সাথে শেয়ার করব সেটি সচরাচর কেউ তৈরি করে না। কিন্তু এটি আমার খুব প্রিয় একটি আচার।কারণ আমি এটি অনেক আগে একবার খেয়েছিলাম যখন আমার নানু তৈরি করেছিল। তবে সেখানে কিছু ভিন্নতা ছিল।আজকে আমি নিজের মতো করে ভিন্নভাবে এই আচার তৈরি করব।আমার ধারনামতে এই কাঁচা কাঁঠালের আচার কেউ খেয়েছে বলে মনে হয় না।কেউ খেয়ে থাকলে জানাবেন। সত্যি বলতে এই আচার তৈরি করার পর খেতে কিন্তু খুবই ভালো লেগেছে। আমার ফ্যামিলির সবাই ভাতের সাথে আচার খেয়েছিল এবং সবার কাছে খুব মজা লেগেছে।
এই রেসিপি তৈরির ক্ষেত্রে কিছুটা কষ্ট হয়েছিল। কারণ গত শুক্রবার থেকে আমাদের ফ্যামিলি একদম ব্যস্ততার মধ্যেই রয়েছে যেহেতু আমার দেবরের বিয়ে ছিল। আর সেই হিসেবে কাজকর্মে একদম ব্যাঘাত ঘটে গিয়েছিল আর এক্ষেত্রে আমি যখন কনটেস্টের পোস্টটি দেখেছিলাম তখন ভাবলাম আমি কি রেসিপি তৈরি করবো। আমি ভেবে পাচ্ছিলাম না, হঠাৎ করে আমার নানুর তৈরি করা সেই কাঁচা কাঁঠালের আচারের কথা মনে পড়ে যায়।যদিও অনেক আগের কথা কিন্তু মজাটাই ছিল অন্যরকম।
এখন কথা হলো এই অসময়ে কাঠাল পাবো কই তাও আবার কাঁচা কাঠাল।খোঁজ শুরু হলো কাঁঠালের। এদিকে কোথাও কাঁঠাল নেই। কি করা যায়?আর আমার শ্বশুর বাড়িতে যেহেতু বিয়ে চলছে তাই আমার আম্মুও এখানে এসেছে।তখন আমার এক ভাবী আম্মুকে কল দিয়ে বলল তাদের গাছে ৪টি কাঁঠাল আছে তার থেকে ২ টি কাঁঠাল কেটে রাখতে,তারা বাড়িতে এলে নিয়ে যাবে।তখন আম্মু কাঁঠালের কথা বলতেই শুনলাম এবং অবাকও হয়ে গেলাম।তখন আমি আম্মুকে বললাম যেভাবেই হোক আমাকে একটা কাঁঠাল কিনে দিতে। এরমধ্যে ভাবী সেগুলো ভাইয়ার জন্য বিদেশে নিয়ে যাবে।পড়লাম তো মহা মুশকিলে,তখন আম্মুদের জন্য ভাবী একটা কাঁঠাল দিয়ে গেল,আর সেটা আম্মু আমার জন্য পাঠিয়ে দিল।আর এই দিয়েই করলাম আজকের রেসিপি।
কাঁচা কাঁঠালের আচার তৈরীর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ |
---|
উপকরণ | পরিমাণ |
---|---|
কাঁচা কাঁঠাল | ১কেজি |
তেতুল | আধা কাপ |
চিনি | ২ টেবিল চামচ |
শুকনো মরিচ | ৫টি |
লবণ | ২চা চামচ |
সাদা সরিষা বাটা | ১টেবিল চামচ |
আদা বাটা | ১চা চামচ |
গোটা রসুন | বড় সাইজের ১ টি |
হলুদ গুড়ো | ১চা চামচ |
মরিচ গুড়ো | ২চা চামচ |
গোটা জিরে | ২ চা চামচ |
গোটা ধনে | দেড় চা চামচ |
মৌরি | ১ চা চামচ |
সাদা সরিষা | দেড় চা চামচ |
কালোজিরা | আধা চা চামচ |
মেথি | আধা চা চামচ |
পাঁচপোড়ন | দেড় চা চামচ |
বিট লবণ | সামান্য পরিমাণ |
সরিষার তেল | ১ কাপ |
পানি | ৩ কাপ |
পূর্ব প্রস্তুতি |
---|
প্রথমত আমি কাঁঠালটিকে খোসা ছাড়িয়ে কেটে নিলাম। ছোট ছোট টুকরো করে কাটলাম যাতে আচারের মসলা ভালোভাবে মিশে।এরপরে এগুলোকে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিলাম।
প্রথম ধাপ |
---|
শুকনো কড়াইতে গোটা জিরে,গোটা ধনে, মৌরি, সাদা সরিষা কালোজিরা, মেথি এই মসলাগুলোকে আমি হালকাভাবে টেলে নিয়ে নিলাম। তারপর এগুলোকে পাটায় বেটে নিলাম। একদম গুড়ো করি নি, কিছুটা দানা দানা রেখেছি।
