সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে বিশ্বাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

হ্যালো বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।

Picsart_23-03-11_22-17-47-891.jpg

"বিশ্বাস" এই শব্দটি আমাদের প্রত্যেকের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বাস আছে বলেই আমাদের সমাজ আজও টিকে আছে। যদি কখনো আমাদের থেকে এই শব্দটি উঠে যায় তাহলে সবকিছু মিথ্যা হয়ে যাবে।

আমাদের সমাজ ব্যবস্থা যেমন নড়বড়ে হয়ে যাবে তেমনি আমাদের পরিবারের বন্ধনও হালকা হয়ে যাবে। যে বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে ভালোবাসা টিকে থাকে, সেই ভালোবাসার সম্পর্কগুলো মুহূর্তের মধ্যেই ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।

দীর্ঘদিনের বৈবাহিক সম্পর্ক ভেঙ্গে যায় শুধু মাত্র বিশ্বাস না থাকার কারণে। আমি খুব কাছে থেকে এরকম একটি ঘটনার সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলাম। হঠাৎ করে আজ একা বসে থাকার সময় অনেক পুরনো সেই ঘটনাটি মনে পড়লো।

monk-555391_1920.jpg

Source

আজ থেকে ১০ বছর আগের ঘটনা। যখন আমি প্রথম মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে রংপুরে কাজ শুরু করি। আমার এরিয়া ছিল মেডিকেলের কলেজ হসপিটাল ও আশেপাশের কয়েকটি ক্লিনিক।

ঢাকায় হেড অফিসে ট্রেনিং শেষ করে রাতের বেলা রংপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেই। প্রথম চাকরি তাই উৎসাহ ও উদ্দীপনা কোন অংশে কম ছিল না। সারারাত জার্নি করার পরেও ক্লান্তি ছিল না শরীরে।

তাই সামান্য কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে একদম সঠিক সময়ে রংপুর রিজিওনাল অফিসে রিপোর্টিং করি। অফিসে আসার পর রিজিওনাল ম্যানেজারের কাছে আমার কাগজপত্র নিয়ে হাজির হলাম।

খুব ভালো লাগলো নতুন স্যারের ব্যবহার। আমাকে ট্রেনিং এর বিষয়ে অনেক খুঁটিনাটি জিজ্ঞাসা করল। আর ট্রেনিং ম্যানেজারের কথা বারবার জিজ্ঞাসা করছিল।

সেই কথার মাঝে আমারও বুঝতে বাকি রইলো না যে, হেড অফিস থেকে আমার কথা আলাদাভাবে বলে দেয়া হয়েছিল। কারণ আমি ট্রেনিংয়ে সেখানে প্রথম হয়েছিলাম। তাই সেখানকার স্যারেরা আমাকে আলাদাভাবে নজরে রাখত।

যাইহোক নিজের কথা বলে আর সময় নষ্ট করছি না। রিপোর্টিং করে সোজা বাসায় চলে গিয়েছিলাম বিশ্রামের জন্য। স্যার আমাকে বলে দিল বিশ্রাম করে বিকালে ডাক্তারের চেম্বারে আসতে। আমি সেই কথামতো বিকালে সঠিক নিয়মে চলে আসলাম।

প্রথম দিনেই প্রথম যে ডাক্তারকে ভিজিট করতে গেলাম তিনি ছিলেন গাইনি বিভাগের একজন মহিলা ডাক্তার। খুব উৎসাহ ছিল আমার মধ্যে ট্রেনিংয়ে যা শিখেছি তার পটপট করে বলে দিব। কিন্তু আমার সেই ইচ্ছা পূরণ হলো না।

চেম্বারের সামনে গিয়ে বুঝতে পারলাম মহিলা ডাক্তার কোন কোম্পানির কাছে ভিজিট নেয় না। প্রথমত আমার কাছে খারাপ লাগলেও বিষয়টি আমার মনে জায়গা করে নিয়েছিল। মনে মনে ভাবলাম এখনো এমন ডাক্তার আছে যারা কোম্পানির কাছে কিছু খায় না।

কিন্তু কয়েকদিন যেতে না যেতেই আমার ধারণা একদম পাল্টে গেল। যে ঘটনা জানতে পারলাম সেটা সত্যিই অনেক লজ্জাজনক। সেই ঘটনার পর থেকে এই ডাক্তার সাহেবা আর কোন কোম্পানির লোকদের সামনে আসেন না।

woman-2696408_1920.jpg

Source

তিনি বিশ্বাসের সমস্ত সম্পর্ককে ভুলে গিয়ে তার গাড়ির ড্রাইভারকে বিয়ে করেছেন। অথচ তার স্বামী একজন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার দেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। শুধুমাত্র তার অপরাধ এই ধরনের চাকরিতে ছুটি কম।

তাছাড়া আমি আর কিইবা বলতে পারি। চাকরির সুবাদে তার স্বামীকে মাসের পর মাস সমুদ্রে কাটাতে হয়। তাই হয়তো স্ত্রীকে সময় দেয়া কম হয়। এদিকে সাময়িক মোহ তাকে গ্রাস করে ফেলেছিল।

