গ্রামে ধান সিদ্ধ করার পুরাতন পদ্ধতি।।

in Steem For Tradition9 months ago
আসালামু আলাইকুম

প্রিয় ব্লগার বৃন্দ,



আশা করি ,মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে সবাই অনেক ভালো আছেন।আমিও ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। আমি @rumana12 আজকে আপনাদের সাথে আলোচনা করব গ্রামের ধান সিদ্ধ করার পদ্ধতিটি নিয়ে। আশা করি আপনাদের সকলকে আমার আজকের পোস্টটি ভালো লাগবে। চলুন তবে দেরি না করে শুরু করা যাক।

1000005702.jpg

কভার ফটো

বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ কৃষির সাথে জড়িত এবং তারা বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষে আগ্রহী। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ গ্রাম অঞ্চলে বাস করে। আর গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ ধান ,পাট ,গম ,ভুট্টা চাষ সহ আরো বিভিন্ন ধরনের ফসল তাদের কৃষি জমিতে চাষ করেন। বাঙালিরা খাবার হিসেবে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয় ভাতকে। ধান থেকে চাল এবং চাল থেকেই ভাত তৈরি হয়। আর এই চাল এর জন্য ধানকে প্রথমে ধান গাছ থেকে আলাদা করে মাড়াই করে সিদ্ধ করে শুকাতে হয় এবং তারপর চাল পাওয়া যায়। এই সম্পূর্ণ বিষয়গুলো আজকে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করব।


1000005696.jpg

গ্রামের কৃষকেরা তাদের বাড়ির খাদ্যের চাহিদা মেটানোর জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ চাল নিজের হাতে কষ্ট করে বাড়িতেই প্রস্তুত করেন। বাড়িতে ধান তুলে আনার পর মাড়াই করা হয়। মাড়াই করা সেই ধান গুলো থেকে আগাছা মুক্ত করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়। তারপর চাল করার জন্য ধানগুলো বেশকিছু সময় ভিজিয়ে রাখা হয় ।কখনো কখনো ধানে ২ বার সিদ্ধ দেয়া হয় আবার কখনো কখনো এক বার সিদ্ধ দেওয়া হয়। ধান গুলো ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে করে সিদ্ধ করা হলে এই ধান থেকে ভালো চাল পাওয়া যায়। ধান সিদ্ধ করার জন্য বড় কোন পাত্রে ধানগুলো ঢেলে সে পাত্রে কিছু পরিমাণ পানি দিয়ে প্রচন্ড তাপে সিদ্ধ করার জন্য চুলায় বসিয়ে দেওয়া হয়। তারপর ধানের মধ্যে ভাব আসলে বা জলীয়বাষ্প দেখা গেলে এবং ধানগুলো হালকা ফেটে যাচ্ছে দেখলেই সে ধানগুলো একটি ফাঁকা জায়গায় নামিয়ে কোন চট বা নেট এর উপর ঢালা হয়। যেন ধানের সেই ভাব গুলো বেরিয়ে যায় এবং ধানগুলো ঠান্ডা হয়। এরপর ধানগুলো একটু ঠান্ডা হলেই সেগুলোকে রোদে শুকাতে দেয়া হয়।

1000005697.jpg

প্রচন্ড রোদ হলে ধান খুব তাড়াতাড়ি শুকানো যায়। ধান শুকানোর পর সে ধান গুলো বস্তা করে মিলে নিয়ে যাওয়া হয়। এবং মিলে ধান গুলোকে কোটার পর চাল ও গুড়া পাওয়া যায়। পুনরায় সেই গুড়া যুক্ত চাল গুলো কুলা দিয়ে ঝেড়ে কিংবা ফ্যান এর সাহায্যে বাতাস দিয়ে পরিষ্কার করা হয়। অতঃপর ভাত রান্না করার জন্য চাল পাওয়া যায়। চাল গুলো ঝাড়ার পর চাল থেকে গুড়া গুলো আলাদা হয়ে যায় এবং ভাঙ্গা চালের অংশগুলো আলাদা করা যায়। চালের ভাঙ্গা অংশগুলোকে "খুদ" বলা হয়। খুদ ও গুড়া ছাড়া সে ভালো চাল গুলোকে বস্তায় বা ড্রামে রাখা হয়। সেই চাল বস্তায় বা ড্রামে করে বেশ কয়েক মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। আর এভাবেই চাল সংরক্ষণ করে গ্রামের মানুষেরা এক তাদের ভাতের যে চাহিদা সেটি মিটিয়ে থাকে।

