ছোটগল্পঃ " ওখানে কে? "

in আমার বাংলা ব্লগ3 months ago

03-04-2024

২০ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ


🌼আসসালামুআলাইকুম সবাইকে🌼


haunted-6568959_1280.webp

copyright free image from pixabay

শীতের রাত। গ্রামের মানুষগুলো অনেক আগেই ঘুমিয়ে গেছে। গ্রামে সন্ধ্যার সময় থেকেই মানুষের আনাগোনা কম দেখা যায়। তবে কিছু চায়ের দোকানে মধ্যরাত অবধি চলে আড্ডা। অনেকদিন পর রেহান গ্রামে এসেছে। গ্রামে এসে দেখতে পেল অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। রেহানদের বাড়ি গ্রামের ভিতরে, বনজঙ্গলের পাশে। গ্রামের মানুষ যেটাকে ভূতের জঙ্গল বলে চিনে। কিন্তু রেহান আজ অবধি কোনো ভূত-টূত দেখেনি। গ্রামের মানুষদের কাছে শুধু শুনে এসেছে জঙ্গলে নাকি ভূত আছে। গভীর রাতে গেলেই দেখা পাওয়া যায়। রেহান গ্রামে এসে দেখতে পায়, রাস্তার পাশে অনেকগুলো লাই লাগানো হয়েছে সরকারিভাবে। যার কারণে সবকিছু আলোকিত। যেটা আগে ছিল। পুরো গ্রামের অবস্থা তখন থমথমে হয়ে যেত। চোরের ভয়ও ছিল। রেহানদের বাড়ি থেকেই অনেক কিছু চুরি হয়েছে। রেহানের বাড়িতে আসা মূলত তার ভাইয়ের জন্য! তার বড় ভাই সামির নতুন বিয়ে করেছে।।

রেহানের বড় ভাই অনেক ধার্মিক একজন মানুষ। পাচঁওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, মিথ্যা কখনোই বলে না। বলতে গেলে গ্রামের সবচেয়ে ভালো ছেলের মধ্যে একজন। বড় ভাই যেমন বউটাও নাকি তার মতোই। পাচঁওয়াক্ত নামাজ আদায় করে। পর্দার আড়ালে থাকে সবসময়। রেহানের ভাবীর পরিবার সবাই নামাজি। সবাই পর্দা মেনে চলে। । আজ অবধি কোনো পর পুরুষের চেহারা দেখেনি রেহানের ভাবী। শুধুমাত্র তার বড় ভাই ছাড়া। রেহান বাড়িতে আসার পর তার ভাবীকে যেই না দেখতে গেল তখনই রেহানের বড় ভাইয়ের বাধাঁ। রেহানের বড় ভাই সোজা বলে দিল, তোর ভাবী এখন তোকে দেখতে পারবে না। পরে দেখিস ভাবীকে! বড় ভাইয়ের এমন কথা শুনে রেহানের মন খারাপ হলেও কিছু করার নেই। কারণ ভাবী নতুন বউ হিসেবে বাড়িতে এসেছে। আর পর্দা করে। তবে রেহানের মনে প্রশ্ন, সে তো পরপুরুষ নয়! তাহলে কেন তার ভাবী সামনে আসতে চাইলো না।

বিয়ের কয়েকদিন পার হয়ে গেল। রেহানের ভাবী তার সামনে আসতেই মুখ ঢেকে রাখে। এমনভাবে কথা বলে খুব কাছে থেকেও বুঝা যায় না। রেহানদের বাড়ির পাশেই একটা শিমুল গাছ ছিল। সেটা রেহানের বাবা লাগিয়েছিল। শিমুল গাছটা অনেকটাই বড় হয়েছে। শিমুল গাছের নিচেই রেহানদের ওয়াশরুম। গ্রামে ওয়াশরুমগুলো বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে থাকে। শহরে যেমন এডজাস্ট বাথরুম থাকে তেমন নেই। কিছুটা পথ হেটেঁ তারপর বাথরুমে যেতে হয়। এই নিয়ে রেহানের আবার সমস্যা। অনেকদিনবাদে গ্রামে এসেছে তার উপর বাথরুমের সমস্যাটা মিটেনি। তার বড় ভাইকে কয়েকবার বলেছিল নতুন একটা বাথরুম তৈরি করার জন্য। তো শীতের রাতে স্বভাবতই সবাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যায়। রেহান বাড়িতে গেলে তার রুমে একাই থাকে। রাত একটার দিকে রেহান প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বের হয়। বাথরুমের পাশে হলুদ রঙের ফিলামেন্ট বাল্বটা জ্বলজ্বল করে জলছে। আদো চোখে সে বাথরুমের দিকে।

