অণুগল্প "টিনের পিস্তল"
ক্রিয়েটিভ কমন লাইসেন্স : সোর্স
মুখবন্ধ : বাংলা ভাষায় সার্থক ছোট গল্পের জনক যেমন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বলা হয় ঠিক তেমনই বাংলা ভাষার সার্থক অণুগল্পের রূপকার হিসেবে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয় সাহিত্যিক বনফুলকে । বনফুল হলো বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়ের ছদ্মনাম । ওঁনার অণুগল্প পড়ে মুগ্ধ হবেন না এমন পাঠক কেহই নাই। কিছু অণুগল্প লিখে গিয়েছেন মাত্র পঞ্চাশ শব্দের মধ্যে । কিন্তু, সেগুলো একদম মর্মে গিয়ে আঘাত করে । অনূর্ধ্ব পাঁচশো শব্দের ছোট গল্পকে বাংলা ভাষায় "অণুগল্পের" মর্যাদা দেওয়া হয় ।
"রুনকুউউউ ..... খেতে আয়। "
রান্নাঘর থেকে মায়ের ডাক শুনে রুনকু দ্রুত ইংরেজি বইটা বন্ধ করে উঠে দাঁড়ায় । এতক্ষণ ধরে পড়ার টেবিলে সে ইংরেজি বই খুলে রেখে অন্য চিন্তায় মশগুল ছিল । গতকাল থেকে তাদের গ্রামে চড়ক পুজোর মেলা বসেছে ঠাকুরানী দীঘির মস্ত পাড়টিতে । শতাব্দী প্রাচীন এক বুড়ো বটগাছের নিচে বসে এই মেলা ।
গতকালই বিকেলে রুনকু আর তার প্রাণের বন্ধু ট্যাঁপা মেলায় ঘুরে এসেছে । দু'জনে মাত্র দু'টি টাকা সম্বল করে ঘুরতে গিয়েছিলো মেলায় । টাকা দুটো রুনকুরই ছিল । ট্যাঁপারা বড্ড গরীব । টাকা পাবে কোথায় ? মেলায় ঘুরতে ঘুরতে দুই বন্ধু দু'খানা পাঁপড় খেয়েছে আর খেলনার দোকানের চারিপাশে অনেকটা সময় কাটিয়েছে । টিনের পিস্তল এসেছে একটা খেলনা দোকানে । দেখে একদম মুগ্ধ হয়ে গিয়েছে দুই বন্ধু ।
টিন দিয়ে তৈরী খেলনা পিস্তল, তার আবার নল আছে, ঘোড়া আছে - টিভিতে দেখা একদম সত্যিকারের পিস্তলের মতো দেখতে । পিস্তলের ঘাড় ভেঙে বারুদের স্ট্রিপ ভরতে হয় । এরপরে ঘোড়া টিপলে একের পর এক বারুদের স্ট্রিপগুলো বিস্ফোরিত হয় । ধুম ধাম শব্দ, চারিদিকে বারুদের ধোঁয়ায় ঢেকে যায় । দোকানদার মাঝে মাঝেই ছেলে-ছোকরাদের আকৃষ্ট করতে পিস্তল ফোটাচ্ছে । তবে, দাম বড্ড বেশি । দশ টাকা ।
রান্না ঘর থেকে আবার মায়ের চিৎকার ভেসে এলো । দ্রুত রুনকু ভাত খেতে চলে গেলো । রান্নাঘরের পিঁড়িতে বসে একটু ভাত ভেঙে মুখে দিয়েই রুনকু মায়ের কাছে আবদার করলো দশটি টাকার জন্য ।
"দঅঅশ টাকা !! এতো টাকা দিয়ে কি করবি তুই ?" মা একটু অবাক হলেন ।
"পিস্তল কিনবো ।"
"পিস্তল ? এত দাম ?", মা অবাক হলেন ।
