'জন্ম' (একটি ট্র্যাজেডি গল্প, শেষ পর্ব) [10% ʙᴇɴᴇғɪᴄɪᴀʀɪᴇs ғᴏʀ ᴍʏ ғᴀᴠᴏᴜʀɪᴛᴇ @sʜʏ-ғᴏx🦊]
.... ১ম পর্বের পর
খানিক ক্ষন ওরা এভাবে রইলো। এক সময় রিনি তার পার্স খুলে একটা লম্বা ছোট বক্স আসিফের হাতে দিয়ে বললঃ- "এটা আজকের দিনের জন্য তোমার উপহার"। তারপর আঁচলে মুখ ঢেকে বেরিয়ে গেল আর কিছু না বলে।
ঘোর এবং ধাঁধা কাটতেই আসিফ কালো কাপড় দিয়ে মুড়ানো বক্সটা হাতে নিলো। তার গায়ে লেখা, 'এক মাস পরে খুলবে'। আসিফ ভাবলো কি আছে এতে? ঘড়ি ! হবে হয়তো। কিন্তু একমাস পড়ে কেন খুলতে বলছে !
Image Source:https://pixabay.com/photos/background-beautiful-bloom-blossom-1587514/
পরদিন খুব ফুর ফুরে মেজাজে কলেজে গেল আসিফ সিক্দার। গিয়েই ক্লাশে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলো রিনি এখনো আসেনি। বারান্দায় দাঁড়িয়ে গেটের দিকে তাকিয়ে রইলো আসিফ অস্থির চিত্তে। কিন্তু কোথায় রিনি! ছুটির ঘন্টা বাজলো, কিন্তু রিনি এলো না। ফোন করেছে অনেক, ফোনে নেই সে। পরদিন, তারপর দিন, কোথায় রিনি! বান্ধবীরাও বলে, কোখায় রিনি ! কি এমন হলো যে, রিনি কলেজে আসছে না। কলেজ তো ছেড়ে যায়নি! সবাই আসিফকে দুষলো, নিশ্চয় খারাপ কিছু বলেছেন আপনি। বুইঝেন কিন্তু।
আসিফ কিছু বলছে না,শুধু ভাবছে, তাহলে? তাহলে কেনো-- ? অজানা আতঙ্কে হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেল আসিফের। এরপর সন্দেহ মনে দানা বেঁধে উঠলো। রিনি কি ফাঁকি দিলো ওকে। তাহলে ওটা কি ছিল সেদিন, বিদায় লগ্নের শেষ বিষ স্পর্শ?! বিয়েতে যাচ্ছিল রিনি, কিন্তু কার বিয়েতে বলেনি। সে তার নিজের বিয়েতে যাচ্ছিল নাতো! সারা গায়ের লোম গুলো শির শির করে দাড়িয়ে গেল আসিফের, তারপর থির থির করে কাঁপতে লাগল সে।
Image Source:https://pixabay.com/photos/man-loneliness-sea-evening-2915187/
নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিলো আসিফ। ঘুড়ে বেড়ায় উভ্রান্তের মত এদিক থেকে ওদিক। এতো দিনে সে বুঝতে পারলো, দুনিয়ায় কোনো ভালোবাসা নেই , মায়া নেই। আহলে ওরা কি করছে, যারা পার্কে, উদ্যানে জোড়ায় জোড়াায় গা ঘেঁসে বসে আছে!
রুমমেট রাসেল একদিন বললঃ- "দোস্তরে এতো ভাইঙ্গা পরিস না। পয়লা পয়লা তো। শহরের ভালোবাসা এমনই"।
ইমন ঠাট্রা করে বললঃ- “আসিফ মিয়া, তুমি খুব সহজ সরল তাই মনে এতো কষ্ট পাইতাছো। এখনকার ভালোবাসা হাওয়াতে ভাইসা বেড়ায়। তারে তারে বাড়ী বাড়ী ঘুইরা বেড়ায় ব্যাভিচারিনির মত। ঐটা এখন খেলা। তুমি যেই ভালোবাসার জলে খাবি খাইতাছো সেইটা অখন নির্বাসনে"।
হয়তো তাই , অথবা এগুলো দুষ্ট ছেলের উচ্চারন।
একদিন আসিফ সব কিছু ছেড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল, অনেকটা পালাবার মত করে। বাস ধরে চলে এলো আরিচা ঘাটে। এটা তার বাড়ী ফেরার রাস্তা। বাড়ী ফিরে যাচ্ছে সে। পাড়ে দাঁড়িয়ে নদীটা দেখলো। বর্ষায় ভরে উঠেছে নদী। তীব্র স্রোত সাথে এলো মেলো ঢেউ। আসিফ ভাবলো তন্ময় হয়ে, যদি সে ফেরী থেকে পড়ে যায়, তাহলে তার লাশটা কোথায় গিয়ে ভেসে উঠবে। হঠাৎ তার মনে পড়লো রিনিতো তাকে একটা উপহার দিয়েছিল। এক মাস পর খুলতে বলেছিল। কিন্তু গত কাল তো এক মাস পার হয়ে গেছে!
