হঠাৎ ঝরে এলোমেলো জীবন (দ্বিতীয় পর্ব)।

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


পূর্ববর্তী পর্বের লিংক


এর ভেতরে তার পাশের দোকানদার রমিজ মিয়া বলে তুমি এটা নিয়ে চিন্তা করো না আমি দেখছি। রমিজ মিয়া বাজারের কয়েকজন দোকানদারকে ফোন দিয়ে বলে তোদের পরিচিত যাদের বি পজিটিভ রক্ত আছে তাদেরকে নিয়ে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে চলে আয়। সুরুজের মেয়েকে রক্ত দিতে হবে। অল্প সময়ের ভেতরে হাসপাতালে বেশ কয়েকজন দোকানদার চলে আসে যাদের রক্তের গ্রুপ বি পজেটিভ। তখন সুরুজ অপারেশন থিয়েটারে গিয়ে সেই ওয়ার্ডবয়কে বলে আমাদের রক্ত দেয়ার লোক চলে এসেছে। তখন ওয়ার্ড বয় এসে দুজন ব্যক্তিকে সাথে করে ভিতরে নিয়ে যায়।

Polish_20230509_232220104.jpg

এর ভেতরে সুরুজের স্ত্রী কার কাছ থেকে যেন খবর পেয়ে হাসপাতালে চলে এসেছে। হাসপাতালে এসেই সে অজ্ঞান হয়ে পড়েছে। সুরুজ চিৎকার করে তার সাথের দোকানদারকে বলতে থাকে তাড়াতাড়ি পানি আনেন ও অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে। তারপর সুরুজ তার স্ত্রীর মুখে পানির ঝাপটা দিলে তার জ্ঞান ফিরে। জ্ঞান ফেরার পরে সুরুজের বউ হাউমাউ করে কান্নাকাটি করতে থাকে। সুরুজ তার স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। সুরুজের স্ত্রী বলতে থাকে আমার সোনামানিক কই? আমি ওকে দেখতে যাবো। তখন সুরুজ বলে ও অপারেশন থিয়েটারে। অপারেশন শেষ হলে তারপর দেখতে পারবে।

এই বলে সুরুজ তার স্ত্রীকে হাসপাতালের বারান্দায় রাখা একটি বেঞ্চে বসিয়ে দেয়। আর সে হাসপাতালের বারান্দায় গ্রিল ধরে বাইরে তাকিয়ে থাকে। সুরুজের দু চোখ থেকে সমানে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। সে চিন্তা করতে লাগলো হঠাৎ করে তার জীবনটা এমন এলোমেলো হয়ে গেল কেন? হঠাৎ করে তার পুরনো কথা মনে পড়তে লাগলো। সুরুজ আর সাবিহা একই গ্রামের তাদের বসবাস ছিল। সুরুজ যখন এইচএসসিতে পড়ে তখন থেকে তার সাবিহার সাথে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এইচএসসি পাশ করে সুরুজ যখন ডিগ্রিতে ভর্তি হয় তখন তাদের দুই বাড়িতে তাদের সম্পর্কের কথা জানা জানি হয়ে যায়। দুই পরিবারের ভেতর অনেক আগে থেকেই খারাপ সম্পর্ক থাকায় কোন পরিবার এই সম্পর্ক মেনে নেয় না। বরং সুরুজ এবং সাবিহা দুজনের পরিবারই দুজনকে চাপ দিতে থাকে সম্পর্ক শেষ করে দেয়ার জন্য।

কিন্তু তাদের ভালোবাসার কাছে পারিবারিক রেশারেশি হার মানে। একসময় তারা দুজন পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে। আবেগের বশবর্তী হয়ে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করার পরে সুরুজ বুঝতে পারে সে এখন অনেক বড় বিপদে পড়েছে। কারণ সে লেখাপড়া করে। তার কোনো ইনকাম নেই। তাই সে চিন্তা করতে থাকে এখন সে সংসার চালাবে কিভাবে? যাইহোক যেহেতু একবার বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে এখন বাড়িতে ফিরে যাওয়ার আর কোন উপায় নেই। তাই সুরুজ তাদের এলাকা থেকে দূরে গিয়ে একটি রুম ভাড়া নেয়। সেখানে তারা দুজন থাকতে শুরু করে।

সুরুজের হাতে অল্প কিছু জমানো টাকা ছিল। সুরুজ জানে আগামী কয়েক দিনেই এই টাকাটা শেষ হয়ে যাবে। তাই সুরুজ দিনরাত চেষ্টা করে কয়েকদিনের ভিতরে একটি দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ পাই। দোকানে চাকরি পাওয়ার পর সে হাফ ছেড়ে বাঁচে। সে চিন্তা করতে থাকে অন্তত দুবেলা দুমুঠো খাওয়ার তো ব্যবস্থা হোলো। কিন্তু কয়েক মাস দোকানে কাজ করার পরেই সে বুঝতে পারল এই টাকা দিয়ে আসলে দুজনের সংসার চালানো খুবই মুশকিল। তখন তার এক পরিচিত লোক পরামর্শ দিল তুমি নিজের ব্যবসা শুরু করতে পারো। খুব স্বল্প পুঁজিতে একটা ব্যবসা করতে পারো। যে ব্যবসাতে পুঁজি বেশি লাগেনা কিন্তু লাভ বেশ ভালোই। তুমি ছোট্ট একটা চা সিগারেটের দোকান দাও। এখানে চাকরি করে তুমি যা পাও তার থেকে অনেক ভালো টাকা আয় করতে পারবে। শুধু দোকানটা এমন জায়গায় দেবে যেখানে লোকজনের আনাগোনা আছে। সুরুজের বুদ্ধিটা পছন্দ হয়।