1000005699.jpg

গ্রামের কমবেশি প্রতিটা বাড়িতেই একটি নির্দিষ্ট সময়ে এই ধান থেকে চাল তৈরি করার পদ্ধতিটি চলমান থাকে। এ সম্পূর্ণ পদ্ধতিতে হয়তো একটু পরিশ্রম ঠিকই থাকে কিন্তু গ্রামের মানুষ গুলো এই পরিশ্রমটিকে সামান্য ভেবেই সম্পূর্ণ কাজটি নিখুঁতভাবে করার চেষ্টা করে । কিন্তু বর্তমানে অনেকেই এই পরিশ্রম না করে ধান বিক্রি করে চাল ক্রয় করে আনেন। আবার অনেকেই ধানগুলো অটো রাইস মিলে দিয়ে দেয়। অটো রাইস মিল থেকে প্রাপ্ত চাল গুলোতে পলিশ করা থাকে। যা এক রাসায়নিক পদার্থের মাধ্যমেই করা হয়। এই রাসায়নিক পদার্থ গুলো আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই আমার মনে হয় কেনা চালের তুলনায় বাড়িতে একটু কষ্ট করে চাল তৈরি করা কয়েক গুণ ভালো ও স্বাস্থ্যসম্মত।

1000005700.jpg

1000005692.jpg

আশা করি, আমার পোস্টটি আপনাদের ভালো লেগেছে।ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন । সকলে ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। আপনাদের কাছে আমার আজকের শেয়ার করা সম্পূর্ণ আলোচনা কেমন লেগেছে তা অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।


1000002255.png


ডিভাইসRedmi Note 11
ফটোগ্রাফার@rumana12
লোকেশনদিনাজপুর

1000001273.gif


ধন্যবাদান্তে,
@rumana12


1000000844.png


1000000848.jpg

আসসালামু আলাইকুম, আমার নাম রুমানা পারভীন। আমার steemit আইডি নাম @rumana12 আমার বাসা দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলায়।আমি দিনাজপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ কম্পিউটার ডিপার্টমেন্টে পড়াশোনা করি। আমি ভ্রমণ করতে এবং নতুন কিছু শিখতে খুব পছন্দ করি। অবসর সময় গান শুনতে আমার অনেক ভালো লাগে। আমি steemit এ কাজ উপভোগ করি।

Black & White Minimalist Business Logo.png


You can also vote for @bangla.witness witnesses

3zpz8WQe4SNGWd7TzozjPgq3rggennavDx3XPY35pEAVnpvDGTmz6yM4BdeUwpQ8vMxtR3sQse9kG46R2Lk4NBaGfzPmL5tiA85DdFd7TDvbMGaNMAY2RBgSWfNp5kM1Qjr3515gWKvjxzADBcu4.png

