এক অসহায় বাবার গল্প
আমার প্রিয় বাংলা ব্লগের বন্ধুরা আপনারা সবাই কেমন আছেন ?আশা করছি সবাই সুস্থ আছেন, ভালো আছেন।আমিও আল্লাহর রহমতে মোটামুটি ভাল আছি।
বন্ধুরা আজ আমি আপনাদের সামনে আবারো হাজির হয়েছি নতুন একটি ব্লগ নিয়ে। আজ আমি আপনাদের সঙ্গে একটি ভিন্ন ধরনের গল্প শেয়ার করব। আশা করছি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তাহলে শুরু করছি আমার আজকের ব্লগ। |
---|
এক অসহায় বাবার গল্প
সৃষ্টিকর্তা বাবা দের কে তৈরি করেছেন মহান ও উদার করে। বাবাদের মন যেন আকাশের মত অসীম ও সমুদ্রের মতো গভীর ।এই বাবাদের সঙ্গে আর কারোর তুলনা হয় না ।প্রতিটি মানুষের জীবনে বাবা যেন এক উদার বটবৃক্ষের মত। যার ছায়া তলে মানুষ নিশ্চিন্তে থাকে। সেই বাবার ছায়া যখন মানুষের উপর থেকে উঠে যায়, তখন সেই মানুষটি যেন অনেক বেশি অসহায় হয়ে পরে।
এই বাবাদেরও যে একটি জীবন আছে এবং তারাও যে কতটা অসহায় হতে পারে, সেরকমই একটি গল্প আজ আমি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব। আশা করছি আপনাদের ভালো লাগবে।
দু দিন আগে আমাদের বাসায় পানির লাইনের কাজের জন্য একজন পানির মিস্ত্রিকে খবর দেওয়া হয়েছিল। সেই পানির মিস্ত্রি তার সঙ্গে আরও একজনকে এনেছিল তার কাজের যোগাল দেবার জন্য ।তারা সারাদিন কাজ করল। যথারীতি কাজ করে তাদের পারিশ্রমিক নিয়ে তারা চলে গেল। কিন্তু তার পরদিন দেখলাম ওই পানির মিস্ত্রির সঙ্গের যোগালদারটি আবার এসেছে। সে কলিংবেল বাজাচ্ছে। তারপর দরজা খুলে তাকে ভেতরে আসতে বললাম। ভেতরে এসে লোকটি আমার মায়ের সঙ্গে কথা বলতে চাইলো। তারপর আমার মা তার সঙ্গে কথা বলতে থাকেন আমিও পাশে দাঁড়িয়ে।
আমার মা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন , কি ব্যাপার আজকে তো আসতে বলিনি। তখন লোকটি বলল হ্যাঁ আপনি আসতে বলেন নি ঠিক আছে, আমি নিজে থেকেই এসেছি। এই বলে লোকটি বসে পড়ল। কান্না গলায় বলতে থাকলো আমার ছেলেটি মাদ্রাসায় পড়ে। আজ তার বেতন দিতে হবে ও তার কোরআন কিনতে হবে । আজই শেষ দিন ।আমি তাদেরকে বলে এসেছি আমি কাজ করে আজকে বাকি টাকা শোধ করে দিব। কিন্তু আজ আমি কোন কাজ পাইনি । তাই আপনি আমাকে কিছু টাকা ধার দিন আমি কাজ করে আপনার টাকা শোধ দিয়ে যাব। কান্না ভেজা গলায় কথাগুলো বলছিল মাঝ বয়সি লোকটি। আমার মা তার কথাগুলো বুঝতে পারেনি ।আমি তাকে দ্বিতীয়বার কথাগুলো জিজ্ঞাসা করতে সে বুঝিয়ে বলল ।তারপর আমি তাকে বললাম আপনার কাজ করে টাকা শোধ দিতে হবে না । কত টাকা লাগবে ?আমি আপনাকে এমনিতেই দিয়ে দিব। যদিও আমার মা দিতে চেয়েছিল, আমি বলেছি না এটা আমি দিবো। এত অসহায় লাগছিল লোকটাকে দেখতে।সত্যি ভীষণ খারাপ লাগছিল আমার ।
আমাদের সমাজে কত অসহায় মানুষ রয়েছে যার খোঁজ আমরা জানিনা ।আজ এই লোকটিকে দেখে সত্যি আমার হৃদয় হুহু করে কেঁদে উঠেছিল। তারপর লোকটিকে জিজ্ঞাসা করলাম , আপনার কয় ছেলে মেয়ে ?লোকটি বলল আমার দুটি ছেলে। বড় ছেলেটি স্কুলে পড়ে, আর ছোট ছেলেটির বয়স ১১ বছর সে মাদ্রাসায় পড়ে। তারপর লোকটি বলল তার স্ত্রী মারা গিয়েছে ছোট ছেলেটির জন্মের সময় ১১ বছর আগে। লোকটি ছেলেদের মুখের দিকে তাকিয়ে আর দ্বিতীয় বিয়ে করেনি। নিজেই ছেলেকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে রান্না করে তারপর কাজে বেরিয়ে যায় ।এভাবেই তাদের সংসার চলছে। কোনদিন কাজ পায় আবার কোনদিন পায় না।
