বছর পাঁচেক আগে
আজ যা লিখছি, তা একদম নিজের অভিজ্ঞতা থেকে। কেননা ঘটনার ভুক্তভোগী ছিলাম আমি নিজেই।
বছর পাঁচেক আগে তখন সেকি ব্যস্ততা আমার, একদিকে চেম্বার অন্যদিকে পড়াশুনা। বলতে গেলে ভালই চাপ গিয়েছিল নিজের উপর দিয়ে, সরকারি চাকরির প্রস্তুতি পরীক্ষার জন্য সেসময় কিছু বই কিনেছিলাম। প্রতিনিয়তই বাবা-মা ও হীরাকে বলতাম, দেখো আশেপাশে চাকরি সংক্রান্ত টাকাপয়সা লেনদেনের যে খবর শুনি, তাতে মনে হয় আমার এই পড়াশোনা করা কিংবা প্রস্তুতির জন্য যে বইগুলো কিনলাম সবগুলোই বৃথা।
ওরা আমাকে সব সময় সাহস যুগিয়ে যেত, বলতো একটু কষ্ট করো, পড়াশোনায় একটু মনোযোগী হও, আপাতত চেম্বারটা না হয় কিছুদিন বন্ধ রাখো, তারপরে চাকরি হয়ে গেলে সবকিছু আবারও ঠিকঠাক হয়ে যাবে।
মানে আমার চাকরির জন্য সবার যে পরিমাণ আগ্রহ ছিল, তা দেখে আমার নিজের পড়াশোনার গতি অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল। মনে হচ্ছিল যে করেই হোক, চাকরিটা আমাকে পেতেই হবে। সারা দিনরাত সমান করে শুধু পড়েই গিয়েছিলাম, কখনো চাকরি নিয়োগের বইগুলো, কখনো নিজের মেডিকেল একাডেমিক বইগুলো, তাছাড়া বাংলা, ইংরেজি, অংক, সাধারণ জ্ঞান এসব তো ছিলই। সব মিলিয়ে একদম জগাখিচুড়ি অবস্থা।
মাঝেমধ্যে শুধু একটা প্রশ্নই নিজের মধ্যে উদয় হতো, চাকরি যদি আমি পেয়েই যাই, তাহলে সেবা দিতে হবে রোগীদের, এক্ষেত্রে আমার বাংলা ইংরেজি বা অন্যান্য বিষয় অহেতুক পড়ার কি দরকার। তার থেকে যদি, আমাকে আমার পেশা অনুযায়ী আরো শক্তপোক্তভাবে পড়াশোনার অবস্থা তৈরি করে দেওয়া যেত কিংবা সেই ভাবে যদি চাকরির প্রশ্ন হতো, তাহলে অনেকটাই শান্তি পাওয়া যেত। তবে বাস্তবতা ভিন্ন।
আমি মূলত সরকারি চাকরির পরীক্ষায় বসে ছিলাম, কোভিড চলাকালীন সময়ে । সেই সময় প্রচুর ডাক্তার নার্স ও অন্যান্য মেডিকেল সার্ভিস পদে প্রচুর লোকবল স্বল্পতা ছিল। যেহেতু একেবারে অনেক লোক নেবে, তাই চেষ্টা করলাম মানসিক ভাবে নিজেকে চাকরির জন্য স্থির করতে। অবশেষে পরীক্ষা দিলাম, মোটামুটি ভালই হয়েছিল পরীক্ষা। তবে যে পরিমাণ কোটা ছিল, সেই ক্ষেত্রে সাধারণ চাকরি প্রত্যাশীদের অবস্থা বড্ড করুণ। পরে শুনেছিলাম প্রশ্নপত্র নাকি আবার ফাঁস হয়েছিল। মানে টাকা পয়সা লেনদেনের প্রক্রিয়া চলমান ছিল, সেসময় কিছু সাংবাদিক এসব বিষয়ে কথা বলেছিল, তবে সেটা ফলপ্রসু হয়নি।
মানে আমার পিঠের উপর সেই সময় একটা সীলমোহর দিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যে আমি চাকরির জন্য অযোগ্য। কি পরিমাণ যে মানসিক অশান্তিতে ভুগেছিলাম, তা বলে বোঝাতে পারবো না।