তখন সে সাবিহার সাথে এটা নিয়ে কথা বলে। তার স্ত্রী সাবিহা বলে অন্যের দোকানে কর্মচারী থাকার থেকে ছোট করে হলেও নিজের দোকান করা ভালো। কিন্তু ছোট করে দোকান করতে গেলেও তো কিছু পুঁজির প্রয়োজন। সুরুজের কাছে কোন টাকাই নেই। কারণ সে যে অল্প কটা টাকা বেতন পায় সে টাকাতে তাদের মাস চলা মুশকিল। সেখান থেকে টাকা জমানোর তো প্রশ্নই আসে না। তখন তার স্ত্রী সাবিহা তার কানের দুল খুলে দিয়ে বলে এটা বিক্রি করে কিছু টাকা পাবে। সেই টাকায় দোকানটা শুরু করো। কিন্তুু সুরুজ কিছুতেই তার স্ত্রীর গহনা বিক্রি করতে রাজি হয় না। তখন তার স্ত্রী বলে তোমার ব্যবসা ভালো হলে তখন আমাকে এর থেকে ভালো একটা কানের দুল কিনে দিও তাহলেই হবে। শেষ পর্যন্ত সুরুজ রাজি হয়। সে তার স্ত্রীর কানের দুল বিক্রি করে সেই টাকায় একটি ছোট্ট চা সিগারেটের দোকান দেয়। সে যেই বাজারের দোকানে কাজ করতো সেই বাজারেই দোকানটা শুরু করে। (চলবে)

ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


break .png

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png



🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  
 2 years ago 

যদিও গত পর্বের পোস্ট দেখা হয়নি। তবে এবারের পর্বটি পড়ে ভালো লাগলো। আসলে বাস্তব জীবনের চিত্রগুলোই আপনি আপনার লেখার মাঝে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন ভাইয়া। সুরুজের জীবনের কষ্টগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। হয়তো হাজারো সুরুজের কথা এখানে তুলে ধরেছেন। এরকম অনেক মানুষ আছে যারা এভাবে অসহায় হয়ে পড়ে।

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 2 years ago 

ভাইয়া জানিনা আপনার এই গল্পের আগের এপিসোড টি পড়েছি কিনা। কিন্তু আপনার গল্পের সুরুজের জন্য কেন জানি বেশ মায়া লাগছে। আপনি সব সময় আপনার পোস্ট গুলোতে বাস্তবতা ছোঁয়া দেওয়ার চেষ্টা করেন। আজকের গল্পটিও সেই রকমের। বেশ সুন্দর ছিল আজকের এপিসোডটি।

 2 years ago 

এই গল্পের প্রথম পর্ব পড়েছিলাম। সুরুজের মেয়েকে রক্ত দেওয়ার পর সুস্থ হলো কিনা, সেটা জানার আগ্রহ বেড়ে গিয়েছে। পক্ষান্তরে আমি বলবো সুরুজ এবং সাবিহা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে বেশ ভালো করেছে। কারণ ভালোবাসার মানুষকে না পেলে সারাজীবন আফসোস হয়। সুরুজ তার স্ত্রীর গহনা বিক্রি করে ব্যবসা শুরু করে বেশ ভালো করেছে। যাইহোক গল্পটি পড়ে খুব ভালো লাগলো। শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

আসলে ভাইয়া, সন্তানের দুর্ঘটনার খবর শুনে মায়ের জ্ঞান হারিয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। আসলে ভাইয়া মানুষ যখন একেবারেই নিরুপায় হয়ে যায় তখন হতাশা তাকে গ্রাস করে ফেলে। যাহোক, শেষ পর্যন্ত সুরুজ মিয়া তার স্ত্রীর কানের দুল বিক্রয় করে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছিল। চমৎকার একটি গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

 2 years ago 

মায়ের মন কতটা বিহ্বল হতে পারে গল্পটা পড়ে বুঝতে পারলাম।এটাই তো বাস্তব।বেশ হাসপাতালের মধ্যে বর্তমানের ঘটনা তুলে ধরে, সাথে ফ্ল্যাশব্যাকে অতীতে তাদের দুজনের প্রেমের কাহিনী, গল্পটাকে একটা আলাদা মাত্রা দিল। আপনার হাতের লেখা যথেষ্ট তীক্ষ্ণ।

Coin Marketplace

STEEM 0.09
TRX 0.32
JST 0.033
BTC 108794.94
ETH 3840.31
USDT 1.00
SBD 0.62