"বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের মধ্য দিয়ে, ভীষন খারাপ একটি দিন অতিবাহিত হলো আজ"
|
---|
Hello,
Everyone,
সন্ধ্যা ৭.১০। কেয়ার অ্যান্ড কিওর হসপিটালের রিসেপশনে বসে লিখছি। প্রায় ঘন্টা দুই আগে শশুরমশাইকে নিয়ে এলাম। ভর্তির ফরম্যালিটি পূরন করে, সিটি স্কান করিয়ে, আই সি ইউ তে ভর্তি করা হয়েছে ওনাকে। দুপুরে বাড়িতে যে ডাক্তার আনা হয়েছিলো, তার কথা অনুযায়ী সুগার মেপে দেখা গেছে সুগার ফল করেছে। সুতরাং হসপিটালাইজড করা ছাড়া আর অন্য কোনো উপায় ছিল না।
|
---|
কিছুক্ষণ আগে দেখা করে এলাম। আই সি ইউ এর বেড নম্বর ৯ এ শশুর মশাই ভর্তি রয়েছেন। যখন দেখতে গেলাম, তখন ইসিজি করা হচ্ছে। ওনার পুরনো সমস্ত রিপোর্ট এবং প্রেসক্রিপশন নিয়ে কথা বলার জন্য ভেতরে যেতে বলা হয়েছিলো। যেহেতু ওনাকে ডাক্তার দেখানো বা ওষুধ খাওয়ানোর দায়িত্বটি মোটামুটি ভাবে আমার উপরেই রয়েছে, তাই এই বিষয়ে আমাকে গিয়ে কথা বলতে হলো।
|
---|
তাদেরকে বিষয়গুলো বুঝিয়ে দিয়ে, শ্বশুর মশাইয়ের সাথে দেখা করে নিচে এলাম। কারণ আই সি ইউ থেকে বলা হলো নিচের রিসিপশনে গিয়ে বসতে। ডক্টর আসবে রাত সাড়ে ৯টা থেকে ১০ টার মধ্যে। তারপর ডক্টরের সাথে কথা বলা সম্ভব হবে এবং শ্বশুর মশায়ের ট্রিটমেন্ট সম্পর্কে ইনফরমেশন পাওয়া যাবে। তাই সকলে মিলে এসে এখন বসে আছি রিসেপশনে। আমার সাথে আছে ননদ, ননদের হাজব্যান্ড এবং আমার হাজব্যান্ড।
গত দুইদিন ধরে প্রচন্ড গরম পড়েছে এ কথা আর আলাদাভাবে বলার প্রয়োজনীয়তা নেই। সুস্থ মানুষদেরই এতটা কষ্ট হচ্ছে যে, তারাই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। সেখানে আমার শ্বশুরমশায়ের শারীরিক অবস্থা গত বেশ কয়েক মাস ধরেই খারাপ এ কথা আপনারা কম বেশি আমার পোস্টে পড়েছেন।
এই গরমের কারণেই আজ ওনার এই অবস্থা। দুপুরে শরীর খারাপ লাগার সাথে সাথে ওনাকে চিনির জল দেওয়া হয়েছিল ঠিকই, তবে কোনো ভাবেই সেটা খেতে চাইছিলেন না। শুধু ফ্রিজের ঠান্ডা জলে খেতে চাইছিলেন বারবার। তাই আমরা ভেবেছি গরমের জন্য এমন করছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাড়িতে কান্নাকাটি পড়ে গিয়েছিলো। আসলে অবস্থাটা এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে, আমরা ভেবে নিয়েছিলাম তিনি বোধহয় আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন।
ননদকে খবর দেওয়া হলে সেও তাড়াহুড়ো করে পৌঁছে যায় বাড়িতে। তারপর ননদের হাজব্যান্ড ডাক্তার আনার জন্য গেলেন, তবে ওই দুপুর বেলাতে বেশিরভাগ ডাক্তার খানা বন্ধ ছিল এবং যাদেরকে পাওয়া গিয়েছিল, তারা বাড়িতে আসতে রাজি হয়নি।
|
---|
অবশেষে অনেক খুঁজে একজন ডক্টর আনা হয়েছিল এবং তিনি বাপিকে দেখে বলেছিলেন যত দ্রুত সম্ভব উনাকে হসপিটালে ভর্তি করতে হবে। আমরা কোনো কিছু না ভেবে, সেই মুহূর্তেই অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করি এবং বাপিকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ি।
|
---|
|
---|
হসপিটালে এসে প্রাথমিক চিকিৎসার পর, সব নিয়ম কানুন শেষ করলে,ওনাকে প্রথমে সিটি স্ক্যান করতে নিয়ে যাওয়া হলো। আর সিটি স্ক্যান সম্পন্ন করে সোজা আইসিইউতে নেওয়া হলো। আইসিইউর বাইরে আমরা বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করছিলাম। শশুরমশাইকে ড্রেস চেঞ্জ করিয়ে, আরও বিভিন্ন টেস্ট করার জন্য ব্লাড নেওয়ার পর, আমাদেরকে ডেকে পাঠানো হয়েছিলো।
