(ডার্ক থ্রিলার ) ব্লাডি নেমেসিস | না-শরীরী... - ষষ্ঠ পর্ব ( 10% For @shy-fox )

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

6.png
image source

ব্লাডি নেমেসিস - ষষ্ঠ পর্ব

পঞ্চম পর্বের লিঙ্ক source

*************

সেই হালকা মিস্টি পারফিউম মিশ্রিত গন্ধটা যেন সারা ঘরের মধ্যে ছড়িয়ে পরে। অঙ্কিতা তার ঘরে কোন এক অদৃশ্য সত্ত্বার অস্তিস্ত্বের উপস্থিতি স্পষ্ট অনুভব করে। সে অনুভবের বর্ণনা সে বলে বোঝাতে পারবে না কিন্তু স্পষ্টতই সেটা সে অনুভব করে। হঠাৎ তার মনে হল যেন সেই মিস্টি গন্ধটা হঠাৎ যেন কিছুটা বেড়ে গেল। সেই গন্ধ ক্রমশ বাতাসে তার ঘনত্ব যেন বাড়াতে লাগল। অঙ্কিতা যেন আচ্ছন্ন হয়ে যেতে লাগল ক্রমশ। এমনই সময় হঠাৎই গালে হিমশীতল হাতের স্পর্শ পেয়ে, চমকে উঠে তাড়াতাড়ি পেছনে ফিরে কাউকে দেখতে না পেয়ে ভয় পেয়ে যায়। ঠিক তখনই এক ক্ষীণ মেয়েলি কন্ঠের অদ্ভুত হাসির শব্দে ভরে ওঠে তার ঘর। সেই হাসির ঝংকারে গমগম করতে থাকে চারদিক। এই আওয়াজ অঙ্কিতা চেনে। এ যে লাবণ্যর হাসি। সে কেন এসেছে তার কাছে? কথা বলতে?... অঙ্কিতা কোনরকমে লাবণ্যর নাম ধরে ডাকার চেষ্টা করে। কিন্তু অনেক চেষ্টার পরেও অঙ্কিতার গলা দিয়ে যেন আর আওয়াজ বেরোয় না। প্রচন্ড ভয়ে জড়সড় হয়ে যায় সে। অদ্ভুত ভাবে প্রচন্ড গরমেও থর থর করে কাঁপতে থাকে সে। কোন এক অজ্ঞাত কারনে তার ঘরটা এখন ভয়ানক ঠান্ডা হয়ে উঠেছে। ঘরের আলোটা মিটমিট করতে করতে কখনো প্রচন্ড তীব্রতায় জ্বলে উঠছে আবার পরক্ষণেই আলোর তীব্রতা কমে গিয়ে একেবারেই মিইয়ে যাচ্ছে। কতক্ষণ এভাবে কেটেছে অঙ্কিতা ঠিক বুঝে উঠতে পারে না, এমন সময় হঠাৎই হাসির শব্দ থেমে গিয়ে সম্পুর্ণ ঘরটাকে যেন মৃত্যুর নিস্তব্ধতা গ্রাস করে। একাকী বিছানায় বসে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে অঙ্কিতার মনে হয়, এবার আর হয়ত সে নিজেকে সামলাতে পারবে না। তার মনে হয়, সে তখনই জ্ঞান হারাবে।

এমনই সময় ঘরের মধ্যেই কোথা থেকে যেন কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে। লাবণ্য কাঁদছে..অঝোর ধারায় ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। অসম্ভব কষ্ট যন্ত্রণা মাখা সেই কান্না। এই কান্না শুনে অঙ্কিতা আর চোখের জল ধরে রাখতে পারে না। প্রচন্ড ভয়ে, লাবণ্যর কথা ভেবে দুঃখে কষ্টে সেও কাঁদতে থাকে। লাবণ্য শুধু তার বান্ধবী নয় তার নিজের বোনের চাইতেও বেশি কিছু ছিল। অদ্ভুত এক ভালোবাসা সে অনুভব করত লাবণ্যর প্রতি।