দ্বিতীয় ধাপ |
---|
এরপরে আমি একটি কড়াইতে পরিমাণ মতো পানি দিলাম এবং এর মধ্যে কেটে রাখা কাঁঠাল গুলো দিয়ে দিলাম।সামান্য হলুদ গুঁড়া এবং লবণ দিয়ে এগুলো হালকা করে সিদ্ধ করে নিলাম।হলুদ দেয়ার কারণে খুব সুন্দর একটা কালার চলে আসে।
সিদ্ধ করার পর একটি ট্রে তে টিস্যু দিয়ে এরমধ্যে এগুলো রেখে দিলাম যাতে অতিরিক্ত পানি টেনে নেয়।
পরিমাণ মত পানি দিয়ে তেতুলগুলো ভিজিয়ে রাখলাম।কিছুক্ষণ ভেজানোর পর এগুলো হাত দিয়ে চটকে নিলাম এবং বিচিগুলো ফেলে দিলাম।
তৃতীয় ধাপ |
---|
তারপরে চুলায় কড়াই বসিয়ে তেল দিয়ে দিলাম গরম হওয়ার জন্য।তেল গরম হয়ে এলে এর মধ্যে আমি তিনটি শুকনো মরিচ দিয়ে দিলাম। এরপরে দিয়ে দিলাম আদা বাটা এবং সরিষা বাটা।
চতুর্থ ধাপ |
---|
কিছুক্ষণ ভেজে নেয়ার পর এরমধ্যে দিয়ে দিলাম তিন টেবিল চামচ পরিমাণ চিনি।এটি দেয়ার পর এগুলোকে ভালোভাবে নাড়তে থাকলাম। এরপরে সিদ্ধ করে রাখা কাঁঠালগুলো দিয়ে দিলাম।
পঞ্চম ধাপ |
---|
এগুলোকে নেড়েচেড়ে ভাজতে থাকলাম কিছুক্ষণ। এরপরে তেতুল গোলানো যে পানি ছিল সেটি দিয়ে দিলাম এবং ভালোভাবে নেড়ে একসাথে মেশাতে থাকলাম। এইভাবে কিছুক্ষণ ভাজলাম।
ষষ্ঠ ধাপ |
---|
এবার এখানে গোটা রসুনগুলো দিয়ে দিলাম এবং এর সাথে এক চিমটি হলুদ এবং দুই চা চামচ মরিচ গুড়ো দিয়ে দিলাম যাতে ঝাল হয়।
সপ্তম ধাপ |
---|
এর পরবর্তীতে দিলাম কালোজিরে, বিট লবণ। এগুলো দিয়ে কিছুক্ষণ একসাথে মিশিয়ে নিলাম তারপর শেষ পর্যায়ে দিয়ে দিলাম আচারের মসলা।এগুলোই হল আচারের প্রধান মসলা। পর্যাপ্ত পরিমাণ দেয়ার পর একসাথে নেড়ে পাঁচ মিনিট একদম লো আঁচে ভাজতে থাকলাম। এভাবেই তৈরি হয়ে গেল কাঁচা কাঁঠালের মজাদার টক ঝাল মিষ্টি আচার।
অষ্টম ধাপ |
---|
এখন হলো পরিবেশনের পালা।আমি একটি প্লেটে এই আচার নিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে পরিবেশন করলাম।যদিও রাতের বেলা এই রেসিপিটি তৈরি করেছিলাম।রাতে সবাই খেয়ে খুব প্রশংসা করেছিল।ভালোই লেগেছিল কাঁচা কাঠালের এই মজাদার আচার।
আশা করি এই রেসিপিটি আপনাদের সবার কাছেই ভালো লাগবে।কেমন লাগলো আমার আজকের এই রেসিপি তা মন্তব্য করে জানাবেন।
সবাই অনেক অনেক ভালো থাকবেন,সুস্থ থাকবেন। সবার জন্য আন্তরিক ভালোবাসা রইল। সম্পূর্ণ পোস্টে আমার ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। |
---|
♥️আল্লাহ হাফেজ♥️ |
---|
আমি তাহমিনা আক্তার বৃষ্টি। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি বাংলায় কথা বলি,আমি বাংলায় নিজের মনোভাব প্রকাশ করি। আমি নিজের মত করে সবকিছু করার চেষ্টা করি। আমি অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী। পড়ালেখার পাশাপাশি আমি বিভিন্ন জিনিস আঁকতে পছন্দ করি। বিভিন্ন ধরনের ছবি আঁকা, রঙ করা, নতুন নতুন কিছু তৈরি করা আমার পছন্দের কাজ। তবে রান্নাবান্না আমার ভালোলাগা, চেষ্টা করি সবসময় নিজে নতুনভাবে কিছু রান্না করার। ভ্রমণপ্রেমীদের মত আমিও ঘুরতে পছন্দ করি। পরিবারের সবাইকে নিয়ে আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
