মুভি রিভিউ: ফ্ল্যাট নং ৬০৯
হ্যালো বন্ধুরা, সবাই কেমন আছেন? আশা করি সবাই ভালো আছেন। সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের ব্লগটি শুরু করছি। |
---|
আজকে আপনাদের সাথে একটা মুভি রিভিউ শেয়ার করবো। এই মুভিটার নাম হলো "ফ্ল্যাট নং ৬০৯"। এটি একটি বেঙ্গলি মুভি আর মুভির নামটা শুনেই বুঝতে পারছেন কি ধরণের হতে পারে। যাইহোক, তাহলে দেখা যাক কাহিনীটার ভিতরের রহস্যগুলো।
✠কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:✠
☫মূল কাহিনী:☫
কাহিনীর মূল শুরুটা খুবই সাধারণভাবে তৈরি হয়, মানে এখানে দুইজন দম্পত্তি কলকাতার বাইরে আগে বসবাস করতো। আর এখন কাজের সুবাদে তার অফিস কলকাতায় হওয়ায় একটা থাকার জায়গার খুবই জরুরি হয়ে পড়ে। তবে ঠিকঠাক ভালো লোকেশনে তারা খুঁজে পাচ্ছিলো না তেমন মনের মতো। তারা রুদ্রনীল নামের একজনের সাথে যোগাযোগ করে অর্থাৎ এই লোকটা কলকাতায় বিভিন্ন ফ্ল্যাট ভাড়া বা বিক্রি এইসবের কাজ করে থাকে, একপ্রকার দালালি বলাও যায়। তো এই লোকটা তাদের জন্য ভালো একটা লোকেশনে ফ্ল্যাট ঠিক করে, যদিও এটা তারা ভাড়ায় নেয়, কারণ পরে আবার অন্য কোথাও যাওয়াও লাগতে পারে। তাদের নিয়ে ভিতরে যায় আর ফ্ল্যাটটা ৬০৯ নম্বর ঠিক করে দিয়েছিলো। এমনিতেই ওই ঘরের সবকিছুই অগোছালো মতো পড়ে ছিল। তবে উপরের দিকে একটা রুম বন্ধ অবস্থায় ছিল, যেটা তারা কোনোমতেই খুলতে পারছিলো না। রুদ্রনীলও খুবই জোর দিয়ে ওটাকে না খোলার জন্য মানা করে। তার কথার মধ্যেও একটা সন্দেহজনক ভাব থাকলেও তাদের অন্যান্য কথা বলে মানিয়ে নেয় আর এডভাঞ্চও করে দেয়। এর পরের দিন মালপত্র সব নিয়ে তারা ফ্ল্যাটে উঠে যায় আর নিজেরাই সবকিছু গুছিয়ে নেয়। তবে এখানে ছোটোখাটো অনেক কিছু ঘটতে থাকে, যেমন লোকটার ওয়াইফ কাউকে সামনে দেখতে পাচ্ছে আবার শব্দও শুনতে পাচ্ছে। যেটা কিছুটা তার মনের ভিতরে একটা ভয়ের সৃষ্টি করতে থাকে।
এটা তার হাসব্যান্ডকে জানায় কিন্তু সে তেমন কিছু পাত্তা দেয় না এই বিষয়ে, মনের ভুল হতে পারে বলে কাটিয়ে দেয়। পরের দিন অফিসে যাওয়ার পরে তার ওয়াইফ একা থাকা অবস্থায় একটা বাচ্চার চলাফেরার আভাস পায় বা ছায়া দেখতে পায়। বাইরের দারোয়ানও ভয় দেখাতে থাকে, মানে সব কিছু ঠিক আছে কিনা জিজ্ঞাসা করতে থাকে, নরমালি এইরকম জিজ্ঞাসা করলে একটু সন্দেহ জন্মাবেই। যাইহোক, এরপর একদিন তার হাসব্যান্ড অফিসের কাজের জন্য দুইদিন কলকাতার বাইরে দিল্লি চলে যায়। আর এরপরের থেকে রাতের দিকে বেশি ভয় পেয়ে যায়, কারণ সিঁড়ির উপর থেকে বল খেলার আওয়াজ শুনতে পায়। সে এই শব্দ শুনে বাইরে এসে উপরের সেই দরোজার সামনে যায় এবং নিচে দিয়ে ভিতরে দেখার চেষ্টা করে আর তখনই তার মনে হয় যেন তার পিছনে ছোট একটি বাচ্চা দাঁড়িয়ে আছে। এই নিয়ে তার মনে ভীষণ একটা আতঙ্কের সৃষ্টি হয়ে যায়। সে তার বন্ধুর সাথে বিষয়টা শেয়ার করে কিন্তু সেও একটাই কথা বললো যে তার মনের ভুল। আর তার আগে থেকে নরমালি মাঝে মাঝে মানসিক সমস্যা হয়ে থাকে, তাই এটাকে তেমন গুরুত্ব দিতে না বলে। যাইহোক, এরপর তার বাবা-মাকে বিষয়টা জানায় আর তার বাবার বন্ধুর সাথেও বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করে, কারণ তার বাবার বন্ধু একজন ইনভেস্টিগেশন অফিসার ছিল।
