(ডার্ক থ্রিলার ) ব্লাডি নেমেসিস | নিয়তি... - সপ্তম পর্ব ( 10% For @shy-fox )

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

7.png

image source

ব্লাডি নেমেসিস - সপ্তম পর্ব

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্ক source

*************

না। লাবণ্যর বিদেহী প্রেতাত্মা অঙ্কিতার ডাকে একটিবারের জন্যও আর সাড়া দিল না। অঙ্কিতার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরল। সে বুঝে উঠতে পারছিল না সে এখন কি করবে। যেই ভালোবাসার টানে সে অনিন্দ্যকে খুন করল। এত বড় অঘটন ঘটালো সেই ভালোবাসাই কি অঙ্কিতাকে এই চরম আঘাত দিল। অঙ্কিতার স্পষ্ট বুঝল, খুব বড় একটা ভুল হয়ে গেছে তার। এক অতৃপ্ত বিদেহী প্রেতের ছলনায় ভুলে, নিজের অজান্তেই এক সাংঘাতিক কালচক্রের অংশ হয়ে পরেছে সে।

অঙ্কিতার চোখ ফেটে জল এল। ইসসস কি বোকা সে.. এই সাধারণ সত্যি টুকু সে আজ এতবছর ধরে বুঝতে পারেনি!! মৃত মানুষ কি কখনো ফিরে আসতে পারে? নাহ্! না সে পারে না। ওই লাবণ্য.. না না লাবণ্য নয়, লাবণ্য তো তার প্রেম ছিল,লাবণ্য তাকে ভালোবাসত। টাকার লোভে ছেলেদের সঙ্গে বিছানায় গেলেও.. দিন শেষে তার ভালোবাসা টুকু অঙ্কিতার জন্যই তোলা থাকত। লাবণ্য নয় ওই লাবণ্যর বিদেহী প্রেত ওই পিশাচিনী তার মায়ায় বশ করে রেখেছিল তাকে। ওই পিশাচিই তার ভালোবাসার ব্যাবহার করে.. তার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে। অঙ্কিতার হাত পা যেন ঠান্ডা হয়ে আসে। এখন সে কি করবে? কিই বা আর করার আছে তার? সে নিজেই তার সব মুক্তির রাস্তা বন্ধ করেছে।

অঙ্কিতা এবার একটু বাস্তব পরিস্থিতি ও কি করনীয় তা কিছুটা গুছিয়ে ভাবার চেষ্টা করে। সে জোর করে নিজের মনকে বোঝায়। নিজের মনকে যতটা সম্ভব শান্ত করে বুঝিয়ে বলে- যা হবার তা তো হয়ে গেছে। এখন এসব নিয়ে আর এত সাতপাঁচ ভেবে লাভ নেই। আর সে তো কোনো পাপ করেনি! অনিন্দ্য তো নিজেই জঘন্য অপরাধী ছিল, হ্যা যদিও অঙ্কিতার সাথে তার কোন সরাসরি শত্রুতা ছিল না, কিন্তু..লাবণ্যের প্রেমিকা হিসেবে, এটুকু তো করাই যায়। তাইতো করেছে। হ্যাঁ তবে এটা ঠিক, যে ছেলেটা তাকে সত্যিই ভালোবাসত। ওই ফুটো হয়ে যাওয়া গলা নিয়ে যখন মাটিতে পরে মরন শ্বাস নিচ্ছিল.. পাথর হাতে অঙ্কিতাকে তার দিকে আসতে দেখে, সেই রক্তাক্ত মুখে বিশ্বাসঘাতের যেই গভীর যন্ত্রণা ফুটে উঠেছিল, তা অঙ্কিতার চোখ এড়ায়নি। খুব ভালো না বাসলে তেমন অভিব্যাক্তি কারো মুখে আসে না। যদিও সেসময় অনিন্দ্যর সেই যন্ত্রণাক্লিষ্ট রক্তাক্ত মুখ দেখে অন্তরে পৈশাচিক তৃপ্তি অনুভব করেছিল সে।

উফফ কি সব ভাবছে সে। নাহ্ আর এসব ভেবে কাজ নেই। যা হওয়ার হয়ে গেছে। রাহুল ছেলেটাও দেখতে শুনতে ভালো, পয়সাওয়ালা আছে। তাকে বিয়ের করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। ওকেই বিয়েটা করে দিব্যি কাটিয়ে দেবে। আর এই ঘটনার কিচ্ছু মাথায় রাখবে না সে। এই কালচক্রের সাথে নিজের কোন যোগাযোগ রাখবে না সে।

কিন্তু নিয়তি বড়ই নিষ্ঠুর। সে কখনোই তার বিচারে পক্ষপাতীত্ব করে না।প্রত্যেকে তার কৃত কর্মের ফল স্বরুপ দন্ড পায়। এই কালচক্রের সাথে যুক্ত প্রত্যেকেরই জীবন তথা মৃত্যু এই চক্রের সাথেই চক্রাকারে আবর্তিত হয়। কর্মের সাথে যোগাযোগ অস্বীকার করলেই তার কৃত সেই কর্ম মুছে যায় না। নিয়তির এই বিরাট খাতায় কারোর ঋণ অপরিশোধিত থাকে না। প্রত্যেককে তাদের কর্মফলের মূল্য রক্তের শেষ বিন্দু অবধি দিয়ে পরিশোধ করে যেতে হয়। লাবণ্য করেছে। অনিন্দ্যও করেছে। আর অবশ্য অবশ্যই অঙ্কিতাও করবে.. হ্যাঁ রাহুলও করবে। নিয়তির দরবারে ন্যায়ই একমাত্র সত্য।