তাই বিশ্বাস ও এতদিনে সম্পর্ককে জলাঞ্জলি দিয়ে ড্রাইভারকে বিয়ে করে নেয়। ঘটনাটি আমি এখানে জয়েন করার কয়েক মাস আগের। দীর্ঘদিন পর চাকরি থেকে ছুটিতে আসে সেই কর্মকর্তা।

কিন্তু শেষবার বাসায় ফিরে স্ত্রীকে আর আগের মত করে পায় না। কেমন যেন একটা পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয় তার মধ্যে। বিষয়টা তার কাছে অনেক খারাপ লাগে। কিন্তু সম্পর্কটাকে স্বাভাবিক রাখার জন্য তিনি বিষয়টি চেপে যান।

কিন্তু এদিকে ড্রাইভার এর সাথে পরকীয়া তখন তুঙ্গে ডাক্তার সাহেবার। দীর্ঘদিন পর তার স্বামী আসার কারণে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটে। কিন্তু তারা বারবার সুযোগ খুঁজতে থাকে এক অপরের সাথে মিলিত হওয়ার।

শেষ পর্যন্ত একদিন ইঞ্জিনিয়ার সাহেব তাদেরকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পায়। তারার বুঝতে বাকি রইল না সবকিছু। সে উপলব্ধি করতে পেরেছে এই নারী আর কোনভাবেই তার নেই।

সে নেহায়েত ভদ্রলোক তাই সবকিছুকে উপেক্ষা করে বুক ভরা কষ্ট নিয়ে আবার সমুদ্রে ফিরে যায়। তারপর থেকে আর ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের কোন খোঁজ খবর পাওয়া যায়নি। তিনি কি বেঁচে আছেন নাকি ওপারে চলে গিয়েছেন এই প্রশ্নটা রয়েই গেছে।

আসলে "বিশ্বাস" এই কথাটির মূল্য আমাদের জীবনে অপরিসীম। আমরা বিশ্বাসকে টিকিয়ে রাখব নিজেদের সম্পর্ক গুলোকে টিকিয়ে রাখার জন্য। তাহলেই আমাদের পরিবার ও সমাজ সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকবে।

বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।

-1675190969286.gif

Our Discord Link

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

Loading...
 last year 

আমাদের জীবনে আসলে বিশ্বাস খুবই মূল্যবান একটা জিনিস। আমরা হয়তোবা অনেকেই অনেক মোহে জড়িয়ে পড়ে, কিন্তু যে সম্পর্কের মধ্যে আমরা আবদ্ধ হই, সে সম্পর্কটাকে টিকিয়ে রাখার জন্য অনেক কিছুই সহ্য করতে হয়।

এই মহিলার কারণে ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের আজ কোন খোঁজ নেই। মহিলাটি একবারও কি চিন্তা করেনি, যে সে লোকটা একদিন হলেও তার স্বামী ছিল। আসলে আমাদের সমাজে এমন কিছু মহিলার রয়েছে, যাদের কারণে পুরো সমাজের নারীগুলো লাঞ্ছিত হয়।

আসলে আপনার পোস্ট পড়ে খুবই ভালো লাগলো, আবার খারাপ ও লেগেছে, যদি ইঞ্জিনিয়ার সাহেব বেঁচে থাকে তাহলে সৃষ্টিকর্তা যেন উনাকে সব সময় ভালো রাখে, এই কামনাই করব। আর যদি উনি ওপারে চলে গিয়ে থাকেন তাহলে সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করব তিনি যেন ওপারেও ইঞ্জিনিয়ার সাহেবকে ভালো রাখে। অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর একটা শিখনীয় পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য, আমার জন্য দোয়া করবেন, আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।

 last year 

জীবনের সবচেয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা আপনি আমাদের মাঝে আজকে শেখালেন আসলে এটা অতি বাস্তব একটি সম্পর্কের জন্য বিশ্বাস অতি অবশ্যই যদি সেই সম্পর্কে বিশ্বাস না থাকে সেই সম্পর্ক কখনোই দীর্ঘস্থায়ী হয়। বিশ্বাসেই বস্তু মিলে কথা সম্পর্কের ভেতরে যদি বিশ্বাস থাকে সেটা বের হয়েছে অনেক সুন্দর লিখেছেন আসলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আপনি তুলে ধরেছেন ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর কিছু কথা আমাদের শেয়ার করার জন্য

 last year 

এ জিবনে কেনোইবা চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে হবে। বিশ্বাস করা ভালো তবে অন্ধের মত করে নয়। আমি এখন পর্যন্ত যতজনকে বিশ্বাস করেছি, ততজনই আমাকে ধোকা দিয়েছে। তাই বলে কি বিশ্বাস করা বাদ দিবো? নাহ.. বিশ্বাস করবো তবে চোখ কান খোলা রেখে।

আরেকটা কথ হলো সম্পর্কের মাঝে বিশ্বাস গুরুত্বপূর্ণ ঠিক আছে, কিন্তু ৩য় শ্রেণির লোকের কথা বিশ্বাস করা একদমই ঠিক নয়, তবে তদারকি করাও শ্রেয়। আজকালকার মানুষ কেও কারো ভালো চায়, যদি কেও চেয়েও থাকে তাহলে আগে নিজেরটা ঠিক রাখবে তারপর অন্যদের। এই হলো বর্তমান পরিস্থিতি।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 58478.70
ETH 3158.37
USDT 1.00
SBD 2.43