এরপর তাদের পাশের ফ্ল্যাটে দুইজন বয়স্ক থাকতেন আর তাদের কাছে কিছু জিজ্ঞাসা করলে পাত্তা না দিয়ে চলে যায়। একদিন বাইরের থেকে বাড়িতে ঢুকতেই সে দেখে ঘরের ভিতরে সমস্ত জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে আর এইসব দেখে আরো স্ট্রেস-এ পড়ে যায়। সে একদিন উপরের সেই বন্ধ রুমের কাছে যেতেই দরজাটা আপনাআপনি খুলে গেলো আর ভিতরে ছিল একটা বাচ্চার সমস্ত খেলনার জিনিসপত্র। এখন পাশের ফ্ল্যাটে যে দুইজন বয়স্ক ছিলেন তারা পরে তাকে জানায় যে ওই ফ্ল্যাটে আমার মেয়ে থাকতো, আর তার হাসব্যান্ড একদিন তাকে মেরে ফেলে আর ছেলেটির লাশ একটা আলমারির মধ্যে পায়। এই ঘটনাটা জানার পরে সে বুঝতে পারে এই ঘরে ওই বাচ্চা ছেলেটার আত্মা ঘোরাঘুরি করছে আর তাকে বিভিন্ন মাধ্যমে কিছু বলার চেষ্টা করছে। এরপর সে তার হাসব্যান্ডকে কিছু না জানিয়ে আগে যারা যারা এই ফ্ল্যাটে ছিল তাদের সাথে দেখা করে আর বিষয়গুলো বোঝার চেষ্টা করে। এদিকে তার বাবার বন্ধু ইনভেস্টিগেশন করতে করতে কিছু বিষয় জানতে পারে আর একটা ছবিকে গ্রাফিক ডিজাইনারের মাধ্যমে বিভিন্ন ভাবে সাজিয়ে দেখে তার হাসব্যান্ড এর চেহারার সাথে হুবহু মিলে যাচ্ছে আর তখনি তার উপর নজর রাখার চেষ্টা করে।
তার ওয়াইফ-এরও সন্দেহ হতে থাকে, ফলে তার সাথে মানসিক রোগীর মতো অভিনয় করতে থাকে। একদিন পূজারিণী নামের একটি মেয়ের বাড়ির থেকে তাকে বেরোতে দেখে পুলিশ যেটা সন্দেহ এর বসে এবং তাকে ধরেও কিন্তু কিছু প্রমান করতে পারেনি, এরপর সেই মেয়েকে থানায় তুলে নিয়ে যায় এবং সব কথা সে বলে দেয়। এরপর মেয়েটার বাড়িতে সমস্ত জায়াগায় সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে দেয়, যাতে এইবার আসলে হাতেনাতে ধরতে পারে আর তাদের সাথে তার ওয়াইফও যোগ দেয়। পূজারিণী এর কাছ থেকে একটা পেনড্রাইভ নিয়ে গিয়েছিলো, মানে তাতে টাকা পয়সা লেনদেনের কিছু ডকুমেন্টস ছিল। আর তার ব্যাঙ্ক এর এটিএম কার্ডের পাসওয়ার্ড সব কিছু লক করে দেয়। এই নিয়ে তার মাথা খারাপ হয়ে গেলে তাকে মারার জন্য তার বাড়িতে চলে যায় আর এদিকে পুলিশ তাকে হাতেনাতে ধরে নিয়ে যায়।
☫ব্যক্তিগত মতামত:☫
আসলে এই মুভিটার কাহিনী হরর টাইপের হলেও কাহিনী ছিল অন্য। কারণ এই ফ্ল্যাটে আগে যারা থাকতো মানে যারা মারা গিয়েছে সেটা সে জানতো কিন্তু তার ওয়াইফকে কখনো জানায়নি। আর সে ইচ্ছা করেই এইসব ধান্দাটা করেছিল যাতে সে আরো বেশি ভয় পেয়ে স্ট্রেসে চলে যায় আর বড়ো কোনো মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হয়ে। এটা আসলে করেছিল টাকা পয়সার জন্য, কারণ মেয়ের বাবার অনেক সম্পত্তি আর টাকা পয়সা