আপনার এলাকার ঐতিহ্যবাহী একটি খাবার নিয়ে লিখুন, যে খাবার আপনার এলাকাকে প্রসিদ্ধ করে তুলেছে
সবাই কেমন আছেন? আশা করি ভালো আছেন। আজকে আমি স্টীম ফর ট্রাডিশন কমিউনিটি কর্তৃক আয়োজিত অংশগ্রহণ করব। আজকের প্রতিযোগিতার বিষয় আপনার এলাকার ঐতিহ্যবাহী একটি খাবার নিয়ে লিখুন, যে খাবার আপনার এলাকাকে প্রসিদ্ধ করে তুলেছে । চলুন শুরু করি আজকের লিখা,
ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী চ্যাপার শুঁটকি
আমার এলাকার একটি ঐতিহ্যবাহী খাবারের নাম হল চ্যাপা শুঁটকির ভর্তা। যা বহু কাল ধরে আমাদের দেশের জনপ্রিয় এবং ঐতিহ্যবাহী খাবার।অন্য কোন জেলা থেকে বা বিভাগ থেকে কেউ আমাদের এলাকায় আসলে তারা এই খাবারটি খেয়ে থাকেন। চ্যাপা মূলত একপ্রকার শুঁটকি তবে আমরা সারাদেশের বাজারে সচরাচর যে ধরনের শুঁটকি দেখতে পাই এটি সেগুলোর থেকে আলাদা। বিভিন্ন মাছের শুঁটকি দেওয়া হয় রোদে শুকিয়ে কিন্তু এই চ্যাপার শুঁটকি দেওয়া হয় পুরো ভিন্ন পদ্ধতিতে। পুঁটি মাছ দিয়ে এই শুঁটকি তৈরি করা হয় । বাজারে এই শুটকিগুলোর বিভিন্ন সাইজের দাম বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। বর্তমানে এই চাপা শুটকির দাম ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত প্রতি কেজি।
বাংলাদেশ হলো নদীমাতৃক দেশ। শীতকালে যখন দেশের নদীর পানি কমতে শুরু করে তখন নদীতে প্রচুর পরিমাণে পুঁটি মাছ পাওয়া যায়।এই পুঁটি মাছ গুলো সংরক্ষণ করে রাখা হয় সনাতন একটি পদ্ধতিতে। সনাতন পদ্ধতিতে পুঁটি মাছ প্রথমে রোদ দিয়ে শুকানো হয় তারপর চ্যাপা৷ তৈরি করা হয় আংশিক গাজানো পদ্ধতিতে। চ্যাপা শুঁটকি অন্য মাছের শুঁটকির মতো শুকনো অবস্থায় থাকে না বরং এটি ভেজা ভেজা থাকে গাজানোর ফলে।
আমার ফোন থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট এবং iMarkup অ্যাপ দিয়ে ক্রপ করা
ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী চ্যাপার রেসিপি
ব্যবহৃত উপকরণ
উপকরণের নাম | পরিমাণ | ছবি |
---|---|---|
চ্যাপা | ৭টি | |
কাঁঠালের বিচি | পরিমান মত | |
পিঁয়াজ | ৫-৬ টা | |
রসুন | ৩-৪ টা | |
কাঁচামরিচ | ১০-১২ টা | |
লবন | পরিমান মত |
[বি.দ্র]- আপনি চাইলে বেশি করে বানানোর জন্য উপাদান গুলোর পরিমাণ বাড়িয়ে বানাতে পারবেন।ঝাল বেশী খেতে পছন্দ করলে কাঁচামরিচের পরিমান বাড়িয়ে দিবেন।
ধাপ-০১
প্রথমেই আমি কিছু চ্যাপা ফ্রিজ থেকে নামিয়ে পানিতে ভিজিয়ে রাখি। তারপর সেগুলোকে হালকা হাতে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিই। এটি পরিস্কার করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন গলে না যায়। খুব বেশি চাপ দিয়ে এগুলো পরিষ্কার করা যাবে না।
ধাপ-০২
এই ধাপে আমি কয়েকটি পিঁয়াজ নিয়ে তারপর ভালো করে ধুয়ে চারকোনা করে কেটে নেই। এই পিঁয়াজগুলো কাটার নিয়ম একটু আলাদা। গতানুগতিকভাবে লম্বালম্বি ভাবে পিঁয়াজ কাটলে এটি দেখতে তেমন সুন্দর দেখা যায় না। কিংবা যুগ যুগ ধরে গৃহিনীরা এভাবে পেঁয়াজ কেটে চ্যাপা ভর্তা করে থাকে বলেই হয়তো এভাবে কাটতে হয়।
ধাপ-০৩
এই ধাপে কিছু রসুন খোসা ছাড়িয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে পানি ধরে রাখতে হবে। রসুনের সাথে কিছু কাঁচামরিচ ধুয়ে রাখতে হবে। রসুনগুলো কাটার কোন প্রয়োজন নেই শুধুমাত্র খোসা ছাড়িয়ে রাখলেই হবে।
