প্রাকৃতিক ঔষধি, নিমপাতা বা নিম পাতার রস, এর উপকারিতা ও অপকারিতা।।
বহু বছর ধরে, গ্রামীণ পর্যায়ের মানুষেরা ঘরোয়া পদ্ধতিতে বিভিন্ন রোগের ঔষধি তৈরি করে। বিভিন্ন গাছ দিয়ে বা তার পাতা দিয়ে, এমনও হয় গাছের শিকড় দিয়েও বিভিন্ন ঔষধ তৈরি করে থাকে মানব শরীরের জন্য।
এমন কিছু গাছড়া ঔষধ রয়েছে, যেটা মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় ঔষধ বলা যায়, কারণ এই সকল গাছড়া ঔষধ গুলো পান করার কারণে আমরা বিভিন্ন রোগ থেকে নিরাময় পেয়ে থাকি।
ঠিক তেমনি, আজকে আমি একটি গাছের পাতা ও তার রস সম্পর্কে আপনাদেরকে কিছুটা তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করছি। অবশ্যই আমি কোনো না কোনো জায়গা থেকে ধারণা নিয়েছি, যেহেতু আমি তো কোন পন্ডিত বা ডাক্তার নই।
আমি যেটি পড়েছি সেটা থেকে যেটা অনুভব করেছি, বা আমরা ছোটকাল থেকে যেটা দেখে এসেছি, সেটাই তো আপনাদের মাঝে শেয়ার করব তাই না।
আজকে আমি আপনাদের মাঝে নিম পাতার কিছু উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানাতে চলেছি। তাই অবশ্যই মনোযোগ সহকারে পোস্টটি পড়বেন, এটা থেকে আপনারা অনেক কিছুই জানতে পারবেন, যেটা আপনাদের হয়তো অজানা ছিল।
নিম পাতা বা নিম গাছের পাতা, এই পাতা রস আসলে অনেক তেঁতো হয়,এটা তেঁতো আমরা সবাই জানি, আর আমাদের ভেতরে এমন অনেক মানুষ আছে যারা তেঁতো জিনিস খুব একটা বেশি পছন্দ করে না।
কিন্তু এই পাতার ভেতরে লুকিয়ে আছে নানান ধরনের ঔষধ যে ঔষধি গুনাগুন, আমাদের শরীরে বিভিন্ন রোগ নিরাময় করে খুব সহজে।
ছোটবেলায় দেখেছি, আমাদের বাড়িতে আমার আম্মা, প্রতিদিন ভোরবেলা উঠে, নিম গাছ থেকে নিমের পাতা পেড়ে, সেটা পিষে রস বানিয়ে আমাদেরকে খেতে দিত খালিপেটে। আসলে তখন তো জানতাম না? যে নিম পাতার রস খালি পেটে খাওয়ার কারণটা কি ছিল? কি জন্য প্রতিদিন আমার মা আমাদেরকে এই পাতার রস খাওয়াতো।
আমার মা এই নিম পাতার রস এটার জন্য খাওয়াতো, আমাদের শরীরের রক্ত পরিশোধন এবং শরীর থেকে বিষাক্ত উপাদান দূর করার জন্য এটা খেতে দিত।আমাদের শরীরে যে রক্ত চলাচল করে অনেক সময় রক্তচাপের সমস্যা দেখা দেয়। আর এই সমস্যা অনেক বড় আকার ধারণ করে, সেক্ষেত্রে মা প্রতিদিন সকালবেলা উঠে নিম পাতা রস করে দিত।
খুব রাগান্বিত হয়ে খেতে হতো, কারণ খুব একটা বেশি ভালো লাগত না সকাল-সকাল ঘুম থেকে উঠে, এত তেঁতো টাইপের এই রস খেতে। কিন্তু কি করার না খেলে যে আবার মার পড়বে।
তাই বাধ্য হয়ে খেতে হতো, কিন্তু এই খাওয়ার ক্ষেত্রে শরীরে অনেক উপকার আসতো, যেটা ধীরে ধীরে বড় হওয়ার সাথে সাথে বুঝতে পেরেছি। যার জন্য তো আমি এখনো খুব বেশি পছন্দ করি, নিম পাতার রস। যখনই সময় পাই আশেপাশে যদি কোন গাছ পাই, সেই গাছ থেকে পাতা পেড়ে আমি এই পাতার রস করে খায়।
নিম পাতার খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপকারিতা। |
---|
প্রতিদিন ভোরবেলা খালি পেটে যদি এই নিমপাতা রস করে খাওয়া হয়, তাহলে ডাইবেটিস যে রোগটি আছে। যেটা প্রত্যেকটি মানুষের দেহে আছে, এই রোগ থেকে খুবই বেশি নিরাময় পাওয়া যায়।
