(ডার্ক থ্রিলার ) ব্লাডি নেমেসিস | সে আসছ ... - দশম পর্ব ( 10% For @shy-fox )

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

10.png
image source

ব্লাডি নেমেসিস - দশম পর্ব

নবম পর্বের লিঙ্ক source

*************


রাহুল ও অঙ্কিতাকে গাড়ি থেকে নেমে আসতে দেখেই, হাসিমুখে এগিয়ে আসেন লজের ম্যানেজার তথা কেয়ারটেকার সুবোধ বাবু। নমস্কার জানিয়ে, অভিবাদন করেন নবদম্পতীকে। এই সুবোধ দাস ভদ্রলোক টি দক্ষিণ বঙ্গের বাঙ্গালী গৃহস্ত ঘরের সন্তান হলেও, কালের ফেরে ঘুরতে ঘুরতে আজ উত্তর বঙ্গের এই দার্জিলিঙে জেলার একান্ত অনুগত নিবাসী হয়ে উঠেছেন।

মূল দার্জিলিং শহরের সীমানার থেকে কয়েকশো মিটার আগে অবস্থিত এই সরকারী ফরেস্ট বাংলোর এই নির্জন শান্ত তথা সবুজ বনানীয় স্নেহ ছায়া বেস্টিত পাহাড়ি অঞ্চলের এই মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে, সরকারি ফরেস্ট বাংলো কাম ট্যুরিস্ট লজে চাকরি নিয়ে স্থায়ী হন। এই সরকারি টুরিস্ট বাংলোটি বছরের এই সময়টায় প্রায় ফাঁকাই থাকে।

রাহুলের বাবা উচ্চ-পদস্থ ফরেস্ট অফিসার হবার সুবাদে খুব সহজেই, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঢাকা এই সরকারি ফরেস্ট বাংলোটিতে ছুটি কাটাতে আসার ব্যাবস্থা হয়ে যায় তাদের। সুবোধ বাবু ও তার তত্ত্বাবধানে কাজ করা বাংলোর চাকর বাকর দের আচরণেও যেন এই নবদম্পতিকে ঘিরে একটু বিশেষ দেখভাল করার প্রবণতা চোখে পড়ল। যদিও এর কারন আর কিছুই না। রাহুল হল গিয়ে তাদের কলকাতার বড় অফিসারবাবুর ছেলে। বিয়ে থা এর পর প্রথমবার স্ত্রী কে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছে। এদের ঠিকঠাক পরিসেবা দিয়ে খুশি করতে পারলে পদোন্নতি, মাইনে বৃদ্ধি এমন অনেক ভালো জিনিসই ঘটতে পারে। তাই এই বিশেষ উৎসাহ।

পরিচয় আদান প্রদানের পর, এই সুবোধ বাবু এবার তার সাথে আসা চাকরটিকে, বাবুদের লাগেজ বাবুদের জন্য নির্দিষ্ট ঘরে গুছিয়ে রেখে আসার নির্দেশ দিলেন, একজন স্থানীয় নেপালি ছোকড়া এসে অঙ্কিতাদের ব্যাগপত্র, সাবধানে মাথায় সাজিয়ে অবিলম্বে বাংলোর ভেতরে প্রস্থান করল।

অঙ্কিতাদের যদিও সেদিকে মোটেই খেয়াল ছিল না। না থাকাটাই স্বাভাবিক। তারা এই রোমান্টিক আবহে, আবেগে অভিভূত হয়ে, অপলক দৃষ্টিতে উপভোগ করছিল এই শৈল শহর দার্জিলিঙের প্রায় কোলের কাছে অবস্থিত, গাঢ় হরিদ বর্ণাশ্রীতা কিশলয় সমুহ। যার সবুজাভ ছায়ায় ঘেরা, এই অসাধারণ সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ । সমগ্র সবুজাভ বনানী প্রকৃতি যেন কোন এক মিহি কুঁয়াশার চাদরে ঢাকা। যেন কোন প্রাচীন অজ্ঞাত অরণ্য নিবাসীনি তার ধূলা মলীন অঙ্গ বস্ত্র দ্বারা আচ্ছাদিত করে রেখেছে তার রাজকীয় সৌন্দর্যে সজ্জিত প্রাণবতী মুখাবয়ব ।

সত্যিই কি আচ্ছাদিতই রেখেছে ? হয়ত না। হয়ত বলা শ্রেয় হবে এই যে, সদা বাৎসল্যময়ী প্রকৃতি মাতা তার বনানির গভীরতায় সস্নেহে লালিত পালিত প্রাচীন বন্য-পাশবিক উদ্দামতাকে, পরম স্নেহে নিজস্ব স্বগুন সত্বায় ধারন করে রেখেছেন। তাদের সংযত করে রেখেছেন। সেই অজ্ঞাত বন্য পাশবিকতায় পরিপূর্ণ, নারকীয় ক্রোধন্মোত্ততায় উন্মাদ সেই ভয়াল বিভীষিকা নিয়তির কোন অমোঘ আকর্ষনে বন্ধন মুক্ত হলে...বা
কোন কারনে.. এই মানব শরীরের লোহিত প্রাণ রসের আস্বাদ পেলে। সে স্থানে নিয়তির রক্ত চরিত্র পুনরাবর্তন প্রক্রিয়ার মহা প্রারম্ভ ঘটে। মৃত্যুর আদিম নৃশংসতার কালরাত্রি যেন নেমে আসে পৃথিবীর বুকে এই স্থানে।