গত রাতে সোশ্যাল মিডিয়াতে একটা নিউজ দেখলাম, তাতে স্পষ্ট করে লেখা পিএসসি অর্থাৎ Public services commission থেকে বিগত এক যুগ থেকে তারা প্রশ্নপত্র ফাঁস করেই আসছে। যার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে, পিএসসির প্রধান স্বয়ং নিজেই । এ নিউজ টা দেখার পর থেকেই, নিজেকে যেন কোনভাবেই শান্ত করতে পারছিলাম না। ভিতরে ভিতরে দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছিলাম।
একটা জাতিকে শেষ করে দেওয়ার জন্য, কি পরিমাণ সুনিপুণ অভিনয় করতে হয়, তারই প্রমাণ করল পিএসসি। দিনশেষে আসলে এটাই আমাদের দেশ, এটাই আমাদের চিত্র। এখানে অযোগ্যরাই সর্বদা বিরাজমান। আর যোগ্যদেরকে প্রতিনিয়ত বঞ্চিত করা হয়।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
![Heroism_3rd.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmRejDSNMUFmRz2tgu4LdFxkyoZYmsyGkCsepm3DPAocEx/Heroism_3rd.png)
VOTE @bangla.witness as witness
![witness_vote.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmW8HnxaSZVKBJJ9fRD93ELcrH8wXJ4AMNPhrke3iAj5dX/witness_vote.png)
OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
ঠিকই বলেছেন ভাইয়া দিনরাত পরিশ্রম করে যখন কোন ফল পাওয়া যায় না তখন আসলেই মন মানসিকতা একেবারেই ভেঙে যায় । আমাদের এখনকার অবস্থাটাই এমন অযোগ্যদেরকে বেশি মূল্যায়ন করা হয় যোগ্যদেরকে পেছনে ঠেলে । আর সেই মোতাবেক মানুষজন চলে আসছে এখন আর কিছুই করার নেই এটা মেনে নেওয়া ছাড়া । আমরাতো শুধু নীরব দর্শক ।
ঐ একবারই আমি সরকারি চাকরির পরীক্ষায় বসে ছিলাম, তারপরে আর কখনো বসিনি কিংবা ইচ্ছাও জাগেনি।
ভাইয়া এদেশের চাকরি পরীক্ষার ক্ষেত্রে আর নতুন করে কিছু বলতে চাই না। সবকিছুতেই প্রশ্ন ফাঁস হয় ,চাকরির ক্ষেত্রে সে আর নতুন কি ।ইদানিং শুনছি বিসিএস এর প্রশ্নপত্র নাকি দীর্ঘদিন যাবত ফাঁস হয়ে আসছে ।তাহলে আর কোন সেক্টর টা বাদ রইল? এদেশের সব বড় বড় পদগুলোতে কিছু অর্থ লোভী বসে আছে। তাতে করে দেশের আর ভালো কিছু হওয়ার সুযোগ নেই ।যাইহোক আপনার লেখাটা পড়ে বেশ ভালো লাগলো ।ধন্যবাদ আপনাকে।
সবকিছু অনেকদিন থেকেই হচ্ছে, আমরা জানতে পারছি শুধু দেরিতে।
একেবারে যথার্থ বলেছেন ভাই। আপনি যতই পড়াশোনা করেন না কেনো, টাকার জোরে ফাঁস হয়ে যাওয়া প্রশ্নপত্র অনেকে ঠিকই পেয়ে যায়। তাহলে যারা যোগ্য, তাদের তো একেবারেই সুযোগ নেই। আমাদের দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা গুলোতে অযোগ্য এবং অসৎ লোকদেরকে বসানো হয়েছে। আর সেজন্যই আমাদের দেশের এই অবস্থা। কতো মানুষ চাকরি না পেয়ে হতাশ হয়ে যে আত্নহত্যা করে,তার কোনো হিসাব নেই। কিন্তু তবুও সেসব অসৎ লোকদের কিছুই যায় আসে না। তারা নিজেদের ব্যাংক ব্যালেন্স গড়া নিয়ে ব্যস্ত। যাইহোক পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
সমাজটা চলে গিয়েছে নষ্টের দখলে, যার কারণে এই অবস্থা।
