শৈশব স্মৃতি|| বাবার সঙ্গে বাজারে যেয়ে হারিয়ে যাওয়া

in আমার বাংলা ব্লগ9 months ago

আসসালামু আলাইকুম


আমার প্রিয় বাংলা ব্লগের বন্ধুরা আপনারা সবাই কেমন আছেন ?আশা করছি সবাই সুস্থ আছেন, ভালো আছেন।আমিও আল্লাহর রহমতে মোটামুটি ভাল আছি।



বন্ধুরা আজ আমি আপনাদের সামনে আমার শৈশবের কিছু স্মৃতি নিয়ে হাজির হয়েছি । আসলে প্রতিটা মানুষের জীবনেই শৈশব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।প্রতিটা মানুষই আমার মনে হয় শৈশবে বেশ আনন্দঘন সময় কাটায় । পরবর্তীতে যখন সে তার শৈশব কে হারিয়ে ফেলে তখন শত চেষ্টা করেও আর শৈশব ফিরে পাওয়া সম্ভব হয় না। কিন্তু শৈশবের সেই আনন্দঘন মুহূর্ত প্রতিটা মানুষের জীবনেই স্মরণীয় হয়ে থাকে, যা পুনরায় মনে করতেও ভীষণ ভালো লাগে । আজ আমি আমার শৈশবের মধুর স্মৃতির কিছু অংশ আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব । আশা করছি আপনাদের ভালো লাগবে।


dad-1853657_1280.jpg

source

বাবার সঙ্গে বাজারে যেয়ে হারিয়ে যাওয়া


আজ আমি আপনাদের সঙ্গে যে ঘটনাটি শেয়ার করব সেটি আমার বাবার সঙ্গে আমার একটি ঘটনা। আসলে বাবার সঙ্গে কাটানো কোন মুহূর্ত শেয়ার করাটা আমার জন্য এখন অনেক বেশি কষ্টের। কেননা বাবার কোন কিছু মনে করলেই বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠে ।চোখের পানি ধরে রাখতে পারি না। আজ কতদিন হয়ে গিয়েছে আমার বাবা আমাদেরকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন ।আশা করি তিনি পরপারে বেশ ভালোই আছেন।এখন মূল ঘটনায় চলে যাচ্ছি।


তখন আমার বয়স আট কি নয় বছর হবে।আমি আমার বাবার সঙ্গে বাজারে গিয়েছি। আসলে ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে প্রায়ই বাজারে যাওয়া হতো। বাবার সঙ্গে বাজারে যেতে বেশ ভালো লাগতো । তাই আমি মাঝেমধ্যেই আব্বুর সঙ্গে বাজারে যেতাম। সেবারও তেমনি আব্বুর সঙ্গে বাজারে গিয়েছিলাম। আমাদের বাসা থেকে বাজার খুব একটা দূরে ছিল না ।আবার একেবারে কাছেও ছিল না ।সেটি ছিল স্টেশন বাজার। রেল স্টেশনের পাশে ছিল বাজারটি। রেললাইন ধরে বাজারে যাওয়া যেত ,আবার মেইন রাস্তা দিয়েও যাওয়া যেত। তবে আমরা সেবার রেল রাস্তা ধরে বাজারে গিয়েছিলাম।


তো বাজারে যাবার পর আব্বু কিছু কেনাকাটা করল। আমিও সঙ্গে সঙ্গে হাঁটলাম। এভাবে বেশ কিছু কেনাকাটা করার পর আব্বু একটি মাংসের দোকানে গেল ।তখন কসাই মাংস কাটছিল। তখন আমি এক ভাবে মাংস কাটা দেখছিলাম ।এভাবে কত সময় যে মাংস কাটা দেখেছি আমার মনে নেই। হঠাৎ আমার মনে হল আমি তো দীর্ঘ সময় ধরে মাংস কাটা দেখছি ,এই ভেবে পাশে আব্বুর দিকে তাকালাম। তাকিয়ে দেখি আব্বু আমার পাশে নেই ।তখন তো আমার পায়ের নিচের মাটি সরে গেল। ভয়ে কান্না করে দেবো এমন একটা অবস্থা। তখন আমি বাজারের মধ্যে আব্বুকে খুঁজতে শুরু করে দিলাম ।বেশ কিছু সময় এভাবে খুঁজতে লাগলাম।