Sort:  
 9 months ago 

ধান সিদ্ধ করার এটি একটি পুরাতন পদ্ধতি। এ পদ্ধতি গ্রাম অঞ্চলে করা হয়। এই পদ্ধতিতে ধান সিদ্ধ করা বেশ কষ্টকর এবং সময় সাপেক্ষ। এই কাজ অনেক কষ্ট করে করতে হয়। ধান সিদ্ধ করতে গেলে প্রচুর পরিমাণে আগুনের দরকার হয়। আগুন দিয়ে চুলা জ্বালিয়ে ধানগুলো একটি পাত্রে বসিয়ে জল দিয়ে সিদ্ধ করে নিতে হয় যা বেশ কষ্টকর। বর্তমান যুগে মানুষ এত কষ্ট করতে চায় না আধুনিকতার ছোয়ায় বিভিন্ন রকমের চাল মিল তৈরি হচ্ছে। যেমন রাইস মিলে খুব সহজে চাল তৈরি করা যায়। মানুষ এখন বাজার থেকে প্রসেসিং করা চাল খেতে বেশ পছন্দ করে। এরকম ঝামেলা কেউ আর করতে চায় না। তবে বাজারের কেনা চাল বেশ শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই অনেকেই বাড়িতে তৈরি করে চাল খেতে বেশ পছন্দ করে। আমরা প্রতি বছর বাড়িতে চাল তৈরি করে খাই।বাড়িতে ধান ভাপিয়ে তৈরিকৃত চাল বেশ মজা লাগে খেতে। আর বাজারের চাল খেতে তেমন একটা ভালো লাগে না। আপনি বেশ চমৎকার একটি বিষয় আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। এগুলো আমাদের দেশের একটি বিশেষ ঐতিহ্য। ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। আশা করি এর পরে আপনার কাছে আরও বিশেষ কিছু ঐতিহ্যমূলক বিষয় জানতে পারব।ছবি গুলো বেশ চমৎকার তুলেছেন।

 9 months ago 

আপনার এত বড় আর এত সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।

 9 months ago 

ধন্যবাদ আপু

 9 months ago 

বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ, ধান আমাদের প্রধান খাদ্যশস্য। সেই ধান থেকে চাল উৎপাদন করার জন্য অনেক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেতে হয়। প্রথমে ধান চারা তৈরি করার জন্য কাঁদা মাটিতে ধান ফেলে রাখা হয়। সেই ধান থেকে চারা হয়, সেই চারা রোপণ করার জন্য জমি নির্বাচন করা হয়, এবং জমি প্রস্তুত করা হয়। জমিতে হাল চাষ করে মই দিয়ে চারা রোপনের জন্য প্রস্তুত করা হয়। তারপর জমিতে চারা রোপন করা হয়, সেই চারা আস্তে আস্তে বড় হয়, জমিতে পানি সেচ এবং এবং আগাছা পরিষ্কার করা হয়। আস্তে আস্তে ধান গাছ পরিপক্ক হয়। এবং ধান গাছ থেকে পরিপূর্ণ ধান পেতে তিন মাস সময় লাগে। ধান পেকে গেলে সেই ধান কেটে মাড়াই করা হয়, মারা এসেছে সিদ্ধ করা হয় । সিদ্ধ করে রৌদ্রে শুকিয়ে চাল তৈরি করার উপযুক্ত করা হয়। ধান সিদ্ধ করার জন্য বড় পাতিলে পানি দিয়ে আগুনে জ্বাল দিয়ে সিদ্ধ করা হয়। আপনি সমস্ত প্রক্রিয়া খুবই সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন আপু। আমাদের গ্রামের বাড়িতে ধান চাষ করা হয়। এভাবেই ধানসিদ্ধ করা হতো। আপনার পোষ্টের মাধ্যমে সেই স্মৃতি মনে পড়ে গেলো। আপনি অনেক সাজিয়ে গুছিয়ে উপস্থাপন করেছেন, ফটোগ্রাফি দারুন করেছেন। অসংখ্য ধন্যবাদ আপু। সুন্দর পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 9 months ago 

আপনার এত সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।

 9 months ago 

ধান সিদ্ধ করার পদ্ধতি নিয়ে আপনি খুব সুন্দর একটি পোস্ট লিখেছেন। আমাদের বাসায় ও আমরা প্রতিবছর এভাবে ধান সিদ্ধ করে থাকি।তবে এই ধান সিদ্ধ কাজটিতে অনেক পরিশ্রম ব্যয় করতে হয়।ধন্যবাদ আপু ধান সিদ্ধ নিয়ে সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।

