(ডার্ক থ্রিলার ) ব্লাডি নেমেসিস | সময় এবং ... - নবম পর্ব ( 10% For @shy-fox )

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

9.png
image source

ব্লাডি নেমেসিস - নবম পর্ব

অস্টম পর্বের লিঙ্ক source

*************


গত পর্ব-সমূহের সংক্ষিপ্ত স্মৃতিচারণ -ঃ→

গত পর্ব গুলিতে ক্রমান্বয়ে আমরা দেখেছি যে,

'ব্লাডি নেমেসিস' গল্পের মুখ্য চরিত্র অনিন্দ্য বেশ কয়েকদিনের মনমালিন্যের পর, তার প্রেমিকা অঙ্কিতার সাথে কোন একটি নির্জন স্থানে দেখা করতে যায় এবং নৃশংস ভাবে খুন হয়। এরপর কাহিনী বেশ কিছুটা অতীতে ফিরে যায়। আমরা জানতে পারি, অনিন্দ্যর সাথে লাবণ্য নামে এক সুন্দরী সুতন্বী মেয়ের প্রেমালাপের সম্পর্কের কথা। জানতে পারি, লাবণ্যের প্রতি অনিন্দ্যর সুপ্ত গভীর কামুকতার কথা।

গল্প এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে আমরা ক্রমশ দেখতে পাই, অর্থলোভে ও যথাযথ শিক্ষার অভাবে লাবণ্যও, তার মায়েরই মত.. ক্রমশ দেহ ব্যাবসার দিকে এগোতে থাকে। এরপর আমরা দেখি যে, লাবণ্য ক্রমশ যেন আরও বেশি বেপরোয়া লাগামহীন গোছের হয়ে গেছে। এই সদ্য প্রস্ফুটিত যৌবনে উদ্দামতার নেশা ভর করেছে তার মনে প্রাণে হৃদয়ে। অর্থের প্রতি এক অপ্রতিরোধ্য লোভ গ্রাস করে তাকে। দামি উপহার ইত্যাদির চাহিদায় ও আনন্দে সে নিজেকে ক্রমশ সহজলভ্য করে তোলে শেয়াল কুকুরের বিছানায়। এসব বিষয়ে কথা বলতে ডেকে অনিন্দ্য, লাবন্যর সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করলে লাবণ্য তাকে বাঁধা দেয় এবং অনিন্দ্যকে অপমান করে। এরপরই রাগের মাথায় অনিন্দ্য লাবণ্য কে ধর্ষণ করে খুন করে।

লাবণ্যর খুন হওয়ার ঠিক তিন দিনের দিন তার অতৃপ্ত প্রেতাত্মা হানা দেয় তার খুনির ওপর প্রতিশোধ নিতে। তিল তিল করে মানসিক যন্ত্রণা দিয়ে বিপর্যস্ত করা শুরু করে অনিন্দ্যকে। এরপর অঙ্কিতাকে ব্যাবহার করে অনিন্দ্য কে কঠোরতম শাস্তি দেয় সে। এই সুত্রে আমরা প্রথম জানতে পারি যে , এই অঙ্কিতা আদতে লাবণ্যর প্রেমিকা ছিল। প্রকৃতির অলক্ষ্যে দুটি সমমেরু যেন আকর্ষণ করেছিল পরস্পরকে। অবশেষে প্রেতদেহী লাবণ্যর পাতা মিথ্যে মোহের জালে জড়িয়ে, এই রক্তাক্ত নেমেসিসের খেলার নীরব পুতুল হিসেবে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে অঙ্কিতা। সে রাহুল নামের অনিন্দ্যর এক পুরোনো প্রতিদ্বন্দ্বীর সাথে গুপ্ত প্রেমে বাঁধনে জড়ায় এবং অনিন্দ্যকে খুন করে।