|
---|
এখন রাত ১২.৫৬ বাজে। এখন আবার লিখতে বসলাম। উপরের অংশটুকু রিসেপশনে বসে লিখেছিলাম, তবে ভিতরে একেবারে নেটওয়ার্ক ছিল না, তাই বুমিংয়ের কাজ ভিতরে বসে করতে পারছিলাম না বলে, রিসেপশন থেকে বেরিয়ে এসে রাস্তার উপরে দাঁড়িয়ে বুমিংয়ের কাজ সম্পন্ন করলাম।
|
---|
আজ টিউটোরিয়াল ক্লাস হওয়ার কথা ছিলো, আমি কি সিচুয়েশনে থাকবো বুঝতে পারছিলাম না, পরে অবশ্য বাইরে দাঁড়িয়ে আমি শেষের দিকে যোগ দিয়েছিলাম। আমার নিজেরও ইউজারদেরকে বেশ কিছু কথা বলার ছিলো, তবে অ্যাডমিন ম্যাম ও প্রিয়া দিদিই বেশিরভাগ কথা বলে দিয়েছিলেন।
আমি শুধু শেষের দিকে দুটি বিষয় তাদেরকে অবগত করেছিলাম! এরপর আমাদের টিউটোরিয়াল ক্লাস সম্পন্ন হয় এবং আমিও ননদের সাথে রিসিপশনের ভিতর এসে বসি এবং ডক্টরের অপেক্ষা করতে থাকি
রাত ৯.৪৭ মিনিটে রিসিপশন থেকে আমাদের নাম ডাকে এবং আইসিইউতে যাওয়ার জন্য বলে। কারণ ডক্টর সেখানে অপেক্ষা করছিলেন। আমার হাজব্যান্ড এবং ননদের হাজব্যান্ড দুজনে মিলে আইসিতে গেলো।
|
---|
ডক্টরের সাথে ওরা কথা বলে নিচে এলে, আমরা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম ১০.১০ নাগাদ। বাড়িতে ফিরতে আমাদের প্রায় ১১টা বেজে গিয়েছিলো। এরপর ফ্রেশ হয়ে সকলের সাথে কথা বলতে বেশ কিছুটা সময় হলো। তারপর সকলে খেতে বসলাম।
খাবার খাওয়ার পর শরীরটা যেন আরো বেশি খারাপ লাগতে শুরু করলো, বোধহয় গরমের কারণে এরকমটা হচ্ছে। সারাদিন কিছুই খাওয়া হয়নি, তার ওপর বাড়িতে এসেই গরমের মধ্যে যখন ভাত খেলাম, শরীরের মধ্যে অস্বস্তি লাগছিল। শেষমেশ বমিই হয়ে গেলো।
অবশ্য বমি করার পর শরীরটা একটু ঠিক লাগছিল। এরপর নুন চিনির জল গুলে খেলাম, শরীরটা একটু ভালো লাগছিল। তারপর কমিউনিটির কাজ নিয়ে। সারাদিন খুব বেশি সময় দিতে পারিনি, শুধু সুযোগ মতো বুমিং এর কাজটা করেছিলাম এবং শেষের দিকে টিউটোরিয়াল ক্লাসে যুক্ত হয়েছিলাম। আর এখন এই পোস্ট লেখা শেষ করলাম।
অদ্ভুত একটা অনুভূতি নিয়ে আজকের দিনটি শেষ হলো। দিনটি যে কিভাবে কেটেছে আসলেই বলে বোঝাতে পারবো না। খুবই বাজে একটি দিন অতিবাহিত হলো আজ। তবে সামনের দিনগুলি আরো কঠিন হতে চলেছে, তার আভাস যেন আজকের দিনটি দিয়ে গেলো।
সবাই আমার শ্বশুরমশাইয়ের জন্য একটু প্রার্থনা করবেন, এটুকুই বলতে পারি। ভালো থাকবেন। এই গরমে সকলে সাবধানতা অবলম্বন করবেন, সুস্থ থাকবেন। শুভরাত্রি।
দিদি কিভাবে সান্তনা দেব তা বুঝতে পারছি না এমন অবস্থায় মানসিক চাপ যে কতটুকু থাকে তা যারা এমন সিচুয়েশনে পড়ে ঠিক তারাই বলতে পারে।
আপনার দিনটা ব্যস্ততা টেনশন আর ছোটাছুটি মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে দোয়া করি আপনার শ্বশুরমশাই যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন। নিজের প্রতি যত্ন নেবেন সব সময় টেনশন কম করার চেষ্টা করবেন ভালো থাকুন।
আজ শশুর মশাইকে বাড়ি আনা হয়েছে। শারীরিক অবস্থা খুব বেশি ভালো নয়। তবে ওষুধপত্র চলবে, আর বাকিটা ঈশ্বরের উপরে। সেদিন খুব টেনশনে ছিলাম, এ কথা অস্বীকার করার জায়গা নেই। আপনি আপনার পোস্ট পড়ে এতো সুন্দর মন্তব্য করছেন, যেটা আমার খুব ভালো লাগলো। ভালো থাকবেন।
