উপায় না পেয়ে চেয়ারে বসে আছি, তোরা ভালো থাকিস : নিহত মঞ্জুর, বণিক বার্তা

in #bangladesh6 years ago

‘আমিতো অফিস থেকে বের হতে পারছিনা, পঙ্গু মানুষ। আমি মনে হয় আর বাঁচবো না। সবাই অফিস থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। আমি কোন উপায় না পেয়ে অফিসের চেয়ারে বসে আছি। সবাই আমার জন্য দোয়া করিস। তোরা ভালো থাকিস।’

মৃত্যু নিশ্চিত জেনে গতকাল বৃহস্পতিবার আড়াইটার দিকে ছোট ভাই মেহফুজ জুবায়ের পলাশের সাথে মোবাইল ফোনে এসব কথা বলেছিলেন রাজধানীর বনানীর এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত নওগাঁর মঞ্জুর হাসান (৫০)। মঞ্জুর হাসানের বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলার বোয়ালিয়া পূর্বপাড়া গ্রামে। তিনি মৃত মুনছুর রহমানের ছেলে। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়।

নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মঞ্জুর হাসান ছাত্রজীবন (১৯৮৭-৮৮ সাল) থেকে ঢাকায় থাকতেন। ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে লেখাপড়া করে ছাত্রজীবন শেষে চাকরি শুরু করেন। এরপর সংসার। পরিবার নিয়ে ঢাকার ইব্রাহিমপুরে বসবাস শুরু করেন। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে। তিনি কাশেম গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে চাকুরি করতেন।

ঘটনার দিন মঞ্জুর হাসান ভবনের ২১ তলায় কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন। আগুন থেকে বাঁচতে সবাই যখন ছুটাছুটি করছিলেন তিনি কোন উপায়ন্তর না পেয়ে অফিসের চেয়ারে বসে ছিলেন। আর জীবনের শেষ সময়টুকুর স্বজনদের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন। এক সময় ফোনে কথা বলা বন্ধ হয়ে যায়। বার বার রিং হলেও অপর প্রান্ত থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না।

শুক্রবার সকালে নিহতের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের লোকজন মঞ্জুর হাসানের বিষয় নিয়ে কথা বলছিলেন। নিহতের পরিবারের সবাই ঢাকায় থাকেন। তবে তার ছোট ভাই মোনাক হাসান অরুফে শিমুল নওগাঁ মাল্টিপারপাস কোঅপারেটিভ সোসাইটির বগুড়া ব্রাঞ্চ অফিসে চাকুরী করেন। সেখান থেকে প্রতি বৃহস্পতিবার গ্রামের বাড়িতে আসেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে ভাইয়ের মৃত্যুর কথা জানতে পারেন তিনি। বাড়িতে কাঁন্না করার মতো কেউ নাই। শুধু গ্রামের লোকজন মঞ্জুরের মরদেহ দেখার জন্য অপেক্ষা করছেন।

নিহতের ছোট ভাই মোনাক হাসান অরুফে শিমুল বলেন, ভাই চাকরিরত অবস্থায় ২০০০ সালে কাশেম গ্রুপের মতিঝিল অফিসের সামনের রাস্তায় এক সড়ক দূর্ঘটনায় পঙ্গু হন। এরপর থেকে ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারতেন না। এক প্রকার পঙ্গু জীবন যাপন করতেন। কিন্তু তারপরও কোম্পানি ভাইকে চাকরি থেকে বাদ দেয়নি। পরবর্তীতে তাকে বনানীর হেড অফিসে চাকুরিতে রেখে দিয়েছিলেন। অফিসে যখন আগুন লাগে সবাই বাঁচার জন্য ছুটাছুটি করছিল। কিন্তু ভাই পঙ্গু হওয়ায় কিছু করার উপায় ছিল না। অফিসে বসেই মোবাইল ফোনে আমাদের সাথে কথা বলছিল। আর দোয়া চেয়েছিল। তার শেষ কথা ছিল ‘আমি তো বের হতে পারছিনা- এখানে হয়ত আমার শেষ সময় যাবে।’ এক সময় তার ফোনের সংযোগ কেটে যায়। এরপর ফোনে রিং হলেও রিসিভ হয়নি।

নিহতের চাচাতো ভাই সাবেক সেনা সদস্য ফজলুর রহমান বলেন, যখন ঢাকায় থাকতাম নিয়মিত তার (মঞ্জুরের) সাথে দেখা করতাম। তার অফিসে যেতাম। তাকে ধরে উঠা বসাতে করাতে হতো। যখন আগুন লাগার সংবাদ পেলাম তখন ধারণা করেছি হয়ত সে আর বের হতে পারবে না।

উদ্ধারকর্মীরা তার মরদেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে সেখানে তাকে শনাক্ত করা হয়। তার পরিবার ও সন্তানদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিহতের মরদেহ ঢাকায় দাফন করা হবে বলে জানান তিনি।

গতকাল বনানীর ফারুক রূপায়ণ (এফ আর) টাওয়ারে পৌনে একটার দিকে আগুন লাগে। সন্ধ্যার দিকে তা নিয়ন্ত্রণে আসে। এর পর ভবনটির বিভিন্ন ফ্লোরে প্রবেশ করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এ সময় একের পর এক মরদেহ উদ্ধার করা হয়। শুক্রবার সকালেই পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৭৩ জন। নিহতের ২৪ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

Sort:  

Congratulations @aman88! You have completed the following achievement on the Steem blockchain and have been rewarded with new badge(s) :

You published more than 10 posts. Your next target is to reach 20 posts.

You can view your badges on your Steem Board and compare to others on the Steem Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word STOP

Do not miss the last post from @steemitboard:

3 years on Steem - The distribution of commemorative badges has begun!
Happy Birthday! The Steem blockchain is running for 3 years.
Vote for @Steemitboard as a witness to get one more award and increased upvotes!

Oh! very nice of it. Thanks

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.19
JST 0.034
BTC 91275.94
ETH 3099.80
USDT 1.00
SBD 2.90