খপ্পর
হান্নান মিয়ার দুই বিঘার মত ফসলের জমি আছে। বলা যায় অনেকটা কষ্ট করেই ঋণ নিয়ে এবার পুরো দুই বিঘা জমিতেই ফসল চাষ করেছে। যদিও তার ঋণের খুব একটা প্রয়োজন হতো না, তবে অনেকটা বাধ্য হয়েই স্থানীয় সমবায় সমিতির মাধ্যমে কৃষি ঋণ নিয়েছে। কেউ তো ইচ্ছা করে ঋণ নিতে চায় না, যেহেতু সবকিছুর দাম বেড়ে গিয়েছে, তাই সামাল দিতে না পারলে, ঋণ ছাড়া তো কোন বিকল্প নেই।
এই সমবায় সমিতি গুলো এমন একটা সিস্টেম দাঁড় করিয়ে রেখেছে, মানে তারা হান্নান মিয়ার মত মধ্যম আয় বা নিম্ন মধ্যম আয়ের মানুষগুলোকেই টার্গেট করে রাখে। হান্নান মিয়া, মাত্র ৩৫ হাজার টাকা নিয়েছে চার মাসের জন্য। তারপর নির্দিষ্ট তারিখে লাভ সহ ৪০ হাজার টাকা দিতে হবে। আর নির্দিষ্ট তারিখ অতিক্রম হয়ে গেলে, তখন প্রতিদিন চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ বাড়বে।
হান্নান মিয়ার এখনো জমির ফসল খুব একটা পাকে নি। তারমধ্যেই সমিতির লোকজন প্রতিনিয়ত তাকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে যাচ্ছে, আপনার কিন্তু আর বেশি দিন সময় নেই, অল্প কয়েকদিন পরেই কিন্তু আপনাকে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। হান্নান মিয়া, এখনো নিজের ফসল জমি থেকে ঘরেই তোলেনি, তার আগেই যেন বারবার এমন সতর্কবাণীতে সে অনেকটাই শঙ্কিত।
ধরুন যে পরিমাণ ফসল চাষ হয়েছে, সেখান থেকে প্রথমত নিজের পরিবারের খাবারের জন্য ফসল রাখতে হবে, তারপরে বাকি ফসল বাজারে বিক্রি করে দিতে হবে, তারপরে সেই ফসল বিক্রির টাকা দিয়েই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। বিষয়টা যেমন সময় সাপেক্ষ, তেমনটা আবার ধৈর্যের। এখানে আবার অনেকগুলো বিষয় কাজ করছে, হান্নান মিয়া যতটুকু প্রত্যাশা করছে, ততটুকু ফসল আদৌ হবে কিনা বা কবে নাগাদ পুরোপুরি ফসল পাকবে সেটার একটা বিষয় থেকেই যাচ্ছে। এসবের থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ফসলের আদৌ ন্যায্য মূল্য পাবে কি সে। সব মিলিয়ে সে অনেকটাই, হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
সমবায় সমিতির লোকজনের আসলে এত কিছু বোঝার সময় নেই। তারা শুধু বোঝে, তাদের টাকা যেন সঠিক সময়ে ফেরত আসে। এমনটা শুধু এখানকার গ্রামের অবস্থা না, মোটামুটি দেশের আনাচে-কানাচে সব জায়গাতেই এই রকম সমবায় সমিতি গড়ে উঠেছে, যারা নিরীহ মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে, যেমন ব্যবসা করছে তেমনটা আবার তাদেরকেই বিভিন্ন ফাঁদে জিম্মি করে ফেলেছে।
অনেকেই হয়তো সঠিক সময়ে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারে না। আর এমন ঘটনা যদি ঘটেই যায়, তখন সমবায় সমিতির লোকজনের আসল চেহারা মুহূর্তেই বেরিয়ে আসে। ঋণ গ্রাহককে, যেমন শারীরিক মানসিক ভাবে চাপে ফেলে, তেমনটা আবার অর্থনৈতিক ভাবেও প্রচন্ড ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলে । হান্নান মিয়া যে আসলে সমবায় সমিতির খপ্পরে পড়েছে, তা আর তার বুঝতে বাকি নেই। তবে এই খপ্পর থেকে সে কিভাবে নিজেকে রক্ষা করবে, সেটা ভাবতেই যেন দিশেহারা হয়ে গিয়েছে।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
একটা সময় ছিলো মানুষ মানুষকে এমনিতেই টাকা ধার দিতো। কিন্তু এখন এগুলো একেবারেই নেই। কেউ মরে গেলেও সহজে কেউ ধার দিতে চায় না। নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্তদেরকে এখন প্রয়োজন পরলে বাধ্য হয়ে সমবায় সমিতির কাছ থেকে ঋণ নিতে হয়। তারা সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার নামে কতো ধরনের নাটক যে করে, তার কোনো হিসাব নেই। যারা সমবায় সমিতির সাথে জড়ায়,এদের মধ্যে বেশিরভাগ পরিবার একেবারে নিঃস্ব হয়ে যায়। এমনটা আমি অনেক দেখেছি এবং বর্তমানেও দেখছি। যাইহোক হান্নান মিয়া সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে পারবে এমনটাই আশা ব্যক্ত করছি।