ছিল। আর সে ফাঁসিয়েছে অন্যভাবে, মানে মেয়েটার সাথে প্রেমের অভিনয় করে তাকে বিয়ে করে নেয় মন্দিরে গিয়ে যার কোনো লিগ্যাল ডকুমেন্টস আর কোনো বিয়ের ফটোও নেই অর্থাৎ এক কোথায় কোনো রকম প্রমান রাখেনি। তবে এই নতুন ফ্ল্যাটে আসার পরের থেকে ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য উতালা হয়ে যায়, কিন্তু তার ওয়াইফ বলে আমার তো একটা একাউন্ট কলকাতায় আছে সেটার সাথে জয়েন্ট করে নিলে হবে। আর তার ওয়াইফ এর ল্যাপটপের পাসওয়ার্ডও চেয়ে নিয়ে নেয় সাথে ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিং এরও। প্রথমে তো কিছুই সে বুঝতে পারেনি, আর সে ভেবেছিলো এইরকম প্রতিদিন মানসিক চাপের মধ্যে থাকলে এদিকে অতটা খেয়াল থাকবে না কি হচ্ছে না হচ্ছে। এই করে করে অনেক টাকা সরিয়ে ফেলে। পরে গিয়ে এইসব বিষয় নিয়ে সন্দেহ হয় আর তখনই সে সব পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করে ফেলে আর ফেঁসে যায় উল্টো ভাবে। আসলে এর কাজটাই ছিল এইরকমই, টাকা পয়সা ওয়ালা মেয়েদের ফাঁসিয়ে তাদের বিয়ে করা আর কাজ হয়ে গেলে ছেড়ে চলে যাওয়া, যেটা বিগত বহু সময় ধরে বিভিন্ন চেহারার মাধ্যমে মানুষজনদের ঠকিয়ে আসছিলো । অবশেষে তাদের গ্যাংকে ধরে ফেলে।
☫ব্যক্তিগত রেটিং:☫
৮.৮/১০
☫ট্রেইলার লিঙ্ক:☫
"ফ্ল্যাট নং ৬০৯" মুভিটি যদিও দেখা হয়নি তবে রিভিউ পড়ে ভালো লাগলো। এই মুভিটি আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। আসলে অনেকে আছে যারা দেখে দেখে বড়লোকের মেয়েদেরকে পটায় এবং চুপ করে বিয়ে করে নেয়। যাতে করে তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতে পারে। আসলে প্রতারক মানুষগুলো সব সময় ফাঁদ পেতে থাকে। তাই তো মন্দিরে গিয়ে বিয়ে করে নিয়েছে। আর অন্যদিকে তাদের বিয়ের কোন প্রমাণ নেই। ব্যাংক একাউন্ট এবং অন্যান্য পাসওয়ার্ড গুলো সে বুদ্ধি করে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। সে যেহেতু এই কাজে অনেক আগে থেকে যুক্ত ছিল তাই তো অনেক বুদ্ধির সাথে সবটা সামলে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। তবে কথায় আছে একবার না একবার ধরা পড়তেই হয়। তাই তো শেষ পর্যায়ে এসে ধরা পড়ে গেছে। দাদা আপনি নতুন একটি মুভি রিভিউ সবার মাঝে উপস্থাপন করেছেন এজন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
মুভিটার কাহিনী টা বেশ সুন্দর ছিল। পুরো মুভি জুড়ে হরর একটা আভাস এবং শেষ পর্যায়ে গিয়ে আসল রহস্য টা জানা যায়। যে এর পেছনে তার হ্যাজবেন্ড জড়িত। মুভিটা দারুণ রিভিউ করেছেন দাদা। এবং স্ত্রীকে ট্রেসে ফেলানোর জন্য হ্যাজবেন্ডের বুদ্ধি টার প্রশংসা করতে হয় হা হা।।
