(ডার্ক থ্রিলার ) ব্লাডি নেমেসিস | সোহাগ এবং... - অষ্টম পর্ব ( 10% For @shy-fox )

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

8.png
image source

ব্লাডি নেমেসিস - অষ্টম পর্ব

সপ্তম পর্বের লিঙ্ক source

*************

মাস তিনেক হল বিয়ে হয়েছে অঙ্কিতার। রাহুলের সাথেই হয়েছে। ফ্যামিলি বন্ধুবান্ধব আত্মীয় স্বজন, সবার উপস্থিতিতে বেশ ধূমধাম করেই বিয়েটা হয় তাদের। রাহুলের স্ত্রী হিসেবে সেদিন যখন অঙ্কিতা ওদের বাড়িতে প্রথম পা রেখেছিল, ওই বাড়ির সবার আন্তরিকতায় ও সুব্যাবহারে, বাড়ির সবাইকেই খুব আপন মনে হয়েছিল তার।
অঙ্কিতার শ্বাশুড়ি মা তাকে আদর করে বরণ করলেন। তারপর রাতে সব গেস্টরা চলে যাওয়ার পর, তাকে নিয়ে সারা বাড়ি ঘুরিয়ে দেখালেন। অনেক গল্প করলেন। একটু পরেই অঙ্কিতার ননদও আড্ডায় যোগ দিল। তারপর বেশ কিছুক্ষণ গল্প আড্ডা মেরে অঙ্কিতার শ্বাশুড়ি মা নিজের ঘরে চলে গেলে। অঙ্কিতাকে তার ঘর অবধি পৌছে দিয়ে ননদ রিমলি পাশের ঘরেই শুতে গেল। আর বলে গেল যে কোন অসুবিধা হলেই যেন তাকে ডাকে- সে পাশের ঘরেই আছে। চলে আসবে। এই বলেই কিছুটা অপ্রত্যাশিত ভাবেই হঠাৎ অঙ্কিতার গালে চুমু খেয়ে, উত্তরের অপেক্ষা না করে নিজের ঘরে ঢুকে গেলো।

বেশ ভালো লেগেছিল অঙ্কিতার। সবাই কত ভালো এখানে।প্রথম দিনেই সবাই কেমন সুন্দর ভাবে মিশে গিয়েছিল তার সাথে। নতুন শ্বশুরবাড়ি, অথচ কি সুন্দর ফ্র‍্যাংক সবাই । শ্বশুড় শাশুড়ী তার বাবা-মা এর মতই, বেশ হাসি-খুশি ধরনের। আর ননদীনী রিমলি! ...মুখে লাজুক হাসি ফুটে ওঠে অঙ্কিতার। সেদিনের সেই রাতটার কথা মনে পরে যায়। সুখস্মৃতি পর্দায় ভেসে ওঠে।

মাঝরাতে দরজায় কে যেন নক করছে। চমকটা ভেঙে যায় অঙ্কিতার, এই মাত্র কনে সাজ খুলে ফ্রেশ হয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে, নাইট ড্রেস গায়ে গলিয়ে বিছানায় এসে সবে শুয়েছিল। ঠাঁইনাড়া হলে এমনিতেই ঘুম আসতে চায়না। তার মধ্যে সে ঠিক বুঝে উঠতে পারছিল না, রিমলির ব্যাপারটা। হঠাৎ গালে চুমু খেলো কেন? এটা নিছকই সাধারণ ঘটনা বলে মন মানতে চায় না। তবে কি রিমলিও?

এসবই ভাবছিল। হঠাৎ কে যেন দরজায় নক করে। এখন আবার কে এলো? বিছানায় উঠে বসে অঙ্কিতা।বাইরে দাঁড়িয়ে রিলমি, তার ননদ। অফুরান প্রাণ শক্তিতে ভরপুর রিলমি, প্রকৃতির নিয়মেই যেন তার শরীরে বসন্ত এসেছে। কবি জয়দেব একবার স্নানরতা শ্রী রাধিকার সৌন্দর্য বর্ননা করেছিলেন - সিক্তশরভপিনোন্নতঅসুয্যমপশ্যা।
তিনি হয়তো কবি ছিলেন, শব্দের যাদুকর। কিন্তু অঙ্কিতা তো মানবী। একাকিনী সদ্যস্নানা ননদকে অপাঙ্গ দর্শনে বুকে টেনে নেই তাকে। নেশাতুর এক জীবনের পথে যেন অঙ্কিতা। ঠিক-ভুল-সত্য- মিথ্যার বাইরেও জীবনে খুশি থাকার আনন্দে থাকার নিয়মেই মশগুল সে।

কি বৌদি , বাইরেই দাঁড় করিয়ে রাখবে নাকি ? রিমলির কন্ঠস্বরে হুঁশ ফিরলো অঙ্কিতার, ভেতরে আসার আমন্ত্রন জানাই তাকে ।

চমক ভাঙ্গে অঙ্কিতার। সুন্দরী ননদটি তার উচ্চশিক্ষিতা , বিদুষীও বটে। তাকে দুঃখী মুখে দেখতে একটুও ভালো লাগে না অঙ্কিতার। কিন্তু সেই রাত হয়তো সেদিন কালরাত্রিই ছিলো, কোথা থেকে কি হয়ে গেল নিমিষে তুই মানবী একে অপরের হাতে নিজেকে সমর্পণ করলো নিঃশব্দে। আদিমতা মানুষের সহজাত জীবন শৈলী। আমরা কেউই তার ব্যাক্তিক্রম নয়। মানুষ অভ্যেস- লোভ-ক্রোধ আর মনুষ্যত্বের দাস। সেদিনও হয়তো সেরকমই কিছু হয়েছিল... আদিম প্রস্তর যুগ যেন ফিরে আসে। চকমকির স্ফুলিঙ্গ গ্রাস করে তাদের...

