মুখোশধারী ভন্ড
জহির সাহেব (ছদ্মনাম) এর সঙ্গে সম্পর্কটা আমার সমসাময়িক সময়ে হয়েছে। যেহেতু চলার পথে প্রায়ই দেখা হতো , তাই বলতে গেলে টুকটাক আলাপচারিতা থেকেই সম্পর্কটা কিছুটা এগিয়ে গিয়েছিল। বেশ কয়েকদিন একত্রে চৌরাস্তার মোড়ের চায়ের দোকানে চা চক্রে বসে, পারিপার্শ্বিক অবস্থা নিয়ে বেশ ভালই কথোপকথন হয়েছিল।
আমরা মানুষরা বড্ড অদ্ভুত, মুখের উপর এক ধরনের ভদ্রতার প্রলেপ লেপ্টে রাখি। এতো সাবলীল ভাবে প্রতিনিয়ত সবার সামনে নিজেকে এমন ভাবে উপস্থাপন করি, যেন সবাই মুহূর্তেই ভদ্র মানুষ নামক তকমা দিয়ে দেয়।
ঘটনাটা সম্ভবত কয়েক মাস আগের, সময়ের অভাবে লেখা হয়েই ওঠেনি। তবে আজ নিজের কাছে অজুহাত কমিয়ে, অবশেষে লিখতে চলছি। প্রথমেই বলে রাখছি, ঘটনা যা লিখছি তা একদম নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোকে। যদি কারো ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মিলে যায়, তাহলে এখানে আমার করার কিছুই নেই।
কেননা এই ভদ্র তকমা পাওয়া কীট গুলোর মুখোশ উন্মোচন করতে, একধরনের পৈশাচিক আনন্দ পাই আমি।
সেদিন সম্ভবত মাধ্যমিকের ফলাফল প্রকাশ হয়েছিল। জহির সাহেব এর বড় মেয়ে রাজশাহী বিভাগ থেকে মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করেছে। এটা অবশ্যই প্রশংসনীয় খবর। সেদিন সন্ধ্যেতে জহির সাহেব বড্ড খুশি ছিল। নিজের থেকে মিষ্টির প্যাকেট খুলে, চায়ের দোকানে উপস্থিত অনেককেই মিষ্টিমুখ করানোর চেষ্টা করছিল। কোন রকমে আমার ভাগ্যেও দুটো মিষ্টি জুটে ছিল।
খানিক বাদে যখন উপস্থিত লোকজনের জটলা কমলো, তখন একপ্রকার জহির সাহেবের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলাম। বললাম, ভাইজান আপনার মেয়ের ফলাফল কিন্তু খুবই প্রশংসনীয়। তবে তারপরও একটা প্রশ্ন থেকেই যায়, আচ্ছা আপনি যে স্কুলে চাকরি করেন, সেই স্কুলের ছাত্রছাত্রীর ফলাফল এবার কেমন হলো ? আমার প্রশ্ন শুনে, তাৎক্ষণিক জহির সাহেব বলেই ফেলল কোন রকমে টেনেটুনে পাস করেছে সবাই।
তার উত্তরটা গ্রহণ করতে, কেন জানি আমি খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছিলাম না। অতঃপর বলেই ফেললাম, জহির সাহেব আপনি এটা কি ধরনের উত্তর দিলেন?
