আমার সিকিম ভ্রমণ । প্রথম পর্ব । ( ১০% বেনিফিশারি প্রিয় @shy-fox ভাইকে )

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago

WhatsApp Image 2021-12-27 at 21.43.26 (1).jpeg

তো গল্পটা এইরকম -
দুর্গাপুজোর দিন পনেরো আগে কিছু কাজে মাত্র দুদিনের জন্য বাড়ি ফিরেছি। ঘড়িতে ঠিক ৫ টা বেজে ৩৫ মিনিট। আমি কাজ করছিলাম রিমোটে, একটু চা খাবার ইচ্ছে হয়েছে সেজন্য ফোনটা টেবিলেই রেখে নীচে গেছি মায়ের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করতে। এমন সময় মায়ের ফোনেই ফোনটা আসে।

WhatsApp Image 2021-12-27 at 21.38.51.jpeg

মা ফোনটা ধরে হ্যালো বলে আমার দিকে এগিয়ে দিল। আমি অবাক হয়েই মায়ের ফোনটা নিয়ে হ্যালো বলতেই চমকে উঠলাম। উল্টোদিকে আমার স্কুলের পুরোনো বান্ধবী। তার বক্তব্য হচ্ছে আমি দুদিনের জন্য বাড়ি এসে তাকে ফোন করিনি সেটার জন্য তো আমার শাস্তি হবেই এবং এই যাত্রা তাকে নাকি বিরাট সমস্যা থেকে উদ্ধার করতে হবে। বাধ্য হয়েই বললাম আমার ফোনে ফোন কর ১০ মিনিট পর। দিদিমনির দাবী হচ্ছে সময় নাই হাতে যা বলার এক্ষুনি বলে দেবে। অতএব আমিও আচ্ছা তাই বল বলে থামলাম।
যা জানা গেল তাতে আমার পিলে না চমকালেও মায়ের চীৎকার আমার কানের পর্দা ফাটিয়ে দিল। সুন্দরীর বক্তব্য হচ্ছে সে নাকি একদল বুড়ো বুড়ী নিয়ে সমাজ সেবা করবে বলে ঘুরতে যাবার প্ল্যান করেছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তারা সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ার জন্য আর ঘুরতে যাওয়া হবে না। এবং সেটা তারা আজকেই আমাকে ফোন করার মাত্র ৩০ মিনিট আগেই জানিয়েছে।
আমি ততক্ষনে যা বোঝার বুঝেই গেছি। শান্ত মাথায় জিজ্ঞেস করলাম ট্রেন কটার সময় এবং কোন স্টেশনে ? তাতে দিদি জানালেন ট্রেন অলরেডি হাওড়া থেকে ছেড়ে দিয়েছে এবং রাস্তাতেই আছে, আমাকে নাকি বর্ধমান দিয়ে চাপতে হবে। এবং ট্রেনে টোটাল ৮ টা সীট, সব গুলোই ফাঁকা যাচ্ছে, বর্ধমানে যদি সীট অকুপাই না করি সব সীট ক্যানসেল হয়ে যাবে।
আমার সিচুয়েশনটা ভাবুন একবার। তখন ধড়িতে ৫ টা বেজে ৪৫ মিনিট। আমার বাড়ি থেকে বর্ধমান মাত্র ৮০ কিলোমিটার এবং ট্রেন ঠিক সন্ধ্যে সাড়ে সাতটাই। আহা মাভৈঃ

WhatsApp Image 2021-12-27 at 21.38.51 (1).jpeg

আচ্ছা দেখছি বলে ফোনটা কাটতে যাব এমন সময় তিনি ফোনের উল্টো দিকে প্রায় কাঁদো কাঁদো, দ্যাখ অনেক টাকা দিয়ে টিকিট কেটেছি, প্লীজ তুই চল, তোকে একটা টাকাও দিতে হবে না, সব বুক আছে, হোটেল হোম স্টে সব বুক আছে, তুই ওয়ালেট বাড়িতে রেখেই আয় কিন্তু আয় নাহলে আমি একা ট্রেনে বসে এতগুলো সীট নিয়ে কি করবো বুঝতে পারছি না।