সমবায় সমিতির বিষয়ে আপনি যে মন্তব্য করেছেন, তা একদম সঠিক ভাই। আমি নিজের চোখে যদি ঘটনাটা না দেখতাম, তাহলে ব্যাপারটা আমার অজানাই থেকে যেত।
https://twitter.com/sharifShuvo11/status/1721050507610149027?t=z_Vh9MCBg_Xb8cfXFg2Q-Q&s=19
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
দেশের যা অবস্থা ভাইয়া। যারা দিন আনে দিন খায় তারা তো ইচ্ছা করে ঋণ নিতে চায় না।বাস্তবতা পরিস্থিতি ও দ্রব্যমূল্যের দাম তাদের বাধ্য করে ঋণ নিতে।কিন্তু সমিতি গুলো তাদের ঋণ দিয়ে তাদের জীবনটা অনেক ধ্বংস করে দেয় মাঝে মাঝে। তারা ঋণ পরিশোধ না দিতে পেরে আত্মহতত্ত্বের পথ বেছে নেয়। অনেক খারাপ কাজে লিপ্ত হয়ে যায়। সুদ মানুষ চারিদিকে গোপনে গোপনে খাচ্ছে। আর সাধারণ মানুষ কেই টার্গেট করে টাকাটা দেয়। কারণ টাকাটা দিতে পারবে না। পরে সুদে আসলে শোধ করে নেয়। জ্বী ভাইয়া সমবায় সমিতির লোকজন কিছুই বুঝতে চায় না। তারা শুধু টাকাটাই বোঝে। দেশে এই সমিতি গুলো আমাদের পরিবেশ টাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। তারা মানুষের সামান্য পরিস্থিতি বুঝতেই চায় না। হান্নান মিয়ার জন্য অনেক দোয়া রইল সে যেন এই খপ্পড় থেকে বেড় হয়ে এসে সুন্দর ভাবে জীবন যাপন করতে পারে। অল্পর মধ্যেও প্রশান্তি যাইহোক এই সমবায় সমিতি গুলো প্রথমে মিষ্টির মত মানুষের মনে মধুর ঢেলে দেয় তারপর বিষের মতো ছোবল মারে।
আসলেই ব্যাপারটা অনেকটাই জটিলতা সম্পন্ন, তারপরেও হান্নান মিয়া এসব ঝুট ঝামেলা থেকে রক্ষা পাক, এমনটাই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।
আমার মনে হয় এমন সমিতি গুলো নিঃস্ব করে দেয় হান্নান মিয়ার মত হাজারও মানুষ কে। যারা এমন সমিতি থেকে লোন করে অনিশ্চিত কোন জায়গায় সে টাকা ব্যয় করে তাদের কে এমন বিপদেই পড়তে হয়। এখন যদি হান্নান মিয়ার ফসলাদি না হয় তাহলে তো তাকে এই লোনের বোঝা সারা জীবনই টানতে হবে। ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর একটি পোস্ট করার জন্য।
একদম ঠিক বলেছেন আপু, কি যে অপেক্ষা করছে হান্নান মিয়ার কপালে কে জানে তা।
আমাদের দেশের প্রান্তিক অঞ্চলের অনেক কৃষকই হান্নান মিয়ার মতো এইসব সমবায়ের স্বীকার। সত্যি যেটা একেবারে দুঃখজনক।এরা যেন হান্নান সাহেবের মতো লোকেদেরই খোজে। ঋণ দেওয়ার সময় বেশ ভালো কথা বলে দিলেও সময় হলেই তাদের আসল চেহারা যেন একেবারে বেরিয়ে আসে ভাই।
হান্নান মিয়ার মতো বাংলাদেশে এমন অনেক ভুক্তভোগী রয়েছে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্ত পরিবারের সদস্যদেরকেই টার্গেট করে। নির্দিষ্ট সময়ের ভিতরে দিতে না পারলেই সমিতির লোক এসে বাড়িতে হাজির! ৩৫ হাজার টাকায় ৪০ হাজার টাকা! ৫ হাজার টাকা লাভ দিতে হবে। যেহেতু হান্নান মিয়া জমি চাষ করে সেটা দিয়েই মেটাবে, তাহলে তার মাথায় চাপটাও বেশি।
কথায় আছে-"দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার"।আসলে হান্নান মিয়ার মতো অসহায় দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ খুব সহজেই সরল কথায় ফেঁসে গিয়ে ঋণ নেয়।তারপর নির্দিষ্ট সময়ে দিতে না পারলে জোর জবদস্তি করে সেই সুবিধাবাদী মানুষেরা।যারা শুধুমাত্র সুদের জন্য মানুষকে ঋন দেয়।আশা করি হান্নান মিয়া তার ঋণ পরিশোধ করতে সক্ষম হবেন,ধন্যবাদ ভাইয়া।
কিছু কিছু সমবায় সমিতি আছে যেগুলো মানুষের উপকার করার নাম করে ফাঁদে ফেলে। আর শেষ পর্যায়ে এসে অনেক বেশি চাপের মধ্যে ফেলে দেয়। হান্নান মিয়ার মত মানুষরা এদের কবলে পড়লে অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আপনার পোস্ট পড়ে ভালো লাগলো ভাইয়া।