পুরনো দিনের সুখ স্মৃতি রোমন্থন করা।
ছোটবেলা থেকেই আমি নদী খুব পছন্দ করি। সেই পছন্দটা আমার এখনো আছে। তবে এখন আর নদীতে খুব একটা যাওয়া হয় না। তবে যখন আমি অনার্সে পড়তাম তখন বন্ধু-বান্ধবদের সাথে মাঝে মাঝেই নদীতে যাওয়া হতো গোসল করতে। আমার এমন কিছু বন্ধুবান্ধব জুটে ছিল তারাও আমার মত নদী অনেক পছন্দ করতো। শীতের সময়টা বাদে বছরের বাকি সময় আমরা কিছুদিন পরপর নদীতে গোসল করার প্লান করতাম। সেই গোসল হতো বেশ আয়োজনের সাথে। আমরা বিভিন্ন রকম খাবার সাথে নিয়ে নিতাম। প্রায় আট দশ জনের একটা দল গোসল করতে যেতাম। গোসল করতে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা চলতো আমাদের আড্ডা আর খাওয়া দাওয়া।
আরো একটা মজার স্মৃতি মনে পড়ে। সেটা হচ্ছে আমরা চেষ্টা করতাম প্রতিবছর অন্তত একবার করে ট্রলার ভ্রমনে যেতে। আমাদের বন্ধু-বান্ধবদের গ্রুপটা ছিল বেশ বড়। সংখ্যায় আমরা প্রায় ২০-২৫ জন ছিলাম। তবে আমাদের গ্রুপের একটা জিনিস সবচাইতে ভালো ছিলো। সেটা হচ্ছে এতগুলো ছেলের ভিতর কেউই খারাপ কোনো কাজ করত না। আমরা সবাই প্রায় একই রকম পরিবার থেকে উঠে আসা ছেলে ছিলাম। দু একজনের হয়তো পারিবারিকভাবে অর্থনৈতিক অবস্থা কিছুটা খারাপ ছিল। কিন্তু সেটা আমাদের বন্ধুত্বে কোনদিন বাধা হতে পারেনি।
আমার এখনো মনে পড়ে প্রথম যেবার আমরা ট্রলার ভ্রমণে গিয়েছিলাম সেবারের কথা। ওটা ছিল বন্ধুদের সাথে আমার জীবনে যাওয়া প্রথম ট্রলার ভ্রমন। অবশ্য শুধু আমার না আমাদের গ্রুপের বেশিরভাগেরই সেই অভিজ্ঞতা ছিল প্রথম। সকাল থেকে রাত অব্দি আমরা বিশাল এক ট্রলারে করে পদ্মার বুকে ঘুরে বেড়িয়েছি। সেই সাথে চলেছে আড্ডা খাওয়া দাওয়া আর নানা রকম মজা করা। স্মৃতি মনে পড়লে এখনো মনে আনন্দ খেলা করে। আমরা বন্ধুবান্ধবরা সবাই প্রায় ঘুরতে পছন্দ করতাম। এজন্য আমাদের প্রতি বছর আরও একটা ছোটখাটো ট্যুরের আয়োজন করা হতো। সেটা হচ্ছে আমরা বন্ধুবান্ধবরা মিলে আশেপাশের কোন জেলায় যেতাম ঘুরতে।
ছোট্ট একটা বাস ভাড়া করতাম। কারণ বন্ধু-বান্ধবের সাথে অনেকের পরিবারের লোকজন যেতো। আবার কিছু ছোট ভাই ব্রাদার ও যেতো। যার ফলে আমাদের ছোট একটা বাস প্রয়োজন হতো। সেই ট্যুরের অভিজ্ঞতাও ছিল অনেক ভালো। বন্ধুবান্ধব সবাই মিলে একসাথে কোথাও গেলে এমনিতেই মজা হয়। তারপরে সেই জায়গাটি যদি হয় সুন্দর। তাহলে সেই মজা আরো বেড়ে যায়। বন্ধুদের সাথেই আমি প্রথম গিয়েছিলাম লালনের মাজারে। সেই সাথে কুষ্টিয়াতে রবীন্দ্রনাথের যে কুঠিবাড়ি ছিল সেখানেও গিয়েছিলাম। আরেকবার গিয়েছিলাম মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়িতে। এছাড়াও আরো বিভিন্ন জায়গায় আমরা ঘোরাফেরা করেছি।