আমরা সবাই জানি ক্যান্সার হলে মানুষের বাঁচার সম্ভাবনা খুব কমে যায়। কিন্তু যদি প্রতিদিন এই নিম পাতার রস খাওয়া হয়, তাহলে এই ক্যান্সার রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।
বিভিন্ন বৈজ্ঞানিকরা গবেষণা করে দেখেছে, এই নিম পাতার নির্যাসে লুকিয়ে আছে ক্যান্সার প্রতিরোধের খুব বড় ঔষধি গুনাগুন। ক্যান্সার তো আর একরকম হয় না, বিভিন্ন পদের ক্যান্সার আমাদের শরীরে দেখা দেয় অনেক সময়। আর যতগুলো ক্যান্সারের রোগ রয়েছে, যত টাইপের সবগুলো ক্যান্সারের রোগ নিরাময় করতে খুবই বড় ভূমিকা রাখে এই নিম পাতার রস।
হজম শক্তি বাড়ানোর ক্ষেত্রে খুবই বড় ভূমিকা রাখে এই নিম গাছের পাতা। শুধু রস নয়, এই নিমের পাতা যদি আপনি খালি পেটে চিবিয়ে খান, তাহলে আপনার হজম শক্তি খুব বেড়ে যাবে। অনেক সময় দেখা যায় আমাদের পেটের বদ হজম হয়,আর এর জন্য আমাদেরকে নানান সমস্যায় ভুগতে হয়। তাই প্রতিদিন যদি আপনি আপনার খাওয়ার তালিকায় নিম পাতাটি বেছে নেন, সকালে চার থেকে পাঁচটা পাতা চিবিয়ে খান,তাহলে আপনার হজম শক্তি ভালো থাকবে সব সময়।
ত্বকের জন্য নিম পাতার রস খুবই কার্যকরী, আপনার ত্বককে সুন্দর ও সুষ্ঠু রাখতে নিম পাতার রস খুবই বড় ভূমিকা রাখে। যদি প্রতিদিন আপনি এই নিম পাতার রস খান, আপনার শরীরে যে ত্বকের সমস্যাগুলো হবে, সেগুলো থেকে আপনি খুব সহজেই মুক্তি পাবেন।
একটা জিনিস আপনি খেয়াল করে দেখতে পারেন, অনেক মানুষের ত্বকের সমস্যা হয়। অনেকের ত্বকে ব্রণ বা অন্যান্য আরো রোগ দেখা দেয়, এই রোগগুলো থেকে খুব সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়। যদি প্রতিদিন আপনি নিম পাতা রস করে খান, এই নিমের রস আপনার শরীর থেকে বিষাক্ত উপাদান গুলো বের করে ফেলে, যার জন্য আপনার ত্বকের সুস্বাস্থ্য তা প্রদান করে।
একটা সমস্যায় সবাইকে ভুগতে হয়, আমাদের অনেকেই মাথায় খুশকির হার বেশি থাকে, যার জন্য সব সময় আমাদের মাথা চুলকাতে থাকে। এমতাবস্থায় দেখা যায়, আমাদের মাথার চুলও পড়ে যায়, কারণ চুলে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন না পাওয়ার কারণে, অল্প বয়সে আমাদের মাথার চুল সব ঝরে যায়।
যদি আমরা প্রতিনিয়ত নিম পাতা রস করে খাই, তাহলে আমাদের চুলে সুস্বাস্থ্যতা প্রদান করবে, এই নিমের রস। সাথে সাথে আমাদের মাথায় থাকা খুশকি থেকে নিরাময় দিবে খুব ভালোভাবে।
নিম পাতার রস খাওয়ার অপকারিতা।।। |
---|
উপরে তো আপনাদের সামনে এই নিমের রস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বেশ কিছু ধারণা দিলাম। কিন্তু অবশ্যই একটা জিনিসে যখন ভাল কাজ করে, তার খারাপ দিকটাও কিন্তু থাকে। এটা আপনাদের সবসময় মাথায় রাখতে হবে।
যেমন একটি গাছরা ঔষধ আপনার মানব শরীরের জন্য উপকার করে, তেমন ক্ষতিও করে থাকে। তাই অবশ্যই আপনারা মাথায় রাখবেন যে যতটা ভালো করে সে ততটাই খারাপ করে।
প্রথমত আপনাকে এই নিমের রস বেশি পরিমাণে খাওয়া যাবে না, যদি আপনি খালি পেটে বেশি পরিমাণে এই মিমের রস পান করেন? তাহলে আপনার সমস্যা হতে পারে যেমন...