আব্বুকে খুঁজতে খুঁজতে অনেকটা সময় পার হয়ে গেল । তবুও আব্বুকে খুঁজে পেলাম না । তখন কান্না করেছি কি কান্না করিনি সেটা আমার ভালো মনে নেই ।তার পরে হঠাৎ আমার মাথায় চিন্তা এল আমি মনে হয় আমার বাসা চিনতে পারবো ।আর কত সময় আব্বুকে খুঁজবো । এখন বাসার দিকে চলে যাই। আব্বু মনে হয় বাসায় চলে গিয়েছে । এই চিন্তা থেকে আমি বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। হাঁটতে হাঁটতে একটা সময় আমি আমার বাসায় এসে পৌছালাম। তখন আম্মা দেখল যে আমি একা। তখন আম্মা একটু অবাক হলো জিজ্ঞাসা করল আব্বু কোথায় ?তখন আমি বললাম আমি বাজারে আব্বুকে হারিয়ে ফেলেছি ,তাই আমি একা চলে এসেছি।


তখন আম্মা তো বেশ চিন্তায় পড়ে গেলেন ।আব্বু নিশ্চয়ই বাজারে মনে হয় আমাকে খুঁজছে ভাবতে লাগলেন। তখন আম্মা তাড়াতাড়ি আমার বড় বোনদেরকে বাজারে যেতে বললেন আব্বুকে খোঁজার জন্য। তারা বাসা থেকে বের হয়েই আব্বুকে রাস্তায় পেয়ে যায় । আব্বু অনেক খোঁজাখুঁজি করে আমাকে না পেয়ে বাসায় চলে এসেছে এটা দেখতে যে আমি বাসায় চলে এসেছি কিনা। তবে বাসায় এসে আমাকে ঠিকই পেয়েছে।তারপর বেশ স্বস্তি পেয়েছি। আর বলছিল আমি কত খুঁজেছি তোমাকে। সেবার অবশ্য আমাকে অনেক বকাঝকা করা হয়েছিল। সেই হারিয়ে যাওয়ার স্মৃতিটুকু আজও আমার মনে আছে। তবে এখন আমি আমার আব্বুকে চিরতরে হারিয়ে ফেলেছি।শত চেষ্টা করেও খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়।আল্লাহ যেন আব্বুকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন।


আজকের মতো এখানেই শেষ করছি ।আগামীতে আবার দেখা হবে নতুন কোন লেখা নিয়ে ।সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন ।আমার ব্লগ টি পড়ার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

ফটোগ্রাফার:@wahidasuma
ডিভাইস:স্যামসাং গ্যালাক্সি এ৪০

🔚ধন্যবাদ🔚

@wahidasuma

আমি ওয়াহিদা সুমা।আমি একজন হাউজ ওয়াইফ। সমাজবিজ্ঞানে অনার্স মাস্টার্স করেছি।ঘুরে বেড়াতে , ঘুমাতে এবং গান শুনতে আমি ভীষন পছন্দ করি।বাগান করা আমার শখ।এছাড়াও আর্ট , বিভিন্ন রেসিপি ট্রাই করতেও ভালো লাগে। আমি 🇧🇩বাংলাদেশি🇧🇩।বাংলা আমার মাতৃভাষা।আমি বাংলায় কথা বলতে ও লিখতে ভালোবাসি।ধন্যবাদ আমার বাংলা ব্লগকে এই সুযোগটি করে দেওয়ার জন্য।

VOTE@bangla.witness as witness witness_proxy_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_vote.png

logo.gif

Sort:  
 9 months ago 

আপু আমিও দোয়া করি আল্লাহ যাতে আপনার আব্বুকে আল্লাহ তাআলা জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন। আপনার হারিয়ে যাওয়ার গল্পটি পড়ে আমার কাছে বেশ ভালই লেগেছে। বুদ্ধি করে বাসায় চলে এসেছেন সেটাই অনেক ভালো। তা না হলে আপনি বাজারে বসে থাকলে সবাই খোঁজাখুঁজি করতে করতে বেশ অস্থির হয়ে যেতো। ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।

 9 months ago 

অসংখ্য ধন্যবাদ আপু আপনাকে আমার পোস্টটি পড়ে মন্তব্য করার জন্য ।ভালো থাকবেন সব সময় শুভকামনা রইল।

 9 months ago 

অনেকদিন পর একটি ঘটনা জানতে পারলাম আপনার এই পোষ্টের মধ্য দিয়ে। যেখানে অতীতের হারিয়ে যাওয়ার মুহূর্ত। ঠিক এমন ঘটনা আমাদের দুই ভাইয়ের জীবনেও রয়েছে। একদিন আমরা দুই ভাই হারিয়ে গেছিলাম মাঠে। যেখানে কোন কিছু দেখার সুযোগ ছিল না। ছিলাম ছোট চারিদিকে ছিল সরিষার মাঠ। আপনি বাবার সাথে বাজারে গিয়ে হারিয়ে যাওয়ার সেই স্মৃতিটা আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন এই পড়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম।

 9 months ago 

ভাইয়া আপনার জীবনেও এরকম হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছিল জেনে জানতে পেরে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। ভালো থাকবেন।

