"সিরিয়ার রণাঙ্গনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী"

in Steem Bangladesh4 years ago

ইসরাইল অধিকৃত ভূমি উদ্ধারের জন্য ১৯৭৩ সালে মিসর ও সিরিয়া যৌথভাবে ৬ অক্টোবর ১৯৭৩ তারিখে ইসরাইল আক্রমন করে, যা ইতিহাসে আরব-ইসরাইল যুদ্ধ অক্টোবর ১৯৭৩ নামে খ্যাত। আরবদের ন্যায়সঙ্গত এই যুদ্ধে বঙ্গবন্ধু-সরকার সিরিয়ার রনাঙ্গনে একটি সেনা মেডিকেল টিম ও মিশর সেনাবাহিনীর জন্য চা পাঠিয়েছিলেন ।এটিই ছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রথম বৈদেশিক দায়িত্ব। বাংলাদেশ সরকারের সেই সিদ্বান্তটি ছিল ঐতিহাসিক সাহসী ও সূদুর প্রসারী।

FB_IMG_1604334085971.jpg
Source

২. তখনো মধ্যেপ্রাচ্য ও আফ্রিকার অধিকাংশ আরব দেশগুলো বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে কমবেশী সব আরব দেশগুলোতে প্রচারণা চলছিল বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। এই সময় এক বিস্ময়কর কূটনৈতিক অভিযানে অবতীর্ন হলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আরবদের প্রতি অকুন্ঠ সমর্থন জানিয়ে ঘোষণা করলেন “ আরবরা আমাদের স্বীকৃতি দিক না দিক, তারা আমাদের ভাই। তাদের ন্যায্য সংগ্রামে আমরা তাদের পাশে আছি”। এই পটভূমিতেই সিরিয়ার রনাঙ্গনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি মেডিকেল টিম পাঠানো হয়েছিল।

৩. বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্নেল খুরশীদ উদ্দিন আহমেদের (পরবর্তীতে ব্রিগেডিয়ার ও প্রয়াত) নেতৃত্বে ২৮ সদস্যর একটি মেডিকেল টিম ১৯৭৩ এর ১৯ অক্টোবর সিরিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পররাস্ট্র মন্ত্রনালয়ে কর্মরত তরুণ ও দক্ষ কৃটনীতিক মোহাম্মদ জমির (পরবর্তিতে রাষ্টদূত) কূটনৈতিক যোগাযোগের জন্য (লিবিয়া পর্যন্ত) দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।বাংলাদেশ বিমানের সেই বিশেষ ফ্লাইটে (বৃটিশ ক্যালিডোনিয়ান থেকে লিজকৃত) মেডিকেল টিমের সঙ্গে আরো গেলেন সাংবাদিক হাবিবুল্লাহ ও ক্যামেরাম্যান রফিক উদ্দিন আহমেদ।

৪. সৈন্যবাহী বিমানটির যাত্রা বিরতি হলো দুবাই এ। এরপর বিমানটি তুরস্ক-গ্রীস মাল্টার আকাশ হয়ে অবশেষে সন্ধ্যায় ল্যান্ড করলো লিবিয়ার বেনগাজি বিমানবন্দরে। বেনগাজিতে মিশরের প্রতিনিধির কাছে মিসরীয় বাহিনীর জন্য বাংলাদেশের চায়ের প্যাকেটগুলো হস্তান্তর করা হলো। ২১ অক্টোবর লিবিয় সরকারের বন্দোবস্তে বাংলাদেশের সেনাদল মিডল ইস্ট এয়ার লাইন্সের একটি বিমানে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে পৌছায়। বিমান বন্দরে উপস্থিত ছিলেন লেবাননে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাস্ট্রদূত বিখ্যাত সাংবাদিক জনাব কেজি মোস্তফা ও সিরিয়া সরকারের প্রতিনিদিবৃন্দ।

৫. বৈরুত খেকে রাত্রিবেলায় সড়ক পথে সিরিয়ার রাজধানীর দিকে সেনা দলটি এগিয়ে চলে। অবশেষে ২২ অক্টোবর ভোর রাতে দামেস্ক নগরীতে পৌছালো মেডিকেল টিম। এর কিছক্ষণ পরই দামেস্ক নগরী ভয়াবহ ইসরাইলি বিমান আক্রমনে কেঁপে ওঠে।এদিকে, যুদ্ধের প্রথমদিকে সিরিয়া ও মিশর অসামান্য সাফল্য অর্জন করলেও পরবর্তিতে যুদ্ধের মোড় ইসরাইলের পক্ষে চলে যায়। ইসরাইলি বাহিনী দামেস্ক নগরীর ২৫ মাইলের মধ্যে চলে আসে।