তবে এই সমস্ত ঘোরাফেরার আয়োজনের মূল দায়িত্বে থাকতো আমাদের দুই বন্ধু। তখন আমরা বিষয়টা বুঝতে পারতাম না। কিন্তু এখন বুঝি এমন উদ্যমি কিছু লোকজন না থাকলে কখনো এই ধরনের পরিকল্পনা সফল করা যায় না। আজকে বিভিন্ন কারণে সেই দুই বন্ধু আমাদের থেকে অনেক দূরে চলে গিয়েছে। যার ফলে এখন আর আগেকার মত কোন ট্যুরের প্ল্যান করা হয় না। কারণ দায়িত্ব নেয়ার লোকের বড় অভাব। এখন জীবন ও জীবিকার তাগিদে বন্ধুবান্ধবদের সবাই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আর যে অল্প কয়েকজন আমরা ফরিদপুরে আছি তারাও সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত। যার ফলে এখন আর সে আগেকার মতো সবাই মিলে ঘোরাফেরা হয় না। এখন কোন ট্যুরের প্ল্যান করলে সেখানে সর্বোচ্চ চার থেকে পাঁচজনের কথা মাথায় আসে। অথচ আগে আমরা একটা সময় প্রতিদিন বিকালে আড্ডা দিতাম ১৫/২০ জন মতো বন্ধুবান্ধব।
আমরা যে শুধু ঘোরাফেরা করতে পছন্দ করতাম তা নয়। খেলাধুলাতেও আমাদের ছিল সমান আগ্রহ। কিছুদিন পর পরই আমরা বিভিন্ন গ্রুপের সাথে ক্রিকেট খেলা আয়োজন করতাম। অবশ্য মাঝে মাঝে ফুটবল খেলার আয়োজনও হতো। আমাদের বন্ধু-বান্ধবদের ভেতরে বেশ কয়েকজন ছিল যারা ভালো ক্রিকেট খেলতে পারতো। আবার কয়েকজন ফুটবলারও ছিলো। যার ফলে আমরা যে কোন খেলায় বেশ পারদর্শী ছিলাম। বন্ধু-বান্ধবদের সাথে কাটানো সেই সময়টা ছিল আমার জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সময়। কিন্তু সেই সোনালী দিনগুলো আজ কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছে। যে দিনগুলো আর কোনদিনই ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। তবুও মন বারবার সেই দিনগুলিতে ফিরে যেতে চায়। কিছুদিন আগেই আমরা দুই তিন বন্ধু মিলে পুরনো দিনের স্মৃতি রোমন্থন করছিলাম। কথায় কথায় আমাদের নদীতে গোসল করার প্রসঙ্গ উঠেছিল। তখন সকলে মিলে শেষবার যেবার আমরা নদীতে গোসল করেছিলাম সেবারের কথা তুললো। শেষবার যখন আমরা নদীতে গোসল করেছিলাম তখন আমাদের এক বন্ধু তার বাড়ি থেকে খাবার রান্না করে নিয়ে এসেছিল। খাবারের মেনু ছিল হাঁসের মাংস ভুনা আর খিচুড়ি। সেই সাথে আচার আর কোল্ড ড্রিংকস। সেবারের হাঁসের মাংসটা এতটাই সুস্বাদু হয়েছিল যে আমরা ৫-৬ জন মিলে একটা রাজহাঁস প্রায় শেষ করে ফেলেছিলাম। আপনারা জানেন রাজহাঁসে সাধারণত অনেক মাংস হয়। ৫-৬ জন মিলে একটা রাজহাস শেষ করা খুব সহজ না। কিন্তু সেবারের খাবারটা আমাদের এতই মজা লেগেছিল যে আমরা প্রায় শেষ করে ফেলেছিলাম।