সুবোধ বাবু এবার রাহুলদের নিয়ে বাংলোর ভেতরে পথে যেতে যেতে তাদের সাথে এই স্থানের সুবৈশিষ্ট্য, বিশুদ্ধ জল বায়ু সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে চলল এক নাগাড়ে। রাহুলদের ঘরটা দোতালায়। সুবোধ বাবু তাদের সেদিকেই নিয়ে গেলেন। তারপর ঘরের সামনে গিয়ে চাবিটা তাদের হাতে দিয়ে হাসিমুখে অভিবাদনের সুরে বলল " এবার এখন এটা আপনাদের প্রপার্টি স্যার, ঘরে খাবার-দাবার কোন কিছুর প্রয়োজন হলে, টেলিফোনে অর্ডার দিয়ে দেবেন। পৌছে যাবে। এখন রেস্ট নিন, আমি আপনাদের খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি, কেমন? চলি স্যার।" বলে হাসি মুখে প্রস্থান করলেন

ঘরের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে, চারপাশটা দেখেই ভীষণ পছন্দ হয়ে গেল অঙ্কিতার। রাহুলের মুখ দেখেও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, তারও এই ঘর খানা বেশ ভালোই লেগেছে। ঘরের পূর্ব দিকে রয়েছে একটি পেল্লায় স্বচ্ছ কাচের জানালা। জানলাটি দুটো সুন্দর পর্দা দিয়ে ঢাকা। রাহুল গিয়ে জানালার কাপড়টা এক টানে দুদিকে সরিয়ে দিতেই, সূর্যের সোনালী মিস্টি রোদ এসে সমস্ত ঘরটাকে যেন ধুইয়ে দিয়ে গেল।

অঙ্কিতা সৌন্দর্য চকিত দৃষ্টিতে মুগ্ধ নয়নে ধীরে ধীরে জানালার দিকে এগিয়ে গেল। জানালার ধারে সূর্য স্নান সিক্ত রাহুলের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে তার হাত টা জড়িয়ে ধরল। যৌবনের এই নৈমিষারণ্যে দাঁড়িয়ে, অপরুপা প্রকৃতির, মনোহারিণী সৌন্দর্য প্রত্যক্ষ করার মধ্যে যেই পূর্ণতার আস্বাদ রয়েছে, তা কেবল যৌবনকালের গনগনে দ্বিপ্রহরেই উপভোগ করা যায়। এবং তারা সেটাই করছে।

অঙ্কিতাকে এমন ঘনিষ্ঠ ভাবে তার হাতটা জড়িয়ে ধরতে দেখে রাহুল অঙ্কিতার হাতটা নিজের হাতে নিয়ে, ঘনিষ্ঠ ভাবে অঙ্কিতার পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়। তারপর প্রেম ঘনিষ্ঠ ভঙ্গিমায় পেছন থেকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে অঙ্কিতাকে। অঙ্কিতার ভারি ভালো লাগে এই মুহুর্তটা। রাহুলের বুকে হেলান দিয়ে, পরম যত্নে রাহুলের হাত জড়িয়ে ধরে। মিস্টি রৌদ্রজ্বল সকালের কোমল রোদ গায়ে মাখতে মাখতে প্রসন্ন মুখে, এক দৃষ্টিতে বাইরের প্রকৃতির দিকে চেয়ে থাকে তারা।

বাংলোর দোতালার থেকে, চারিদিকের ফরেস্ট সহ আশে পাশের বেশ অনেকটা জায়গা , বেশ সুন্দর করেই দেখা যায়। ঘন জঙ্গল,টিলা, পাহাড় ঘেরা এই জায়গাটি দেখতে ঠিক যতটা সুন্দর। এখানে থেকে সাধারণ ভাবে জীবিকা নির্বাহ করা ঠিক ততটাই কঠিন । মিহি রৌদ্রের আলোয়, বাংলো এবং তার চারপাশটা বড্ড সুন্দর দেখালেও, বেশ কিছুটা দুরেই জঙ্গলের আরো গভীরে একটা বড় টিলার পাশে, জঙ্গলের ওপর কিছুটা জায়গার ওপর, কালো মেঘ ঘনিয়ে বজ্র বিদ্যুৎ সহ, অশান্ত বৃষ্টি হয়ে চলেছে। পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষদের কাছে এসব অতি সাধারণ ব্যপার হলেও। অঙ্কিতা সেই দিকে তাকিয়ে, কি একটা ভেবে যেন শিউড়ে উঠল। মনের কোনে কোথায় কে যেন কিছু কু ডেকে উঠল। সে ভয়ে ভয়ে দুরের সেই দুর্যোগ আশ্রিত, ঘন কালো মেঘের দিকে তাকিয়ে মনে মনে স্বগতোক্তি করল " সে আসছ"।

moon-gb5e111fff_1920.jpg

image source

ক্রমশ।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.13
JST 0.027
BTC 60832.40
ETH 2912.20
BNB 525.30
SBD 2.31