গল্প: মামা ও ভাগ্নে। পর্ব: ০৩ || তাং: ২৯/০৮/২০২২ইং।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

আসসালামু আলাইকুম।

সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আপনারা সবাই আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা গ্রহণ করবেন। আমি আশা করি আপনারা সবাই মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে অনেক ভাল আছেন, সুস্থ আছেন এবং নিরাপদে আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান আল্লাহপাকের দয়ায় অনেক ভাল আছি। আজ আমি আপনাদের নিকট আমার লেখা একটি গল্প শেয়ার করছি। আমার গল্পের নাম- 'মামা ও ভাগ্নে', পর্ব-০৩। আমি আশা করি আমার লেখা গল্পটি আপনাদের নিকট অনেক অনেক ভালো লাগবে।


প্রথম পর্বটি পড়ার লিংক

দ্বিতীয় পর্বটি পড়ার লিংক

mountaineering-g399637b2a_1920.jpg
Source

আধা ঘন্টার মধ্যেই তালেব আলী দুর্লভপুর গ্রামে পৌঁছে গেল। একজন বয়স্ক মানুষের নিকট থেকে তালেব আলী জানতে পারল যে হৃদয়ের নানা ছিল একসময়ের গ্রামের মধ্যে নামকরা চোর। আর সেই চোরের একমাত্র নাতি ছেলে হলো হৃদয়। হৃদয়ের প্রতি তালেব আলীর সন্দেহ আরো বেশি গাঢ় হয়ে গেল। তারপর পরিচয় নিতে নিতে তালেব আলী হৃদয়ের নানির বাড়ির পাশের এক প্রতিবেশীদের বাড়িতে উপস্থিত হলো। হৃদয়ের নানির প্রতিবেশীদের নিকট থেকে তালেব আলী জানতে পারলে যে হৃদয়ের নানীদের তেমন কোন জমি-জমা মাঠে নেই। পরের জমি বর্গা চাষ করে এবং অন্যান্য কাজ করে হৃদয়ের মামা সুজন তাদের সংসার টিকিয়ে রেখেছে। তালেব আলী আরো জানতে পারল যে, হৃদয়ের মামা সুজনও একজন চোর, সে সুযোগ পেলেই যে কোন জিনিসপত্র চুরি করতে দ্বিধা করে না। এ সমস্ত কথাগুলো তালেব আলী জানতে পেরে নিশ্চিত হয়ে গেল যে সুজন ও হৃদয় তার জমির গাজর চুরি করে তার বাড়িতেই বস্তা ভর্তি করে নিয়ে গেছে।

couple-g35d5d8d50_1920.jpg
Source

তালেব আলী গভীর চিন্তায় পড়ে গেল। সে চিন্তা করতে শুরু করল যে, সে কিভাবে এই চোরের হাত থেকে তার মেয়েকে রক্ষা করবে। সে তখন চিন্তা করল যে, এখনই বাড়িতে গিয়ে তার মেয়েকে সমস্ত কিছু খুলে বলা উচিত কিন্তু পরক্ষণে সে ভাবলো, এই মুহূর্তে এ সমস্ত কথাগুলো তার মেয়েকে বলা ঠিক হবে না। তাই সে নতুন বুদ্ধি বের করল। তালেব আলী একটু ছদ্মবেশ ধারণ করে হৃদয়ের নানীর বাড়িতে প্রবেশ করলো। তখন হৃদয়ের নানির সাথে তালেব আলীর প্রথম দেখা হলো। ওই সময় সুজন ঘরে শুয়ে ছিল। তালেব আলী একটু বুদ্ধি খাটিয়ে হৃদয়ের নানীকে বলল,"আপনারা কি শীতকালীন কোন সবজি বিক্রয় করবেন? নগদ টাকা দিয়ে সবজি কিনে নিয়ে যাব। আমি আবার শহরে ট্রাক বোঝাই করে সবজি বিক্রি করতে যাই তো, তাই টাটকা সবজির খোঁজে আপনাদের এদিকেই এসেছি।" উত্তরে হৃদয়ের নানি বলল,"আমি যতটা জানি আমাদের এবার সবজি চাষ করে নাই। তাই আপনি অন্য কোথাও টাটকা সবজির সন্ধান করুন।" এদিকে এসব কথা শুনে সুজন এক লাফ দিয়ে ঘর থেকে নেমে এসে বলল,"মা তুমি হয়তো জানো না এবার মাঠে আমাদের প্রায় দুই বিঘা জমিতে গাজর চাষ করেছি। গাজর গুলো বিক্রয়ের উপযুক্ত হয়ে গেছে। তাই আমি ভাবতেছি গাজর গুলো বিক্রয় করে দিব।"

