আমাদের ফুটবল এবং তার সোনালী অতীত।

in #football5 years ago

pic-1.jpg
Source

আসুন একটা গল্প বলি।
একজন আব্দুস সামাদের গল্প। মারী, কবীর, আশরাফ ত্রয়ের গল্প। গল্প'টা সালাউদ্দিন আর মোনেম মুন্নার। গল্প'টা আবাহনী, মোহামেডানের। গল্প'টা মাঠ ভর্তি সমর্থকের। গল্প'টা আমাদের ফুটবলের সোনালী অতীতের।

সময়'টা ১৯১৫ থেকে ১৯৩৮। একজন জাদুকরের খেলোয়ারী জীবন। এই সময়'টা নানা বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছেন তিনি। তিনি সামাদ, জাদুকর সামাদ। এই ধরুন কোন এক ম্যাচ খেলার আগে পুরো মাঠ একবার ঘুরে এলো সামাদ। এসেই মাঠ কর্তাদের জানালো, মাঠ আন্তর্জাতিক মাপের চেয়ে ছোট। এই মাঠে তার দলের খেলা সম্ভব না। পরে মাঠ মেপে তার কথার সত্যতা পাওয়া গেল। শুধু একটা না এরকম আরো অনেক নজিরের জন্ম দিয়েছিলেন এই ফুটবল জাদুকর। একদিনে মাঝ মাঠ থেকে ড্রিবলিং করে বারের সামনে গিয়ে শুট করলেন। কিন্তু বল ক্রস বারে লেগে ফিরে আসলো। সাথে সাথে সামাদ বললেন, এটা গোল। বার নাকি কয়েক ইঞ্চি ছোট। তার শটের মাপ ভুল হতে পারে না। পরে মেপে দেখে গেল ঘটনা সত্যি। বার আসলেই দুই ইঞ্চি ছোট ছিলো। এরকম ছোটখাটো ঘটনা থেকেই তার তুখরতার প্রমান পাওয়া যায়। আমরা এখন বিদেশী ক্লাব প্লেয়ারের জার্সি পরে ঘুরি। কিন্তু শোনা যায়, ব্রিটিশ এক মিউজিয়ামে নাকি জাদুকর সামাদের মুর্তি গতি করা আছে।

images (4).jpeg

Source

মারী, কবির , আশরাফ। ১৯৫৬ সালে মূলত মোহামেডান এই ত্রয়ীর জন্ম দেয়। তা আরও উপভোগ্য হয়ে উঠে ১৯৫৭ সালে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে। এই ত্রয়ী'কে নিয়ে গড়ে উঠা আক্রমনভাগ হয়ে উঠে ভয়ংকর। আশরাফ ছিল অসাধারণ গোলমেকার। শ্যুটিং ছিল নিখুঁত। কবির রাইট ইন, মারি লেফট ইন আর আশরাফ সেন্ট্রার ফরোয়ার্ড- এই ছিলো ওদের রসায়ন।