পিএসসি এবার যা খেল দেখালো এতে করে চাকরি প্রত্যাশীদের আশা একেবারে নিরাশা হয়ে গেল। যারা উদ্বোধন কর্তৃপক্ষ তারাই যদি দুর্নীতিগ্রস্থ হয় তাহলে ভবিষ্যতে কি হবে সেটাই ভাবছি ভাইয়া। অবস্থা সত্যিই অনেক করুন হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রত্যেকটি সেক্টরে সব অযোগ্য লোক দিয়ে ভরে গেছে।
এই অবস্থা আমি পাঁচ বছর আগেই অনুমান করতে পেরেছিলাম, তবে প্রকাশ হলো অনেক দেরিতে আপু।
আমার আশেপাশে এমন অনেক মানুষকে দেখেছি কঠোর পরিশ্রম করে যেতে সরকারি চাকরি পাওয়ার জন্য। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে একদম ভাইবা পর্যন্ত চলে গিয়েছে কিন্তু শেষমেষ ভাইবা দিয়েও চাকরি হলো না। তার একমাত্র কারণ, আগেই কোটা পরিপূর্ণ হয়ে গেছে টাকা লেনদেন করে। আর বাংলাদেশে এই সরকারি চাকরি গুলো মূলত টাকাওয়ালাদের জন্য। যারা টাকা দিয়ে চাকরি কিনতে পারবে তাদের জন্যই সরকারি চাকরি, বা যাদের মামা খালু থাকে। যদিও সবক্ষেত্রে হয় না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে যোগ্যরাও স্থান পায়। এত কষ্ট করে এখন হয়তো কেউ আর সরকারি চাকরি করতে চায়না। সবাই যেন এখন নিজ নিজ উদ্যোগে কাজ করতে চায়। আপনার পোস্টটা পড়ে খুব ভালো লাগলো। তবে আপনার এই সংগ্রামের কাহিনীটা যে সুখকর নয় সেটাও বুঝলাম।
কিছু কিছু ক্ষেত্রের ব্যাপারটাকে আমি আসলে গ্রহণ করি না। কেননা সবটাই নষ্টের দখলে চলে গিয়েছে আপু।
নিজের চাকরির পাশাপাশি মাস খানেক হলো বই কিনে আমিও শুরু করেছি সরকারি জব এর প্রস্তুতি। কিন্তু এই নিউজ আমার মনোবল একেবারেই ভেঙে দিয়েছে ভাই। একে তো কোঠা তার উপর আবার প্রশ্নফাঁস। এগুলো দেখার পর আর ইচ্ছা করছে না এতোকিছুর মধ্যে সময় বের করে লেখাপড়া করতে।
দেশে আর যাই বলো ভাই, পড়াশোনা দিয়ে চাকরি হয় না, এটা আমি পাঁচ বছর আগেই বুঝতে পেরেছি।
আমাদের এই দেশে যোগ্য মানুষদের সঠিক সম্মান দেওয়া হয়না বলেই ভালো মানের মানুষেরা বিদেশে চলে যায়। বর্তমানে টাকা হলেই সব পাওয়া যায়। আমি একবার প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা দিয়েছিলাম আর সেই সময়ের অবস্থা দেখে আমিও বইপত্র গুছিয়ে রেখে দিয়েছি। কখনও তো হতে পারবোই না বরং মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়বো এসব চিন্তা করে সেদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছি। ভাইয়া শুধু পিএসসি না,সব ধরনের পরীক্ষায় যেভাবে প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে এতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। কিন্তু এদিকে তাদের কোনো খেয়াল নেই,এটাই হচ্ছে রত্নে গড়া আমাদের দেশ। যেখানে অযোগ্য ব্যক্তিরা যোগ্যতা ছাড়াই উচ্চ পদে বসে থাকে। ধন্যবাদ ভাইয়া এত সুন্দর একটি ব্লগ শেয়ার করার জন্য।
আমিও আপনার মত করেছি আপু, এজন্য আর এই চাকরির পথে পা বাড়ায়নি।