এরপর এই কাহিনী ধরা দেয় বর্তমানের প্রেক্ষাপটে। শ্মশানে অনিন্দ্যর মৃতদেহ সৎকারের পর আমরা তার প্রেত কে এক আগন্তুকের সাথে কথা বলতে শুনি৷ যে নিজেকে নিয়তি হিসেবে পরিচয় দেয় এবং অতি গোপনে কিছু কথা বলে

এদিকে প্রেত লাবণ্যের মনবাঞ্চা পূর্ণ হলে সে পুনর্জন্মের পথে পা বাড়ায়, তার সৃষ্ট মোহের জাল ছিন্ন হলে অঙ্কিতা বোঝে যে সে এক বিদেহী প্রেত কে বিশ্বাস করে খুব বাজে ভাবে করে প্রতারিত হয়েছে। অঙ্কিতা হতাশ হয়ে রাহুল কে বিয়ে করে। কিন্তু শ্বশুড় বাড়িতে অঙ্কিতা অভাবনীয় অভ্যর্থনা পায়। শ্বশুড় বাড়িতে আসার প্রথম দিনই সে বুঝতে পারে তার ননদ রিমলিও তার মতই উভয়ী এবং সেই রাতেই অঙ্কিতা ও রিমলি আনন্দের জোয়ারে স্বেচ্ছায় ভেসে যায়। রাহুলের সাথে ও বেশ ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে অঙ্কিতার। এমন করেই শ্বশুড় বাড়িতে অঙ্কিতার মাস তিনেক কেটে যায়। এরকমই এক সন্ধ্যায় অঙ্কিতার হঠাৎ অনিন্দ্যর জন্য বেশ খারাপ লাগে, সে ভাবে ঈশ্বর নিশ্চয়ই তার সহায় তাই নিয়তির প্রতিশোধ তার ওপর পরেনি এবং সে সুখী আছে।)

এর পর →↓

ব্যাগটা গোছাতে গোছাতে এক মনে, এসবই সাতপাঁচ ভেবে চলেছিল অঙ্কিতা। এমন সময়ই রিমলি ঘরে এসে ঢোকে। রিমলি কে ঘরে আসতে দেখে, মুখ থেকে চিন্তার মেঘ সরে গিয়ে, হাসি ফোটে অঙ্কিতার। সে কৌতুকপূর্ণ ভঙ্গিতে বলে - " কি গো সুন্দরী? বৌদির কথা তো একটিবারের জন্যও মনে পরে না দেখছি!! আধঘন্টা আগে ডেকে ছিলাম, আর এখন আসার সময় হল তোমার..। "

রিমলি হাসতে হাসতে তার আদরের বৌদিকে জড়িয়ে ধরে বলে, "আরে আর বোলো না গো বৌদি !!! এবার কলেজ থেকে এই এত্ত গুলো অ্যাসাইনমেন্ট দিয়েছে লিখতে। সেই অ্যাসাইনমেন্ট লিখতে লিখতেই তো দেরি টা হল। ... বাট ডোন্ট ওরি! ইওর রিমলি হেয়ার ফর ইউ !! বলো কি করতে হবে? "

অঙ্কিতার চোখে দুষ্টুমি খেলা করে যায়। সে রিমলির হাত ধরে আলতো করে টেনে তাকে বিছানায় নিয়ে আসে। আবার সেই আনন্দের জোয়ারে ভেসে যায় দুটো মানবী,একসাথে।অপার আনন্দের জোয়ারে ভেসে যায় দুটি দেহ। পরস্পরের হৃৎস্পন্দন যেন নিজের শরীরে অনুভব করে তারা। রিমলি আর নিজেকে ধরে রাখে না, সে আত্মসমর্পণ করে অঙ্কিতার কাছে। নির্দ্বিধায় সামাজিকতা, ঘর-বাড়ি, হানিমুন প্ল্যান, ব্যাগ-প্যাক, শ্বশুড় বাড়ি সব ওলোট পালোট করে দিয়ে দুই তরুণী ভালোবাসায় উন্মত্ততায় লীন হয়ে যায় একে অপরের সাথে। শরীরের সেই উষ্ণতা মিশ্রিত এক অদ্ভুত মিস্টি গন্ধে হারিয়ে যায়। তারা ঠিক বুঝতে পারলনা, সত্যিই কি তারা দুটি প্রাণ ভিন্ন!!! নাকি সবটা মিশে গেছে এক দেহে। এই প্রেম ভালোবাসাই কি দুজনে খুঁজে চলেছিল তারা? এতদিন ধরে এই ভালোবাসার অভাবেই কি শুষ্ক হয়েছিল তাদের কোমল হৃদয়পট? প্রেমের জোয়ারে অবশেষে তা সিক্ত হয়েছে। তাদের সাগর সম আবেগের ঢেউ যেন আছড়ে পরে সেই পরমতৃপ্তির দোরগোড়ায়।