খাওয়ার পরে আরো কিছুক্ষণ ঝুলোঝুলি । অবশেষে হাসিমুখে মা টাকা দিতে সম্মত হলেন । রুনকুর বাবা হাই স্কুলের হেড মাস্টার । স্বচ্ছল মধ্যবিত্ত ফ্যামিলি । টাকার তাই বিশেষ অভাব নেই ।
কিন্তু, রুনকুর বন্ধু ট্যাঁপাদের ফ্যামিলি এতটা স্বচ্ছল নয় । ট্যাঁপার বাবা কৃষক । কাঁচা টাকা হাতে থাকে না । তাই ট্যাঁপা কোনোক্রমেই দশটি টাকা জোগাড় করতে পারলো না । সেদিনই বিকেলে দুই বন্ধু মেলায় গিয়ে পিস্তল কিনে আনলো । রুনকুর মা ছেলের হাতে দু'খানা দশ টাকার নোট দিয়ে বলেছিলেন - "পিস্তল কিনে কিছু খাবার কিনে খেও । খবরদার বলছি পুরো টাকার খেলনা কিনো না যেনো ।"
রুনকু বিশাল একটা ঘাড় নাড়া দিয়ে সম্মতি জানিয়েছিল । মেলায় গিয়েই সর্বপ্রথম দুই বন্ধু দশটাকার পিস্তল কিনে আরো দু'টাকার এক গাদা বারুদের স্ট্রিপ কেনে । এরপরে চলে পাঁপড়, লেমোনেড, জিলিপি এসব খাওয়া দাওয়া ।
পরের দিন সারা সকাল বিকেল ধরে বিশাল খেলা চলে রুনকুর । টিনের পিস্তল নিয়ে । সারাক্ষণ ধুম ফটাস ! মা বিরক্ত হয়ে বকা ঝকা করলেন বিস্তর । তখন রুনকু রাস্তায় বেরিয়ে এলো । সঙ্গে ট্যাঁপা । এতবার পিস্তল ফুটিয়েছে রুনকু । কিন্তু, একটিবারের জন্যও ট্যাঁপার হাতে পিস্তল দেয়নি । ট্যাঁপার মুখ শুকিয়ে এতটুকু হয়ে গিয়েছে । লোভীর মত সে বারবার রুনকুর হাতের পিস্তলের দিকে তাকাচ্ছে । কিন্তু, রুনকু পাত্তাই দিচ্ছে না একদম । সে এখন বিশাল মজায় আছে । এতদিনের প্রাণের বন্ধুকেও সে যেনো একদম ভুলে গেলো ।
পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বিশাল হৈ চৈ । রুনকুর পিস্তল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না । সম্ভব অসম্ভব সব জায়গায় খোঁজা হলো । কিন্তু পাওয়া গেলো না । মা বারবার জিজ্ঞেস করলেন - "কোথায় রেখেছিলি মনে করে দেখ ।" কিন্তু রুনকুর স্পষ্ট মনে আছে সে তার খেলনার ঝুড়িতেই রেখেছিলো ।
কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেললো রুনকু । সব শুনে মায়ের সন্দেহ হলো ট্যাঁপার ওপর । সেই হয়তো নিয়েছে । বিকেলে বাবা বাড়ি ফিরলে মা সব জানালেন । কিন্তু, বাবা কোনো মতেই রাজি হলেন না ট্যাঁপার বাড়ি গিয়ে ট্যাঁপা পিস্তলটা নিয়েছে কি না সেটা খোঁজ করতে । তিনি সেদিন বিকেলেই রুনকুকে সাথে নিয়ে মেলায় গিয়ে আরেকটি টিনের পিস্তল কিনে দিলেন ।
কিন্তু, এই ঘটনার পরে রুনকু বহুদিন ট্যাঁপার সাথে কথা বলেনি । তারও সন্দেহ ছিল ট্যাঁপাই চুরি করেছে ।
