আশা করি ঈশ্বরের আশীর্বাদে সকলে খুব ভালো আছেন আমিও বেশ ভালোই আছি।আজকে আমি আপনাদের সামনে একটা ছোট কিন্তু মিষ্টি প্রেমের গল্প নিয়ে এলাম। চলুন তবে গল্পটা আপনাদের সামনে তুলে ধরি। স্কুলে পড়াকালীন অনেকের মনেই প্রেমের দোলা দেয়। বিশেষ করে যদি স্কুল কোয়েড হয়। সেই স্কুলেরই একটা মিষ্টি কিন্তু পরিণতি না পাওয়া ভালোবাসার গল্প আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম।

শর্মিলা এবং অনিকেত দুজনেই ক্লাস ইলেভেনে পড়ে রামপুরহাট উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। একে অপরের চরম শত্রু যাকে বলে। দুজনেই দুজনকে সবদিক থেকে টেক্কা দেওয়ার মতো। যেমন পড়াশোনায় দুজনেই ভীষণ ভালো, তেমনি খেলাধুলো বা নাচ-গানে দুজনেই নিজের মতো করে অসাধারণ। সেই কারণে ছোটবেলা থেকেই বাইরে প্রকাশ না করলেও একে অপরকে মোটেই সহ্য করতে পারত না।অপরদিকে শর্মিলা এবং অনিকেতের বাবারা খুব ভালো বন্ধু ছোটবেলার।

কিন্তু শর্মিলার মা বা অনিকেতের মা একে অপরকে পছন্দ করে না।হয়তোবা সন্তানদের এই কম্পিটিশনের মানসিকতা তাদের থেকেই এসেছে। এভাবে দিন গড়াচ্ছিল, স্কুলের অ্যানুয়াল ফাংশানের দিন কাছে চলে আসছিল। অ্যানুয়াল ফাংশনে ঠিক করা হলো শেক্সপিয়ারের রোমিও জুলিয়েটের নাটকটি সবার সামনে তুলে ধরা হবে। রোমিও হিসেবে ঠিক হল অনিকেতকে এবং জুলিয়েট হিসেবে ঠিক করা হলো রাবিয়াকে।যদিও শর্মিলা ভেবেছিল জুলিয়েট এর অভিনয় সে ই করবে।কিন্তু যখন সে জানল অনিকে রোমিওর অভিনয় করছে তখন সে বিশেষ আগ্রহ দেখালো না।

এভাবেই স্কুলে ক্লাসের পরে বিকেল বেলা সকল ছাত্র-ছাত্রীরা মিলে নাটকের জন্য রিহার্সাল করতো। শর্মিলাকে বানানো হয়েছিল জুলিয়েটের প্রিয় বান্ধবী মারিয়া। এতে করে শর্মিলা কোথাও একটা মনে হচ্ছিল যে সে যেন খানিকটা হলেও উপেক্ষিত। তবুও সে বিশেষ কিছু বলল না ভাবল স্কুল জীবন প্রায় শেষের পথেই। তাই অকারণে ঝামেলা করে লাভ নেই। এভাবেই বেশ তিন চার দিন ভালোই চলতে থাকলো রিহার্সাল।

হঠাৎ করেই একদিন রিহার্সাল করতে গিয়ে শর্মিলা পা মচকে পড়ে গেল। আর সে কিছুতেই পা নাড়াতে পারছিল না।এতে করে অনিকেত সামনে থাকা অবস্থাতেও ওকে একটুও সাহায্য করলো না উঠে দাঁড়াতে। বরং দূরে দাঁড়িয়ে ওকে দেখে হাসছিল। এটা দেখে শর্মিলা যতটা না রাগ হয়েছিল তার থেকে বেশি ওর অভিমান এবং কষ্ট হয়েছিল। সে অনিকেতের দিকে তাকিয়ে কেঁদে ফেলল জোরে। হঠাৎ করেই অনিকেতের মনের মধ্যে কেমন যেন একটা মোচড় দিয়ে উঠলো।তার হাসি থেমে গেল তারপর এসে লজ্জায় মাথা নিচু করে ধীরে ধীরে সেখান থেকে চলে গেল।