৬. বাংলাদেশের মেডিকেল টিমটি দামেস্ক নগরীর পশ্চিমদিকে দারেস সালাম, নামক স্থানে মোতায়েন করা হয়। সেখানে মেয়েদের একটি স্কুলে ইতিপূর্বে সিরিয়ার চিকিৎসকগন একটি প্রাখমিক চিকিৎসা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ঐ চিকিৎসা কেন্দ্রেটিকে বাংলার মেডিকেল দল একটি ক্ষুদ্র তবে কার্যকর ফিল্ড হাসপাতালে পরিনত করে। ঐ হাসপাতালে মূলত সিরিয়ার আধাসরকারি বাহিনী ও প্যালেন্টাইনী যোদ্ধাদের চিকিৎসা করা হতো।

৭. ২৪ অক্টোবর, মিসর ও সিরিয়া ফ্রন্টে আর্ন্তজাতিক মধ্যস্থতায় যুদ্ধ বিরতি কার্যকর হয়। বাংলাদেশর সেনাদল ২২ নভেম্বর পর্যন্ত (৩০দিন) দামেস্ক দায়িত্ব পালন করে।যুদ্ধ বিরতি হলেও ঐ ফ্রন্টে তখনো মাঝে মধ্যে গোলাগুলি হতো। মেডিকেল টিমটি এক মাসে ওয়ার সার্জারী সহ শতাধিক ব্যক্তির চিকিৎসা প্রদান করে।বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্ণেল খুরশীদ এর নেতৃত্বে মেডিকেল টিমের সদস্যগন তাদের পেশাগত দক্ষতা, দেশপ্রেম, আন্তরিকতা ও মমত্ব সহকারে অসুস্থ ও আহ্ত আরবদের সেবা প্রদান করেছিল। সিরিয়ার রনাঙ্গনে বাংলাদেশের এই মেডিকেল টিম ছিল মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে অনারব দেশ থেকে আসা প্রথম সৈন্যদল। গনমাধ্যম বিশেষত কায়রো ও দামেস্ক রেডিও ফলা্ও করে বাংলাদেশের সমর্থনের কথা প্রচার করেছিল।দামেস্কের ঐতিহাসিক উমাইয়া মসজিদে জুমার দিনে খূতবায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কথা বলা হয়েছিল। যুদ্ধের ময়দান খেকে ২২ নভেম্বর বৈরুতে চলে আসে বাংলাদেশ কনটিনজেন্ট। ২৪ নভেম্বর বৈরুত বিমানবন্দরে সিরিয়া সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ সেনাদলকে আন্তরিকভাবে বিদায় জানায়। বিমানবন্দরে সিরিয়ার কর্তৃপক্ষ জানান, “যুদ্ধকালীন সংকটে মেডিকেল দলের উপস্থিতি ছিল বাংলাদেশী সৈনিকদের সর্বাত্বক যুদ্ধে অংশগ্রহনের মতো। ১৯৭৩ এর ২৪ নভেম্বর বিমানযোগে ঢাকা পৌছে যায় সেনাদল।বিমানবন্দরে তাদের বিশেষ অভ্যর্থনা দেওয়া হয়।

৮. ৩০দিনের এই মেডিকেল মিশনটি ছিল ঘটনাবহুল ও নাটকীয়তায় ভরা। এর তাৎপর্যও ছিল ব্যাপক ও সূদূরপ্রসারী। সমগ্র আরব জাহানে বাংলাদেশের নাম ছড়িয়ে পড়ে। তারা বাংলাদেশকে বন্ধু ও মুসলিম দেশ হিসেবে আন্তরিক ভাবে গ্রহন করে ও স্বীকৃতি দেয়। এই সমর্থনের স্বীকৃতি স্বরুপ মিশরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত বাংলাদেশকে ৩০টি ট্যাংক উপহার দেন। এই মিশনটি ছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও পররাষ্টনীতির একটি গুরুত্যপূর্ণ মাইল ফলক।

এতে বাংলাদেশের আর্ন্তজাতিক ভাবমৃর্তিতে অনেক পরিবর্তন আসে।এর মাধ্যেমেই বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা কূটনীতির শুরু। বর্তমানে জাতিসংঘ বাহিনীর শান্তিরক্ষী হিসেবে বাংলাদেশের সশস্র বাহিনী সমগ্র বিশ্বের শ্রদ্বা ও আস্থা অর্জন করেছে। ১৯৭৩ এ সিরিয়া রনাঙ্গনে প্রেরিত এই সেনাদলই এ অর্জন ও স্বীকৃতির পথিকৃত।প্রথম বৈদেশিক দায়িত্বে গমনকারী মেডিকেল টিমের ২৮ জন সেনা সদস্যের মধ্যে মাত্র ৬ জন বেঁচে আছেন। সেই সাহসী সৈনিকদের অভিবাদন।

Sort:  

You have been upvoted by @rex-sumon A Country Representative from BANGLADESH we are voting with the Steemit Community Curator @steemcurator07 account to support the newcomers coming into steemit.


Follow @steemitblog for the latest update. You can also check out this link which provides the name of the existing community according to specialized subject

There are also various contest is going on in steemit, You just have to enter in this link and then you will find all the contest link, I hope you will also get some interest,

For general information about what is happening on Steem follow @steemitblog.

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 65800.35
ETH 3464.66
USDT 1.00
SBD 2.68