আমার সিকিম ভ্রমণ । দ্বিতীয় পর্ব । ( ১০% বেনিফিশারি প্রিয় @shy-fox ভাইকে )

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago (edited)

image.png

প্রথম পর্বের লিঙ্ক source

তো আমরা তো পৌঁছালাম নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন। পৌঁছে মনে পড়লো আপাতত জীবনে সমস্যা আপাতত তিনটে। এক - প্রকৃতির ডাক দুই - গাড়ি এবং তিন - যাবটা কোথায় ।

যায় হোক বেশ একটা দুলকি চালে স্টেশন চত্বরে ঘুরলাম খানিক্ষন, একে একে গিয়ে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে ফিরলাম। এবং তারপর চা খাওয়াটা জরুরি এটা অনুভব করলাম। এক্ষেত্রে একটা কথা মাথায় রাখা খুব জরুরি- যারা ভাবেন যে উত্তর বঙ্গ মানেই দুরন্ত লেবেলের দার্জিলিং টি পাওয়া যায় তারা সেটা ভুলেও ভাববেন না, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অখাদ্য এবং তিতকুটে চা যদি দুনিয়ার কোথাও পাওয়া যায় তাহলে সেটা নিউ জলপাইগুড়ি ষ্টেশনে। যদিও আমরা সেটাকেই এক এক জনে তিন চার কাপ করে খেলাম। চায়ের সাথে টা হিসেবেও বেশ কিছু প্রজাপতি বিস্কুট আর বিড়ি সিগরেট পুড়িয়ে ফুফফুসের বারোটা বাজিয়ে রিয়ালাইজ করলাম ঘড়িতে সকাল ৯টা। অতএব আমাদের এবার কোথায় যাব সেটা ভাবা জরুরি।

এই সময় সুমন একটি দুনিয়া কাঁপানো বক্তব্য রাখলো। পৃথিবীর ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ বানী হিসেবেও ধরা যেতে পারে সেটিকে। ভাই বলল " রাস্তা যখন আছে কোথাও না কোথাও একটা পৌঁছাব। আমাদের আগে অনেক ভাস্কো ডা গামাই এই রাস্তা দিয়ে গিয়েছে " । আহা বানী শুনেই চকাস করে একটা হামি খেতে ইচ্ছে করলো ছোকরাকে, নেহাত আধবুড়ো দামড়া তাই সে যাত্রা নিজেকেই সান্ত্বনা দিলাম থাক ভাই , এই পাপ আর নাই বা করলি।

এরপর আমরা গেলাম সোজা টাক্সি স্টান্ডের দিকে। সে এক দেখবার মত বিষয়। ট্যাক্সি গুলো লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দুপাশে আর আমরা তিন ন্যালা, প্যালা আর ক্যাবলা রাজকীয় ভঙ্গীতে বেশ একটা দুলকি চালে এগিয়ে চলেছি, যেন মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র সান্ধ্য ভ্রমনে চলেছে এরকম একটা ফিল নিয়ে এগোচ্ছি। যদিও অচিরেই আমাদের ভুল ভাংল। ট্যাক্সি কাকু, ট্যাক্সি দাদা, ট্যাক্সি ভাই ইত্যাদি হরেক ডিজাইনের লোকজন এসে ছেঁকে ধরলো আমাদের। আর সমবেত কোথায় যাবেন , কোথা থেকে আসছেন, আমিই শ্রেষ্ঠ ড্রাইভার, আমাকে ভরসা করে দেখুন ঠকবেন না, আপনি আমার বাড়ির লোক ইত্যাদি বানীতে প্রায় আমাদের অলমোস্ট পাকড়াও করেছেন তখন আমাদের মধ্যে সর্ব প্রথম বিদ্রোহটা আমিই ঘোষণা করলাম।
কাভি নেহি ! আমার এই বাজখাঁই গলায় চিঁ চিঁ করে জানালাম দাদা আমাদের গাড়ি লাগবে না। আমরা নিজেরা পদব্রজে এসেছি, সেভাবেই যাব। মাইরি বলছি সেকেন্ডের মধ্যে ভিড়টা এই ছিল থেকে এই নেই হয়ে গেল। আমরা তিনজনেই ফুল হুব্বা !

image.png

যায় হোক এই সব শিল্প শেষ করে একটা লোককে পাকড়াও করলাম। পাকড়াও না আসলে, সঙ্গে থাকা সুন্দরী বললেন এই ড্রাইভারটা দেখতে ভালো, এর গাড়িতে যাব এর সাথেই কথা বলা যাক। আমরা মাইরি আকাশ থেকে পড়ি আর কি ! একটা হাঁটু সমান কচি ছেলে, দুধ দাঁত ভাঙ্গেনি, এ চালাবে গাড়ি ! ছোঃ

পুরুষালী কন্ঠে সুমন বিদ্রোহ ঘোষণা করলো, এর থেকে তো আমরাই ভালো ড্রাইভার রে, দুম করে খাদে ফেলে দেব না। ইত্যাদি ইত্যাদি। যদিও এসব কথা সম্ভবত সেই ড্রাইভার ভাই এর কানে গিয়েছিল। বেশ একটা কেত মারা হাটার স্টাইলে সামনে এসে দাঁড়ালো। আমরাও সমবেত কন্ঠে জাতীয় সঙ্গীত গাইবার মত ভয়েস মডিউলেশনে ভাই তুমি যাবে , বাবু যাওগে এবং ও দাদা আপনি কি আমাদের ড্রাইভার হবেন একসাথে বেরিয়ে এলো।