এ যেন এক আদিম অথচ নিবিড় আহ্বান। অজানাকে জানার, অদেখাকে দেখার এক অমোঘ দুর্নিবার আকর্ষণ।
দুই মানবীর একাত্ব হবার সেই সুনিবিড় অথছ সুমুদ্র সফেন নিঃস্বার্থ বিলোল আহ্বান। যুগে যুগে মানব- মানবীর এই আকর্ষণ ফিরে এসেছে, একাত্ব হয়েছে কিন্তু সমাজ-পরিবেশ-পরিস্থিতি-সময় হয়তো মানুষের সাথে থাকেনি কোনদিন। অথচ কি দৃঢ় আকর্ষণ। অন্যায় জেনেও, পাপ জেনেও, দ্রিমী অগ্নিকুণ্ডে আত্ম হননের প্রয়াস... একে হয়তো রোখা যায় না, আটকানো যায় না, থামানো যায় না।

যৌবনের মদ মত্তে নিমজ্জিত দুটি প্রান। তাদের মধ্যে পাপ নেই, পুণ্য নেই, আগামী নেই, অতীত নেই। কিচ্ছু নেই। শুধু আছে শরীরি সুখের লালসা আর গুঢতম বিন্দু পর্যন্ত নিজের সঙ্গীকে আলিঙ্গনাবদ্ধ করে রাখার প্রয়াস। শুধু মানুষ না, জীব জগতের প্রতিটি প্রাণই সুখী হতে চাই। প্রতিটি প্রাণ অন্যকে জড়িয়ে আঙ্খড়ে ধরে রাখার অদম্য প্রয়াসে শেষ রক্ত বিন্দু অবধি নিজেকে উজাড় করতে বিন্দুবৎ শঙ্কিত হয় না। এই হয়তো জীবন... সাক্ষাৎ করাল মৃত্যু জেনেও তাকে অমৃতবত ধারণ করার উদরতা... জীবন সততই জটিল... কিছুটা কুটিলও

এভাবেই বৌভাত ফুলসজ্জা অষ্টমঙ্গলা সব সেরে টুকটাক সংসার করতে করতে কীভাবে তিন তিনটে মাস চোখের নিমেষে পেরিয়ে গেল অঙ্কিতা বুঝতেই পারল না। এই তিনমাসে জীবন টা যেন নতুন করে উপোভোগ করা শুরু করেছে অঙ্কিতা। একটা শকের থেকে বেরিয়ে এর তাড়াতাড়ি এতটা সুখে থাকবে সে ভাবে নি কখনও। সারাদিন 'মা' আর রিমলির সাথে টুকটাক সংসারের কাজ করে, আড্ডা গল্প মেরে, মাঝে মাঝে সুযোগ বুঝে রিমলির সাথে একটু ঘনিষ্ঠ খুনসুটি করে আনন্দে কেটে যায় অঙ্কিতার।

সংসারী সুখ আর সান্নিধ্যের আনন্দে দিন কাটে অঙ্কিতার। তার সোহাগ, তার প্রেম তার অগ্নিসাক্ষী স্বামী রাহুলের প্রশংসা করলেও কম বলা হবে। আদর্শ স্বামীর প্রতিটি দায়িত্ব যেন নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে রাহুল। স্ত্রীর প্রতি সদা
কর্তব্য অবিচল। প্রেমিক স্বামী সে , ভালোবাসা, কর্তব্য আর সোহাগ যখন পাশাপাশি হাত ধরে হেঁটে যায় তখন
জীবন সততই সুন্দর। এখন অঙ্কিতা অত্যন্ত তৃপ্ত। পূর্ণ পরিবার তার। কিন্তু বিধাতা বুঝি অলক্ষ্যে হেসেছিলেন সেদিন...

মাস ছয়েক আগের সেই বিভীষিকাগ্রস্থ দুশ্চিন্তাময় সময়টার কথা মনে পরতেই, কেমন যেন গা শিউড়ে ওঠে। এই সুন্দর জীবন ছেড়ে সে কোন দুস্বপ্নে এতদিন সে জড়িয়ে ছিল। সে একটা বিদেহী প্রেতাত্মার অঙ্গুলি হেলনে জীবনের এতগুলো বছর নষ্ট করেছে ভাবলেও তার কষ্ট হয়।

তবে একজনের কথা মনে পরলে আজকাল খুব খারাপ লাগে অঙ্কিতার। অনিন্দ্য। সত্যি বলতে অনিন্দ্যর সাথে তার তো কোন শত্রুতা ছিল না। উপরন্তু ছেলেটা সত্যিই ভালোবেসে ফেলেছিল তাকে। কি নৃশংস ভাবেই না মেরেছে অঙ্কিতা, অনিন্দ্যকে।
ভগবান সহায় নিশ্চয়ই। তাই নিয়তি তার ওপর প্রতিশোধ না নিয়ে এ সুন্দর জীবন পেয়েছে।

moon-gb5e111fff_1920.jpg
image source

( ক্রমশ )

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.13
JST 0.027
BTC 58402.42
ETH 2727.59
USDT 1.00
SBD 2.34