চাঁদের পাহাড় বই রিভিউ

in Incredible Indialast year (edited)
আসসালামু আলাইকুম

সর্বপ্রথমে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি steemit এর সকল সদস্যকে। কেমন আছেন আপনারা সবাই? আশা করি ভালো আছেন। আমি ও ভালো আছি। আজ, আমি এখানে আপনাদের সাথে একটি বই রিভিউ শেয়ার করবো। আশা করি ভালই লাগবে। আজকে আমি যে বই নিয়ে কথা বলবো নিঃসন্দেহে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সেরা একটি বই এবং সেরা একটি এডভেঞ্চার বই। আর সেই সেরা বইটি হল বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় এর চাঁদের পাহাড়।

7072eca5-3202-419a-83b4-ed626b4c1798.jpg

চাঁদের পাহাড়।

আমি এই বইটি প্রথম পরেছিলাম আমার কৈশোরকালে। তারপরে আরও কয়েকবার পরেছি। সম্প্রতি আমার মেয়ে তার বন্ধুদের কাছ থেকে বইটি উপহার পেয়েছে। অনেক বছর পরে বইটি দেখে আবার পড়তে শুরু করলাম আর আজকেই শেষ করলাম। অসম্ভব সুন্দর আর রোমাঞ্চকর বই যা একবার পড়া শুরু করলে শেষ না করে উঠা সম্ভব নয়।

আসলে এই বইটি লেখক কোন বিদেশি গল্পের অনুবাদ নয় অথবা এই গল্পটি ছায়া অব্লম্বনে লিখিত কোন গল্প নয়। এটি বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় একান্ত নিজের একটি লেখা উপন্যাস। লেখক কোনদিন নিজের চোখে আফ্রিকায় দেখেননি বা ভ্রমনে যাননি। তিনি পড়াশুনা করে আফ্রিকার যে চিত্র তুলে ধরেছেন তা একজন ভ্রমণকারী পরিব্রাজকের চেয়ে কম নয়। আমার মনে হয় বই পড়ুয়াদের জন্য অবশ্যই পাঠযোগ্য একটি বই।

বইয়ের কাহিনীটি এই রকম, গ্রামের সাধারন একটি ছেলে শংকর যে কিনা এফ এ পাশ দিয়ে বসে আছে আর ঘুরে ফিরে বেড়াচ্ছে । এক সময় তার মনে হল সে কেরানির চাকরী করে জীবন অতিবাহিত করবেনা সে এডভেঞ্চার চায়। এক সময় সেই সুযোগটা তার চলে আসে রেল কোম্পানির চাকরী নিয়ে চলে আসে আফ্রিকার নির্জন একটা স্টেশনে পোস্টেড হয়। সেখানে সে ছাড়া আর কেউ থাকেনা আশেপাশে কোন লোকালয় নেই, অরন্য একটি অঞ্চল।

সেইখানে সে রাতের বেলা শুনতে পায় সিংহের গর্জন এবং তার ঘরের আশেপাশে সিংহের চলাফেরা। এগুলোর সাথে আস্তে আস্তে সে অভ্যস্ত্য হয়ে পরে। একদিন আফ্রিকার বিখ্যাত ব্লাকমাম্বা সাপের মুখোমুখি হয়। রাতের বেলা ঘুম থেকে উঠে দেখে তার সামনে ব্লাকমাম্বা সাপ যেটাকে সে টর্চলাইটের সাহায্যে হিপনোটাইজ করে আত্মরক্ষা করে সেখান থেকে বেঁচে যায়। এইরকম বিভিন্ন ঘটনা ঘটতে থাকে।

e03fdbe5-9dd8-4e57-b9c2-1bdb3fdb8347.jpg

একসময় রেল কোম্পানিতে সিংহের অত্যাচার বেড়ে যায় এবং শ্রমিকদেরকে খেয়ে ফেলতে থাকে। এগুলো থেকে পর্যায়ক্রমে সে বের হতে থাকে। আর তার মধ্যে প্রচুর এডভেঞ্চার নেশা জেগে উঠে। সেইসময় তার সাথে পর্তুগীজ একজন এডভেঞ্চার প্রেমি মানুষের পরিচয় হয় । তার নাম ছিল ডিয়েগো আল্ভারেজ সে কিনা বের হয়েছে হীরের খনির সন্ধানে। তার সাথে বেরিয়ে পরে শঙ্কর হিরেরখনির সন্ধানে। হীরের খনির খোঁজে বের হয়ে নানা রকম অভিজ্ঞতার সম্মুখে পরে। অনেক রকম প্রতিকুলতার সম্মুখিন হয়ে আফ্রিকার গহিন অরন্যে প্রবেশ করে। তারা চাঁদের পাহাড় নামে অঞ্চলের দিকে যাওয়ার পথে সেইখানে তাদের সাথে জুলুলেন নামে উপ জাতীদের সাথে দেখা হয়।

