গল্প: মামা ও ভাগ্নে। পর্ব: ০১ || তাং: ০৩/০৮/২০২২ইং।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago
"আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটিতে আমার নতুন একটি পোস্টে আপনাদের সবাইকে জানাই সুস্বাগতম


আসসালামু আলাইকুম।

সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আপনারা সবাই আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা গ্রহণ করবেন। আমি আশা করি আপনারা সবাই মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে অনেক ভাল আছেন, সুস্থ আছেন এবং নিরাপদে আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান আল্লাহপাকের দয়ায় অনেক ভাল আছি। আজ আমি আপনাদের নিকট আমার লেখা একটি গল্প শেয়ার করছি। আমার গল্পের নাম- 'মামা ও ভাগ্নে'। আমি আশা করি আমার লেখা গল্পটি আপনাদের নিকট অনেক অনেক ভালো লাগবে।



children-gd22658697_1920.jpg
Source

সুজন এবং হৃদয় দুজন সম্পর্কে আপন মামা ভাগ্নে। সুজনের একমাত্র ভাগ্নে হল হৃদয়। তারা সম্পর্কে মামা ভাগ্নে হলেও তাদের মধ্যকার আচরণ সম্পূর্ণ বন্ধুর মতো। দুর্লভপুর গ্রামের প্রতিটি মানুষ বিস্মিত হয়ে যেত মামা ভাগ্নের এমন সম্পর্ক দেখে। কারণ তাদের মধ্যে বয়সের তেমন একটা তফাৎ নেই। সুজনের বয়স ২১ বছর এবং তার ভাগ্নে হৃদয়ের বয়স ১৮ বছর। সুজনের বড় বোনের বিবাহের এক মাস আগে সুজনের জন্ম হয়েছিল। আর সুজনের বড় বোনের বিয়ের তিন বছর পর সুজনের ভাগ্নে হৃদয় জন্মগ্রহণ করেছিল। তাই তাদের মধ্যে বয়সের খুব একটা বেশি তফাৎ নেই। হৃদয় ছোটবেলা থেকে নানির বাড়িতেই অর্থাৎ দুর্লভপুর গ্রামে বড় হয়েছে। তাই হৃদয়ের খেলার সঙ্গীও ছিল তার মামা।



balloon-g4583e15e5_1920.jpg
Source

মামা ও ভাগ্নে এখন দুজনেই বড় হয়ে গেছে। হৃদয় এখনো নানির বাড়িতেই থাকে। তাই হৃদয়ের তেমন কোন কাজ করতে হয় না। এদিকে হৃদয়ের মামা সুজন সারাদিন মাঠে কঠোর পরিশ্রম করে। কিন্তু সুজনের একটি নেতিবাচক দিক আছে সেটা হল সে চুরি করতে বেশ দক্ষ ছিল। কারণ সুজনের বাবা অর্থাৎ হৃদয়ের নানা একজন গ্রামের নাম করা চোর ছিল। হৃদয় ইতিমধ্যেই পাশের গ্রাম শিমুলপুর গ্রামের তমা নামের একটি মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে। হৃদয় মাঝে মধ্যেই তার প্রেমিকার বাড়িতে যায়। শীতের সময় একদিন হৃদয়ের প্রেমিকা(তমা) হৃদয় কে বলল,"আমাকে কিছু গাজর কিনে এনে দাও। আমি গাজরের হালুয়া তৈরি করে খাব"। হৃদয় তার প্রেমিকার কথা শুনে বলল, "গাজর কিনে আনবো কেন, তোমাদের জমিতে এবার কি গাজর হয়নি। হৃদয়ের প্রেমিকা উত্তর দিল আমি সঠিক জানিনা। তখন হৃদয় বলল, আমাদের জমিতে এবার অনেক গাজর হয়েছে। সেখান থেকে তোমার জন্য আমি এক বস্তা গাজর আগামীকালকেই দিয়ে যাব"। কিন্তু হৃদয়ের কোন গাজরে জমি ছিল না। তাই সে বাড়িতে এসে বেশ দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল। সে ভাবতে লাগলো কিভাবে তার প্রেমিকার জন্য এক বস্তা গাজর সংগ্রহ করবে। চিন্তায় হৃদয়ের মুখ কালো হয়ে গেল এবং ঠোঁট শুকিয়ে গেল। হৃদয়ের এমন অবস্থা তার মামা সুজনের চোখে পড়লো এবং সুজন তার ভাগ্নিকে জিজ্ঞেস করল, "কি হয়েছে ভাগ্নে তোমার? শরীরে অসুখ করছে নাকি?" হৃদয় ভাবল মামাকে সবকিছু খুলে বলার এখনই সময় কারণ আমাকে এক বস্তা গাজর সংগ্রহ করতে হবে। তাই, সে তার মামা সুজনকে বিস্তারিত ঘটনা খুলে বলল এবং সুজন এ কথা শুনে হা হা করে হাসতে শুরু করল। সুজন বলল,"এটা কি এমন কঠিন কাজ? যার জন্য দুশ্চিন্তায় পড়ে থাকতে হবে। আমি আজ রাতের মধ্যেই এক বস্তা গাজর তোমাকে সংগ্রহ করে দেব। তুমি আগামীকালই আমার হবুবিয়ানের বাড়িতে নিয়ে যাবে"।



