মেডিকেল কলেজের প্রথম বর্ষের ঘটনা

in আমার বাংলা ব্লগ7 months ago

people-4050698_1280.jpg
source

জীবনে খুব বেশি পড়াশোনা করতে পারিনি, ঐ টেনেটুনে মেডিকেল কলেজের দ্বারপ্রান্তে গিয়েছিলাম। ওখানেই কয়েকটা বছর হালকা পড়াশোনার মাঝে কাটিয়েছিলাম। অর্থাৎ বলতে গেলে আমার পড়াশোনার ইতি ঘটে মেডিকেল কলেজের পরেই। কোন মতো দন্ত বিদ্যার কোর্স সম্পূর্ণ করেছিলাম। তবে উচ্চতর কোন ডিগ্রি নিতে পারেনি। মানে আমাকে দ্বারা আর হচ্ছিল না তাই আর এগিয়ে যাইনি।

মেডিকেল কলেজের প্রথম বর্ষে গিয়ে ভীষণ রকম এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হয়েছিল। সেই সময় ডেন্টালে আমরা মাত্র ২৫ জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়েছিলাম। মজার ব্যাপার হচ্ছে, যেহেতু প্রাইভেট মেডিকেল তার ভিতরে সবাই এখানে বেশ টাকা পয়সা খরচ করে ভর্তি হয়েছে, তাই পড়াশুনার প্রতি আগ্রহটা এখানে সকলের বেশি।

কেননা ফেল করলেই ঝামেলা কারণ আবারও অনেকগুলো বাড়তি পয়সা গুনতে হয়। তাই বলা যায় সেই সময় সবাই পড়াশোনা নিয়ে সবাই বেশ তৎপর ছিল। যদিও আমি বাসা থেকে রেগুলার যাতায়াত করতাম, তাই মোটামুটি স্যার-ম্যাডামদের সঙ্গে অতিরিক্ত সময় কাটানো আমার পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব হতো না। আমি আসলে অন্যদের মতো সারাক্ষণ স্যার ম্যাডামদের পিছনে ঘুরঘুর করার চেষ্টাও করতাম না। আমি জানতাম প্রতিবছরের ফাইনাল পরীক্ষাগুলো, সরকারি মেডিকেলের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে হবে আর আমাদের পরীক্ষার খাতাগুলো কাটবে সরকারি মেডিকেলের স্যার-ম্যাডামরাই।

হয়তো আমাদের কলেজের স্যার ম্যাডামরা আমাদের প্রতিনিয়ত ক্লাস নিত এবং কলেজের পরীক্ষাগুলোতে তারা আমাদের যাচাই-বাছাই করতে পারত, তবে বোর্ড পরীক্ষা সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। এখানে নিজ প্রতিষ্ঠানের স্যার ম্যাডামদের কোনই ভূমিকা থাকে না।

যেহেতু আমি মাঝামাঝি স্বভাবের মানুষ ছিলাম এবং নিজের মতো করে চলতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতাম, তাই আমার সহপাঠীরা ক্রমাগত বলতো যে একটু সিরিয়াস হওয়ার জন্য কিংবা তাদের সঙ্গে অতিরিক্ত সময় কাটিয়ে স্যার ম্যাডামদের মনোরঞ্জন করার জন্য। আমি আমার সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করতাম, তবে অতিরিক্ত কিছুই করতে পারতাম না। কেননা আমি প্রতিদিন বাসা থেকে যাতায়াত করতাম এবং ওরা থাকতো হোস্টেলে। আমার আর ওদের ভিতর তফাৎ ছিল এতোটুকুই।

দেখতে দেখতে প্রথম বর্ষের বোর্ড পরীক্ষার সময় চলে আসলো, সবাই মোটামুটি বেশ ভালই প্রস্তুতি নিয়েছে। সবার প্রস্তুতি দেখে আমি কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছি, কারণ আমি এতো তুখোড় ছাত্র নই। স্যার ম্যাডামরা আমাকে নিয়ে একপ্রকার আশাই ছেড়ে দিয়েছিল। যাইহোক শেষমেষ প্রথম বর্ষের বোর্ড পরীক্ষা হয়ে গেল লিখিত এবং ভাইবা দুটো পরীক্ষা মোটামুটি দেওয়ার চেষ্টা করলাম। তবে প্রতিদিন যখন পরীক্ষা দিয়ে হল থেকে বের হতাম, তখন অন্যান্য সহপাঠীদের কথা শুনে নিজের কাছে বড্ড কেমন জানি লাগতো।

