আগুন্তুক

in আমার বাংলা ব্লগ10 months ago

24-10-2023

০৯ কার্তিক , ১৪৩০ বঙ্গাব্দ


আসসালামুআলাইকুম সবাইকে


hands-2906458_1280.jpg

from pixabay

কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই ভালো ও সুস্থ্য আছেন। তো ভালো থাকতে পারলেই ভালো। আসলে আমরা মানুষ কিন্তু মাঝে মাঝে ভুলে যায় সেই পরিচয়টা! মানুষের প্রধান বৈশিষ্ট্যই যে মানবিকতা সেটাও ভুলে যায়। ভুলে যায় আমাদের নিজস্ব সত্তাকে। মাঝে মাঝে আমরা হয়ে যায় স্বার্থপর! শুধুমাত্র নিজের স্বার্থ হাসিলের পর আর কারো কথা ভাবারও প্রয়োজন মনে করি না। এ যেন মানবিকতারই অবক্ষয়।

ছোটবেলা থেকেই একটা শিশু মায়ের পরম আদরে বেড়ে উঠে। দশমাস দশদিন যার গর্ভে ছিলাম সে মাকেই একটা সময় এসে ভুলে যায়। ভুলে যায় মায়ের মায়া, মমতা। যে মা আমাদের নিয়ে কত কষ্ট করেছে। নিজে না খেয়ে আমাদের খাইয়েছে। সে মাকেই আমরা ভুলে যায়। আসলে কেন বলছি এ কথাগুলো তাহলে একটু শুনুন।

বয়স ষাটোর্ধ হবে। পরনে জলাপই রঙের শাড়ি। মুখ কুচকে গেছে, পা ফুলে রয়েছে। হাতে একটা ব্যাগ। ব্যাগ কিছু পুরনো শাড়ি। আধো আধো চোখে এসে হাজির আমাদের দরজার সামনে। রাতের অন্ধকারে হঠাৎ করেই দরজার সামনে এসে ভদ্র মহিলা এসে হাজির। বাড়ির সবাই মোটামোটি ভয় পেয়ে গিয়েছিল। রাতের বেলা কোনো কথা নেই এই মহিলা কে? ভদ্র মহিলা এসেই আমার মায়ের কাছে আবদার করে বসে, আজকে রাতে না থেকে যাবে না! এমন কথা শুনে আরও ভয় পেয়ে যায় আমার মা।

যখন আমার বাবা বাড়িতে আসে তখন বুঝতে পারে মহিলা মনে হয় পথ হারিয়ে আমাদের বাড়িতে চলে এসেছে। ভদ্র মহিলার সাথে কথা বলে পরে জানা গেল, মহিলার বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল থানায়! বলতে গেলে আমাদের বাড়ি থেকে ত্রিশাল অনেকটা দূরের রাস্তা! এতোদূর থেকে নান্দাইলে চলে আসা! ভদ্র মহিলা হাটঁতেও পারছিল না। এতোদূর থেকে যখন এসেছে তখন রাতে থাকার ব্যবস্থা করা আমাদের এখানে।

রাতের খাবার খাইয়ের পর ভদ্র মহিলা শুয়ে পরে। তারপর ভদ্র মহিলার কাছ থেকে জানতে পারলাম, তার এক ছেলে দুই মেয়ে। ছেলে মেয়েরা সবাই প্রতিষ্ঠিত। ছেলে বউকে নিয়ে ঢাকা শহরে থাকে। কিন্তু ছেলে মায়ের কোনো খোজঁখবর নেই না। মা কিভাবে খাওয়া-দাওয়া করলো, কিভাবে দিন পার করছে এসবে কোনো খবর নেই। ভদ্রমহিলার দাবি সে ভিক্ষাবৃত্তি পেশার সাথে। ভিক্ষা করে যায় পায় তা দিয়েই সংসার চলে যায়।

কিন্তু এ বয়সে এসে পথ না চেনার সম্ভাবনাটাও বেশি। বয়সের ভারে এখন ক্লান্ত প্রায়। আর কদিনই বা বাচঁবে! ভুল করে সেই ত্রিশাল থেকে নান্দাইলে চলে এসেছে। মজার ব্যাপার হলো ভদ্র মহিলা আমাদের বাড়িতেই আসলো কেন? গ্রামের মানুষ একটু ভয় পায় আসলে হঠাৎ করে যখন কোনো আগুন্তুক এসে হাজির হয়। তবে ভদ্র মহিলার সাথে কথা বলে জানতে পারলাম সব।

রাতে থাকার পর দেখি সকালে ভদ্র মহিলা না বলেই চলে গেছে! এটা দেখে আরও ভয় পায় আমার মা, হাহা! তারপর জানতে পারি ভদ্রমহিলাকে বাসস্ট্যান্ডে দেখা গিয়েছিল। হয়তো সেখান থেকেই বাড়ির দিকে চলে যাবে। তবে এ বয়সে এসে যে নিজের সাথে লড়াই করছে এটাই অনেক। ভেবেছিলাম ভদ্র মহিলাকে সাহায্য করবো, কিন্তু না বলেই চলে গেল!

