বৃষ্টির দিনে আমার স্মৃতিময় কিছু কথা।
শুভ দুপুর বন্ধুরা,
প্রিয় কমিউনিটির সকল সম্মানিত ব্লগার ভাই ও বোনেরা আসসালামু আলাইকুম। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন? আলহামদুলিল্লাহ আমি অনেক ভালো আছি আপনাদের দোয়ায় সৃষ্টিকর্তার অসীম রহমতে। বন্ধুরা আপনাদেরকে একটি সুখবর দিতে চাই তা হলো আমাদের এখানে প্রচুর পরিমাণ বৃষ্টি হচ্ছে আজ দু’তিন দিন যাবত। সত্যি এর থেকে ভালো লাগার আর কিছু হতে পারে না আমার কাছে। যেহেতু আমার সবচেয়ে প্রিয় ঋতু হচ্ছে বর্ষাকাল। এই বর্ষাকাল আমি অনেক ভালোভাবে উপভোগ করার চেষ্টা করি। বর্ষার ঋতুতে বৃষ্টির অঝর ধারা আমার মনটা যেন কোথায় হারিয়ে যায়। জানালার ধারে বসে মনের আনন্দে বৃষ্টিগুলো উপভোগ করতে অনেক বেশি ভালোবাসি। সেটা আজ নয় শুধু ছোটকাল থেকে আমার একটি অভ্যাস। আমি আজকে আপনাদের সাথে যে বিষয় নিয়ে লিখবো তা আপনারা অবশ্যই বুঝতে পারছেন।
বেশ কিছুদিন আমরা গরমের তীব্রতায় অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছি। গরম যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনি সাথে লোডশেডিং এর মাত্রা অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়। এই যেন মনে হয় জনজীবন অতিষ্ট করে দেয়। বর্ষাকাল আসলে আমি মনে করি প্রকৃতিকে ধুয়ে মুছে দিয়ে যায়। বর্ষাকালে প্রকৃতি খুঁজে পাই নিজস্ব সতেজতা। বর্ষাকাল আসলে মানুষ ফিরে পায় প্রশান্তি। এই বৃষ্টি না হলে আমাদের দেশের কৃষকরা সোনার ফসল ফলাতে পারে না। বৃষ্টি আমাদের সবকিছুর জন্যই অনেক উপকারী। পরিবেশ যেমন ঠান্ডা থাকে তেমনি চারপাশের ওয়েদার অনেক ভালো থাকে। এছাড়াও কৃষি কাজের জন্য খুবই উপযুক্ত একটি সময় এই বর্ষাকাল।
আজ থেকে তিন দিন আগেই আকাশটা অনেক বেশি মেঘাচ্ছন্ন ছিল। তখনও হালকা পাতলা বৃষ্টি ছিল এই বৃষ্টি আসে যায় এমন অবস্থা ছিলো। কিন্তু আজ দুই দিন ধরে অনবরত ঝরতেই থাকছে বৃষ্টি। এই যেন বৃষ্টির ফোঁটা নয় অনেক বড় বড় ফোঁটা। সত্যি যখন জানালাতে এসে পড়ে বৃষ্টির ফোঁটা মনে হয় যে কেউ যেন কিছু দিয়ে আঘাত করতেছে। বৃষ্টির ফোঁটা অনেক বেশি বড় বড়। যাক তারপরও কিন্তু আমার কাছে অনেক ভালো লাগে। তবে অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে নিচু এলাকা গুলো ডুবে যায় সেজন্য একটু কষ্ট হয়। বাকি সব কিছু আমার জন্য কোন সমস্যা হয় না আমি বেশ ভালোভাবে উপভোগ করতে পারি। ছোটকালের অনেক স্মৃতি আমার মনে আছে এই বৃষ্টিকে কেন্দ্র করে।