বাথরুম থেকে বের হয়ে আসার সময় দেখতে পায় টিউবওয়েলের পাশে কে যেন দাঁড়িয়ে আছে। টিউবওয়েলটা একটু অন্ধকারে। লাইটের আলো সে অবধি পৌঁছায়নি। তবে রেহান কাউকে দেখতে পাচ্ছে। সেটাও আবার শাড়ি পরা, মাথায় ঘোমটা দেয়া। রেহান ভেবে নেয় তার ভাবী এতো রাতে এখানে আসলো। সেটাও আবার ভাইয়াকে ছাড়া! রেহান গলার কাশির মাধ্যমে তার উপস্থিতির জানান দেয়। এখানে কে? বলে কয়েকবার ডাকও দেয়। কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ নেই ! রেহান কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। সাহস করে ভাবীর দিকে আগাতে থাকে। তখনও ঘোমটা ঢাকা ছিল। রেহান কাছে গিয়ে তার ভাবীর হাত ধরে টান যখনই দেয় তখন যেন সে বুঝতে পারে যে হাত ধরে টান দিচ্ছে সেটা যেন বড় হয়ে যাচ্ছে। টান দিয়েও সে নাড়াতে পারছে না! আর তখনই ঘোমটা পরে যায়। আর যা দেখে রেহান সেটা দেখে সে সেখানেই অজ্ঞান হয়ে পরে থাকে।

সকালে চোখ মেলতেই রেহানের মনে হচ্ছে কে যেন তাকে হাত দিয়ে ডাকছে। তার পাশে কেউ বসে আছে! আর তখন রেহানের বড় ভাই এক হুজুরকে নিয়ে আসে! হুজুর এসে বলে রেহান রাতে জ্বিন দেখতে পেয়েছিল। তারপর সেই হুজুর শিমুল গাছটা সূরা বলে বেধেঁ দিয়ে যায়। এরপর থেকে আর তেমন কিছু কখনোই দেখেনি কেউ।

বিঃদ্রঃ গল্পটি বাস্তবিক জীবন থেকে লেখা।



10% beneficary for @shyfox ❤️

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNzq2MSXKSji21JRspt4nqpkXPR5ea7deLzvmJtuzVBwdLJUpBqtgAZ5gHtHPbayD2jR3CWqjkJ.png

ধন্যবাদ সবাইকে



WhatsApp Image 2021-12-23 at 19.46.54.jpeg

আমি কে?

IMG-20211205-WA0092.jpg

আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। সম্প্রতি আমি ইলেকট্রিক্যাল থেকে ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেছি। এখন বিএসসি এর জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছি। পাশাপাশি লেখালেখি করে আসছি গত দু বছর ধরে। ভালো লাগার জায়গা হলো নিজের অনুভূতি শেয়ার করা, আর সেটা আমার বাংলা ব্লগের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। যাক,
নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 3 months ago 

বাহ খুব সুন্দর একটি ভৌতিক গল্প শেয়ার করেছেন। আপনার গল্প পড়ে অনেক ভালো লাগলো। প্রতি সপ্তাহে আপনি খুব সুন্দর সুন্দর গল্প শেয়ার করেন। রেহান তার ভাবি ভেবে কাছে গিয়ে হাত ধরে বুঝতে পেরে অজ্ঞান হয়েছে আর আমি হলে তো দেখার সাথেই অজ্ঞান হয়ে যেতাম। আমাদের এদিকেও এমন অনেক ঘটনা রয়েছে। আপনার এই গল্প বাস্তবিক জেনে ভালো লাগলো। তাছাড়া শিমুল গাছ বাড়িতে থাকা একদমই ভালো নয়। যাই হোক সম্পূর্ণ গল্প পড়ে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ এত সুন্দর গল্প শেয়ার করার জন্য।