মনে হতো এতো মেধাবীদের মাঝে আমি, পাশ করতে পারবো তো, এই একটা ভয় নিজের ভিতরে থেকেই গিয়েছিল। একটা কথা বলি ভাই, হয়তো শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই একদম চরম অপ্রিয় সত্য। আমরা মানুষরা বড্ড হিংসা লালিত করে থাকি নিজের মাঝে। হয়তো মানুষকে প্রতিনিয়তই আমরা কোনো না কোনোভাবে সান্ত্বনা বা পরামর্শ দিয়ে থাকি, তবে সেটা যদি নিজের বাহিরে চলে যায়, তখন সেটা মেনে নিতে একটু কষ্ট হয়।

আমার যে বন্ধুরা প্রতিনিয়ত আমাকে পড়াশোনায় মনোযোগ বৃদ্ধি করানোর জন্য অনুপ্রাণিত করত, হঠাৎই সেদিন আমি তাদের মুখে ফ্যাকাসে ছাপ দেখেছিলাম। অর্থাৎ বন্ধুকে উৎসাহিত করা খুব সহজ, তবে সেই বন্ধু যদি কোন রকমে একদম সবার উপরে উঠে যায়, তখন সবাই কেন জানি ভিতরে ভিতরে কিছুটা জ্বলে যায়। মানে বন্ধু ফেল করলে খারাপ লাগে এটা যেমন সত্য, তবে তারথেকেও বেশি সত্য কথা হচ্ছে, সেই বন্ধু যদি সবার থেকে ভালো রেজাল্ট করে, তখন খারাপ লাগাটা যেন আরো বেশি কাজ করে।

২৫ জনের মধ্যে মাত্র তিনজন আমরা পাশ করেছিলাম সেবার। যে বন্ধুরা আমাকে প্রতিনিয়ত অনুপ্রাণিত করত, তাদের অধিকাংশই ফেল করেছিল এবং তারা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিল না, আমার পাশ করাটা। সেদিন তাদের মুখের দিকে আমি তাকাতে পারছিলাম না, আমার দিকে তারা এমন ভাবে দেখছিল, যেন মনে হচ্ছিল আমি কোন বড্ড অপরাধ করে ফেলেছি।

Banner-16.png

ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht


20211003_112202.gif


JOIN WITH US ON DISCORD SERVER

banner-abb4.png

Follow @amarbanglablog for last updates


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 7 months ago 

ভাই আপনার সহপাঠীরা তো ভাবতো, আপনাদের প্রতিষ্ঠানের স্যার ম্যাডামদের মনোরঞ্জন করতে পারলেই যথেষ্ট। আপনি আপনার বাসা থেকে যাতায়াত করতেন এবং আপনার সহপাঠীরা হোস্টেলে থাকতো বিধায়, স্যার ম্যাডামদের মনোরঞ্জন করার টাইম পেতো। তবে আপনাকে যতটুকু চিনি বা জানি,আপনার যদি তাদের মতো সুযোগ থাকতো, তবুও আপনি স্যার ম্যাডামদের মনোরঞ্জন করার জন্য তাদের মতো এতো সময় ব্যয় করতেন না। আপনার মতো আমার স্বভাবটা তেমনই। কাউকে তেল মারার স্বভাব আমার নেই। কারণ এই কাজটি করতে গেলে নিজেকে একেবারে তুচ্ছ মনে হয় এবং নিজের ব্যক্তিত্ববোধে আঘাত হানে। তবে সহপাঠী বা বন্ধু বান্ধব যা ই বলি না কেনো, কেউ কখনো চায় না নিজের চেয়ে কেউ উপরে উঠে যাক। আসলে সবার মধ্যে কমবেশি হিংসা কাজ করে। আপনার সহপাঠীদের ধারণা ছিলো তারা খুব ভালো রেজাল্ট করবে, আর আপনি ফেল করবেন। তাই তারা চেয়েছিল আপনি যেন কমপক্ষে পাশ করতে পারেন। যখন রেজাল্ট বের হলো,তখন তো সবার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছিল। এই ঘটনা থেকে সবার শিক্ষা নেওয়া দরকার। যাইহোক পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।