গতদিনের টিউটোরিয়াল ক্লাসেই জানতে পেরেছি আপনার শ্বশুর মশাই অনেক বেশি অসুস্থ। কিন্তু তারপরও আপনি এই কমিউনিটির সাথে আমাদের মাঝে যুক্ত আছেন। সত্যিই আমাদের কাছে এটাই বড় পাওয়া।
আমরা অনেক আগে থেকেই জানতাম আপনার শ্বশুর মশাই অসুস্থ। তবে এইভাবে হঠাৎ করে বেশি অসুস্থ হয়ে পরায় আপনার উপর বেশ চাপ গেছে। আপনারা তৎক্ষণাৎ এম্বুলেন্সে হসপিটাল এ নিয়ে গেছেন।
দোয়া করি আপনার শ্বশুরমশাই যেন খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠেন।
অনেক মাস ধরে তিনি অসুস্থ ছিলেন, তবে সেদিন অবস্থা এমন হবে ভাবিনি। আমরা প্রায় তাকে হারিয়ে ফেলছিলাম। তবে এই পরিস্থিতিতে যতটা সময় কমিউনিটিতে দেওয়া উচিত ছিল আমি দিতে পারিনি। তবে আজ তিনি বাড়িতে ফিরেছেন, এখন থেকে আগের মতোই সময় দেওয়ার চেষ্টা করবো। ধন্যবাদ আপনাকে এতো সুন্দর মন্তব্য করার জন্য। ভালো থাকবেন।
আমি প্রথমেই শ্রদ্ধা জানাই আপনাকে ও আপনার দায়িত্বশীল মনোভাবকে। পারিবারিক এত অসুবিধার মধ্যে পরিবারের প্রতি নিজের দায়িত্ব ও তার পাশাপাশি কমিউনিটিতে আপনার কাজগুলো সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে কখনও পিছু পা হন না। এটা সত্যি শিক্ষনীয় বিষয়।
ঠিকই বলেছেন এই প্রচন্ড গরমের কারনে সুস্থ মানুষের অবস্থাও খুব খারাপ হয়ে পড়ছে। সেখানে বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষরা তো আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছে। আমি নিজেও কয়েকদিন যাবত হালকা জ্বর জ্বর ও অসুস্থতায় ভুগছি।
আপনাকে দেখে অনেক আপসেট মনে হচ্ছে। ধৈর্য্য ধরুন ও ঈশ্বরের উপর ভরসা রাখুন সব ঠিক হয়ে যাবে। ভালো থাকবেন।
সত্যিই অনেক আপসেট ছিলাম ঐদিন। এর আগে কাউকে এমন ভাবে সুগার ফল করা অবস্থায় দেখিনি। এদিন শশুরমশাইকে ঐভাবে দেখে আমি কেমন যেন হয়ে গিয়েছিলাম। দায়িত্ব পালন আরও ভালোভাবে করতে হতো। ওটা আমি সম্পূর্ণ পারিনি, তবে ভবিষ্যতে আরও চেষ্টা করবো। তবে আপনাদের মন্তব্য আমাকে অনেক উৎসাহিত করেছে। ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন।
বাসায় একজন বয়স্ক অসুস্থ মানুষ থাকলে সারাক্ষণই সবাইকে একটা টেনশন এর মাঝে থাকতে হয়।
আর যদি সেই মানুষটা হঠাৎ করেই আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পরে তাহলে নিজেদের অবস্থা কি হয় সেটা ভালো করেই জানি আমি। কারণ এই রকম অবস্থার মাঝখান দিয়ে অনেকবারই গিয়েছি। এর উপর আবার যোগ হয়েছে কমিউনিটির কাজ।
আপনি রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে বুমিং এর কাজ করতেছেন এই লেখাটা পড়ার সময় আমার দৃশ্যটা চোখের সামনে ভেসে ওঠলো। যা-ই হোক নিজের প্রতিও যত্ন নিবেন সবার সাথে সাথে।
সেই সাথে প্রার্থনা করি আপনার শশুর মশাই দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন।
ভালো থাকবেন সবসময়।
না আসলে হসপিটালের ভিতরে নেটওয়ার্ক থাকে না। আর হসপিটালটা একদম রাস্তার পাশেই, তাই অগত্যা ওখানে দাড়িয়েই প্রতি দিন বুমিং লিঙ্ক দিতে হতো। সত্যিই বাড়িতে বয়স্ক মানুষ থাকলে টেনশন হয়। শশুরমশাইয়ের এই অসুস্থতা আরও বেশি চিন্তায় ফেলেছিল। ভালো লাগলো আপনার মন্তব্য পড়ে। ভালো থাকবেন।