"কিছু কিছু ভালোলাগা আজীবন সাথে থাকে, ভিন্ন সময়ে ভিন্ন রূপে"

in Incredible Indialast year
IMG_20230514_005056.jpg
আমার ডায়েরীর সম্ভার

Hello,

Everyone,

করি আপনারা সকলে ভালো আছেন এবং আপনাদের প্রত্যেকের আজকের দিনটি অনেক ভালো কেটেছে।

আজকে আমি আপনাদের সকলের সাথে আমার নিজের একটি অভ্যাসের কথা শেয়ার করবো। আমার বিশ্বাস আমার মতন আপনাদের অনেকেরই এই অভ্যাসটি রয়েছে। সেটি হচ্ছে ডাইরি লেখা।

বেশ অনেক বছর আগে থেকেই আমি আমার জীবনের বিশেষ বিশেষ দিনের ভালোলাগা বা মন্দ লাগা নিয়ে লিখতে শুরু করি। না শুধুমাত্র কবিতা নয়। কোনো ভালো স্মৃতি, কোনো খারাপ লাগার ঘটনা। কারোর জন্মদিনের তারিখ কিংবা বিভিন্ন বইয়ের পাতায় পড়া এমন কোনো লাইন যা মন ছুঁয়েছে। এইসব কিছুই লিখে রাখার অভ্যাস ছিলো আমার।

অনেক গুন আছে এই লেখার মধ্যে। এমন অনেক অনুভূতি আমাদের মনের মধ্যে তৈরি হয়,যেগুলো আমরা সব সময় অপর কোনো ব্যক্তিকে বলে বোঝাতে পারি না। সেটা ভালো লাগাকে কেন্দ্র করে হোক, বা খারাপ লাগাকে। অথচ দেখবেন সেই কথাগুলো যদি লেখার মাধ্যমে প্রকাশ করার চেষ্টা করি, তাহলে অনেক সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করা সম্ভব হয়। অবশ্য এটা আমার ব্যক্তিগত অভিমত। অনেকেই হয়তো আবার লেখার থেকেও মুখে বলাতেই বেশি সচ্ছন্দ বোধ করেন।

প্রত্যেকের মতন আমার জীবনেও এমন একটা সময় এলো যখন কষ্টর থেকেও ভালো লাগাতে মন ভরে গেল। জীবনের নতুন একটি পর্যায়ে এলে প্রথম ভালোবাসা কি সেটা অনুভব করলাম। সেই অনুভূতির প্রত্যেকটি দিনের ভালোলাগা খারাপ লাগা আমি ডায়েরীতে পাতার সাথে ভাগ করে নিতে শুরু করলাম।

IMG_20230514_005257.jpg
অনুভূতির প্রকাশ লেখার মাধ্যমেই‌ সবথেকে ভালো হয়

আপনারা অনেকেই হয়তো বিশ্বাস করবেন না, তখন আমি আমার প্রতিদিনের অনুভূতির কথা ডায়েরিতে লিখতাম এবং কখনো কখনো রাগে অভিমানে নিজেই সেই ডায়েরির পাতাগুলোকে বহুবার টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলে দিতাম।

আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই একটা বয়সে আমরা অনেক নতুন অনুভূতির সম্মুখীন হই। তখন নতুন অনেক কিছু ভালো লাগে, নতুন অনেক স্বপ্ন দেখি, নতুন ভাবে জীবনকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়।

এমন নয় যে আমি শুধুমাত্র আমার মন খারাপের কথাই লিখতাম। অনেক ভালো কিছু মুহূর্তের কথাও আমি লিখতাম। এমনকি আমার তখন গান লিখে রাখারও অভ্যাস ছিলো। বর্তমানে গান লিখে রাখার প্রয়োজন পড়ে না, কিন্তু আমি যেই সময়কার কথা বলছি, তখন কিন্তু মোবাইল ফোনের এত বেশি ব্যবহার ছিল না। থাকলেও তা হাতে গোনা কয়েকজনের কাছেই ছিল, কিন্তু স্মার্টফোনের ব্যবহার তখনও শুরু হয়নি।

এই কারণে মন চাইলেই কিন্তু নিজের পছন্দের গান বারবার শোনা সম্ভব হতো না। তখন ভরসা ছিল রেডিও অথবা কিপ্যাড ফোনে মেমোরি কার্ডে ডাউনলোড করা নিজের প্রিয় কিছু গান। এই কারণে আমার পুরনো ডায়েরিতে অনেক গান লেখা থাকতো, যেগুলো সেই সময় আমার ভীষণ ভালো লাগতো।