এমন অনেক মহিলাই আছে যারা প্রতিনিয়ত নিজের সাথে লড়াই করে বেচেঁ। হয়তো তাদের লড়াইটা মৃত্যু অবধি চলবে। তবে খারাপ লাগে যখন জন্মদাতা মার খোজঁখবর নেয় না তার ছেলে। আমার কথা হলো তাহলে এতো উচ্চ শিক্ষিত হয়ে লাভ কি! এতো কষ্ট করে মা লালন-পালন করলো তার মূল্যই বা কি দিলো। আমাদের মানবিকতার অবক্ষয় যে হচ্ছে সেটা বুঝা যাচ্ছে। আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন আনা জরুরি।

জীবনের শেষ বয়সে যদি ছেলে মেয়ে না দেখে তাহলে কেমন লাগতে পারে একজন মায়ের! হয়তো মা মুখ ফুটে কিছু বলবে না। কখনো বলবেও না তার ছেলে মেয়ে খারাপ থাকুক। মা শুধু চাই তার ছেলে মেয়ে ভালো থাকুক। এতেই তার শান্তি। অথচ আমরা চাইলেই কিন্তু মাকে আরাম আয়েশের ব্যবস্থা করে দিতে পারতাম। একটু শান্তিতে জীবনের শেষ নিঃশ্বাসটা যেন ত্যাগ করতে সেটারও ব্যবস্থা করে দিতে পারতাম। আমি আশা করি আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন হবে। পৃথিবীর সব বাবা মা ভালো থাকুক এমনটা চাই।

আমি কে?

IMG20210908180509.jpg

আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। সম্প্রতি আমি ইলেকট্রিক্যাল থেকে ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেছি। এখন বিএসসি এর জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছি। পাশাপাশি লেখালেখি করে আসছি গত দু বছর ধরে। ভালো লাগার জায়গা হলো নিজের অনুভূতি শেয়ার করা, আর সেটা আমার বাংলা ব্লগের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। যাক,
নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।

Sort:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 10 months ago 

ভাইয়া দুনিয়াটা এমনই। স্বার্থ ছাড়া কেউ কারো আপন নয়। নিজের স্বার্থ হাসিল হয়ে গেলে। কাউকে ভাবারাও প্রয়োজন মনে করে না মানুষ। আসলেই রাত করে যদি কোন ভদ্রমহিলা গেটের সামনে আসে ভয় লাগে। কার উদ্দেশ্য কি থাকে জানা যায় না। কিন্তু সবকিছু জেনেশুনে তাকে যে আশ্রয় দিয়েছেন বেশী ভাল একটি উদ্যোগ ছিল আপনাদের। দিনশেষে একটা কথা কি? মা যত কষ্ট করে মানুষ করে। আমরা দিনশেষে তাকেই ভুলে যায়। আহারে মানুষ। একটা মা ৫ থেকে ৭ ছেলেকে মানুষ করতে পারে কিন্তু ৫ থেকে ৭ ছেলে একটা মাকে মানুষ করতে পারে না বৃদ্ধ বয়সে।এমন ছেলে জন্ম দিয়ে কি হবে🥺 যে ছেলে মেয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর মাকেই ভুলে যায়। শহর অঞ্চলে বউ ছেলেমেয়ে নিয়ে থাকে। মা কখনো চায়না ছেলে-মেয়ে অশান্তিতে থাকুক। দিনশেষে মার মত আপন আর আপনার কেউ নাই। আমিও চাই পৃথিবীর সব বাবা-মা ভালো থাকুক ভাইয়া। অনেক ভালো ছিল

 10 months ago 

একদম ঠিক ধরেছেন ভাই। দুনিয়াটাই এমন, স্বার্থপরের খেলা চলে। দিনশেষে স্বার্থ হাসিল হয়ে গেলে আপনাকে ছুড়ে ফেলে দিতেও দ্বিধাবোধ করবে না

 10 months ago 

অপরিচিত কোনো মানুষকে বাসায় অনেকেই জায়গা দিতে চায় না। কারণ মানুষ চেনা দায়,কখন চুরি করে পালাবে তার কোনো গ্যারান্টি নেই। কিন্তু সবাই যে খারাপ এবং এমনটা করে তা কিন্তু নয়। যাইহোক আপনারা মহিলাকে বাসায় জায়গা দিয়ে খুব ভালো কাজ করেছেন। মহিলার ছেলে মেয়েরা উনার একটুও খেয়াল রাখে না, এটা জেনে খুব খারাপ লাগলো। এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে বর্তমানে। বিয়ে করে বউ নিয়ে আলাদা হয়ে যায় অনেক ছেলেরা এবং মা বাবার কোনো ভরণপোষণের দায়িত্ব নেয় না। ভাবতেই অবাক লাগে মানুষ এতো নির্দয় কিভাবে হয় সেটাই বুঝি না। যাইহোক আল্লাহ তায়ালা সবাইকে হেদায়েত দান করুক।

 10 months ago 

আসলে ভাইয়া ঠিক বলেছেন, গ্রামের মানুষ তো অচেনা অজানা কাউকে বাড়িতে জায়গা দিতে চাই না। ভদ্রমহিলার সাথে কথা বলে মনে হলো সাহায্যের প্রয়োজন

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.15
JST 0.030
BTC 59347.70
ETH 2534.40
USDT 1.00
SBD 2.47