দাদা আপনি নতুন একটা মুভি রিভিউ শেয়ার করেছেন দেখি আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। আপনি সবসময় আমাদের মাঝে নতুন নতুন মুভির রিভিউ শেয়ার করে থাকেন যেগুলো আমার অনেক বেশি ভালো লাগে। আর হরর টাইপের মুভিগুলো এমনিতেই খুবই কম দেখা হয়। কিন্তু আপনার এই মুভিটার রিভিউ আমার অনেক বেশি পছন্দ হয়েছে। ওই লোকটা তার স্ত্রীকে বলেনি এই ফ্ল্যাটে আগে যারা থাকতো তারা মারা গিয়েছে। আর তারা বড়লোক মেয়েদেরকে বিয়ে করত এবং তাদের কাজ শেষ হলে ছেড়ে চলে যেত এটা কিন্তু একেবারে ভালো করে নি। তারা এভাবে অনেকগুলো মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে যা বুঝতেই পারছি। সবশেষে তাদের গ্যাং টাকে ধরতে পেরেছে এই বিষয়টা জেনে ভালো লাগলো। এই মুভিটা যদিও আমার দেখা হয়নি, তবে আমি অবশ্যই চেষ্টা করব সময় পেলেই এই মুভিটা দেখে নেওয়ার। এত সুন্দর একটা মুভির রিভিউ ভাগ করে নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ দাদা।
দাদা আপনি হরর টাইপের শেয়ার করার কারনে, আমার কাছে তো জাস্ট অসাধারণ লিখেছে মুভিটার রিভিউ। অনেক সুন্দর করে আপনি এই মুভিটার রিভিউ পোস্ট করেছেন। ফ্ল্যাট নং ৬০৯ মুভিটা কিন্তু অনেক সুন্দর এবং এর কাহিনী রিভিউর মাধ্যমে পড়তে পেরে অনেক ভালো লেগেছে আমার কাছে। এরকম মানুষগুলোর ফাঁসি দেওয়া উচিত। যারা বড় লোক মেয়েদেরকে ফাঁসিয়ে বিয়ে করে ফেলে এবং ছেড়ে চলে যায়। তারা ডকুমেন্টের কোন প্রমানও রাখেনি। আসলে এখানে গ্যাংটা ধরতে পেরেছে সবশেষে । দাদা আপনি সম্পূর্ণ মুভিটার রিভিউ, রিভিউর মাধ্যমে ভাগ করলে পুরোটা পড়তে আমার অনেক দারুন লেগেছে। আপনাকে যতই ধন্যবাদ জানাবো ততই আমার তুলনায় কম হবে। আপনি নিজের পক্ষ থেকে কাজে লাগিয়ে এভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যান। আর পরবর্তীতেও এরকম সুন্দর সুন্দর মুভির রিভিউ গুলো র মাধ্যমে দেখতে পাবো।
আমি প্রথমে মুভিটার কাহিনী হরর টাইপের ভেবেছিলাম। পরে দেখলাম কাহিনী ছিল অন্য। এই ফ্ল্যাটে আগে যারা থাকতো তারা কিভাবে মারা গিয়েছে সেটা সে জানতো কিন্তু তার ওয়াইফ সেটা জানতো না। আর সে ইচ্ছা করেই এই ধান্দাটা করেছিল যাতে বউটা আরো বেশি ভয় পেয়ে স্ট্রেসে চলে যায়। আর বড় কোনো মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হয়ে। এটা সে করেছিল টাকা পয়সার লোভে পড়ে, কারণ মেয়ের বাবার অনেক সম্পত্তি আর টাকা পয়সা ছিল। আর সে মেয়েটার সাথে প্রেমের অভিনয় করে ফাঁসিয়ে মন্দিরে গিয়ে তাকে বিয়ে করে নেয়। যার কারনে বিয়ের কোনো লিগ্যাল ডকুমেন্টস মেয়েটির কাছে ছিল না। ছেলেটি এই নতুন ফ্ল্যাটে আসার পর থেকে ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য উতালা হয়ে যায়, কিন্তু তার ওয়াইফ বলে আমার তো একটা একাউন্ট কলকাতায় আছে সেটার সাথে জয়েন্ট করে নিলে হবে। আর তার ওয়াইফ এর ল্যাপটপের পাসওয়ার্ডও চেয়ে নিয়ে নেয়। বউ তো বিশ্বার করে স্বামীকে পাসওয়ার্ড দিয়েছিলো। আর সেও অনেক টাকা সরিয়ে ফেলে। পরে গিয়ে এইসব বিষয় নিয়ে সন্দেহ হয় আর তখনই সে সব পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করে ফেলে আর ছেলেটা ফেঁসে যায়। ধন্যবাদ দাদা।