অতএব আচ্ছা দেখছি কি করা যায় বলে ফোনটা কেটে মায়ের কাছে গেলাম আবার ঘ্যান ঘ্যান করতে। মা সব শুনেই প্রথমে যাওয়া হবে না, বাড়িতে থাক ইত্যাদি বাওয়াল দিল। অতি কস্টে বোঝালাম দেখো একজন বিপদে পড়েছে এবং যাওয়াটা আমার আশু কর্তব্য। এবং সাথে কিছু হৃদয় বিদারক দুঃখের বানী। অ্যাজইউজুয়াল সেগুলো সবই ঢপের কেত্তন। শেষে মা যখন বলল ঠিক আছে যা ততক্ষনে ঘড়িতে ৬ টা ১৫ ছুঁই ছুঁই।

WhatsApp Image 2021-12-27 at 21.38.51 (3).jpeg

এই বার শুরু হলো আমার মিশন সিকিম। কোথায় যাব জানি না, টিকিটও অন্য কারো নামে কাটা এবং আমি মাত্র ৮০ কিলোমিটার দূরে। এইসব ক্ষেত্রে আমি দেখেছি আমার ব্রেইন পুরো সুপার কম্পিউটার। আবার সুন্দরীকে ফোন করে জিজ্ঞেস করলাম একটা পুরুষ নাম বল আর কম বয়েসী লোকটার নাম বল যে নামে বুকিং আছে। তিনি বললেন অজিত ঘোষ আছে এবং তার বয়েস চল্লিশ ! আমি ফোনটা কেটে সোজা আমার আধার কার্ডের একটা ছবি তুলে সেটাকে ফটোশপে ফেলে নাম আর বয়েস পালটে প্রিন্ট মেরে সোজা আলমারী খুলে জামা বের করতে শুরু করলাম।

ঠিক ১৫ মিনিটের মধ্যে জামা জ্যাকেট আর কিছু টুকি টাকি এসেনশিয়াল জিনিষ পত্র ব্যাগে ঢুকিয়ে প্রিন্ট নিয়ে যখন নীচে নামলাম তখন দেখি মা বাকি কাজ করে রেখেছে। গেটের সামনেই একটা উবের অলরেডি দাঁড়িয়ে। মা কে টাটা করে উবেদ দাদাকে একটাই কথা- দাদা ট্রেন সাড়ে সাতটা, হাতে মাত্র ৫৫ মিনিট আর ডিটেন্স ৮০ কিলোমিটার। বাকিটা আপনার ব্যাপার।
মাইরি বলছি বিশ্বাস করুন ভদ্রলোক ওটা উবের চালালো নাকি হাওয়ার ভেতর দিয়ে এরোপ্লেন চালালো বুঝিনি কিছু, হাইওয়ে ওঠার আগেই স্পীড ১০০ ছুঁই ছুঁই। বর্ধমান পৌঁছে দেখি সুন্দরী বেজায় করুন একটা মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে ট্রেন নাকি প্লাটফর্মে ঢুকছে। আমাকে দেখার পর তার হাসি আর ধরে না। দুজনে মিলে ট্রেনে চাপার পর শুরু হলো আসল কেস। সুন্দরী জানালেন যে এই এক ঘন্টার তিনি নাকি আরো একজনকে ম্যানেজ করেছেন এবং সে রামপুরহাট থেকে ট্রেনে চাপবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম সে কে ? বলল তার নাম নাকি সুমন। খাসা ছোকরা। দিলদরিয়া মানুষ।