এরপরে বহুদিন কেটে গিয়েছে । রুনকুর বাবা শহরের এক নামকরা স্কুলে ট্রান্সফার হয়ে আসলেন । রুনকুরা তাই গ্রাম ছেড়ে চিরদিনের জন্য শহরে চলে এলো । ক্রমশঃ যোগাযোগ কমে এলো গ্রামের সাথে রুনকুদের । গ্রামের বন্ধুদের ভুলতে বসলো রুনকু । শহরে তার এখন অনেক বন্ধু বান্ধব ।
এক বছর পুজোর ছুটিতে গ্রামে যাওয়া মনস্থ করলেন রুনকুর বাবা । রুনকুর তখন ক্লাস এইট । গ্রামে এসে সে দেখলো কত কিছুই যে বদলে গিয়েছে । পুরোনো বন্ধুরা দল বেঁধে তার সাথে দেখা করতে এলো । কথায় কথায় উঠলো ট্যাঁপার কথা । রুনকু জানলো যে ট্যাঁপার ক্রনিক জন্ডিস । ডাক্তার সন্দেহ করছেন হেপাটাইটিস বি । রোগটা নাকি মারাত্মক । বাঁচার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে ।
শুনে শকড হলো রুনকু । সেদিনই বিকেলে ট্যাঁপাদের বাড়িতে গেলো সে । বিছানার সাথে মিশে রয়েছে ট্যাঁপা । রক্তশূন্য ফ্যাকাশে মুখ । ট্যাঁপার অবস্থা দেখে কেঁদে ফেললো রুনকু । বড় বড় চোখে চেয়ে রইলো ট্যাঁপা । দু'গাল বেয়ে তারও নেমেছে অশ্রুধারা । বহু কষ্টে ট্যাঁপা বিছানায় উঠে বসলো। তারপরে খাটের পাশে ঝোলানো একটা বহু পুরোনো জীর্ণ স্কুল ব্যাগের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে বের করে আনলো একটা কাপড়ের পুঁটুলি ।
নীরবে কাঁপা কাঁপা হাতে পুঁটুলিটা তুলে দিলো সে বন্ধুর হাতে । ধীরে ধীরে পুঁটুলিটা খুলে ফেললো রুনকু । পুঁটুলির মধ্যে বহু যত্নে রাখা রয়েছে একটি জং ধরা বহু পুরোনো টিনের পিস্তল ।
------- ধন্যবাদ -------
পরিশিষ্ট
আজকের টার্গেট : ৫২৫ ট্রন জমানো (Today's target : To collect 525 trx)
তারিখ : ০৬ জুলাই ২০২৩
টাস্ক ৩১৬ : ৫২৫ ট্রন ডিপোজিট করা আমার একটি পার্সোনাল TRON HD WALLET এ যার নাম Tintin_tron
আমার ট্রন ওয়ালেট : TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx
৫২৫ TRX ডিপোজিট হওয়ার ট্রানসাকশান আইডি :
TX ID : d7916b8b699b60b19d0ba9321cd704897bf6fe3cbcaf90d046db283471234bf5
টাস্ক ৩১৬ কমপ্লিটেড সাকসেসফুলি
Account QR Code
VOTE @bangla.witness as witness
OR
গল্পের পূর্ণ তৃপ্তি টা শেষেই রেখেছেন। শেষের অংশে এসে গল্পটা আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দিল। অনেক ভালো লিখেছেন দাদা।
পাঠকের মনে ইচ্ছা জাগবে আরো কিছু জানার। আমার অনুভূতি থেকে বলছি। আপনার গল্পটি সার্থক আমি মনে করি।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Hi @rme,
my name is @ilnegro and I voted your post using steem-fanbase.com.