কিছুক্ষণ পর তৃপ্ত মুখে উঠে বিছানায় উঠে বসে দুজনেই। রিমলি জামার বোতামটা লাগাতে লাগাতে জিজ্ঞাসা করে, " কাল কটার সময় বেরোচ্ছো গো তোমরা? গোছগাছ কমপ্লিট? "

"আরে সেজন্যই তো, তোকে ডাকা। এমনি সবই হয়ে গেছে। কিন্তু কাল কোন শাড়িটা পরে বেরোবো, বেছে দে না ভাই। বিয়ের পর ফার্স্টাটাইম ওর সাথে লং ট্রিপে যাচ্ছি। কিছুতো স্পেশাল হওয়া চাই।" রিমলি অবাক হয়, তারপর দুষ্টুমির ছলে অঙ্কিতার গালে আলতো টোকা মেরে বলে " হাউ রোম্যান্টিক!!! উত্তরবঙ্গে ফরেস্টের বাংলোয় হানিমুন.. রোমান্স আর সেখানে ব্যাপারটা থেকে পুরো ওয়াইল্ড ভাইব আসছে। "

পরের দিন প্ল্যান মত ভোর ছটায় ফ্লাইটে ওঠে তারা। বেলা আট টা নাগাদ রাহুলরা এসে নামে উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি তে। এয়ারপোর্টের বাইরেই গাড়ি অপেক্ষা করছিল। ড্রাইভারটি রাহুল কে চিনতে পেরে এগিয়ে এসে সেলাম ঠোকে...

এর কিছুক্ষণ বাদে ড্রাইভার রাহুল ও অঙ্কিতাকে নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিল। চলার পথে চারিদিকে পাহাড় ও ঘন চিরহরিৎ বনানীর কিশলয় সমূহের স্নিগ্ধতায়, শুদ্ধতায় অভিভূত হয়ে যায় রাহুল ও অঙ্কিতা দুজনেই।) ঘন্টা খানেক পর গাড়িটি একটি পাঁচিল ঘেড়া বিশাল বাংলো বাড়ি কাছে বড় দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো। বড় লোহার দরজায় ইংরেজিতে লেখা
"ওয়েলকাম টু ওয়াইল্ড সিটি লজ"

ড্রাইভার হর্ণ দিতেই, গেটটা খুলে দেয় দাড়োয়ান। এবার একটি বাঁধানো মসৃণ রাস্তা দিয়ে গাড়িটা ধীরে ধীরে বাংলোর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। রাহুল ও অঙ্কিতা গাড়ি থেকে নামতেই, বাংলোর চৌকিদার কাম কেয়ারটেকার সুবোধ দাস, হাসিমুখে এগিয়ে এসে তাদের স্বাগত জানালেন। এই চৌকিদার ভদ্রলোক তার সাথে একজন চাকরও সাথে নিয়ে এসেছিলেন, তাকে ইঙ্গিত দিতেই সে এসে অঙ্কিতাদের ব্যাগপ্যাক সব নিয়ে বাংলোর ভেতরে চলল।

moon-gb5e111fff_1920.jpg
image source

ক্রমশ। (আগামী পর্বে সমাপ্তি)।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.13
JST 0.027
BTC 60872.67
ETH 2913.85
USDT 1.00
SBD 2.32