লেখার অভ্যাসটা বিয়ের পরে আস্তে আস্তে কেমন যেন বন্ধ হয়ে গেলো। আসলে আমি নিজেই এই অভ্যাসটা ত্যাগ করলাম। কারণ একটা সময় আমার মনে হল এই ডায়েরী লেখার অভ্যাসটা খুব একটা ভালো অভ্যাস নয়। হ্যাঁ যদি আপনি শুধুমাত্র নিজের আনন্দের স্মৃতিগুলো ডাইরির পাতায় বন্দি করতে পারেন,তবেই আপনি লেখার অভ্যাসটা রাখুন।

কিন্তু যদি নিজের খারাপ লাগাগুলো ডায়েরীতে লেখার অভ্যাস আপনার থাকে, তাহলে আমি বলব সেটি বন্ধ করে দিন। কারণ আপনি আজ যে খারাপ লাগার কথাগুলো লিখবেন আজ থেকে কয়েক বছর বাদে সেই ডায়েরীর পাতা যখন উল্টে দেখবেন, তখন কিন্তু আজকের এই খারাপ দিনের স্মৃতি আপনি সেই সময় দাঁড়িয়ে আবারও মনে করবেন। তাতে আপনার খারাপ লাগাই বাড়বে।

IMG_20230514_005131.jpg

আমরা সব সময় আমাদের নিজের মনের ভাবনা নিজের, নিজের কল্পনাকে লেখার মাধ্যমে প্রকাশ করতে পছন্দ করি। আমিও তাই করতাম। তাই বাস্তবতার মাটিতে পা রাখার আগে পর্যন্ত নিজের স্বপ্নের একটি দুনিয়া ছিল, যেটা নিজের মতো করে সাজানোর ইচ্ছে ছিলো বরাবর। আর সেই ইচ্ছের কথাগুলোই আমি খুব সুন্দর ভাবে লিখে রেখেছিলাম। কিন্তু যখন থেকে বাস্তবতার সাথে পরিচিত হলাম, তখন বুঝলাম কিছু জিনিস শুধুমাত্র ডায়েরির পাতাতেই লেখা সম্ভব। বাস্তব জীবনে তার পরিপূর্ণতা সম্ভব হয় না। ডায়েরীর পাতার সাথে জীবনের মিল একদমই অসম্ভব।

এই কারণেই আমি ডায়েরী লেখার অভ্যাস ত্যাগ করলাম। কারণ আমি যখন পুরনো ডায়েরী পড়তাম তখন আমার জীবনের না পাওয়া গুলো আমাকে অনেক বেশি করে নাড়া দিতো। পাতা উল্টানোর সাথে সাথে নিজের স্বপ্নের জগতের কথা মনে পড়তো, যার সাথে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। একটা সময় বুঝলাম যতদিন পর্যন্ত এই ডায়েরীর পাতা আমি উল্টাতে থাকবো, ততদিন পর্যন্ত পুরনো দিনের কষ্টগুলো থেকে নিজের মুক্ত হতে পারব না।

এমনিতেই আমাদের জীবনে ভালো সময়ের থেকে খারাপ সময় অনেক বেশি। তাই নিজেকে ফেলে আসা দিনের কষ্ট থেকে মুক্ত করার জন্য পুরনো দিনের একটি অভ্যাস থেকে সরিয়ে ফেলেছি বহু বছর আগে। যাতে সদ্য পাওয়া খারাপ লাগাগুলো ভবিষ্যতে কষ্টের ভার না বাড়ায়।

তবে দেখুন‌ আমাদের ভালো লাগা গুলো আমাদের ছাড়তে চায় না। তাই আজ এইসব কথা গুলোও আপনাদের সাথে লিখে শেয়ার করছি।শুধু ডায়েরীর পাতা থেকে স্টিমিট প্ল্যাটফর্ম এইটুকু রাস্তা পাড় করেছি এতো বছরে, কিন্তু ভালো লাগা গুলো একই রকম রয়ে গেছে।

আপনাদের মধ্যে কারা কারা এখনো পর্যন্ত ডায়েরী লেখেন, অবশ্যই সেটা কমেন্ট এর মাধ্যমে জানাবেন।আর আমার মতন আপনাদের লেখাও আপনাদেরকে পুরনো দিনের খারাপ লাগাগুলো মনে করিয়ে দেয় কিনা, সেটাও জানতে ভুলবেন না। সকলে ভালো থাকবেন। শুভ রাত্রি।

Sort:  
 last year 

লেখার অভ্যাসটা বিয়ের পরে আস্তে আস্তে কেমন যেন বন্ধ হয়ে গেলো। আসলে আমি নিজেই এই অভ্যাসটা ত্যাগ করলাম। কারণ একটা সময় আমার মনে হল এই ডায়েরী লেখার অভ্যাসটা খুব একটা ভালো অভ্যাস নয়। হ্যাঁ যদি আপনি শুধুমাত্র নিজের আনন্দের স্মৃতিগুলো ডাইরির পাতায় বন্দি করতে পারেন,তবেই আপনি লেখার অভ্যাসটা রাখুন।