 9 months ago 

আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাই।

 9 months ago 

গ্রামে ধান সিদ্ধ করার পদ্ধতি নিয়ে সুন্দর একটি পোস্ট উপস্থাপন করেছেন। গ্রামে এখনো মানুষ এভাবেই ধান সিদ্ধ করে। আমাদের বাড়িতে একটি বিশাল চুলা ঢেকে রাখা আছে। ধানের মৌসুমে এটি খোলা হয় ও বিশাল একটি ডেকে ধান সিদ্ধ করা হয়। সিদ্ধ করার পর একটা ফাকা জায়গায় কিছুটা সময় রেখে ঠান্ডা করা হয়। তারপর সেগুলো রোদে শুকাতে দেয়া হয়।

 9 months ago 

আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

গ্রামে অনেক বাড়িতে এরকম বড় হাড়িতে ধান সিদ্ধ করতে দেখা যায়। আমাদের বাড়িতে যখন ধান সিদ্ধ করা হয় তখন একবারে অনেক ধান সিদ্ধ করি। এই জন্য আমরা অনেক বড় করাই ব্যবহার করি।বাহ আপনার পোস্টটা অনেক সুন্দর হয়েছে। সাজিয়ে গুছিয়ে খুব সুন্দর উপস্থাপন করেছেন। গ্রামে ধান সিদ্ধ করার পুরাতন পদ্ধতি নিয়ে খুব সুন্দর উপস্থাপন করছেন আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 9 months ago 

আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

 9 months ago 
DescriptionInformation
plagiarism-free
#steemexclusive
Ai Content - free

We expected you to be friendly and active in the Steem For Tradition Community. We appreciate your effort. Thank you for sharing your beautiful content with us ❤️.

 9 months ago 

Thanks

 9 months ago 

বর্তমানে বাজারে চালের যে মূল্য বাসায় চাল না করলে অবস্থা খারাপ হয়ে যেতো। ধানের সিজন আসলে মায়ের সাথে আমিও চুলায় জ্বাল দেই। তাই একটি ধান ভাপার কাজটা পারি। আপনি অবশ্য সুন্দর করে প্রতিটি ধাপ বলে দিয়েছেন। ধান মাড়াই করে চাল পাওয়ার পরের ভাঙ্গা অংশটাকে আমাদের এলাকায় খুদি বলে। আমার মনে হয় একটু বেশি পরিশ্রম করে হলেও বাসায় চাল বানানো ভালো। সুন্দর লিখেছেন।

 9 months ago 

আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

 9 months ago 

ধান সিদ্ধ করার প্রাচীনতম পদ্ধতি হলো এটি। গ্রাম অঞ্চলের মানুষ এভাবেই এখনো ধান সিদ্ধ করে চাল করে খায় তবে শহর অঞ্চলে মানুষ যদিও মিল চাল খায়। তবে গ্রামাঞ্চলে ও এখন এই প্রচলনটি একটু কমে গেছে। গ্রামের মানুষ ও এখন বস্তার চাল নিয়ে এসে খায়। ধান সিদ্ধ করে চাল বের করলে সেখান থেকে যে গুরা পাওয়া যায় সেগুলো গরুর ভালো খাদ্য হয়ে থাকে। ফটোগ্রাফি গুলো অনেক সুন্দর হয়েছে আপনার আরো অনেক সুন্দর লিখেছেন আপনি ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

 9 months ago 

আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

 9 months ago 

গ্রাম অঞ্চলে ধান সিদ্ধ করার পুরাতন পদ্ধতি অনেক সুন্দর ভাবে উপস্থাপনা করেছেন আপু। সেই প্রাচীন কাল থেকেই গ্রাম অঞ্চলে মানুষ এভাবে ধান সিদ্ধ করে আসতেছে। তবে শহর অঞ্চলে এখন মেশিনের মাধ্যমে ধান সিদ্ধ করা হয়। আমাদের গ্রাম অঞ্চলে এখন অনেক বছর এই প্রাচীন ধান সিদ্ধর পদ্ধতি থেকে যাবে। বিশেষ করে আপনার ফটোগ্রাফি গুলো অসম্ভব সুন্দর হয়েছে। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।

 9 months ago 

আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.12
JST 0.028
BTC 63624.94
ETH 3481.95
USDT 1.00
SBD 2.54