"অঙ্কিতা! " - লাবণ্যর গলার ওয়াজ শুনে চমকে উঠে সামনে তাকায় অঙ্কিতা। একি? এযে লাবণ্য..!
বিছানার অপর প্রান্তে বসে রয়েছে। শরীরটা যেন স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না..তবুও তার মধ্যেই লাবণ্যর মুখটা আবছা হলেঈ কিছুটা বোঝা যাচ্ছে। লাবণ্যর সেই ঝাপসা ভাসা ভাসা চোখ থেকে ঝড়ে পরছে অশ্রুধারা। চোখের ভাবে ফুটে উঠেছে অপার্থিব কোন কষ্ট। তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে যেন কিছু বলতে চায় অঙ্কিতাকে..

এবার অঙ্কিতাই এগিয়ে যায় লাবণ্যর দিকে। একেবারে লাবণ্য অস্বচ্ছ শরীরের কাছ ঘেসে বসে সে। তারপর তার হাত দুটো দিয়ে জড়িয়ে ধরতে যায় লাবণ্য কে। কিন্তু হাওয়াতে হাত ঘুরে আসে.. এবার লাবণ্য তার গালে হাত রাখে। হীম শীতল সেই ছোঁওয়া তেও অঙ্কিতা অনুভব করে ভালোবাসার উষ্ণতা।

ঘুম ভাঙল অঙ্কিতার। তবুও প্রতিশোধ পুরনের প্রশান্তিতে চোখ বন্ধ করে রইল। কিছুক্ষণ পর বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে জানালার কাছে গিয়ে দাড়াল। অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে আত্মাকে আহবান করার ভঙ্গিতে হাত গুছিয়ে বলতে শুরু করে... পেরেছি... পেরেছি প্রতিশোধ নিতে আমার লাবণ্যের মৃত্যুর। চার বছর যাবৎ ওই অনিন্দ্যকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরিয়ে, শেষে ওরই বন্ধুর সাথে প্ল্যান করে ওকে খুন করলাম। কুপিয়ে কুপিয়ে মেরেছি। নিজের হাতে পাথর দিয়ে মাথা মুখ থেঁতলে দিয়েছি।

আজ তুই শান্তি পাবি লাবণ্য তোর আত্মা আজ শান্তি
পাবে। আর শান্তি পেলেই তুই দেহ ধরে ফিরে আসতে পারবি, আয় লাবণ্য... আয়...কি হল তুই আসছিস না কেন? আরে তুই তো বলেছিলি আমাকে সেদিন বল.. তুই তো বলেছিলি বল যে অনিন্দ্যকে খুন করার কিছুক্ষনের মধ্যেই তুই দেহ ধরে ফিরে আসবি আমার কাছে। কি হল উওর দে। চুপ করে আছিস কেন লাবণ্য? এতদিন তো যখন ডাকতাম তখন আসতি আজ যখন দেহ নিয়ে আসার কথা তুই সাড়া পর্যন্ত দিচ্ছিস না।
দ্যাখ তুই বলেছিলি আমাকে তোর মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে, নিয়েছি। তোর কথা ফেলিনি।
তোকে ভালোবাসা সত্যেও অনিন্দ্যকে পটিয়েছি ওকে খুন করেছি ওরই বন্ধু রাহুল কে হাইজ্যাক করে। রাহুলকে ভালোবাসার গল্প শুনিয়ে শরীরের লোভ দেখিয়ে হাত করেছি, তোর কথায়। তোর কথা মতই অনিন্দ্যকে বিশ্বাসঘাতকতার মত যন্ত্রণায় নৃশংস অত্যাচার করে মেরেছি। শুধু তুই বলেছিলি বলেই। আর আজ তুই সাড়া দিচ্ছিস না কেন লাবণ্য! এই লাবণ্য! অঙ্কিতার আওয়াজ ঘরের বাতাসেই ঘুরপাক খেতে থাকে। লাবণ্য আসে না।..

( ক্রমশ )

moon-gb5e111fff_1920.jpg

image source

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.13
JST 0.029
BTC 58625.96
ETH 3101.66
USDT 1.00
SBD 2.41