ধাপ-০৪
এবার অল্প পরিমাণে কাঁঠালের বিচি কোন একটি ফ্রাই প্যানে নিয়ে ভালো করে ভেজে নিন। অল্প তাপে ১০ থেকে ১৫ মিনিট বাজার পরে কাঁঠালের বিচি গুলো প্রস্তত করা হয়ে যাবে এবং সেগুলো থেকে সাদা খোসা ফেলে দিতে হবে। নীচে আমি এর ছবি শেয়ার করেছি।
ধাপ-০৫
কড়াই এর মধ্যে একটি ফ্রাইপেন বসিয়ে তা গরম করে নেই। কড়াইতে হালকা গরম হলে তাতে আমি আগে থেকে কেটে রাখা রসুন এবং আস্ত কাঁচা মরিচ গুলো দিয়ে দেই। তাপ কম রেখে হালকা করে ভাজতে থাকি। ভাজতে ভাজতে যখন রসুনগুলো প্রায় পুড়ে যাবার মত অবস্থা হয়ে যাবে তখন চুলার তাপ কমিয়ে দিয়ে সেগুলো চুলা থেকে নামিয়ে ফেলি । রসুন নামানোর পর কেটে রাখা পেঁয়াজ কুচিগুলো আবার চুলার কড়াইয়ে মধ্যে দিয়ে দেই। পেঁয়াজ গুলো আমি তেল ছাড়া ভালো করে ভেজে নিই।মনে রাখতে হবে এই পুরো রেসিপিটিতে কোনরকম তেলের ব্যবহার করা হবে না ।
ধাপ-০৬
এবার আমি ধুয়ে দেখা চ্যাপাগুলো একটি গরম ফ্রাইপ্যানে দিই এবং হালকা তাপে ভাজতে থাকি।ভাজার সময় খেয়াল রাখবেন তেল দেওয়া যাবে না। তেল ছাড়াই ভাজতে হবে। অল্প কিছুক্ষণ ভাজার পর দেখা যাবে চ্যাপাগুলো একদম ভেঙ্গে গেছে। ফ্রাইপ্যানটিতেই এক প্রকার ভর্তার মত হয়ে যাবে চ্যাপাগুলো।
ধাপ-০৭
আমি আগেই বলেছি এটি একটি ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতে রান্না। তাই এটি রান্না করতে হতে জুড়াই কিছু সামগ্রীর প্রয়োজন যার অন্যতম হলো শিল পাটা। এখন সবগুলো ভাজা বা পুড়ানো উপাদান গুলো এই শিল্পাটাই এক এক করে বেটে নিতে হবে। আমি প্রথমেই এখানে কাঁঠালের বিচি গুলো বেটে নিই।
ধাপ-০৮
এই ধাপে আমি ভেজে রাখা কাঁচা মরিচ এবং লবন শিলপাটার সাহায্যে বেটে নিই। ছবিতে আপনারা টা স্পষ্ট দেখতে পারছেন।
ধাপ-০৯
এখন আমি তেল ছাড়া ভেজে রাখা রসুনের কোয়া বেটে নিই। এরপর ভেজে রাখা পেঁয়াজ গুলো ভালো করে বেটে নেই। আপনারা ছবিটা দেখলে বুঝতে পারবেন কত সুন্দর দেখা যাচ্ছে এখনই।
শেষ -ধাপ
শেষ ধাপে আমি ভেজে রাখা চ্যাপাগুলো আবার নতুন করে শিল পাটায় বেটে নিই।ভালো করে বাটার পর সবগুলো উপাদান একসাথে হাত দিয়ে মাখিয়ে নিই।
পরিবেশন
তারপর একটি ছোট বাটিতে ভর্তাটি সুন্দর করে রাখি।আপনারা চাইলে এখন ভর্তার উপরে কাঁচামরিচ দিতে পারেন। এটি কেবলমাত্র দেখার সৌন্দর্যের জন্য করা।
এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য আমি আমন্ত্রণ জানাচ্ছি
@dove11
@jannatmou
@eliany
ডিভাইস | স্যামসাং গ্যালাক্সি এ-১২ |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @pea07 |
লোকেশন | JJHH+X6 Dinajpur |
ওয়াও অসাধারণ একটি বিষয় নিয়ে আমাদের সামনে পোস্ট শেয়ার করেছেন। অনেক রেসিপি দেখেছি শুটকির তবে আজকে প্রথম দেখলাম কাঁঠালের বিচির সাথে শুটকি মাছের ভর্তা। আপু রেসিপি টা দেখে মনে হচ্ছে খেতে বেশ মজা হয়েছে। আমি কালকে আম্মুকে বলবো এই ভর্তা করে দিতে কারণ আমাদের বাড়িতে সব উপকরণ রয়েছে। ধন্যবাদ আপু সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
টুইটার শেয়ার লিংক
শুটকি মাছের ভর্তা আমার ভীষণ পছন্দের।তবে কাঁঠালের বিচি দিয়ে শুটকি মাছের ভর্তা আমি কখনো খাইনি।আপনি শুটকি মাছের ভর্তা রেসিপিটি খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন। আপনার রেসিপিটি দেখে আমিও বাসায় কাঠালের বিচি দিয়ে শুটকি মাছের ভর্তা করার চেষ্টা করব। আপনাকে প্রতিযোগিতার শুভকামনা রইল আপু।
