ফটোগ্রাফি পোষ্ট। ছবিতে ছবিতে তিলোত্তমা কলকাতা
ছবিতে কলকাতা মহনগরী
আজ আপনাদের সামনে কলকাতা শহরকে নিয়ে করা আমার কিছু ফটোগ্রাফি নিয়ে আসবো। কলকাতা এমন এক শহর যা একসময় ইংরেজ কোম্পানির হাত ধরে ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছিল। এই শহরের অনেক ইতিহাস। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত ধরে প্রথম সুতানুটি, গোবিন্দপুর ও কলকাতা এই তিনটি গ্রাম নিয়ে একত্রে গড়ে ওঠে কলকাতা। মুঘল সম্রাটের থেকে ইংরেজ কোম্পানি পায় কলকাতার জায়গীর। আজকের কলকাতা বুকে করে ধরে রেখেছে সেই প্রাচীন ইতিহাসটুকু।
সে যুগের সাহেবদের দেখানো স্পষ্ট দুটি ভাগ ছিল এই শহরে। এদেশীয়দের একবার জায়গা ছিল ব্ল্যাক টাউন এবং সাহেবদের অভিজাত এলাকা ছিল হোয়াইট টাউন। আজকের উত্তর কলকাতার অলিগলি একসময় ছিল কলকাতায় এদেশীয়দের ঘিঞ্জি বাসস্থান। অনেক লড়াই করে এক টুকরো জমি বার করে থাকবার জায়গা বার করতে হতো ব্রিটিশ কোম্পানির কলকাতায় চাকরি করতে আসা বিভিন্ন পরিবারকে। আমি মাঝে মাঝেই হেঁটে বেড়াই এই বদলে যাওয়া কলকাতার বুকে। কখনো ব্রিটিশ ইতিহাসটুকু মেখে ধরতে চেষ্টা করি এই শহরের প্রাচীনত্বটুকু। আজ তেমনই কিছু আমার ফটোগ্রাফি আপনাদের সামনে নিয়ে আসব বলে ঠিক করলাম।
এই ছবিটি বর্তমান এলআইসি হাউসের। একসময় এটিই ছিল কলকাতার প্রথম শপিং মল বা ডিপার্টমেন্টার স্টোর। নাম হোয়াইটওয়ে লেইডল। এক সময় কলকাতার অভিজাত সমাজ এই বিপরীতে বাজার দোকান করতে আসত নিয়ম করে। কি ছিল না সেখানে। এই বাড়ির ওপরই ছিল বিখ্যাত বোর্ন এন্ড শেফার্ড এর ষ্টুডিও। আজকের দিনে ধর্মতলার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকাই বাড়িটি ছবির মাধ্যমে আপনাদের সামনে নিয়ে আসতে চেষ্টা করলাম।
বিখ্যাত উত্তর কলকাতার গলি। যেন তুড়ি মেরে হারিয়ে দেবে কাশী বিশ্বনাথের গলিকেও। এঁকেবেঁকে বিভিন্ন বাড়ির মাঝখান দিয়ে এইসব অলিগলি আপনাকে যে কোথায় নিয়ে গিয়ে দাঁড় করাবে, তা আপনি কখনোই আগে থেকে ধারণা করতে পারবেন না। এমনই হলো উত্তর কলকাতার গলি পথের বৈশিষ্ট্য। বাগবাজার, শোভাবাজার, গিরিশ পার্ক অঞ্চলে এই অলিগলিগুলোয় হেরিটেজ ওয়াক করতে আমার কিন্তু বেশ লাগে।
কলকাতার বিখ্যাত গ্র্যান্ড হোটেল। আজ ওবেরয় হোটেল গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত এই হোটেল কলকাতার অন্যতম প্রাচীন একটি পাঁচতারা হোটেল। এক সময় যে সকল হোটেল কলকাতা মহানগরীর পরিচয় সারা পৃথিবীতে বহন করত, তারমধ্যে অন্যতম হলো এই গ্র্যান্ড। ব্র্যান্ডের বারান্দা এক সময় সাহেবদের কাছে বেশ চর্চিত ও পছন্দের একটি জায়গা ছিল। আজকের গ্র্যান্ড নতুনরূপে সজ্জিত। আমি চেষ্টা করেছি কলকাতার সেই ঐতিহ্য গ্র্যান্ড হোটেলের একটি ছবি আপনাদের সামনে ফটোগ্রাফির মাধ্যমে তুলে আনার। ধর্মতলার মোড়ে অন্যতম শোভা এই গ্র্যান্ড হোটেল কলকাতার ঐতিহ্যকে আজও বহন করে নিয়ে চলেছে।
উত্তর কলকাতায় গিরিশ পার্কের কাছে তোলা একটি প্রাচীন অভিজাত বাড়ি। পুরনো কলকাতায় এই ধরনের গ্রিক স্থাপত্যে তৈরি বাড়ির আধিক্য চোখে পড়বার মতো। বাড়ির সামনে একটি ত্রিকোণ আর্চ এবং তাকে ধারণ করবার জন্য বারান্দায় লম্বা লম্বা করিন্থিয়ান থাম, গ্রিক স্থাপত্যের এই ঘরানা ব্রিটিশ যুগের বাড়িগুলির অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠেছিল। এই একই স্থাপত্যের ছোঁয়া আমরা সংস্কৃত কলেজ, বেথুন কলেজ, বা কলকাতা মেডিকেল কলেজের স্থাপত্যেও দেখতে পাই। এই স্থাপত্যগুলো আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। আমাদের উচিত কলকাতা শহরের ঐতিহ্যকে রক্ষা করে প্রাচীন ধারাটিকে বাঁচিয়ে রাখা। আজকের ফ্ল্যাট বাড়ির কালচারে এইসব বাড়ির আজ হারিয়ে যাওয়ার দিন। তাই এমন পুরনো যুগের প্রাসাদ চোখে পড়লেই যেন থমকে দাঁড়াই আর সাধ্যমত ক্যামেরাবন্দি করে রাখি নিজের কাছে।
আমার কলকাতা ফটোগ্রাফি আপনাদের কেমন লাগলো তা নিশ্চয়ই জানাবেন। অপেক্ষায় রইলাম বন্ধুরা।
(৫% বেনিফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার সহ সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Your post has been rewarded by the Seven Team.
Support partner witnesses
We are the hope!
কী দারুণ কলকাতার ছবিগুলো। তোমার কলকাতার প্রতি যেন নাড়ির টান। প্রতিদিন দেখে অবাক ও মুগ্ধ দুটোই হই। পরে আবার শেয়ার করো ছবি। ভালো লাগে ছবিতে কলকাতা নগরীকে।