আপু আপনার মত আমার অর্ধাঙ্গিনীর জীবনেও ঠিক এমনই হারিয়ে যাওয়ার একটি ঘটনা ঘটেছিল। সেও তার বাবার সাথে ঢাকায় গিয়ে হারিয়ে গিয়েছিল। ঠিক যেমন আপনি অবাক দৃষ্টিতে মাংস কাটা দেখছিলেন, ঠিক তেমনিভাবে আমার অর্ধাঙ্গিনীও ফুটপাতে থাকা দোকানগুলোর দিকে তাকিয়ে ছিল। আর কখন যেন তার বাবা তার হাত ছেড়ে দিয়েছিল সে মোটেও টের পায়নি। যাই হোক অবশেষে, তার বাবাই তাকে আবার খুঁজে পেয়েছিল। আপনার ঘটনাটি এবং আমার অর্ধাঙ্গিনীর ঘটনাটি প্রায় একই মনে হচ্ছে। শুধু আপনি হারিয়ে গিয়েছিলেন আপনার বাড়ির এলাকার বাজার থেকে, আর আমার অর্ধাঙ্গিনী ঢাকা থেকে। ছোটবেলার এমন স্মৃতিগুলো সত্যি স্মরণীয় হয়ে রয় যা কখনো ভোলার নয়। আপু আপনার বাবা যেন পরকালে জান্নাতুল ফেরদৌস লাভ করেন আমিও এই কামনাই করছি।

 9 months ago 

ভাইয়া আমি তো কাছেই হারিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু ভাবি ঢাকা শহরে হারিয়ে গিয়েছিল সেটা তো খুবই চিন্তার বিষয়। শেষমেষ যে খুঁজে পেয়েছে এটাই অনেক বড় ব্যাপার। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

 9 months ago 

আসলে ছোট অবস্থায় বাবার সাথে বাজারে গেলে এমন ঘটনা অনেকেরই হয়ে থাকে। আর এসব ঘটনাগুলোই আমাদের জীবনে স্মরণীয় স্মৃতি হয়ে থাকে। দারুন একটি শৈশবের স্মৃতি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

 9 months ago 

হ্যাঁ ভাই এই ধরনের স্মৃতি গুলো আসলে কখনো ভোলা যায় না ।সব সময় মনে থাকে। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

 9 months ago 

আপু, এরপর থেকে আব্বুর জন্য বুকের ভেতর মোচড় দিলে জায়নামাজটা নিয়ে বসে পড়বেন আর আপনার আব্বুর জন্য মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করবেন। দেখবেন ভালো লাগবে। অবশ্যই আপনার আব্বু মহান সৃষ্টিকর্তার নিকট খুব ই ভালো আছেন। ভালোবাসা নিবেন আপু ❤️

Posted using SteemPro Mobile

 9 months ago (edited)

অসংখ্য ধন্যবাদ আপু এত সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য। সব সময় ভালো থাকবেন এই শুভকামনা রইল।🥰🥰🥰

 9 months ago 

ছোটবেলার এই ঘটনার কথা আমার মনে নাই তবে ছোট বেলায় আসলে অনেক স্মৃতি রয়েছে আব্বুর সাথে যেটা কখনো ভোলা যায় না মনে পড়লে সত্যি বুকের ভেতরটা কেমন যেন করে ওঠে । আপনার পোস্টটি পড়ে তো আমার কেমন ফিল হয়েছে তা বলে বোঝাতে পারবো না এ ধরনের অনুভূতিগুলো আসলে আমরা ছাড়া দুনিয়ার কেউ বুঝতে পারবে না । আল্লাহ যেন আব্বুকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসিব করে সবসময় এই কামনাই করছি ।

 9 months ago 

আসলে আপু আপনি ঠিকই বলেছেন এই যন্ত্রনা শুধু আমাদের একার ।এই অনুভূতি শুধু আমরাই বুঝতে পারি ।ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

 9 months ago 

আব্বুর কোন স্মৃতি মনে পড়লে আসলেই কি যে কষ্ট লাগে বলে বোঝানো সম্ভব নয়। আপনি তো বকা খাওয়ার মতনই কাজ করেছিলেন। একা একাই বাসায় চলে এসেছিলেন। একদিক দিয়ে আবার ভালোই হয়েছিল বাজারে হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ও ছিল। আগেকার দিনে জন্যই বিষয়টা সেফ ছিল। এখনকার দিনে তো এমন জিনিস চিন্তাই করা যায় না। যাইহোক আপু ভালো লাগলো আপনার ছোটবেলার স্মৃতি পড়ে।

 9 months ago 

আসলে এখনকার দিনে একবার হারিয়ে গেলে তাকে আর খুঁজে পাওয়া মুশকিল ।আগের দিন ছিল বিধায় কোন সমস্যা হয়নি। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.21
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 66895.91
ETH 3499.24
USDT 1.00
SBD 2.89