অতিরিক্ত মাত্রায় নিমের রস যদি আপনি পান করেন, আপনার শরীরে অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সবসময়ই এক গ্লাস এর মত নিমের রস পান করবেন, এর অধিক পান করলে অসুবিধায় পড়তে পারেন..
অতিরিক্ত মাত্রায় নিম পাতার রস পান করলে গর্ভবতী মায়েদের জন্য ক্ষতি হতে পারে। তাই যে সকল মায়েরা গর্ভবতী অবস্থায় নিমের পাতার রস খাবেন, খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েই তারপরে নিম পাতার রস খাবেন। না হলে এই নিম পাতার রস খাওয়ার কারণে আপনার গর্ভধারণ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
তাই সর্বশেষ একটি কথাই বলবো, এই নিম পাতার রস অতিরিক্ত সেবন থেকে সবসময় নিজেকে বিরত রাখবেন। যতটুকু পরিমাণের দরকার, ততটুকুই সেবন করুন প্রতিদিন। সেটাতে আপনার উপকার হবে, আর বেশি মাত্রায় খেলে সেটাতে আপনার ক্ষতি হবে। শুধু এটা মহিলাদের জন্য নয়, পুরুষদের ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দিতে পারে বিভিন্ন ধরনের। তাই সবসময় ডাক্তারের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েই তারপরে আপনি নিম পাতার রস খাবেন বেশি পরিমাণে।
উপরে আপনাদের সামনে নিম পাতার রস সম্পর্কে বেশ কিছু ধারণা দিলাম, এর উপকার এবং অপকার সম্পর্কে দুটোই বললাম। এবং কতটুকু পরিমাণে আপনাকে প্রতিদিন, এই নিমের রস সেবন করতে হবে সেটিও বললাম। এগুলো মাথায় রেখেই আপনি যদি প্রতিদিন এই নিমের রস পান করেন, সেটা আপনার মানব শরীরের জন্য খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আসলে আজকে আপনি খুব সুন্দরভাবে,, নিম পাতার উপকারিতা সম্পর্কে! আমাদের সাথে আলোচনা করেছেন।
আমরা ছোটবেলা থেকেই নিম পাতা সম্পর্কে অবগত! বিশেষ করে আমাদের মা বিভিন্ন ক্ষেত্রেই আমাদের জন্য! এই নিম পাতা ব্যবহার করত।
নিম পাতার গুণাগুণ অপরিসীম! যা আমি আপনার পোস্ট থেকে বিস্তারিত অনেক কিছুই জানতে পারলাম! অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে! এত সুন্দর করে নিম পাতার উপকারিতা টা,,, আমাদের সাথে উপস্থাপন করার জন্য! আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল! ভালো থাকবেন।
ঠিকই বলেছেন ভাই আর আপনি যে নিম পাতার ফটোগ্রাফি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন এই নিম পাতা আসলেই আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে ৷ এই গাছ এখন সব জায়গায় দেখতে পাওয়া যায় না ৷ আর এই নিম পাতা অনেক রোগের মহাঔষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে ৷ তারপর গরুর কিছু রোগের জন্য এই নিম পাতা ব্যবহার করা হয়ে থাকে ৷
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ৷ ভালো থাকবেন ৷
নিম পাতার রসের গুনাবলী খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন আপনার লেখার মধ্যে। নিম পাতার ঔষধি গুনাবলী শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
আপনার লেখার মধ্যে উল্লেখ করা এই অংশটুকু আমার কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমরা অধিকাংশ মানুষ শুধু মাত্র উপকারিতাতে সীমাবদ্ধ। যার জন্য অতিরিক্ত সেবনের ফলে বিভিন্ন সমস্যাতে পতিত হই।
সব মিলিয়ে আপনার সম্পূর্ণ লেখাটি সত্যিই অসাধারণ হয়েছে। বলতে পারেন অনেক তথ্যবহুল আপনার সম্পূর্ণ লেখাটি।
নিমপাতার গুনাগুন সম্পর্কে আমরা কমবেশি সবাই অবগত। তবে অধিক পরিমাণ নিমপাতা সেবনের যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে তা আমার জানা ছিলো না। আপনার এই পোস্টের মাধ্যমে জানতে পারলাম। ধন্যবাদ আপনাকে।