স্বাধীনতা এবং তার পরবর্তী সময়ে মাঠ দাপিয়ে বেড়িয়েছেন সালাউদ্দিন তুর্য্য। মুক্তিযুদ্ধকালীন তহবীল সংগ্রহে ভারতে খেলেছেন তুর্য্য হাজরা নামে। বাংলাদেশের প্রথম পেশাদার ফুটবলারও তিনি। মারী, কবির, আশরাফ এই ত্রয়-এর মিলীত সংস্করণ বলা হত সালাউদ্দিন'কে। সালাউদ্দিন দেশের বাইরে খেলেছেন হংকং এর ক্লাব ক্যারিলিন হিল এর হয়ে। তিনি এক বছরের চুক্তিতে আবদ্ধ হন এই ক্লাবের সাথে। আনুমানিক মাসিক সাড়ে তিন হাজার টাকায় চুক্তি করেন এই ক্লাবের সাথে। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ দলের সাথে মালয়শিয়ায় খেলতে গিয়ে মারদেকা কাঁপিয়ে আসেন সালাউদ্দিন। সেখানে পরিচিতি পেয়ে উঠেন 'নাম্বার টেন' নামে। আবাহনী মোহামেডানের কোন এক ম্যাচের দিন বাংলাদেশের প্রথম ক্রিড়াবীদ হিসেবে বানিজ্যিক'ভাবে বের করা হয় সালাউদ্দিনের পোস্টার। ২০ টাকা মুল্যের পোস্টার নিতে মাঠের বাইরে হুমড়ি খেয়ে পরে মানুষ।
আসলে ৭০ এর দশক'টাই ছিলো মূলত ফুটবলের সোনালী যুগ। তুর্য্য ছাড়াও ছিলো চুন্নু, হাফিজ, এনায়েত, আসলাম, আর সাথে মাঠ ভর্তি দর্শক। ছিলো ঝাকড়া চুলের শান্ত ছেলে নান্নু। পরবর্তীতে যে হয়ে উঠেছিলো একজন পরিনত স্টপার। আশির দশকে ছিলো মোনেম মুন্না। যাকে শুধু বাংলাদেশ না ভারতও এক নামে চিনতো।
‘হি ওয়াজ মিসটেকেইনলি বর্ন ইন বাংলাদেশ’—মোনেম মুন্না সম্পর্কে এ কথাটি বলেছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক জার্মান কোচ অটো ফিস্টার। সেই ফিস্টার যে ঘানাকে এনে দিয়েছিলেন যুব কাপের শিরোপা কিংবা টেগো'কে খেলিয়েছিলেন বিশ্বকাপের মূলপর্বে। ১৯৯১ সালে সেইসময়ের রেকর্ড অংক ২০ লাখ টাকায় আবাহনী'র সাথে চুক্তি করেন মোনেম মুন্না।

hqdefault.jpg

Source

হুম তার আগে বলছিলাম ক্লাবের কথা, বলছিলাম দেশের ফুটবলের প্রতি মানুষ এর আবেগের কথা। তখন আবাহনীর গ্যালারীতে মোহামেডান কিংবা মোহামেডানের গ্যালারিতে আবাহনী সমর্থক উঠলে উপর করে ফেলে দেওয়া হত। মোহামেডান, আবাহনী ম্যাচ থাকলে পুরো দেশ থমকে যেত। সালাউদ্দিন তার ক্যারিয়ারে একটি মাত্র প্যানাল্টি মিস করেছিলো। এবং তাতে হার্ট এট্যাকে মারা গিয়েছিলো চট্টগ্রামের এক বাসিন্দা।
আমাদের দেশেই খেলে গেছেন সামীর সাকীর, করিম মোহাম্মদ আর এমেকার মত প্লেয়ার। খেলেছেন আরো অনেকেই।

আমরা জাদুকর সামাদের খেলা দেখিনি। দেখিনি তার ম্যাজিক। তবে দেখতে চাই সামাদ, তুর্য্য কিংবা মুন্নার মত নতুন কোন তরুনের পায়ের জাদুতে আবার জেগে উঠুক বাংলাদেশ ফুটবল। ফাকা স্টেডিয়াম ভরে উঠুক মানুষের কোলাহলে। জ্বলে উঠুক ফ্লাড লাইট। চলুক খেলা। সেখানে খেলুক নতুন কোন তুর্য্য, নতুন কোন মুন্না। উদয় হোক নতুন কোন জাদুকরের।

Sort:  

Congratulations!

This post has been upvoted from Steemit Bangladesh, @steemitbd. It's the first steemit community project run by Bangladeshi steemians to empower youths from Bangladesh through STEEM blockchain. If you are from Bangladesh and looking for community support, Join Steemit Bangladesh Discord Server.

If you would like to delegate to the Steemit Bangladesh, you can do so by clicking on the following links:

50 SP, 100 SP, 250 SP, 500 SP, 1000 SP.

YOU ARE INVITED TO JOIN THE SERVER!

Congratulations @marufamitu! You received a personal award!

Happy Birthday! - You are on the Steem blockchain for 1 year!

You can view your badges on your Steem Board and compare to others on the Steem Ranking

Do not miss the last post from @steemitboard:

3 years on Steem - The distribution of commemorative badges has begun!
Happy Birthday! The Steem blockchain is running for 3 years.
Vote for @Steemitboard as a witness to get one more award and increased upvotes!

Coin Marketplace

STEEM 0.30
TRX 0.12
JST 0.034
BTC 63475.77
ETH 3117.23
USDT 1.00
SBD 3.94