এবার আমি দেখছিলাম, জহির সাহেব কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গিয়েছে। সে তো আমাকে মুখের উপর বলেই ফেলল, আচ্ছা আপনি কি বলতে চাচ্ছেন, যদি একটু যদি পরিষ্কার করে বলতেন।
এবার আমি তাকে বড্ড বিনয়ের সঙ্গে বললাম, জহির সাহেব আপনি তো পেশায় স্কুল শিক্ষক। চাকরি করেন গ্রামের মাধ্যমিক স্কুলে। কর্মস্থল সংলগ্ন এলাকায় না থেকে, এই শহুরে জীবনে একপ্রকার অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন। মেয়েকেও ভর্তি করিয়েছেন এই শহরের স্কুলে। সঙ্গে আবার এখানে কোচিং সেন্টার খুলেছেন, এটাও বেশ ভালো।
তো মশাই আমি বলতে চাচ্ছি, আপনি আপনার মেয়ের পড়াশোনার ব্যাপারে যথেষ্ট দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছেন এবং নিজের শিক্ষকতার ক্যারিয়ার আরও দৃঢ় ভাবে গঠনের জন্য, এই শহুরে জীবনে থাকছেন। এটা অবশ্যই, আপনার জন্য ভালো।
তবে গ্রামের যে প্রতিষ্ঠানটাতে আপনি চাকরি করেন, সেখানে কেন যে আপনি থাকেন না বা নিজের মেয়েকে কেনইবা সেখানে ভর্তি করান নি, সেটা নিয়েই আমি কিছুটা চিন্তিত।
আপনার মেয়ের ফলাফলে অবশ্যই আমি খুশি হয়েছি, তবে এই ফলাফল সে যদি আপনার প্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশোনা করার মাধ্যমে করতে পারত, তাহলে সেটা আরো বেশি গ্রহণযোগ্য হতো।
জহির সাহেব এবার অনেকটাই রেগে যাওয়ার মত অবস্থা, সে তো আমাকে বলেই ফেলল, আপনি একটু বেশি বোঝেন। গ্রামের স্কুলে পড়াশোনা আছে নাকি। আপনি জানেন ওখানে কি চলে আর ওখানে আমার মেয়ে পড়াশোনা করলে, এমন ফলাফল করতেই পারত না।
আমি সত্যিই, জহির সাহেব এর মতো শিক্ষকতা পেশার গভীরতা খুব একটা বেশি বুঝি না। তবে এতোটুকু বুঝি, যে প্রতিষ্ঠানে চাকুরির সুবাদে তার মাসিক বেতন হচ্ছে, সেখানে যদি সে তার সেরাটা দিতে না পারে, তাহলে এক কথায় তাকে আমি ব্যর্থ বলতে কুণ্ঠাবোধ করি না।
নিজের সন্তানের ভালোর জন্য আপনি সর্বোচ্চ কিছু করার চেষ্টা করছেন। তাহলে অন্যের সন্তানের বেলায় এত কার্পণ্যতা কেন।
দেখুন জহির সাহেব, আমার মনে হয় আমাদের সম্পর্কের ইতি এখানেই টানা উচিত। আপনার মত, আত্মকেন্দ্রিক মুখোশধারী ভন্ডের সঙ্গে আর যাইহোক সুসম্পর্ক বজায় রাখা যায় না।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আমাদের দেশে জহির সাহেবের মত এমন অনেক মানুষ আছে যারা কিনা সারাদিন বলতে থাকে দেশের অনেক উন্নতি করে দেশকে ইউরোপ এর সাথে তুলনা করে অথচ তারাই তাদের ছেলেমেয়ে কে বাহিরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠায় তাছাড়া কোন চিকিৎসা এর জন্য বাহিরের দেশকে ভরসা করে অথচ তারা পারতো দেশেকে উন্নতির পথে নিতে।যাই হোক ভালো লাগলো।ধন্যবাদ
নিজেরটা সবাই ভালো চায়, অন্যের কি হলো তা তো দেখার সময় নেই, এই হচ্ছে অবস্থা।
এমন একটা খুশির মুহূর্তে জহির সাহেবের মাথাটা একেবারে গরম করে দিয়েছেন ভাই। উনি যে স্কুলে শিক্ষকতা করেন, সেই স্কুলের পড়াশোনার মান সম্পর্কে জহির সাহেব খুব ভালো করেই জানেন। তাইতো জহির সাহেব উনার মেয়েকে অন্য স্কুলে পড়াশোনা করিয়েছেন। আসলে যে যাই বলুক না কেনো, বর্তমান যুগের বেশিরভাগ মানুষ নিজের বেলায় ষোল আনা বুঝে ঠিকই, কিন্তু পরের বেলায় ১ আনাও বুঝে না। আমাদের দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গরা মুখে ঠিকই বলে বাংলাদেশের চিকিৎসার মান খুব ভালো। কিন্তু নিজেদের বেলায় ঠিকই সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড বা অন্যান্য দেশে দৌড়ায়। যাইহোক পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।
এমনটাই তো দেখছি ভাইয়া, পারিপার্শ্বিক অবস্থাতে। সব যেন একেকটা ভদ্রতার মুখোশ পড়ে আছে।
জহির সাহেবের মতো বলতে গেলে এমন স্বার্থপর অনেক মানুষ আছে। নিজের মেয়ের ভালোর জন্য ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াচ্ছে। আর নিজে একজন শিক্ষক হয়ে নিজের স্কুলের শিক্ষার্থীদের ভালো রেজাল্টের খবর নেই। তার মানে উনি ভালো ইফোর্টস দেননি। না হয় এমন হওয়ার কথা না।
এটাই বাস্তবতা ভাই, নিজের সন্তান হচ্ছে সন্তান আর বাকি সব হাঁস মুরগি। ব্যাপারটা বেশ ব্যথিত করেছে আমাকে।