সমর্থন করে পাশে থাকার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
মজাদার টক-ঝাল-মিষ্টি কাঁঠালের আচার রেসিপি দেখে আমি অবাক হয়ে গেছি। কাঁঠাল দিয়ে যে আচার রেসিপি তৈরি করা যায় এটি আমার মাথায় আসেনি। আপনার রেসিপি আমাকর সত্যিই অবাক করেছে এবং রেসিপি দেখে শিখে নিলাম পরবর্তীতে তৈরি করব।
ভাইয়া,অনেক চিন্তা ভাবনা করে এই রেসিপিটি করার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম।তবে অনেক কষ্ট হয়েছে।
আপু আপনি আজকে আমাদের মাঝে দারুন একটি রেসিপি তৈরি শেয়ার করেছেন। সত্যি বলতে আপনার রেসিপিটি আমার কাছে মনে হয়েছে একদম ইউনিক একটি রেসিপি। কাঁঠালের আচারের রেসিপি আমি আগে কখনো দেখিওনি খাইনি। তবে আপনার পোস্ট দেখে তৈরি করার চেষ্টা করব। ধন্যবাদ আপু এত সুন্দর একটি রেসিপি তৈরি করে শেয়ার করার জন্য।
আমি বহু বছর আগে একবার খেয়েছিলাম,বেশ ভালোই লেগেছিল।আর নতুনভাবে করে মজা লেগেছে।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ সাপোর্ট দেয়ার জন্য।
হাফিজুল্লাহ ভাইয়ের আচারের কনটেস্টে ইউনিক আচারের ঝড় উঠেছে। কাঁঠালের আচার জীবনে প্রথম দেখেছি মনে হয়। এত সুন্দর ইউনিক একটি কাঁঠালের আচারের রেসিপি আমাদের কে উপহার দেওয়ার জন্য শুভেচ্ছা রইল।
সত্যিই বলেছেন ভাইয়া,দারুণ কিছু রেসিপি দেখলাম।
কাঁঠালের আচার এটা বড় কথা নয় আপু, বড় কথা হচ্ছে এই অসময়ে আপনি কাঁঠাল পেলেন কোথায়। এই অসময়ে কাঁঠাল পাওয়া খুবই মুশকিল ব্যাপার। আপনার আইডিয়াটা দারুণ আপু, অসময়ের কাঁঠাল দিয়ে, অসাধারণ আচার রেসিপি তৈরি করা। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য খুবই ইউনিক একটি আচারের রেসিপি বাছাই করে নিয়েছেন। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ সফল হোক এই কামনা করছি।
ভাগ্যের লিখন যায় না খণ্ডন, কথায় আছে তো।কাঁঠাল এই অসময়ে পাবো আমি নিজেও চিন্তা করি নি।
ওরে বাবা দেখছি বেশ লম্বা কাহিনী। এখন কারো কাছে কাঁঠাল আছে বলে মনে হয় না। আপনার আম্মুকে দিয়ে যাওয়া কাঁঠাল আপনার জন্য পাঠিয়ে দিল। তাহলে নিশ্চয়ই আপনি আচার তৈরি করার পর আপনার আম্মুর জন্য কিছুটা পাঠিয়েছেন। আমি এর আগে কখনো খেয়েছি কিংবা শুনেছি মনে হয় না। একেবারে বেশ ইউনিক একটি রেসিপি তৈরি করলেন।
না আপু, আম্মুর জন্য পাঠানো হয় নি।তবে সিজন আসলে করে খাওয়াবো।
আমাদের এখানে এক আচারওয়ালা কাকু বসেন হরেক রকম আচার নিয়ে। তার কাছে এঁচড়ের আচার পাওয়া যায়। যদিও আমি কখনও খাওয়ার রিস্ক নেই নি। তবে আপনার বানানো দেখে ইচ্ছে টা বেড়ে গেলো। এবার ভাবছি একবার কিনে খাব প্রথমে। তারপর ঘরে বানাবো।অনেক ধন্যবাদ। 😊
হাহা,রিস্ক নিতে হয় আপু। নাইলে মজা বুঝবেন কিভাবে।আমিও রিস্ক নিয়েই করেছিলাম,খুব ভালো হয়েছিল।