Posted using SteemPro Mobile

 7 months ago 

জীবনটাই তো শিক্ষা অর্জনের জায়গা, যতদিন যাচ্ছে ততই যেন নতুন নতুন কিছু শিখছি। সব কিছুর সঙ্গে আপোষ চলে, তবে ব্যক্তিত্ববোধের সঙ্গে নয়। ভালো লাগলো আপনার সাবলীল মন্তব্যটি ভাই।

 7 months ago 

একেবারে যথার্থ বলেছেন ভাই, ব্যক্তিত্ববোধের সাথে কখনোই কোনো আপোষ চলে না। যাইহোক ফিডব্যাক দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।

 7 months ago 

ভাইয়া, আপনার আজকের পোস্টটা পড়ছি যেন চোখের সামনে ভাসছে আপনার সেই স্মৃতি।যাইহোক তারা তো চেষ্টা করেছে স্যার ম্যাডামদের সাথে থেকে ভালোভাবে নিজের পড়াশোনা বুঝে নেয়ার। কিন্তু আপনি আপনার মত করে পড়াশোনা করে গিয়েছেন। সবশেষে আপনার ভালো রেজাল্ট দেখে তারাই হয়তো খুব বেশি ব্যথিত হয়েছে। কারণ একটা সময় যাকে উৎসাহিত করেছে সেই পাশ করে পেলেছে আর তারা ফেল। যাইহোক স্মৃতিময় মুহূর্ত পড়ে ভালো লাগলো।

 7 months ago 

এমন ঘটনা আমার সাথেও হয়েছে ডিপ্লোমা লাইফে! আমিও এতোটা ভালো ছাত্র ছিলাম না। তবে সাইলেন্টলি এগিয়েছিলাম। বন্ধুরা সবসময় দেখতাম স্যারদের পাশে থাকতো, স্যারেরা যা বলতো তাই করতো! আমি আবার স্যারদের কাছে অচেনা মুখ ছিলাম। তারপরেও যখন ভালো রেজাল্ট করলাম সবাই হা করে তাকিয়ে রইল! আসলে মুখে পড় পড় বললেও অন্তরে হয়তো বলতো পড়িস না! আর আমাদের মাঝে হিংসা জিনিসটা অনেক বেশি! কারো খারাপ হলে হয় খুশি আবার কেউ ভালো করলে দেখতে পারে না

 7 months ago 

আপনার জীবনের ব্যাপারটা জেনেও বেশ ভালো লাগলো ভাই। তবে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন , তা নিয়ে এগিয়ে যান।

 7 months ago 

জি ভাইয়া 😍🖤

 7 months ago 

ভাইয়া রবিবারের আড্ডায় কিন্তু আপনার আজকের পোস্টের কিছু বিষয় আপনি শেয়ার করেছিলেন। আর আজ পুরো পোস্টটি পড়ে বেশ খারাপই লাগলো। আসলে আমরা মানুষ গুলো বেশ হিংসা পরায়ণ। উপর দিয়ে সবাই ভালো হতে চাই। কিন্তু সত্যিকার অর্থে যে আমরা কারও ভালো চাই না সেটা কিন্তু বুঝতেও দেই না। জানি না পরবর্তীতে তাদের বোধদয় হয়েছে কিনা।ধন্যবাদ এত ‍সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।

 7 months ago 

হিংসা নিপাত যাক, মানুষ হোক মানুষের জন্য, এই প্রত্যাশাই ব্যক্ত করছি।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.027
BTC 60482.94
ETH 2613.04
USDT 1.00
SBD 2.63