WhatsApp Image 2021-12-27 at 21.38.51 (2).jpeg

ট্রেন বর্ধমান ছেড়ে রামপুরহাট পোউছালো রাত্রি সাড়ে নটা। সুমনের আবির্ভাব হোল কম্পারমেন্টে। প্রথম ১০ মিনিটেই বুজলাম সুমন ঠিক কি জিনিষ এবং আগামী ১০ দিন ঠিক কেমন কাটতে চলেছে। টিটি আসার পর ফেক আধার কার্ডের কপি আর অন্যের টিকিট দেখিয়ে ম্যানেজ করলাম। তিনি চলে যেতেই ট্রেন ছাড়লো আর শুরু হলো আমাদের গুলতানি, ততক্ষনে টিটি সাহেব সব সীট ক্যানসেল করে দিয়েছেন তিনজনে তিনটে আপার আর লোয়ার বার্থ ধরে শুরু হোল আড্ডা। তখনও জানি না আগামি কাল কি প্ল্যান বা ঠিক কোথায় যাচ্ছি। শুধু এটুকু জানি কাজ কর্ম সব বন্ধ আগামি ১০ দিন। এবং কোন কাজের ফোন রিসিভ করবো না। এইসব গুলতানি মেরে যখন মনে হলো একটু ঘুমোনো দরকার তখন ঘড়িতে ঠিক ভোর সাড়ে চারটে এবং নিউ জলপাইগুড়িতে ট্রেনের টাইম সকাল ৭ টাই। কাজেই সবাই নিজের নিজের বার্থ ধরে ঘুমোলাম ঘন্টা তিনের জন্য। পরের দিন থেকে শুরু হবে আমাদের মিশন সিকিম।

WhatsApp Image 2021-12-27 at 21.38.51 (5).jpeg

(ছবিতে তিনি )

@rme দাদাকে ধন্যবাদ @shy-fox ভাই এর ২৫ লক্ষ্য ষ্টীম পাওয়ারের পেছনে নিরলশ এবং অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য

চলবে

Sort:  
 3 years ago 

দাদা শুরুতে যে কথা বলতেই হবে,, আপনার লেখার হাত খুব ভালো। এমন ভাবে শুরু আর শেষ করেন যে পড়তে পড়তে কখন যে সময় শেষ হয়ে যায় বুঝতেই পারিনা । এটা কিন্তু দারুন একটা ব্যাপার।

আর দাদা পুরো কাহিনী টা পড়ে যা মনে হচ্ছে,, সিনেমায় যেমন হুটহাট সব কিছু হয়ে যায় সেগুলো এমনি এমনি দেখায় না , আমাদের বাস্তবতায় এমনটা ঘটে বলেই দেখায়। আমার মনে হচ্ছিল কোন মুভির কিছু অংশ কেটে কেটে দেখছি । সত্যি চমকে যাওয়া কাহিনী। পরবর্তী পোস্টের অপেক্ষায় থাকলাম।

 3 years ago 

<3 <3 <3 লিখলে ট্যাগ করবো অবশ্যি, ভালো লাগলো জেনে আমারও ভালো লেগেছে

 3 years ago 

জায়গাটি দেখে জাস্ট আমি মুগ্ধ হয়ে গেছি। আপনার মত এত দূরে এবং এত লম্বা ভ্রমণের সুযোগ আমি আজো পাইনি কিন্তু ভবিষ্যতে হয়তো পেতে পারি। আপনার করা পাহাড়ি অঞ্চলের ফটোগ্রাফি গুলো দেখতে অসাধারণ লাগছিল। সব মিলিয়ে আপনার কাংখিত লক্ষ্যে পৌঁছালেন ।ধন্যবাদ ভাই আপনাকে আপনার ট্রাভেল পোস্ট টি আমাদের মধ্যে শেয়ার করার জন্য।

 3 years ago 

খুব ভালো থাকুন, আনন্দে থাকুন। ভালো লেগেছে জেনে আমারও ভালো লাগলো, পরের পোস্টে ট্যাগ করবো আবার।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 64319.13
ETH 3411.87
USDT 1.00
SBD 2.51