তার "মরদেহটা' দাহ করা হয়ে এই প্রায় ঘন্টা খানেক হল সবাই চলে গেছে। বাবা আর দাদাও হয়ত এতক্ষণে বাড়ি পৌছে গেছে। আজ বড্ড নাজেহাল হয়ে পরেছিল বাবা, একে আমার জন্য কষ্ট... তার ওপর এই ধকল। দাদাটাও কম কষ্ট পায়নি। মুখ্যাগ্নি দান করার সময় কিভাবে কাঁদছিল। পাড়ার লোকরাও যথেষ্ট সাহায্য করেছেন। বলা ভালো প্রায় সবটাই তারাই সামলে নিয়েছেন বলে রক্ষা । নইলে আমার বেচারা আমার বাড়ির মানুষ গুলোরো তো প্রায় আমার মতই অবস্থা। পার্থক্য এই যে তারা বেঁচে থেকেই মরে গেছেন আর আমি মরে গিয়ে যেন বেঁচেছি।"
নিজের আধনিভু চিতার পাশে বসেই এসব এক নাগাড়ে কাউকে একটা উদ্দেশ্য করে বলে চলে অনিন্দ্য। আগন্তুকও স্বাগ্রহে সব শোনে।

সে আরও বলে, যে "আমি জানি। আমার মৃত্যুতে ওরা ভয়ংকর শোক পেয়েছে। কিন্তু বিশ্বাস করো, যেই ভয়ানক অনুতাপ, প্রেত অত্যাচার নিয়ে আমি কত ভয়ানক যন্ত্রণায় বেঁচে ছিলাম। অঙ্কিতা আমাকে খুন করে, দেহের জ্বেল থেকে মুক্তি দিয়েছে। হ্যা যদিও দেহের জেলখানা পেরিয়ে আত্মার জেলখানায় বন্দী হয়েছি। তার মানে এখনও এই স্তরেও আমাকে কিছু কাজ শেষ করতে হবে। তবেই হয়ত মুক্তির পথ এগোবে। আমার মনে হচ্ছে এখন, আমি যে যন্ত্রনা পেয়ে মরব সেই সম্পর্কে আমি যেন নিশ্চিতই ছিলাম।নিশ্চয়ই সেদিন আর্টিকেল টা পড়তে পড়তে। সেখানে তো..."
অনিন্দ্যর মুখের কথা শেষ না হতে দিয়ে, তাকে থামিয়ে নিজেই বলা শুরু করল সেই আগন্তুক, "সেখানেই তো পড়েছিলে, সেই আর্টিকল টা। সেখানেই তো পড়লে এবং জানলে নেমেসিসের ব্যাপারে। ঠিকই মনে করেছো অনিন্দ্য, এই নেমেসিসই তো আল্টিমেট ডেস্টিনি, এই নেমেসিসই তো ন্যায়দন্ড। আর এই ন্যায়দন্ড দান করবেন যিনি, তিনি নিয়তি। তুমি তো জানো, তুমি নিজে কালচক্র সম্পুর্ণ করতে পারবে না কারন তোমাদের বিদেহী আত্মাদের সেই সামর্থ্য নেই।

তুমি লাবণ্যকে মেরেছো৷ লাবণ্যর প্রেত নিজে পারেনি, কিন্তু মনে তোমার প্রতি প্রচন্ড ঘৃণা নিয়ে সে অঙ্কিতাকে নিজের দাস বানিয়ে, তোমাকে খুন করিয়েছে। অঙ্কিতা তোমার অপরাধী। তুমি তার ক্ষতি না করেও তার দ্বারা আক্রান্ত হয়েছো। সেই বিচারে তুমিও ন্যায় পাবার অধিকারী। এই ন্যায় পক্রিয়া সচল রাখার দায়িত্ব তোমারো। কিন্তু তুমি নিজে পারবে না, তাই আমি তোমায় সাহায্য করব, আমিই তোমাকে দিয়ে কাল চক্রের বিলুপ্তি ঘটাবো যেন তুমি অন্য কাউকে এই চক্রে,যুক্ত না করতে পারো। এসব তুমি জানো।

অনিন্দ্য তাকে জিজ্ঞাসা করে, কিন্তু আপনি কে বলুন তো, আপনাকে অনেকটা চেনা চেনা লাগছে ঠিক কে মনে আসবে আসবে করেও আসছে না, এই দাঁড়ান আপনি তো আমার মতো দেখতে। আপনি কে বলুন তো? আগন্তুক হেসে বলে।
" ভয় নেই। আমি বিচার করতে ভুল করিন। আমি তোমার নিয়তি।"

moon-gb5e111fff_1920.jpg

image source ( ক্রমশ )

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.13
JST 0.027
BTC 58968.99
ETH 2825.19
USDT 1.00
SBD 2.24