সেই বারের পর থেকে আর কখনোই এত বেশি বন্ধু-বান্ধব নিয়ে আমাদের নদীতে গোসল করতে যাওয়া হয়নি। আমি এখনো মাঝে মাঝে নদীতে গোসল করতে যাই। আমার সঙ্গে থাকে বন্ধু ফেরদৌস আর রাফসান। গোসল করতে গেলেই আমাদের পুরনো দিনের কথা মনে পড়ে যায়। তখন আমরা সেই পুরনো দিনের গল্পগুলি করতে থাকি। এখনো আমি ঈদের সময় চেষ্টা করি বন্ধুবান্ধব একসাথে হয়ে কোথাও ঘুরতে যেতে। কিন্তু সবারই ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ার কারণে আগের মত আর সাড়া পাওয়া যায় না। যার ফলে আমার ইচ্ছা গুলো অপূর্ণই থেকে যায়। বন্ধু বান্ধব ছাড়া জীবন আমি কল্পনাও করতে পারতাম না। তবে সময়ের পরিক্রমায় এখন আমাকে প্রায় বন্ধু-বান্ধব বিহীন জীবন যাপন করতে হচ্ছে। আমার ভাগ্য ভালো যে এখনো ফেরদৌসের মতো একজন বন্ধুর সহচর্য পাচ্ছি। ফেরদৌস না থাকলে হয়তো আমাকে বন্ধুবান্ধব ছাড়াই জীবনটা কাটাতে হতো।
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
স্থান | পদ্মা নদীর পাড় |
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আমাদের সবারই অনেক ছোটবেলা স্মৃতি রয়েছে তবে আপনার স্মৃতিগুলো অনেকটাই ব্যতিক্রম ধারনের। এটা আসলে জেন্ডারের ভিত্তিতে পরিবর্তন হয়। তবে আমি দেখেছি এই বিষয়গুলো ছেলেদের মাঝে অনেক বেশি থাকে। ট্রলারে ঘুরতে যাওয়া, পিকনিক করা একসাথে বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার প্ল্যান করা ইত্যাদি। ছোটবেলায় অনেক মজা করেছেন আপনি, আপনার পোস্ট পড়ে সেটাই বোঝা যাচ্ছে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আপনি একদম ঠিক বলেছেন ভাই আমাদের সবার ছোটবেলার সময়ের কিছু স্মৃতি রয়েছে। আপনি ছোটবেলা থেকে যে নদী খুব পছন্দ করতেন যেন সত্যিই আমার খুবই ভালো লেগেছে ভাই। আপনি বন্ধুদের সাথে আপনার জীবনে প্রথমবার ট্রলার ভ্রমণে গিয়েছিলেন তা জানতে পারলাম আপনার বুকের মাধ্যমে। আপনারা যে ক্রিকেট খেলা আয়োজন করতেন তা জেনে খুব ভালো লাগলো ভাই। ধন্যবাদ ভাই এত সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
মাঝে মধ্যে পুরনো স্মৃতি গুলো মনে পরলে সত্যিই খুব ভালো লাগে। মাঝে মধ্যে একা একাও হাসি। আসলে বন্ধু বান্ধব ছাড়া জীবন চলে না। কারণ বন্ধু বান্ধব না থাকলে জীবনে অনেক কিছুই মিস হয়ে যায়। বন্ধু বান্ধব অনেক বেশি না থাকলেও অন্তত কয়েকজন থাকতে হয়। আপনার মতো আমারও নদী খুব পছন্দ ভাইয়া। আমার মনে আছে ২০১৫ সালে আমরা প্রায় ১৫/১৬ জন বন্ধু ট্রলার ভাড়া করে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে যাত্রা শুরু করে টঙ্গী এজতেমায় গিয়েছিলাম। কয়েক ঘন্টা ট্রলারে ছিলাম এবং আমরা পিকনিক করে ছিলাম। বিরিয়ানি রান্না করে খাওয়া সহ অনেক কিছুই খেয়েছিলাম। আর ক্রিকেট খেলার কথা কি বলবো, একসময় সারাদিন ক্রিকেট খেলতাম স্কুল ফাঁকি দিয়েও। আর আম্মুর হাতে