তারা নানা রকম দিক নির্দেশনা দেয় এবং সতর্ক করে দেন সেই চাঁদের পাহাড় এলাকার। সতর্ক করে দেন সেখানে এক রকম মনস্টার আছে যার নাম রদেশিয়ান। সেই প্রাণী গুলো খুবই রহস্যময় এবং ভয়ঙ্কর। সেখানে বুনিপ নামে একটা প্রবাদ প্রচলিত আছে যে, ঐ বুনিপের হাত থেকে কেউ কখনো ফিরে আসতে পারেনা। তারপরেও তারা সেই অভিযানে যায় এবং খুবই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মকাবেলায় পরে। তার চোখের সামনে আগ্নেয়গিরির ভয়ঙ্কর অগ্নুৎপাত হতে দেখে আর সেই সময় অরন্যের উপর ভয়ঙ্কর তাণ্ডব দেখে। এক সময় ডিয়েগো আল্ভারেজ মারা যায়। তার মৃত্যুতে শঙ্কর ভেঙ্গে পরে, সে বেরিয়ে আস্তে সেইখান থেকে। সে ঐ অগ্নুৎপাতের নাম দেয় ডিয়েগো আল্ভারেজ।

ডিয়েগোর মৃত্যুর পর সে আর হীরের খনির সন্ধান আর চায় না। সে ফিরে আস্তে চায় তখন ভাগ্য ক্রমে সে একটা গুহার মধ্যে চক্রে পরে যায়। অন্ধকার গুহা থেকে সে কিছু নুড়ি পাথর পকেটে পুরে নেয় চিহ্ন দেবার জন্য।অনেক পরিশ্রমে আফ্রিকার কালাহারি মরুভূমি পাড়ি দেয় কনরকম খাবার ও পানি ছাড়া। অনেক কষ্টে সে লোকালয়ে বের হয়ে আসে। পকেট হাতরে যখন সে দেখে নুড়ি পাথরগুলো আসলে হীরে। আসলে ঐ গুহাটি ছিল হীরের খনি যেটা শঙ্কর অনিচ্ছাকৃ্তভাবে আবিষ্কার করে ফেলেন।

এভাবে আস্তে আস্তে গল্পটি শেষ হয়। প্রচণ্ড জমজমাট একটি কাহিনি। এই গল্পটি না পড়লে কেউ বুঝতে পারবেনা এতোটাই রমাঞ্চকর। বাংলার অন্যতম সেরা এডভেঞ্চার গল্প।

Screenshot_20.png

পোস্টটি পড়ার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ
Sort:  
 last year 

অনেক মজার একটি গল্প আপনি আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন। শেষ অব্দি এসে যখন জানতে পারলাম সে সেই অজান্তেই হীরের আবিষ্কার করে ফেলল কিন্তু শেষ অব্দি কেমন যেন শেষ হলো না আরো পড়তে ইচ্ছে করছিল। পড়তেছিলাম আর যেন হারিয়ে যাচ্ছিলাম সেই অবস্থানে।

খুবই আশ্চর্যজনক হল যখন সে তার সঙ্গীকে হারিয়ে ফেললে এবং সে সেখান থেকে বাঁচতে চাইছে এ কারণে পাথর হিসেবে পকেটে রেখে দিল কিছু নুরি পাথর সেখান থেকেই শুরু হল আবিষ্কারের পথযাত্রা। কিন্তু এই রোমাঞ্চকর গল্প শেষ না হওয়া অব্দি আমার কেমন যেন লাগছে।

যখন সে রেলস্টেশনে এমন অদ্ভুত ঘটনার সম্মুখীন হন তখন বেশ রোমান্স কর ছিল। তার এই অসম্ভব রোমান্স কর ঘটনার সম্মুখীন হন কেবলমাত্র তার সেই কেরানির চাকরি থেকে সে নিজেকে এডভেঞ্চার হিসেবে দেখতে চায়।

যাই হোক পরিশেষে এটাই বলব মানুষ এখন বই পড়া যেন ছেড়েই দিয়েছে। ভাগ্যক্রমে অনেকদিন পর বই রিভিউ দেখতে পেলাম। এখন তো শুধু মানুষ গেম খেলা নিয়ে ব্যস্ত নাটক দেখা নিয়ে ব্যস্ত এবং নাটকের রিভিউ দিতে ব্যস্ত। পরিশেষে ধন্যবাদ জানাই সুন্দর একটি লেখা আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য। একই সাথে আপনার মেয়ের জন্য আমার পক্ষ থেকে অনেক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা রইলো। আপনার মেয়ে এই বইটি পুরস্কার পেয়েছে এবং সেই বই নিয়ে আপনি আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন যদিও আপনি এই সম্পর্কে পূর্বেই ওয়াকিবহাল ছিলেন।