তবে এই অভ্যাসটা আরো আগে ছেড়ে দিতে পারলেই হয়তোবা ভালো হতো বলে আমার মনে হয়। কারণ নিজেকে পরিবর্তন করার জন্য এমন কিছু করা উচিত, যেটা অতীত থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করবে।

কিন্তু এই লিপিবদ্ধ করা খারাপ অনুভূতি গুলো আমার মনে হয় সেই পরিবর্তনের পথে একটি বাঁধা স্বরূপ। তাই এই অভ্যাসটা ছেড়ে দিয়ে ভালোই করেছেন। জীবন একটাই তাই নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

দিদি ভালো লাগলো আপনার লেখাটি, যেখান থেকে আমিও কিছু নিয়েছি। তবে অব্যক্ত রাখলাম, কারণ দুর্বলতা কখনোই প্রকাশ্যে আনতে নেই‌। আপনার জন্য অনেক শুভকামনা রইল দিদি।

Loading...
 last year 

ভালো খারাপের অনুভূতিটা সবার সাথে প্রকাশ করা সম্ভব নয় যদি সে তার নিজের ডাইরির পাতায় লিখে রাখে এই অভ্যাসটা অনেক মানুষের ভেতরে আছে যেমন আপনারও ছিলো হয়তোবা সব মানুষের সাথে সব সময় সব ধরনের কথা শেয়ার করা যায় না নিজের মনের কথা শেয়ার করা যায় না কিন্তু নিজের অনুভূতিটুকু নিজের ডায়েরির পাতায় লিখে রাখা সম্ভব।

খুব সুন্দর একটি পোস্ট আজ আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন পরে খুবই ভালো লাগলো ধন্যবাদ আপনাকে দিদি।

 last year (edited)

@sampabiswas, আপনার লেখা পড়ে নিজের মন্তব্য ভাগ করে নেওয়ার প্রচেষ্টা করলাম, তবে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি না বদলালে বোঝার মানুষ পাওয়া দুষ্কর, ডাইরি বেচে থাক মনের জমা রাখা অনুভূতির খেরো খাতা হিসেবে।

ডায়রী মানে জমা রাখা,
মনের সকল অনুভূতি...
ডায়রী মানে লিপিবদ্ধ...
সেই সকল অব্যাক্ত স্মৃতি।
ডায়েরি যা জমা রাখে...
মনের সকল কথা।
ডাইরি মানে মুখের কথায়..
না বোঝা মনের সকল ব্যথা।

ডাইরি ধরে রাখতে সক্ষম শৈশব..
ডাইরি ধরে রাখে,
যাকিছু হারিয়ে গেছে সেইসব।

এমনিতেই আমাদের জীবনে ভালো সময়ের থেকে খারাপ সময় অনেক বেশি।

আমার দৃষ্টিভঙ্গি ডায়রী সম্পর্কে এটাই, রইলো বাকি লেখায় উল্লেখিত বাক্যটি, এখানে আমার অভিমত, জীবনের একমুহুর্তের ভালো লাগা সময়কে মূল্য দিয়ে ধরে রাখা, খারাপের চাইতেও।

কারণ একটা হাসির কথা বার বার শোনালে যদি হাসি না পায়;
তাহলে একই দুঃখের কথা বারংবার নিজেকে মনে করিয়ে দুঃখের ভার বাড়িয়ে লাভ কি?

 last year 

প্রিয় দিদি আপনার অভ্যাস দেখে আমার খুব ভালো লাগলো। লেখালেখির অভ্যাসটা আসলে আমাদের সবারই চর্চা করা উচিত। আপনার পুরনো দিনের ডাইরি গুলো দেখে অনেক ভালো লাগলো। ভালো থাকবেন সব সময়।

 last year 

ডায়েরি লিখতে আমরা কম বেশি সবাই পছন্দ করি,,, ডায়েরি বিশেষ কিছু ভালো লাগা এবং খারাপ লাগার ও বিশেষ কিছু ডায়েরি তে লিখে থাকি,,,,

জীবনের সুখ ও দুঃখ গুলোকে স্মৃতি হিসেবে মনে রাখার জন্য আমরা ডায়েরি লিখে থাকি,,,

তবে আপনার কথা গুলো সত্য যে ডায়েরি তে দুঃখের বিষয় গুলো না লেখা টাই ভালো,,,কারন কারাপ লাগার বিষয় একবার পার করে আসলে সেই বিষয় আর মনে না করা টাই ভালো,,,,

যাই হোক দিদি আপনার জীবনের কিছু বিষয় নিয়ে আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ,,,ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.13
JST 0.029
BTC 65697.93
ETH 3342.39
USDT 1.00
SBD 2.63