আপু আমি শুঁটকি মাছের ভর্তা বানাই নি। চ্যাপার ভর্তা বানিয়েছি। এটাকে হয় চ্যাপা শুঁটকি বা শুধু চ্যাপা বলা হয়। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে আপু।❣️
আপনার বাড়ি ময়মনসিংহ সেটা আজ প্রথম জানলাম। ঐতিহ্যবাহী চ্যাপা শুটকির ভর্তা আমার অনেক প্রিয়। ময়মনসিংহ থেকে চ্যাপা মাছ এনে বাসায় আমি রেখে দিয়েছি, মাঝে মাঝে ভর্তা বানানো হয়। সুন্দর একটি রেসিপি শেয়ার করেছেন। অসংখ্য ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ আপনাকে। হ্যা, আমি ময়মনসিংহের মানুষ।
চ্যাপার ভর্তা রেসিপিটি আপনি অনেক সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন। আপনার পোষ্টের মাধ্যমে আপনার এলাকার ঐতিহ্যবাহী খাবারটি সম্পর্কে জানতে পারলাম। আমাদের এলাকায় এভাবে শুটকির ভর্তা করা হয় কিন্তু তাতে কাঁঠালের বীজ দেওয়া হয় না।কাঁঠাল বীজের আলাদা ভর্তা বানানো হয়।ধন্যবাদ আপনাকে শেয়ার করার জন্য।
অনেক ধন্যবাদ আপু এই মন্তব্যটির জন্য।
খুব সুন্দর একটি রেসিপি শেয়ার করেছেন আপনি। ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী চ্যাপার শুঁটকির ভর্তার রেসিপি দারুণভাবে উপস্থাপন করেছেন। আপনার রেসিপি দেখে খেতে ইচ্ছে করতেছে দারুন একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন ধন্যবাদ আপনাকে আপু।
অনেক সুন্দর একটি রেসিপি আপু, চ্যাপা শুঁটকি কখনো খাওয়া হয়নি তবে আপনার আলোচনা দেখে খাওয়ার খুব ইচ্ছে জাগলো, এছাড়াও আপনি অনেক সুন্দর করে প্রতিটি ধাপ উপস্থাপনা করেছেন, শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।
প্রথমে আপনার জন্য অনেক শুভকামনা রইল আপু। আপনি বরাবরই অসাধারণ পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করেন। আজকের পোস্টটি ও এর ব্যতিক্রম নয়। যদিও আজকের পোষ্টের এই চ্যাপা মাছের ভর্তা কোনদিনও খাইনি। তবে মনে হচ্ছে এটি বেশ মজাদার। ধন্যবাদ আপু আপনাকে এত সুন্দর সুন্দর পোস্ট আমাদেরকে উপহার দেওয়ার জন্য।
Sounds and smells like a tasty dish but I have stopped all nonveg for a long time. Invite me when you cook something vegetarian 😄
Oppsss, ok, I'll cook some veg for you soon and let you know. If you can come here to visit you can get the taste otherwise just have to look at the pictures.haha
You never know, I can always come crossing the border if there is something delicious, visa or no visa. I can speak a little bit of Bengali so they will never know. Aapni Kemon Accho?
Ooh Wow! Your Bangali is too good. Okay wait for my nest veg recipe, then we will discussion again about how to cross the border.🙂
Nah
No
I don't eat anything from the nest either.
Its next recipe. Typing mistake😥
চ্যাপা শুটকি ভর্তা আমি বেশ কয়েকবার খেয়েছি। আমার কাছে খেতে অনেক ভালো লাগে। রেসিপি তৈরীর সবগুলো ধাপ অসাধারণ ভাবে তুলে ধরেছেন। বাসায় একদিন তৈরি করার চেষ্টা করব।ফটোগ্রাফি গুলো চমৎকার হয়েছে। শুভকামনা রইল