Image Source:https://pixabay.com/photos/gift-present-wood-package-gift-box-1420830/
বক্সটা খুঁজতে লাগল পাগলের মত। ভাবলো, এনেছে তো ! ব্যাগের পুরো জিনিস গুলো মাটিতে ঢেলে ফেলতেই বেরিয়ে এলো ওটা। হাতে নিয়ে দ্রুত খুললো সে বাক্সটা। তারপর হাতে তুলে নিলো উপহার খানা। একটা ছুড়ি, নক্সা করা। একদম নতুন। এক মুহূর্ত থমকে রইলো সে।
মোবাইল ফোনটা বেজে উঠলো। থমকে গেল আসিফ। ফোনটা আবার বাজলো, আবার। এবার সে মোবাইল খুলে বললঃ-
“হ্যালো !
ও প্রান্তে রাসেল চেঁচীয়ে উঠলোঃ- “আসিফ তুই কোথায়। জলদি রুমে আয়। জলদি!”
রিনি ফিরে আসেনি তো! এই ভেবে পারলে যেন উড়ে চলে যায় আসিফ। যখন রুমে পৌছলো দেখতে পেল রাসেল আর ইমন কম্পিউটার অন করে বসে আছে।
ওরা বললঃ- "মাথা ঠান্ডা রাখিস দোস্ত, দেখ"।
রাসেল ক্লিক করলো কম্পিউটারে একটা পত্রিকার ওয়েব সাইড। দেশের বাইরের একটি ইংরেজী দৈনিক। প্রথম পাতায় বড় করে দেয়া ছবিতে ওরা দেখলো, রিনি রক্তাক্ত হয়ে পড়ে আছে মেঝেতে। আরেকটা ছবিতে একটা ছুড়ি। ঠিক সেই রকম, যে রকম ছুড়ি রিনি আসিফকে দিয়েছিল। পাশে বাংলা ভায়ায় একটা হাতে লেখা চিঠি, ওটা রিনির লেখা চিঠি, আসিফকে।
Image source:https://pixabay.com/images/search/beautiful%20flower/
আসিফ,
"গলায় ছুড়িটা চালাবার আগে চিঠিটা লিখে গেলাম। রাগ করো না আসিফ, আমার মৃত্যুর কারণ আমার 'জন্ম'। কারণ আমার মা আমাকে আমার বাবার নাম বলতে পারেনি, যিনি এতো দিন ছিলেন তিনি আমার বাবা নন, এমনকি আমার মার ও স্বামী নন। আমি সব সেদিনি জেনে গেছি, যেদিন শেষ দেখা হয় তোমার সাথে। আমার শরিরে বিষাক্ত কিট। তোমার বিশুদ্ধ ভালোবাসা আমাকে ধুয়ে শুদ্ধ করতে চেয়েছিল, কিন্তু আমি তো জন্ম থেকেই অশুদ্ধ। এতোদিন আমি ছিলাম আমার মায়ের বন্দী সউদিতে একটি বাড়ীতে। আমাকে বন্দী করে রাখা হয়েছিল সব বুঝার পর।
গতকাল তোমার জন্ম দিন ছিল, আর সেদিনের রাত ছিলো আমার বস্ত্র হরণের রাত। তাই আমি তোমার জন্ম দিনের কেক কাটলাম একা একা নিজের গলা কেটে।
Image Source:https://pixabay.com/photos/summer-flower-hair-portrait-face-4246927/
চলে এসো আসিফ, ওপারে আমি শুদ্ধ হয়ে তোমার জন্য সেজে বসে থাকবো। আমার বস্ত্র হরণ করবে শুধু তুমি"।
চিঠি পড়ে রাসেল আর ইমন পিছনে তাকালো, চীৎকার করে উঠলোঃ- “খবরদার ! খবরদার আসিফ !”