ততক্ষণে বাকিরা শর্মিলাকে তুলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল। ডাক্তার কিছু ওষুধ দিল এবং বলল অল্প চোট লেগেছে ঠিক হয়ে যাবে। এরপর কিছুদিন শর্মিলা বেশ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছিল। কিন্তু তাকে দেখে অনিকেতের কেন জানি না আগের মত আর রাগ হচ্ছিল না। বরং বারবার লজ্জা বোধ হচ্ছিল এবং খারাপ লাগা ছিল একটা কোথাও। শর্মিলাও সেদিনের পর থেকে অনিকেত কে না দেখার ভান করেই থাকতো। এরপরেই স্কুলের অ্যানুয়াল ফাংশন এর দিন চলে এলো। যথারীতি যে যার মত নিজের চরিত্রের জন্য মেকআপ রুমে গিয়ে সাজগোজ শুরু করলো। নাটক শুরু হলো। কিন্তু এই নাটকে কোথাও একটা মনে হচ্ছিল রোমিওর মন জুলিয়েটের থেকেও বেশি জুলিয়েটের বান্ধবী মারিয়ার দিকে অর্থাৎ শর্মিলার দিকে। সে যেন বারবার শর্মিলাকেই দেখছিল আর ভাবছিল, "কোনদিনও তো খেয়াল করিনি শর্মিলা এত সুন্দর দেখতে।"

এর পরেই স্টেজে ঘটলো অঘটন।জুলিয়েটের দাঁড়ানোর জন্য যে ব্যালকনি বানানো হয়েছিল কাঠের পাটাতন দিয়ে তার নিচেই অনিকেত দাঁড়ানো ছিলো।শর্মিলা দূর থেকে দেখছিল কাঠের পাটাতনটা অনেকক্ষণ ধরে নাড়াচাড়া করছে। হঠাৎ করেই পাটাতন দুমড়ে যেই ভেঙে পড়তে যাচ্ছিল, শর্মিলা ছুটে গিয়ে অনিকেতকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল। আর সেই পাটাতন ভেঙে আবার তার গায়ের উপর পড়লো।

অনিকেত এবার কিন্তু আর হাসাহাসি করল না। ছুটে গেল সে পাটাতনের ভাঙ্গা কাঠ সরিয়ে দেখলো শর্মিলা অজ্ঞান হয়ে গেছে। এরপরে সে নিজেই আরও ২-৩ জন শিক্ষকের সাহায্য নিয়ে শর্মিলা কে সেখান থেকে উদ্ধার করল। এবং হসপিটালে নিয়ে গেল। শর্মিলা ঘন্টা পাঁচেক পরে চোখ খুলল দেখলো হসপিটালের ঘরে তার মা এবং ছোট ভাই দাঁড়িয়ে রয়েছে।আর তার পাশেই একটা চেয়ারে মাথা নিচু করে অনিকেত বসে কাঁদছে। শর্মিলা ধীরে ধীরে বলল,"কি হয়েছে ? কাঁদছিস কেন? বেঁচে আছি এখনো!"

হঠাৎ করেই অনিকেত সব ভুলে গিয়ে শর্মিলার হাত ধরে নিজের কপালে ঠেকিয়ে কাঁদতে শুরু করল আর বলল, "তোকে ভীষণভাবে হিংসা করতাম। তুই এত ভালো পড়াশোনাতে, সবকিছুতে এত ভালো একটা মেয়ে। সব সময় তোর সাথে কম্পিটিশন করে গেছি। এই কম্পিটিশন করতে করতে কখন যে তোকে ভালোবেসে ফেলেছি আমি নিজেও জানিনা।"ততক্ষণে যদিও শর্মিলার মা ছোট ভাইকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিল খবর দিতে যে শর্মিলার জ্ঞান ফিরেছে।

এরপরে শর্মিলা অনিকেতের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, "আমিও কি তোকে কম হিংসে করেছি ? কিন্তু সেই হিংসার থেকেই হয়তো তোর প্রতি আমার ভালোবাসা জন্ম নিয়েছে। কিন্তু কি জানিস? এখন আমরা ছোট।পড়াশোনা করি। হয়তো এই সম্পর্কের কোন ভবিষ্যৎ নেই।তাই আমার মনে হয় আমাদের এখন এসব না ভেবে পড়াশোনার দিকেই মন দেওয়া উচিত। এরপর যদি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরেও আমরা একে অপরের প্রতি এই অনুভূতি রাখতে পারি, তবে না হয় ভবিষ্যতের দিকে এগোবো। "

যদিও কালের স্রোতে এগুলো আর কিছুই হয়নি। বর্তমানে শর্মিলা একজন কলেজের প্রফেসর।সে তার স্বামী অভিরূপ এবং ছেলে সুতনুকে নিয়ে ভালোই রয়েছে। অপরদিকে অনিকেত এখনো বিয়ে করেনি। সে বর্তমানে কানাডাতে একটি বেসরকারি সংস্থাতেও উচ্চপদস্থ কর্মচারী। এরপরে আর তাদের কখনো দেখা হয়েছিল কিনা বা তারা মুখোমুখি হয়েছিল কিনা সেটা আজও জানা যায়নি।

আজ এখানেই শেষ করছি। আবার আসবো নতুন কোন উপস্থাপনা নিয়ে। কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন। সকলে ভালো থাকবেন।