যখন ছোট ছিলাম তখন বৃষ্টির দিনে কোথাও বের হতাম না বিশেষ করে ঘরে থাকতাম। তখন মা আমাকে অনেকগুলো হাতে পুতুল বানিয়ে দিত। মায়ের হাতের পুতুলগুলো এত সুন্দর ছিল সত্যি আমার কাছে এখনো মনে আছে। সেই পুতুলগুলোর চেহারা এত সুন্দর করে মা তৈরি করে দিত যা আমাকে অনেক মুগ্ধ করতো। সেই পুতুলগুলোর জন্য আমি পুরাতন কাপড় গুলো ছিড়ে শাড়ি তৈরি করতাম জামা কাপড় তৈরি করতাম বেশ ভালো লাগতো। আমি ঘরের এক কোণে বসে পুতুলগুলো নিয়ে মনের আনন্দে খেলাধুলা করতাম। সেই পুতুলগুলোর পরিবার ছিল তাদের মা বাবা ছিল সন্তান ছিল। আমি পুতুলগুলোকে বিয়ে দিতাম তাদের সংসার বড় হতো অনেক মজার কিছু খেলাধুলা করতাম বেশ ভালই লাগতো আমার কাছে। সাথে আমার ছোট ছোট খেলার সাথিরা থাকতো গ্রামের পাশের বাড়ির।
যখন বৃষ্টির দিন আসে সেই স্মৃতিগুলো আমার অনেক বেশি মনে পড়ে। শীতকাল এবং অন্যান্য ঋতুর তুলনায় বর্ষাকাল আমার সবচেয়ে প্রিয় ঋতু। আমার কাছে অনেক বেশি ভালো লাগে কেন জানেন? আমি জানালার ধারে বসে বৃষ্টি গুলো উপলব্ধি করতে পারি। সেই বৃষ্টির ছন্দে আমি গান গাইতে অনেক বেশি পছন্দ করি। যখন অঝোরে বৃষ্টি হবে তখন গলা ছেড়ে গান গাইতে ভীষণ পছন্দ করি আমি। এখন তো শহরের পরিবেশ বিল্ডিং এর মধ্যে বৃষ্টির আওয়াজ তেমন বোঝা যায় না। কিন্তু যখন গ্রামে ছিলাম টিনের ছালের মধ্যে বৃষ্টি পড়লে অনেক আওয়াজ হতো।
সেই আওয়াজের মধ্যে যখন গলা ছেড়ে গান গাইতাম সত্যি কেউ শুনতো না। এত ভালো লাগতো আমার কাছে বিছানায় শুয়ে পড়তাম জানালার পাশ দিয়ে। গায়ে একটি চাদর দিতাম আহা সেই সময় গুলো অনেক আনন্দের ছিল। আর সবচেয়ে বেশি মজার ব্যাপার ছিল আমি একটু ছোলা ভাজা খেতে অনেক বেশি পছন্দ করতাম। বৃষ্টির দিনে শিমের বিচি কিংবা ছোলা ভাজা নিয়ে বসে পড়তাম একপাশে। বিশেষ করে গ্রামের বাড়িতে আমাদের বড় একটি বারান্দা ছিল। সেই বারান্দাটি খোলামেলা ছিল। তখন একটা কিছু নিয়ে বসে পড়তাম। সেই টিনের চাল থেকে পানি পড়ার দৃশ্য দেখতাম বসে বসে। আর ছোলা ভাজা কিংবা শিমের বিচি ভাজা খেতাম আর যেন কোথায় হারিয়ে যেতাম।
আরেকটি মজার ব্যাপার হচ্ছে যখন প্রচুর পরিমাণ বৃষ্টি হতো তখন আমাদের গ্রামের বাড়িতে ওঠানের মধ্যে অনেক বেশি পানি উঠে যেত। যেহেতু একটু নিচু এলাকা ছিল বিল জমি ছিল তখন অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে পুরো আঙ্গিনাতেই পানি এসে পড়ে যেত। সেই পানির সাথে কিছু সাপও চলে আসতো। এত ভয় পেতাম চিৎকার-চেঁচামেচি করতাম সব ভাই বোন মিলে। যদিও সেই সাপগুলো এত বিষাক্ত ছিল না পানির সাপ যেগুলো পানিতে থাকতো। আমরা সাপের গায়ে ঢিল মারতাম সবগুলো দৌড়ে চলে যেত। আমরা ছোট পাঁচ ভাই বোন ছিলাম সবাই মিলে অনেক আনন্দ করতাম খেলা করতাম। মা আমার আমাদেরকে তখন মজার মজার রান্না করে দিত আর আমরা খেতাম।