forest-g4407b7988_1920.jpg
Source

তালেব আলী তখন বলে উঠলো চলুন আপনার গাজরের ক্ষেত দেখে আসি। সুজন একটু বুদ্ধি খাটিয়ে বলল আমি আমার সব গাজর গুলো বিক্রয় করব না। যে সমস্ত গাজর গুলো একটু বেশি মোটা-তাজা হয়ে গেছে সেগুলো আমি তুলে বাড়িতে নিয়ে আসব তখন আপনি আমার বাড়ি থেকে ওজন করে নগদ টাকা দিয়ে নিয়ে যাবেন। এ কথা শুনে তালেব আলী মিট মিট করে হাসলো এবং মনে মনে বলল, এবার তুমি ঠিক লাইনে এসেছো। তখন তালেব আলী বলল, "তাহলে আপনি আমাকে কবে টাটকা গাজর দিবেন?" সুজন মনে মনে ভাবলো যে, সবেমাত্র একটি গাজরের ক্ষেত থেকে অনেকগুলো গাজর চুরি করেছি।তাই এখন আর গাজর চুরি করা যাবে না। ধরা খেয়ে যেতে পারি। তাই সে বলে উঠলো আজ সোমবার আপনি আগামী শুক্রবার খুব সকাল সকাল আমাদের বাড়িতে এসে টাটকা গাজর নিয়ে যাবেন। এ কথায় চূড়ান্ত করে তালেব আলী তখন নিজের বাড়ির দিকে রওনা হলো। এদিকে সুজন মিটমিট করে হাসতে লাগলো এবং মনে মনে বলতে লাগলো শীতের রাত, চারিদিকে ঘন কুয়াশা আর সাথে উত্তরের ঠান্ডা বাতাস, মাঠে হয়তো কেউ আসবে না তাদের ক্ষেত পাহারা করতে। আর এই সুযোগে এত সুন্দর একটি ব্যবসা আমি করে নিব। ভাবতে ভাবতে সে অস্থির হয়ে গেল। পাশাপাশি হৃদয় বাড়ি আসতে এতো দেরি করছে ভেবে সে আরও অস্থির হয়ে গেল। সুজন তার চুরির প্লান-পরিকল্পনা সাজানোর উদ্দেশ্যে হৃদয়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে লাগলো।

couple-gffea843ff_1920.jpg
Source

এদিকে হৃদয় বেশ দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছে। সে ভাবতে শুরু করল, তমা'র বাবা হঠাৎ করে কোথায় গেল আমাকে রেখে, গাজর চুরি করে ধরা খেয়ে গেলাম না তো। এ সমস্ত দুশ্চিন্তায় হৃদয়ের মাথা ঘুরতে লাগলো এবং বাড়িতে যাবার জন্য ছটফট করতে লাগলো। এমন সময় তালেব আলী হাসিমুখে বাড়িতে প্রবেশ করলো। তারপর তালেব আলী তমা'র মাকে বলল,"আমার জন্য খাবার প্রস্তুত করো। আমি আর হৃদয় একসাথে বসে খাব।"এ কথাটি শুনে হৃদয় কিছুটা স্বস্তি পেল এবং দীর্ঘশ্বাস ফেললো। তারপর তালেব আলী তমাকে ডেকে একটু আড়ালে নিয়ে গেল এবং গাজর চুরির পুরো ঘটনা খুলে বলল। তমা এ সমস্ত কথাগুলো শুনে মনে হলো সে যেন আকাশ থেকে পড়ল। তমা সম্পূর্ণরূপে বিবর্ণ হয়ে গেল।

[গল্পটি চলমান থাকবে।]



১০% বেনিফিসারী প্রিয় লাজুক খ্যাকের জন্য বরাদ্দ।


সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ



Sort:  
 2 years ago 

বাহ আপনি খুব চমৎকার গল্প আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন । গল্পটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো। আগামী পর্বের জন্য অপেক্ষায় থাকলাম‌। শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন।

 2 years ago 

ধন্যবাদ ভাইয়া পরবর্তী পর্ব খুব শীঘ্রই আপনাদের মাঝে শেয়ার করব।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.16
JST 0.031
BTC 61840.18
ETH 2589.24
USDT 1.00
SBD 2.55