কিন্তু কোথায় আসিফ---।
💫💙সমাপ্ত💙💫
ধন্যবাদ সময় নিয়ে আমার গল্পটি পড়ার জন্য। সবাই ভালো থাকবেন এবং একে অপরকে ভালো থাকতে সাহায্য করবেন।
গল্পটা পড়ে খুব খারাপ লাগছে। ট্রাজেডি খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।শেষটা এমন হবে আশা করি নি। ধন্যবাদ আপনাকে।
😑অনেক টা ইমোশনাল হয়ে গেছি আপু পড়ে শেষে এমন কিছু হবে এটা ভাবতে পারিনি। অপেক্ষায় থাকবো পরের পর্বের জন্য তাড়াতাড়ি দিয়েন আপু ❤️আর আপু আপনি সত্যি খুব ভালো লিখেন।
"অনেক টা ইমোশনাল হয়ে গেছি আপু পড়ে শেষে এমন কিছু হবে এটা ভাবতে পারিনি"
এটাই আমার সার্থকতা। আপনি যেটি লিখেছেন আপু মনি।
❤️❤️❤️ভালোবাসা রইলো
দিদি এতটা নির্মমভাবে কেন লিখেছেন 😢। সবটা পড়ে আমি কিছু সময় চুপ হয়ে ছিলাম। তারপর ভাবছি আসলে আমার কি কমেন্টে লেখা উচিত। কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি এখনো কিছু লিখতে পারছি না। হইতো এটাই আপনার সার্থকতা। সব শেষে এটাই বলব, পূর্ণতা পাক সব ভালবাসা।
ঠিক ধরেছেন দিদি মনি। এটাই আমার সার্থকতা। অসম্ভব ধন্যবাদ এতো সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
বাপরে আপু!কি পড়লাম এটা। ভাবিইনি এমন হবে শেষে এসে। ঘটনাটির সব সত্য না হলেও অনেকটাই সত্য ছিলো। যেমন আসিফের ভালোবাসার মধ্যে কোনো ভেজাল ছিলোনা,কোনো পাপ ছিলোনা। তবে নিয়তি তাদের একসাথে হতে দেয় নি। আপু আপনি যে কি ভালো গল্প লিখেছেন তা ভাষায় প্রকাশ করার মতোন ই না।
অসংখ্য ধন্যবাদ এত্তো সুন্দর মন্তব্য করার জন্য আপু।
গল্পটি পড়ে আমার চোখে জল আসার মত অবস্থা। এত সুন্দর এত করুন একটি গল্প আপনি লিখেছেন ।আমাকে মানতে হবে আপনার লেখনি শক্তি প্রখর ।স্মৃতিশক্তি অসাধারণ । আসলেই বাস্তবতা ভিন্ন আমরা যেমনটা মনে করি বাস্তবতা অনেক কঠিন আসিফের সাথে প্রতারণা করেছে কিন্তু দেখুন রিনি তার ভালোবাসাকে কিভাবে বিসর্জন দিয়েছে। এক অসমাপ্ত করুন প্রেমের পরিণতি আপনার গল্পের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে। আমি যখন গল্পটি পড়তে ছিলাম পুরো ঘটনাটা যেন মনে হচ্ছে আমার চোখের সামনে করছে ।এত নিখুঁত ফিনিসিং আসলে সবাই দিতে পারে না যদি না সে শক্তিশালী কোন লেখক না হয় ।আপনি সত্যি অনেক ভালো লেখক আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
আপু মনি খুবই খুশি হলাম আপনার সুন্দর মন্তব্য টি পড়ে। আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
আপু এই শেষের গল্পটা পড়ে চোখে পানি চলে এসেছে 😥😥😥।
গল্পের এই অংশটা বেশি খারাপ লেগেছে।
আপু আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আমাদের এতো সুন্দর গল্পটা শেয়ার করার জন্য।
অসংখ্য ধন্যবাদ এতো সুন্দর মন্তব্য করার জন্য আপু মনি।
গল্পের ১ম পর্বে একটা টানটান উত্তেজনা ছিল কিন্তু ২য় পর্বে এসে এমন একটা দুঃখ পাবো সেটা কল্পনা করতে পারি নি। মানুষ সব সময় নিজের মনের ইচ্ছা পূরণ করতে চায় কিন্তু সব সময় সেটা পূরণ হয় না। যেমনটা গল্পের শেষে লক্ষ্য করা যায়। আপনার জন্য শুভকামনা রইল আপু 💚
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।