তারপর লোকটিকে টাকা দেওয়ার পর কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে লোকটি চলে গেল। আমার কাছে ভীষণ খারাপ লাগছিল ।আমাদের সমাজে কত অসহায় বাবা রয়েছে। যারা নিজের সুখের কথা চিন্তা না করে সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে নিজের জীবনটা অতিবাহিত করে। পরবর্তীতে এই সন্তানই তাকে দেখবে কিনা কে জানে? এই প্রশ্নটি থেকেই যায় মনে।
আজকের মতো এখানেই শেষ করছি ।আগামীতে আবার দেখা হবে নতুন কোন লেখা নিয়ে ।সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন ।আমার ব্লগ টি পড়ার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ফটোগ্রাফার: | @wahidasuma |
---|---|
ডিভাইস: | স্যামসাং গ্যালাক্সি এ৪০ |
🔚ধন্যবাদ🔚
@wahidasuma
আমি ওয়াহিদা সুমা।আমি 🇧🇩বাংলাদেশি🇧🇩।বাংলা আমার মাতৃভাষা।আমি বাংলায় কথা বলতে ও লিখতে ভালোবাসি।ধন্যবাদ আমার বাংলা ব্লগকে এই সুযোগটি করে দেওয়ার জন্য।
আসলেই বাবারা যেন বট বৃক্ষের মতো সন্তানের মাথার উপরে ছায়ার মত থাকে, আর যখন সন্তানের মাথার উপর থেকে এই ছায়াটি চলে যায় তখন সন্তানরা খুব অসহায় হয়ে পড়ে। এরকম বাবা আসলে আমাদের সমাজে অহরহ রয়েছে। সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়েই বিয়ে করেনা মানুষ করতে করতে জীবনটা শেষ হয়ে যায়, আর শেষ বয়সে এসে সন্তানরা সেই বাবাকে আর দেখে না। সত্যি শুনে আসলেই বুকের ভেতরটা হু হু করে ওঠল। খুব ভালো একটি কাজ করেছেন আপু লোকটিকে কোরআন শরীফ কেনার জন্য টাকাটা দিয়ে। এরকম বাবাদেরকে আসলেই সেলুট জানানো উচিত।
আমার পোস্টটি পড়ে মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে ।ভালো থাকবেন। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
আসলে আপু লোকটির কথা শুনে সত্যিই ভীষণ খারাপ লাগলো। আসলে যে কোন বাবা মায়েরা নিজেদের সন্তানের লেখাপড়ার জন্য সত্যিই সবকিছু করতে পারে। অন্য কারো দারে গিয়ে এইভাবে টাকার জন্য হাত পাতে। আপনি যে লোকটিকে টাকাগুলো দিয়েছেন এইটা দেখে ভীষণ ভালো লাগলো। তার সাথে দেখলাম লোকটির ছোট ছেলের ১১ বছর বয়স। ছেলেটির জন্মের সময়ে মা মারা গেছে। কিন্তু ছেলেদের কথা চিন্তা করে লোকটি বিয়ে করল না, এই বিষয়টি ভীষণ ভালো লাগলো। কিন্তু আপু আপনি ঠিকই বলেছেন পরবর্তীতে ছেলে লোকটিকে দেখবে কিনা এই প্রশ্নটা থেকেই যায়।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপু আমার গল্পটি পড়ে মন্তব্য করার জন্য ।সবসময় ভালো থাকবেন এবং সুন্দর মন্তব্য নিয়ে পাশে থাকবেন আশা করছি। ধন্যবাদ।
সর্বশেষ আপনার প্রশ্নের উত্তরে আমি এটাই বলতে চাই আমরা আমাদের বাবাদের এই উদারতার কথা খুব তাড়াতাড়ি ভুলে যাই, ভুলে যাই বটবৃক্ষের মতো ছায়া দানকারী বাবাকে। আপনি একদম ঠিকই বলেছেন আমাদের বাবারা হয় উদার, সমুদ্রের মতো অসীম যা আমরা সন্তানরা সময়ের পরিক্রমায় ভুলে যাই। তবে আপনাকে আমার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই এরকম একটি অসহায় মানুষের পাশে মন থেকে সহযোগিতা করার জন্য। এটা ঠিক যে পৃথিবীতে কত রকম অসহায় বাবা রয়েছেন কিন্তু আমরা যারা ভালো অবস্থানে রয়েছি তারা যদি তাদের অবস্থানে থেকে অন্তত একজন বাবাকে ওরকম সহযোগিতা করতে পারে আমি মনে করি সমস্ত পৃথিবী আরো সুন্দর হয়ে উঠবে।
আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ।এভাবেই সুন্দর মন্তব্য নিয়ে পাশে থাকবেন আশা করছি। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
বাবার ছায়া যাদের মাথার উপর আছে তারা এই পৃথিবীতে সবথেকে ভাগ্যবান। বটবৃক্ষের মত সন্তানদের আগলে রাখে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই সন্তানরাই বড় হয়ে বাবা মায়েদেরকে দূরে ঠেলে দেয়। লোকটি সন্তানদের কথা চিন্তা করে আর বিয়ে করেনি। এই সন্তানরা বড় হয়ে ওনাকে দেখবে তো? একজন বাবা কতটা অসহায় হলে সন্তানদের জন্য অন্যের কাছে হাত পাতে। খুব খারাপ লাগলো গল্পটি পড়ে।
আপনার কাছে আমার গল্পটি পড়ে ভালো লেগেছে জেনে সত্যি ভীষণ ভালো লাগলো । সবসময় ভালো থাকবেন এই কামনা রইল।
বাবা তো বাবাই, যার কোন তুলনা নেই। একটি সংসারের মূল কর্তা এবং একটি সংসারের বট বৃক্ষের ছায়া। আর এই ছায়া ছাড়া কোন সন্তানের জীবন সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে না। সন্তানের জীবনে মায়ের যেমন প্রয়োজন রয়েছে, তেমনি বাবার প্রয়োজনও অপরিসীম। আজ আপনার পোস্টে অসহায় বাবার কথা জানতে পেরে মনের ভিতরে ভীষণ কষ্ট অনুভব করছি। অসহায় বাবা তার সন্তানদের ভালোভাবে মানুষ করার জন্য দ্বিতীয় বিয়ে পর্যন্ত করেনি। এই মহান অসহায় বাবাকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে অনেক অনেক শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। খুব সুন্দর একটি পোস্ট, এক অসহায় বাবার গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
সময় নিয়ে আমার পোস্টটি পড়ে মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ।এভাবেই মন্তব্য করে পাশে থাকবেন ।আপনার জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল।
আপু আপনার বাস্তব জীবনের গল্পটা পড়ে লোকটির জন্য অনেক মায়া লাগলো। কতটা অসহায় হলে এভাবে কেঁদে কেঁদে টাকা ধার চাই। ছোট ছেলেটির জন্মের সময় ১১ বছর আগে তার স্ত্রী মারা যায়। ছোট থেকে কত কষ্ট করে ছেলে গুলোকে বড় করতেছে, পড়া শোনা করাচ্ছে। আপনাকে নিয়ে গর্ব হয়। আপনার জায়গায় আমি হলে আমিও সেইম কাজটি করতাম। ধন্যবাদ আপু।
যদিও আমাদের সমাজে এরকম অসংখ্য মানুষ রয়েছে , তাদের জন্য খুব বেশি কিছু করতে পারি না ।ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য ।ভালো থাকবেন।
আপু আমরা অনেক সময় মনে করি শুধু মায়েরাই বুঝি কষ্ট করে। কিন্তু একজন বাবা মায়ের থেকে কোনো অংশে কম নয়। একজন বাবাই পুরো পরিবারকে আগলিয়ে রাখে। যাই হোক আপনার এই পোস্ট পড়ে লোকটির জন্য অনেক খারাপ লেগেছে। আপনি সেই অসহায় লোকটিকে টাকা দিয়েছেন জেনে ভালো লাগলো। তার বউ মারা যাওয়ার পর মনে হয় ছেলে মেয়েদের মুখের দিকে তাকিয়ে সে বিয়ে করেনি। দোয়া করি যাদের বাবা বেচে আছে আল্লাহ যেন সবার বাবাকে সুস্থ রাখেন। অসাধারণ একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু আমার পোস্টটি পড়ে গঠনমূলক মন্তব্য করার জন্য । সবসময় ভালো থাকবেন এই শুভকামনা রইল ।