প্রয়োজন মানুষকে কোথায় নিয়ে যায়।
হ্যালো বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।
![]() |
---|
শহরে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে সামান্য ধুলাবালি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। যতক্ষণ বাইরে থাকবো জুতার শাইনিং যেন নষ্ট না হয় সেদিকে লক্ষ্য থাকে বেশি। অথচ আজ প্রয়োজনের তাগিদে জুতা খুলে রেখে স্যান্ডেল পায়ে দিয়ে যেতে হয়েছিল প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে।
যে জায়গাগুলোতে যাওয়ার কথা কখনো চিন্তাই করি না অথচ আজ প্রয়োজন আমাকে তার চেয়েও খারাপ জায়গায় নিয়ে গিয়েছে। আগেই কিছুটা ধারণা ছিল ধুলাবালির মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। কিন্তু যাওয়ার পর দেখলাম আমার ধারণা পুরোপুরি মিথ্যা।
যেটুকু ভেবেছিলাম ধুলাবালি হতে পারে তার চেয়ে অনেক অনেক গুন বেশি। ঠিকমতো রাস্তা দিয়ে হাঁটতেই পারছিলাম না। তাছাড়া কিছুক্ষণ পরপর যখন ছোট বাচ্চারা দৌড়ে আসছিল তখন রাস্তার সব ধুলা পাউডারের মতো উড়তে ছিল।
![]() |
---|
দুদিন থেকে আমার এক কলিগকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না। দিনে বহুবার ফোনে ট্রাই করি কিন্তু সমস্ত প্রচেষ্টা মিথ্যা হয়ে যায়। যখন দেখি ওপাশ থেকে ফোনটা বন্ধ তখন সমস্ত হতাশা ভর করে মনে। কি করব বুঝতে পারছিলাম না।
ঠিক সেই সময় অফিস থেকে ফোন আসলো যে ভাবেই হোক ওই কলিগের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। ফোনটা রেখে আমি যোগাযোগ করার জন্য বিকল্প আরো কিছু পন্থা অবলম্বন করলাম। কিন্তু কোনোভাবেই সম্ভব হলো না।
শেষমেষ সিদ্ধান্ত নিলাম বাসায় চলে যাব। কিন্তু দুশ্চিন্তা হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। কোন যানবাহন চলে না ওই রাস্তায়। নদী ভাঙ্গনের ফলে কিছুটা চর হেঁটে যাওয়ার পর একটি বাঁধের রাস্তা পাওয়া যায়। তার অবস্থা অত্যন্ত করুন, চিন্তা করলেই শরীরে জ্বর আসে।
![]() |
---|
বালুর চড়ে হাঁটতে তেমন কোন বেগ পেতে হয়নি। যখন সামনের দিকে বাঁধের রাস্তায় উঠলাম তখন শুরু হলো আসল পরীক্ষা। প্রচন্ড ধুলার কারণে রাস্তায় ঠিক মতো হাঁটতে পারছিলাম না।
কিন্তু কি আর করা দুদিন থেকে কলিগ নি তাই একটু খোঁজখবর তো নিতেই হয়। তাই সেদিকে খেয়াল না করে দ্রুত পায়ে হেঁটে চলেছি তার বাসায়। লক্ষ্য যখন স্থির করেছি বাসায় যাব দেখতে, তাহলে আর রাস্তার কথা চিন্তা করে লাভ কি।
![]() |
---|
এভাবেই প্রায় তিন কিলোমিটার হেঁটে চলেছি কিন্তু রাস্তা যেন শেষ হতেই চায় না। বাসাও ঠিক মত চিনি না তাই সামনে যাকে পাচ্ছি নাম ধরে জিজ্ঞাসা করছি আর সামনে এগিয়ে যাচ্ছি। শেষ পর্যন্ত ছোট একটি ছেলে দূরে বাড়িটা দেখিয়ে দিল।
একটু ভরসা পেলাম আর বেশি হাঁটতে হবে না। তার পাঁচ মিনিটের মাথায় বাড়ির সামনে পৌছে গিয়েছি। এদিকে ধুলা-বালির উপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আমার ঘাম ছুটে গিয়েছিল।
![]() |
---|
![]() |
---|
বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে পায়ের দিকে তাকালাম, ভাগ্যিস জুতা খুলে রেখে এসেছিলাম। একি অবস্থা এই নিয়ে সবার সামনে কিভাবে দাঁড়াবো। পাশেই একটি মসজিদ ছিল। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই মাগরিবের আজান হয়ে যাবে। তাই দ্রুত মসজিদের সামনে গেলাম হাত পা ধুয়ে পরিষ্কার করার জন্য।
আমার মনে নানান রকম প্রশ্ন গিজগিজ করছে। তাই ভেবে নিয়েছিলাম ঠিক সন্ধার আগে বাসায় গিয়ে হাজির যাবো। তাহলে আর বাইরে খুঁজতে হবে না আশা করা যায় আমিও বাসায় খুজে পাব।
![]() |
---|
মাগরিবের নামাজ পড়ে বাসায় গিয়ে উপস্থিত হলাম। শেষ পর্যন্ত বাসায় খুজে পেয়েছি কিন্তু পরিস্থিতি অন্যরকম। একটি দুর্ঘটনার কারণে মোবাইল হারিয়ে ফেলেছে এবং অসুস্থ হয়ে বাসায় পড়ে আছে।
তারপরেও সবকিছু ঠিকঠাক রেখেছে রবিবার হয়তো ব্যাংক করতে পারবে। এই যে এত কাঠ খড় পুড়িয়ে এসেছি ক্লোজিং হয়নি বলে। যে জায়গায় আসার কোন কথাই ছিল না, আজ প্রয়োজন আমাকে কোথায় নিয়ে এসেছে।
আসলে বাস্তবতা অনেক কঠিন। পরিস্থিতি আমাদের অনেক কিছু করাতে বাধ্য করে। যখন প্রয়োজন হয় তখন কঠিন থেকে কঠিনতম কাজ আমরা নির্দ্বিধায় করে ফেলি।
বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
কথাটি একদম সত্য প্রয়োজন সত্যিই মানুষকে কোথা থেকে কোথায় নিয়ে যায় সেটা আসলে বোঝা মুশকিল। আপনাকে সেখানে যাওয়া এবং রাস্তার অবস্থাটা দেখে বোঝা গেল যে আপনি কতটা কষ্টের সেই জায়গায় গেছেন আপনার প্রয়োজনের কারণে।
প্রয়োজনে আপনি কতটা কষ্ট করে ধুলাবালির মধ্যে দিয়ে হেঁটে হেঁটে সেখানে গিয়েছেন। যাইহোক শেষমেশ যে সেখানে পৌঁছতে পেরেছেন সেটাই সবচেয়ে বড় কিছু।
একদম ভাই, রাস্তা কতটা খারাপ হতে পারে আজকে উদাহরণসহ বুঝতে পেরেছি
আপনার কলিগের প্রতি আপনার টান ভালবাসা আছে বলেই। আপনি পথের দিকে না তাকিয়ে তার খোঁজ নেয়ার উদ্দেশ্যে কোথায় থেকে কোথায় চলে গেলেন। আসলেই ঠিক বলেছেন প্রয়োজনের তাগিদে মানুষ কোথায় থেকে কোথায় চলে যায়। সে নিজেও জানে না, সেখানে পথ যত কঠিনই হোক না কেন। তারা একটাই লক্ষ্য থাকে তাকে সেখানে গিয়ে পৌঁছাতে হবে।
শেষমেষ আপনার পায়ের ফটোগ্রাফি গুলো দেখে বুঝতে পারলাম। রাস্তার মধ্যে কতখানি বালু ছিল। যাই হোক মাগরিবের আগেই আপনি আপনার কলিগের বাসায় গিয়ে পৌঁছালেন। এবং ওখানে গিয়ে দেখেন তিনি অসুস্থ তার মোবাইলটা চুরি হয়ে গেছে। আসলে মানুষের সাথে কখন কি হয় সেটা কেউই বলতে পারে না। যাইহোক সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপা তিনি সুস্থ আছেন ভালো আছেন, এটাই সবচাইতে বড় কথা।
আপনার পোস্ট পড়ে খুবই ভালো লাগলো, অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার এত সুন্দর বালুর পথ দিয়ে চলার অভিজ্ঞতাটা। আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ভালো থাকবেন।
মানুষের কখন কি হবে কেউ কখনো বলতে পারে না একে অপরের বিপদে আমরা যদি সব সময় এগিয়ে চলি তাহলে অনেক মানুষের ভালোবাসা পাওয়া যায় আপনার কলিগের বিপদের দিনে পাশে দাঁড়িয়েছেন অবশ্যই সেও আপনার বিপদের দিনে পাশে এসে দাঁড়াবে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই আপনি আমাদের মাঝে অনেক সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন খুবই ভালো লাগলো আপনার পোস্টটি পড়ে।