পাঠক একটা কথা সব সময় মাথায় রাখবেন, আপনি যেই হোন না কেন, যদি সুন্দরী মহিলা ততোধিক ন্যাকামো এবং মায়াবী গলাই আপনাকে তারিফ করে আপনি নিজেকে অমিতাভ বচ্চন না হোক শাহরুখ খান তো শিওর ভাববেন।

এখানেও সেই একই জিনিষের পুনরাবৃত্তই হলো। ছেলেটি আমাদের একবার পা থেকে মাথা ওবধি মেপে নিয়ে পকেট থেকে একটা তিরঙ্গা বের করে সেটাকে সুনিপুন স্টাইলে ছিঁড়ে, দু আঙ্গুলের ফাঁক থেকে একটা জর্দার ফয়েল বের করে সেটাকেও ছিঁড়ে এক ঐশ্বরিক স্টাইলে মুখের ভেতর ফেলে পাক্কা দেড় মিনিট চোখ বন্ধ করে ফিল নিল। তারপর চোখ খুলে আমাদের আবার দেখলো। ঠিক যেভাবে সকাল বেলা মুরগী ওয়ালা তার মুরগী গুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে সেভাবেই। বাস্তবিকই আমরা তিনজন তার কাছে মুরগী ছাড়া কিছুই না। সকাল সকাল নিজে এসে ধরা দিতে চেয়েছি। যায় হোক সে ছোকরা পাক্কা নেপালী এবং রাজ বংশী ভাষা মিশিয়ে যেটা বলল তার মমার্থ হল - যাব কিন্তু ভাড়া একপইসা কম নেব না !

image.png

এইবার শুরু হলো সুন্দরীর কামাল- ভাই, বাবু, দাদা, সোনা, পুচকু ইত্যাদি অনেক রকম কেরামতি করেও যখন সুন্দরী দেখলেন এই ছোকরা বাস্তবিকই শক্ত লৌন্ডা ততক্ষনে আমাদের যা বোঝার বোঝা হয়েই গেছে। ড্রাইভার ভাইটি জানালো দিন প্রতি ৩০০০ নগদ এবং ডেইলি লিমিট ৭৫ কিলোমিটার। এর বেশি হলে কিলোমিটার পিছু ১০ টাকা। যায় হোক এই রেট আমরা আগেই জানতাম কিন্তু দিন পিছু ৩০০০ এটা বড্ড গায়ে লাগছিল। কিন্তু বিধি বাম ।

যায় হোক গাড়িতে বসতেই ছোকরা " আভি আয়া " করে কোথায় যে সটকে পড়লো পাক্কা ৩০ মিনিট তার পাত্তা পায়নি। এরপর সব যুদ্ধ শেষ করে ড্রাইভার গাড়ি স্টান্ড থেকে বের করে হাইওয়ে ধরে মহানন্দা স্যাংচুয়ারীর রাস্তা ধরলো, তখন ঘড়িতে সকাল সাড়ে দশটা।

image.png

আহা বিশ্বাস করুন, এতক্ষনের রাগ, ক্ষোভ ইত্যাদি সব নিমেষে মিটে গেল যখন পাইনের জঙ্গল গুলো ঠান্ডা একটা হাওয়ার সাথে ওয়েল কাম করলো। চোখ বন্ধ করে চুপ চাপ গাড়ির মধ্যে বসে আছি। প্রায় আধ ঘন্টা চলার পর গাড়ি এসে দাঁড়ালো সেই সন্ধিক্ষনে। একদিকে করনেশন ব্রিজ হয়ে লাটাগুড়ী হয়ে আসাম ধরেছে আর একদিকে সেবক মহাকাল মন্দির হয়ে সিকিমের দিকের রাস্তা। ড্রাইভার জিজ্ঞেস করলো রুট কি ?
এবং আমরা হুব্বা। ততক্ষণে মনে পড়েছে সুমনের দেওয়া সেই বিখ্যাত বানী- রাস্তা তো হ্যায় না ভাই, মঞ্জিল কাহি না কাহি মিলহি যায়গা । এবার শেষ করবো, এবং শেষ করার আগে একটি বিশেষ বিশেষ খবর দিয়েই রাখি, আমদের ড্রাইভার সম্পর্কে যে খারাপ ধারনাটা লাস্ট ৩ ঘন্টা ধরে তৈরি হয়েছিল সেটি কাটলো জাস্ট ৫ মিনিটের মধ্যে।

image.png

টু বি কন্টিনিউড

Sort:  
 3 years ago 

@isha.ish কেমন লাগলো জানাবেন অবশ্যই

 3 years ago 

emonv আজ সেকেন্ড এপিসোড
ভালো লাগলে খুশি হব। মতামত জানাবেন
ধন্যবাদ

 3 years ago 

আপনাদের ডাইভার সাহেবকে প্রতিদিন 75 কিলোমিটার এর পথ লিমিট করে দিয়েছিল। এর বেশি হলে প্রতি কিলোমিটারে আপনাদের কাছ থেকে 10 টাকা চার্জ করবে, 🙂। আপনাদের ভ্রমণটি অনেক লম্বা ছিল এবং অনেক দীর্ঘ স্থায়ি এমন ভ্রমণ আমি আজ করার সুযোগ পায়নি কিন্তু ইচ্ছা আছে। আপনার সিকিম ভ্রমণে আপনি দারুন সব পাহাড়ি অঞ্চল ভ্রমণ করেছেন। ধন্যবাদ ভাই আপনাকে আপনার ভ্রমণ করার কিছু মুহূর্ত আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 64252.58
ETH 3398.15
USDT 1.00
SBD 2.50