Come and visit Italy Community
প্রিয় দাদা আপনার লেখা টিনের পিস্তল গল্পটি পড়ে আমার খুবই ভালো লেগেছে। বিশেষ করে আমিও ছোটবেলায় দশ টাকা দিয়ে এ ধরনের পিস্তল ক্রয় করতাম ঈদ উপলক্ষে। যাহোক দাদা, আপনার এই গল্পের প্রথম অংশে বেশ মজা পেয়েছিলাম। কিন্তু শেষের দিকে ট্যাঁপা যখন তার জীর্ণ স্কুল ব্যাগের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে বের করে আনলো একটা কাপড়ের পুঁটুলি, আর সেই পুটুলি থেকে থেকে বের করলো রুনকুর টিনের পিস্তল। আসলে ওই মুহূর্তটুকু নিঃসন্দেহে দারুন একটি আবেগের মুহূর্ত। অসাধারণ একটি গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য প্রিয় দাদা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
দাদা কি বলবো বুঝতে পারছি না। কেননা আপনার অনুগল্পটি পড়তে পড়তে শেষের দিকে এসে আমি যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি। রুনকুর পরিবার সচ্ছল ছিল বলে তাকে দশ টাকা দিয়ে টিনের পিস্তল কিনে দিয়েছিল। কিন্তু রুনকু এই পিস্তলটি পেয়ে প্রিয় বন্ধু ট্যাপাকে বেমালুম ভুলে গিয়েছিল। আর ট্যাপা বেচারা পিস্তলটি হাতে না পেয়ে অবশেষে চুরিই করে ফেলল। যদিও বা এই চুরির কারণে তাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তবে পিস্তলটি চুরি করে বোধহয় ট্যাপাও অনুশোচনায় ভুগেছিল। তা না হলে এত বছর জং ধরা একটি পিস্তল সে সযতনে তুলে রেখেছে কাপড়ের পুটলিতে। আর অবশেষে এই পিস্তলটি রুনকুকে ফেরত দিয়েছে। সবকিছুই ঠিকঠাক ছিল দাদা, তবে ট্যাপার শারীরিক অবস্থার কথা শুনে ভীষণ কষ্ট পেয়েছি। অসাধারণ ছিল গল্পটি, শেয়ার করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ দাদা।
রুনকু এবং ট্যাঁপার কাহিনী পড়ে তো হাসতে হাসতে আমি শেষ দাদা। রুনকু মেলা থেকে পিস্তল কেনার পর, পিস্তল পেয়ে এতোটাই খুশি হয়েছে যে,প্রাণপ্রিয় বন্ধু ট্যাঁপাকেও ভুলে গিয়েছিল। আসলে বাচ্চারা নতুন কিছু পেলে এমনিতেই খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। ছোটবেলা মেলা থেকে পিস্তল কিনে বন্ধুদের সাথে খেলতাম। পোস্টটি পড়ে সেই ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল দাদা। আপনার পোস্ট পড়তে বরাবরই ভীষণ ভালো লাগে দাদা। যাইহোক এতো চমৎকার একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা।
শ্রদ্ধেয় দাদা আপনার গল্প পড়ে আমি আমার অতীতে চলে গেলাম, আমি এবং আমার ভাইয়েরা দীপাবলি উপলক্ষ্যে এমন অনেকগুলি টিনের পিস্তল থেকে গুলি চালিয়েছি, আমাদের সময়ে, বারুদ বেল্ট ছাড়াও, একটি আতশবাজি ফাটাতে শুধুমাত্র একটি আতশবাজি ব্যবহার করা যেতে পারে। সময়। বাক্সও আসত। এই বাক্সে লাল রঙের প্রায় 30টি আতশবাজি ছিল।
ছোটবেলার দিনগুলো খুব ভালো ছিল, তাদের স্মৃতি সারাজীবন মনে থেকে যায়।
গল্প ভাগ করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ.
This post has been upvoted by @italygame witness curation trail
If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness
Come and visit Italy Community
প্রিয় দাদা, আজকে আপনার অনুগল্পটি পড়ে কখন যে সেই ছেলেবেলা হারিয়ে গিয়েছিলাম বুঝতে পারলাম না। ছেলেবেলা অনেক দেখতাম এই টিনের পিস্তল। আজ আপনার গল্পের মাধ্যমে রনকু এবং ট্যাঁপার কাহিনী পড়ে কিছুটা হলেও ছেলেবেলার কথাগুলো মনে নাড়া দিয়ে গেল। গল্পটি বেশ সুন্দর ছিল। অবশেষে রনকু নিজের টিনের পিস্তলটি জং ধরা অবস্থায় ফেরত পেল।