sunset-g67b11ad89_1920.jpg
Source

এবার রাতে সুজন তার ভাগ্নে হৃদয়কে সাথে করে নিয়ে গাজর চুরির উদ্দেশ্যে পাশের গ্রামের মাঠে চলে গেল। অর্থাৎ হৃদয়ের প্রেমিকার গ্রামের মাঠে চলে গেল। শীতের সময় পুরো মাঠ ভর্তি সবজিতে। মৃদু মৃদু উত্তরের বাতাস বইছে এবং সাথে শিশির পড়ছে। ঘন কুয়াশায় চারিদিকে ঘেরা। এদিকে হৃদয় তার মামাকে বলছে, "মামা আমার খুবই ডোর লাগছে"। সুজন একথা শুনে বলল প্রথম প্রথম এমনই হয় পরে ঠিক হয়ে যাবে।

forest-g4407b7988_1920.jpg
Source

একটি গাজরের ক্ষেত থেকে দুজন গাজর চুরি করা শুরু করল। ভয়ে হৃদয়ের শরীর ছমছম করছে। তবে সুজন বুঝতে পারছে যে এই জমির ঠিক বিপরীত মাথায় হয়তো কোন একজন মানুষ রয়েছে। তাই সুজন তার ভাগ্নেকে ফিসফিস করে বলল,"ভাগ্নে এখান থেকে খুব দ্রুত আমাদেরকে সরে যেতে হবে"। রাতের আঁধারে দু'জন এত দ্রুত গাজর চুরি করলো যে, গাজর হয়ে গেছে প্রায় দুই বস্তা কিন্তু তারা সাথে এনেছে একটি বস্তা। কোন রকমে এক বস্তা গাজর ভর্তি করে হৃদয় তার মামার মাথায় তুলে দিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হল। ঘন কুয়াশার মধ্যে একটু পথ যেতে না যেতেই গাজরের ক্ষেত থেকে চোর-চোর চিৎকার শোনা গেল এবং সাথে লাইটের আলো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লো। এমন অবস্থায় মামা ভাগ্নে খুব দ্রুত একটি ভুট্টার ক্ষেত এর মধ্যে লুকিয়ে পড়ল। সুজন তার ভাগ্নেকে বলতে লাগলো, কোন দুশ্চিন্তা করিস না ভাগ্নে ওরা আমাদেরকে খুঁজে পাবে না আমরা ঠিক সময় মত বাড়িতে চলে যাব। কিন্তু হৃদয়ের কাছে চোর চোর বলে চিৎকার করা গলার শব্দটি বেশ পরিচিত মনে হল। যাহোক মামা ভাগ্নে খুব কৌশলে বাড়িতে পৌঁছে গেল। সকালবেলা হতে না হতেই শিমুলপুর গ্রামের চারিদিকে খবর ছড়িয়ে পড়লো যে, তালেব আলীর গাজর ক্ষেত থেকে অনেকগুলো গাজর চুরি হয়ে গেছে আজ রাতে। তালেব আলী হল তমা'র পিতা। তাই পরিবারের এমন দুঃসংবাদটি শুনে তমা খুবই কষ্ট পেল এবং বিষয়টি হৃদয়ের কাছে বলার জন্য বেশ ছটফট করছিল। কিন্তু হঠাৎ সকালবেলা করে তমা হৃদয়ের সাথে যোগাযোগ করতে পারল না। এদিকে হৃদয় নতুন প্যান্ট এবং গেঞ্জি পরিধান করে, পাশাপাশি একটি কালো সানগ্লাস চোখে দিয়ে ভ্যান গাড়িতে চড়ে এক বস্তা গাজর নিয়ে প্রেমিকা তমা'র বাড়ির দিকে রওনা হল।(গল্পটি চলমান থাকবে।)



১০% বেনিফিসারী প্রিয় লাজুক খ্যাকের জন্য এবং ৫% বেনিফিসারি এবিবি-স্কুল এর জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 68974.42
ETH 2745.11
USDT 1.00
SBD 2.73