আজকে যখন প্রচুর পরিমাণ বৃষ্টি হচ্ছে গতকাল কেও হয়েছে। সারারাত প্রচুর পরিমাণ বৃষ্টি হলো এখন মাকে খুব বেশি মিস করতেছিলাম। সেই হারিয়ে যাওয়া দিনগুলো আমার অনেক বেশি মনে পড়লো। বিশেষ করে বৃষ্টির দিনে নীরব পরিবেশে সেই অতীতের স্মৃতি গুলো বেশি মনে পড়ে যায়। এখন তো অনেক ব্যস্ত হয়ে গেছি সংসার নিয়ে বাচ্চাদেরকে নিয়ে এখন আর জানালার পাশে বসে সেই গানগুলো আর গাওয়া হয় না। এখন আর বৃষ্টির দিনে গায়ে চাদর দিয়ে আর ঘুমানো হয় না। সেই চাদরের ভিতর চোখ বন্ধ করে স্বপ্নগুলো আর দেখা হয় না। শুধু শান্তি পাই বৃষ্টি হলে বৃষ্টির আওয়াজ শুনতে পাই অনেক বেশি প্রশান্তি পায় সে বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারি।
বিশেষ করে গ্রীষ্মকাল আসলে আমি একটু অসুস্থ হয়ে যাই। যেহেতু আমার উচ্চ রক্ত চাপের সমস্যা আছে তাই গরম একদম সহ্য করতে পারি না। কিন্তু কি আর করার আমাদের দেশে ছয় ঋতু আসে প্রতি বছর পালাক্রমে। আমাদেরকে ছয় রকমেরই ঋতুর সাথে সম্মুখীন হতে হয়। যদিও আমরা বলে থাকি বর্ষাকাল। কিন্তু বর্ষাকাল এবং গরমকাল দুটোই আমাদের মাঝে থাকে। কিছুদিন প্রচুর পরিমাণ গরম হয় আবার কিছুদিন বৃষ্টি হয় এই হচ্ছে গরম এবং বর্ষার মধ্যে তারতম্য। আজকে চিন্তা করলাম বর্ষাকালের সেই সুন্দর স্মৃতিময় কথা গুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করি।
তাই আর চিন্তা না করেই লেখা শুরু করে দিলাম। আশা করি বন্ধুরা আমার অনুভূতিগুলো আপনাদের পড়ে ভালো লাগবে। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। আজকে আর নয় সমাপ্তি করছি এখানে। আল্লাহ হাফেজ সবাইকে।
লেখার উৎস | নিজের অনুভূতি থেকে |
---|---|
ইমেজ সোর্স | Wiko-T3 |
অবস্থান | কক্সবাজার, বাংলাদেশ |
ক্যাটাগরি | ক্রিয়েটিভ রাইটিং |
সবাইকে অনেক ধন্যবাদ সময় দিয়ে আমার ব্লগটি ভিজিট করার জন্য।
![268712224_305654151337735_1271309276897107472_n.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmUD3WR1TT66vwU4urXWaDDDT53AxDyK2LK8qqZmeDdiKb/268712224_305654151337735_1271309276897107472_n.png)
🥀আল্লাহ হাফেজ সবাইকে🥀
আমি সামশুন নাহার হিরা। আমার ইউজার আইডি @samhunnahar। আমি আমার বাংলা ব্লগে কাজ করছি বাংলাদেশের কক্সবাজার থেকে। আমি বাংলা ভাষায় লিখতে-পড়তে অনেক ভালবাসি। রান্না করতে আমি অনেক পছন্দ করি। তাছাড়া সময় পেলে ভ্রমণ করি আর প্রকৃতিকে অনুভব করি। ফটোগ্রাফি করতে আমার ভীষণ ভাল লাগে। আমি মাঝে মাঝে মনের আবেগ দিয়ে কবিতা লেখার চেষ্টা করি। আমার প্রিয় শখের মধ্যে তো গান গাওয়া অন্যতম। আমার মনের ভাব বাংলায় প্রাকাশ করতে পেরে অনেক আনন্দিত। তার জন্য আমার প্রাণের/ভালবাসার কমিউনিটি "আমার বাংলা ব্লগ"কে অনেক ভালবাসি।
#rainyseason-myfavorite #memories-rainyday #creativewriting #amarbanglablog #steemxclusive #shy-fox #abb-school
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
https://x.com/nahar_hera/status/1807324665133793378?t=aRy0F-3nfOvTmKaor7gWVQ&s=19
উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে আপু সত্যি গরম সহ্য করা অনেক কঠিন। তবে আমাদের বাংলাদেশ ছয় ঋতুর দেশ হলেও এখন কখন যে গ্রীষ্মকাল আর কখন যে বর্ষাকাল হচ্ছে বোঝাই যাচ্ছে না। এই তো কিছুদিন আগে অনেক রোদ গরম পড়ল কিন্তু বৃষ্টির কোন দেখায় মিলল না। তবে এই সপ্তাহে প্রায় বৃষ্টি দেখা মিলছে। গ্রামের পানিতে আপনারা পাঁচ ভাই বোন অনেক মজা করেছেন বেশ ভালো লাগলো আপু আপনার পোস্ট করে। আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
এখানে আপু ৪-৫ দিন ধরে বৃষ্টি হতেই থাকছে অনেক ভালো লাগতেছে আমার। ধন্যবাদ আপনাকে।
বৃষ্টির দিন কম বেশি সবারই খুব ভালো লাগে আপু। আসলেই টিনের চালে বৃষ্টি পড়লে তার রিমঝিম শব্দ অপূর্ব লাগে। বৃষ্টির দিনে যারা গান পারেনা তারাও হেরে গলায় গান ছেড়ে দেয়। আপনি গান করেন বৃষ্টির সাথে জেনে ভালো লাগলো। গ্রামের বাড়ি গুলো তো একটু নিচু হলেই বৃষ্টির জল জমে পুকুর হয়ে যায় উঠান যদি তা নিচু হয়। বৃষ্টির জলের সাপ ব্যাঙ চলে আসে। জল পেয়ে ব্যাঙ আসে আর ব্যাঙ খেতে সাপেরা আসে। আপনারা সাপ দেখে ভয় পেতেন এবং ঢিল ছুঁড়তেন জেনে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপু সুন্দর বৃষ্টির দিনের পোস্টটি আমাদের সঙ্গে ভাগ করে নেয়ার জন্য।
বাহ আপনার তো দেখছি আমার থেকে আরো অনেক অভিজ্ঞতা আপু। ঠিক বলছেন আপু ব্যাঙ খাওয়ার জন্য সাপ গুলো চলে আসে। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
গরমকাল টা উচ্চরক্তচাপের রোগীদের জন্য একটু ঝুঁকিপূর্ণ। বেশ চমৎকার লাগল আপনার ছোটবেলার মূহূর্তগুলো শুনতে। ধন্যবাদ আপু আমাদের সাথে শেয়ার করে নেওয়ার জন্য। যেহেতু ছেলে সেজন্য পুতুল নিয়ে কখনও খেলার সৌভাগ্য হয়নি। তবে ছোটবেলা বৃষ্টি হলেই ফুটবল নিয়ে মাঠে ছুটে যেতাম। কখনও বা ঘরে বসে ক্যারাম খেলতাম আমার ক্যারামবোর্ড ছিল। এখনও আছে।
অনেক বেশি পুতুল নিয়ে খেলা করেছি ছোটবেলায়। সেই স্মৃতিগুলো এখন অনেক বেশি মনে পড়ে।
আপু, বর্ষাকাল আমারও অনেক প্রিয়। আর বর্ষাকাল আসলে কেমন জানি পুরনো স্মৃতিগুলো বেশি মনে পড়ে যায়। আমি যখন গ্রামে থাকতাম এরকম বর্ষার দিনে টিনের চালে যখন বৃষ্টি পড়তো, বেশ আওয়াজ হতো দেখতাম। আমার কাছে তো এই আওয়াজ খুবই ভালো লাগতো। আর আপনি যদিও এই আওয়াজ এর মধ্যে গান করতেন। তবে আমি গান করতে পারতাম না তাই শুধু বৃষ্টি দেখে যেতাম ওই সময়টাতে। তাছাড়া, আপনারা তো ছোলা ভাজা বা শিমের বিচি খেতেন এই বৃষ্টির মুহূর্তটাতে। আর আমরা মুড়ি মাখিয়ে খেতাম আর বাড়ির বারান্দায় বসে বৃষ্টি উপভোগ করতাম। যাইহোক, ওভারল আপনার স্মৃতিময় দিনগুলোর কথা পড়ে খুব ভালো লাগলো আপু। ধন্যবাদ, এত সুন্দর ভাবে গুছিয়ে এই পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।