ধন্যবাদ আপনাকে ভাই আমার পোস্ট টি পড়ার জন্য। জানিনা কতটুকু রিভিউ দিয়ে বুঝাতে পেরেছি। বইটা পড়তে পারলে আরও বেশি রোমাঞ্চিত হবেন।

 last year 

যতটুকু তুলে ধরেছেন এতেই অনেক রোমাঞ্চিত হয়েছিল, তবে বইটি পড়লে আরো ভালো লাগতো।

Loading...
 last year 

আসলে নিজের কাজের ব্যস্ততার কারণে এখন আর বই পড়া হয় না! কিন্তু আগে পড়তাম,, আজকে আপনার বই পড়ার রিভিউটা পড়তে গিয়ে খুব ভালো লাগলো! কারণ একটা মানুষ নিজের অজান্তে আবিষ্কার করল হীরের খনি।

রেলস্টেশনে আশ্চর্যকর ঘটনাগুলো ঘটতে থাকে! যেটা আসলে পড়তে গিয়ে আমি নিজেও অনেকটা অবাক হলাম! কারণ যে মানুষটা তার কেরানির চাকরি বাদ দিয়ে,,, নিজেকে অ্যাডভেঞ্চার হিসেবে সবার সামনে পরিচিতি করতে গিয়েছিল,,, তার সাথেই ঘটে যাচ্ছিল নানা ধরনের ঘটনা।

আপনার গল্পের পরিশেষে জানতে পারলাম! সে কিছুটা হলেও আবিষ্কার করতে পেরেছে নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে,,, সে সুরক্ষা করার জন্য কিছু নুড়ি পাথর নিজের পকেটে নিয়েছিল! কিন্তু সে যখন লোকালয়ে ফিরে গেলো! তখন সে জানতে পারলো এগুলো হচ্ছে আসল হিরে।

অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে,,, চাঁদের পাহাড় বইয়ের রিভিউ আমাদের সাথে উপস্থাপন করার জন্য! আপনার কাছ থেকে রিভিউ টা পেয়ে আমি অবশ্যই বইটি পড়ার চেষ্টা করব! অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল! ভালো থাকবেন।

আপু আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ পোস্ট টি পড়ার জন্য এবং মূল্যবান মতামত দেয়ার জন্য।

 last year 

চাদের পাহাড় সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করেছেন যা পড়ে অনেক ভালো লাগল। চাদের পাহাড় গল্পটি পড়ার সময় বারবার কৈশোরে ফিরে যাচ্ছিলাম। প্রথমবার পড়ার সেই রোমাঞ্চগুলো ফিরে ফিরে আসছিল। একইসাথে পুরোনো সেই নির্মল সুন্দর দিনের আনন্দ, আর সেই দিন হারানোর আফসোস একসাথে মিশে একটা অবর্ণনীয় অনুভূতি হচ্ছিল। এখন লেখার সময় লজ্জা লাগছে হালকা।

চাদের পাহাড় একটা বাঙালি ছেলের গল্প। ছেলেটার নাম শঙ্কর। এই ছেলেটাকে আমরা সবাই চিনি। আমাদের মধ্যে অনেকেই শঙ্করের মাঝে নিজেকে খুঁজে পাবো। আবার না পেলেও আমাদের সবা্রই শঙ্করের মত এক দুজন বন্ধু আছে। বাংলার চিরন্তন পাড়া-গাঁ, সে গাঁয়ের পথ-ঘাট, সেখানকার সহজসরল মানুষজন, খুব চেনা মনে হবে। আমাদের মতই শঙ্করও অনেক স্বপ্ন দেখে, অর্থ সংকটে ভোগে, মাকে নিয়ে খুব দুশ্চিন্তা করে।

বিছানায় শুয়ে আমরা যেমন স্বপ্ন দেখতাম একদিন খুব বড় একটা অ্যাডভেঞ্চারে যাব, বন-বাদারে ঘুরে বেড়াব, হঠাৎ গুপ্তধন খুঁজে পাব। শঙ্করও তেমন স্বপ্ন দেখত। আমাদের সাথে শঙ্করের পার্থক্যটা হল, একদিন শঙ্করের স্বপ্নটা সত্যি হয়ে গেল।

একদিন সব পিছুটান কাটিয়ে শঙ্কর চলে গেল আফ্রিকায়। শুরু হল নতুন জীবন। অনিশ্চিত সে জীবনে অনেক নতুন কিছু শিখল, সেসবের সাথে মানিয়ে নিল, বন্ধুত্ব পেল, ভালোবাসা পেল, ভালোবাসা হারালও। শঙ্কর ধীরে ধীরে পূর্ণ হয়ে উঠল। গল্পে আমরা গাঁয়ের ছোট্ট শঙ্করকে বড় হয়ে উঠতে দেখি, হোচট খেয়ে আবার উঠে দাড়াতে দেখি, হাল না-ছাড়ার দৃঢ়তা দেখি। শঙ্করের গল্প আমাদের মাঝে আস্থা জাগায়, ফেলে আসা ভুলগুলোকে ছোট করে দেখতে শেখায়, আবার উঠে দাড়ানোর তাড়না দেয়। তাই আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করে আমাদেরকে পড়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। ভালো থাকবেন

Coin Marketplace

STEEM 0.15
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 56269.96
ETH 2364.95
USDT 1.00
SBD 2.26