 3 months ago 

শিমুল গাছ বাড়িতে থাকা ভালো কি তা জানি না আপু। তবে গ্রামে মানুষজন ভয় পেত খুব

 3 months ago 

যদিও আমি জানি ভূত বলতে কিছু নেই তবে অনেকেই বলে জ্বিন নাকি আছে। শুনেছি আগে নাকি গ্রামে এরকম ভয়ংকর ঘটনা গুলো প্রায় সময় ঘটে থাকতো। রেহান ভেবেছিল হয়তো তার ভাবী বের হয়ে এসেছে তার ভাইকে ছাড়া, কিন্তু ওখানে তো তার ভাবি ছিল না। বরং সেখানে ছিল একটা জ্বিন। শেষের দিকটা আমার কাছে অনেক বেশি ভয়ংকর লেগেছে। আর আমি তো অনেক বেশি ভয় পেয়েছি। যাইহোক হুজুর এসে শিমুল গাছটা সূরা বলে বেঁধে দিয়ে যাওয়ার পর, আর সেখানে এরকম কিছু দেখা যায়নি শুনে ভালো লাগলো।

 3 months ago 

আল্লাহ তায়ালা মানুষের পাশাপাশি জ্বিন জাতিকে সৃষ্টি করেছে। জ্বিন জাতিও আল্লাহ তায়ালার ইবাদত পালন করে। গ্রামের দিকে মাঝে মাঝেই মানুষের শরীর নাকি জ্বিনে ভর করে শোনা যায়।

 3 months ago 

রেহানের ভাই যেমন ধার্মিক টাইপের, তেমনি রেহানের ভাবীও ধার্মিক টাইপের, এই ব্যাপারটা খুব ভালো লেগেছে আমার। যে মেয়েরা পর্দা করে,তারা স্বামী ছাড়া কাউকে মুখ দেখায় না। যাইহোক জ্বীন-ভূতের কথা অনেক শুনেছি, তবে কখনো দেখার সুযোগ হয়নি। বাসার ছাঁদে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়েছি,তাই মাঝেমধ্যে রাত ২/৩ টার দিকে সিসিটিভি ক্যামেরায় চেক করি জ্বীন বা পরী হাঁটাহাঁটি করে নাকি😂। কিন্তু এই পর্যন্ত কিছু দেখতে পেলাম না। যাইহোক রেহান জ্বীনের হাত ধরে টান দেওয়ার পর, ভয়ে যে স্ট্রোক করেনি সেটাই তো অনেক। আমি হলে তো মনে হয় স্ট্রোক করে মারা যেতাম। যাইহোক এতো চমৎকার একটি গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

 3 months ago 

হাহাহা!! আপনার সিসি ক্যামেরা দেখে উল্টা জ্বিনে ভয় পেয়ে দৌড় দিবে 😂। তবে ঘটনাটা ভাইয়া বাস্তব ছিল। আপনার মতো আমিও অজ্ঞান হয়ে যেতাম এমন সিচুয়েশনে পরে গেলে 🙆‍♂️। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

 3 months ago 

আসলে ভূত বলতে কিছুই পৃথিবীতে নেই৷ আল্লাহ বলছেন যে তিনি মানুষ এবং জ্বিন জাতিকে শুধুমাত্র তার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন৷ তাই আমরা নিঃসন্দেহে বিশ্বাস করতে পারি যে জ্বিন বলতে কিছু রয়েছে৷ তবে আজকে যে ঘটনাটি আপনি এখানে ফুটিয়ে তুলেছেন এরকম ঘটনা অনেক সময় অনেক জায়গায় ঘটেছে৷ আমরা ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি৷ এখানে রেহান ভেবেছিল যে তার ভাবি বের হয়ে এসেছে৷ অথচ সে তো তার ভাবি নয়৷ এটি হচ্ছে একটি জ্বিন৷ যাইহোক হুজুর এসে সেখানে শিমুল গাছে সূরা বলে বেঁধে দেওয়ার পর আর সেখানে কোন কিছুই দেখা যায়নি শুনে ভালো লাগছে।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.13
JST 0.029
BTC 58728.31
ETH 3185.59
USDT 1.00
SBD 2.43