মাইরও খেতাম। যখন একটু বড় হলাম অনেক দূরে গিয়ে টুর্নামেন্ট খেলতাম। এমনকি যখন দক্ষিণ কোরিয়াতে ছিলাম রবিবারে অফ ডে তে অনেক দূরে গিয়ে টুর্নামেন্ট খেলতাম। আসলেই আগের দিন গুলো অনেক ভালো ছিল। সেই সোনালী দিন গুলো সত্যিই খুব মিস করি। মাঝে মধ্যে মনে হয় যদি সেই দিনে ফিরে যেতে পারতাম। যাইহোক আপনার পোস্ট পড়ে কিছুক্ষণের জন্য পুরনো স্মৃতিতে হারিয়ে গিয়েছিলাম। এককথায় খুব ভালো লাগলো আপনার পোস্ট পড়ে। শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া। ভালো থাকবেন সবসময়।
আপনার লেখা পোষ্ট টি পড়ে অনেক কিছুই মনে পড়ে গেলো ৷ ঠিক আপনার মতই ভাই একটা সময়ে আমাদের বাড়িই পাশেই নদী যেখানে প্রতিটা দিন স্নান করতাম ৷ স্কুল ছুটি হওয়ার সাথে সাথে পাড়ার সবাই মিলে নদীতে ঝাঁপ ৷ আবার কলার গাছ ভুরা বানানো ৷ এর নদীতে ভাসিয়ে যেতাম অনেক দুর ৷
এবং ছুটির দিন গুলো তে সারাদিন বালুর চরে কাটানো ৷ ভিন্ন রকম খেলা বালুর চরে শিয়ালের ঘড় বানানো আবার অন্য জন এসে ভেঙ্গে দেয়া৷ সত্যি অনেক কিছু যা আজ শুধু সৃতির পাতায় ৷
পড়ছিলাম আর আমার অতীত হাতরে বেড়াচ্ছিলাম, নদীতে গোসল, ঘোরাঘুরি, পিকনিক, খেলাধুলা সব কিছুর মিল পাইছি, তবে ট্রলারে ঘোরা এখন অব্দি হয় নি মিলিত ভাবে। সময়ের পরিক্রমায় জীবন আসলেই পরিবর্তন হয়ে যায় তবে রয়ে যায় শুধু স্মৃতি। তবে ভাগ্য সুপ্রসন্ন ফেরদৌস ভাই এখনো আছে। ভদ্রলোক আসলেই ভালো। আপনাদের দুজনের জন্য শুভেচ্ছা রইল।
ভাই একবার আমাদের এদিকে আসেন। আমরা সবাই মিলে ট্রলারে করে পদ্মার বুকে ঘুরে বেড়াবো। আর ফেরদৌসের জন্য আসলে আমি অনেকটা ভালো আছি। ফেরদৌস না থাকলে আমাকে একা একাই বাড়িতে বসে সময় কাটাতে হতো। ধন্যবাদ ভাই আপনার মন্তব্যের জন্য।
পৃথিবীটা গোল, হয়তো আমার আপনার দেখা হলেও হয়ে যেতে পারে। তবে ফেরদৌস ভাই ভালো মানুষ, আপনাদের বন্ধুত্ব টিকে আমৃত্যু। 😊❤️🙏
পদ্মা নদীর বুকে বন্ধুদের সাথে করে ট্রলারে ভ্রমন করাটা সত্যি খুবই আনন্দ। তবে ভাই আপনার পুরনো স্মৃতির কথা গুলোর মধ্যে বন্ধুর বাড়িতে রান্না করা হাঁসের মাংস খাওয়ার বিষয়টি এবং নদীতে গোসল করার বিষয়টা আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। জীবনে এরকম স্মৃতি থাকলে সেটা সব সময় মধুর হয়ে থাকে। অসাধারণ সুন্দর স্মৃতি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনার অসংখ্য ধন্যবাদ।
পুরানো সেই দিনের কথা বলবি কিরে আয়, ও সে চোখের দেখা মনের কথা..... গানটি মনে পড়ে গেল আপনার পোস্টটি পড়ে । পুরানো স্মৃতির বেশ সুন্দর চিত্র আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন ভাইয়া। দূরন্ত পানায় কাটানো সে সকল সময় কি কখনও ভোলা যায়?