( ধারাবাহিক উপন্যাস ) ★কে সেই লোকটা? ★ দ্বিতীয় খন্ড [ ১০ শতাংশ shy-fox ভাই এর জন্য ]
( আগের পর্বের পর )
জিজ্ঞাসা করলাম - " তা যাবেন কোথায়? "
লোকটা উত্তর দিল, " এই আপনার সাথেই.. আলিপুরদুয়ার জংশন।" বলেই কেমন ফ্যাস্ ফ্যাসে গলায় হ্যা-হ্যা করে হেসে উঠল। হাসতে হাসতেই লোকটা বলল, " ভয় নেই৷ ভয় নেই। সত্যি সত্যি আপনার সাথে গিয়ে আপনার বাড়িতে উঠবনা"
একটু ইতস্তত করে বললাম, " না না তা কখনোই ভাবিনি, কিন্তু একটা কথা বলুন দেখি - এটা তো মেল ট্রেন, টিকিট চেকারের কাছে যদি ধরা পড়লে কি করবেন? " হুঃ!!! ধরা পড়লেই হল!!
বল্লাম, - কেন? ধরা না পরার কি আছে? চেকার উঠলেই যে ধরা পরে যাবেন। আমার একথা শুনে, লোকটা খ্যাক্ খ্যাক্ করে বিশ্রী হেসে বলল দুর মশাই !!! আমাকে দেখতে পেলে তো ধরবে!! চেকারের চোখে ধুলো দিয়েই আমি কেটে পড়বো। আমি আর কোন কথা না বলে, ভদ্রলোকের মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। লোকটা জিজ্ঞেস করলো, " তা আপনি তো আলিপুরদুয়ারেই যাবেন তাই না৷? "
" হুম্!!! "
" তো মশাই আপনার ভূত বিশ্বাস করার ব্যাপারটা আর কদ্দুর এগোলো? " হঠাৎ এরকম একটা বিদঘুটে প্রশ্ন শুনে, হকচকিয়ে গিয়ে বললাম, " ঐ সেদিন আপনি বলছিলেন না যে আপনি ভূত-টুত কিছু বিশ্বাস করেন না। তা বিশ্বাস করার মতো এখনো কিছু নজরে পড়েনি আপনার? "
বললাম, " আরে বাবা, ভূত বলে কোন বস্তুর অস্তিত্ব থাকলে তো নজরে পড়বে!!! "
" আছে মশাই আছে। একদিন না একদিন ভূত আপনাকে বিশ্বাস করতেই হবে। ভূতেরা সর্বত্রই ঘুরে বেড়ান, তেঁনারা এখানেও আছেন, ওখানেও আছেন। কখনো ওঁরা হাওয়ায় মিশে থাকেন কখনো মানুষের রুপ ধরেই আর পাঁচ টা সাধারণ মানুষের মত ঘুরে দাঁড়ান। যারা তাদের বুঝতে পারে, চিনতে পারে, তারা তাদের বিশ্বাস করে। আপনি এখনো তেঁনাদের ঠিক বুঝে উঠতে পারেন নি তাই বিশ্বাস করছেন না। "
আমি বেশি কথা না বাড়িয়ে বললাম৷ - "তা হবে হয়ত। বুঝতে যদি কখনও পারি, বিশ্বাস নিশ্চ করবো। "
খুব শীঘ্রই বুঝতে পারবেন, আচ্ছা আসি নমস্কার। রাজাভাতখাওয়া চলে এল। আমি অবাক হয়ে বল্লাম, " কিন্তু আপনি যে বললেন আলিপুরদুয়ার জংশন যাবেন। " হ্যাঁ যাবো তো! এখানে কিছু কাজ সেরে তারপর বাসে করে যাবো আলিপুরদুয়ার। আচ্ছা আসি আমি।"
লোকটা দরজা কগুলে দাঁড়ালো। ট্রেন প্লাটফর্মে ঢুকছে। তখনও ট্রেনটি বেশ ভালো রকম গতিশীল। সেই অবস্থাতেই লোক টা ট্রেনের বাইরে এক লাফ মারল। আমি আঁতকে উঠলাম। এই বুঝি গেল!!! জানালা দিয়ে তাড়াতাড়ি মুখ বাড়ালাম , কিন্তু লোকটিকে আর দেখতে পেলাম না। আশ্চর্য তো!! কোথায় গেল! যাক্ গে.. !! মরুক্ গে.. !! বুঝলাম চেকারের হাতে ধরা পরার ভয়েই লোক টা এমন কান্ডটা করল।
লোকটা পাগল না কি! আমাকে ভূত বিশ্বাস করাবার জন্য যেন উঠে পরে লেগেছে! আমিও বিশ্বাস করব না আর এই ভদ্রলোকও বিশ্বাস না করিয়ে ছাড়বে না। আশ্চর্য মানুষ এর সত্যি!! আলিপুরদুয়ার জংশন এসে পরেছে। গাড়ি থামল স্টেশনে। নামলাম। নেমে প্রথমেই গেলান স্টেশন ঘরে, বাবাকে খুঁজতে। কি বাবাকে স্টেশন ঘরে পেলাম না। একজনের কাছে জানতে পারলাম, বাবা কোয়ার্টারে আছেন।
ব্যস! আর কি ! কোয়ার্টারে গিয়ে মা বাবা বোন সবার সাথেই দেখা হল। তারপর সবাইকে নিয়ে পুরো পরিবার মিলে বেশ জাঁকিয়ে চা -আর বিস্কিট নিয়ে আড্ডায় বসলাম। কেরিয়ার সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথাবার্তা সারার ছিল, সেগুলোও সময় মত সেরে ফেল্লাম।
পড়শু জলপাইগুড়ি ফিরে যাবো শুনে, মায়ের কড়া নির্দেশ ভেসে এলো, একদম যাবো যাবো করবি না। এখানে আমাদের সাথে কটা দিন থাক তারপর যাওয়ার কথা ভাববি ক্ষন। কি অবস্থা করেছিস শরীরের। শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছিস একেবারে। ব্যস! আর কি.. এখানে আসলে আমার কাজকর্ম প্রায় থাকে না বল্লেই চলে।
কাজের মধ্যে, এই তিন বেলা পেট ভরে মায়ের হাতের রান্না করা খাবার দাবার খাওয়া। বোনের সাথে ইয়ার্কি খুনসুটি গল্প করা। আর সুন্দর ডুয়ার্স অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের উপোভোগ করতে করতে, গল্পের পরবর্তী প্লট ভেবে রাখা। আলিপুরদুয়ার জংশনের লোকশেডে চার্জ ম্যানের দ্বায়িত্বে কাজ করেন, বাবার এক বাল্যবন্ধু। তার নাম অবিনাশ সরকার। উনিও জলপাইগুড়িরই লোক। বাবার সাথে একই স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। ভদ্রলোক আমাকে খুবই স্নেহ করেন।
বাবা বললেন, এখানে এসেছিস যখন, একবার অবিনাশের সাথে দেখা করে আসিস। আমার সাথে দেখা হলেই তোর কথা জিজ্ঞাসা করেন। লোকো শেড টা দেখেছিস নিশ্চয়ই? বললাম, " হ্যাঁ বাবা দেখেছি। আগেও বেশ কয়েকবার তোমার সাথে গিয়েছিলাম। আর শেষবার নিজেই গিয়েছিলাম। মনে আছে। কাল বিকেলের দিকে যাবো। "
বাবা বললেন, " একটা রিক্সা নিয়ে যাবি, এই রোঁদে হেটে যাওয়ার দরকার নেই।তাই যাবো বাবা। রিকশায় যেতে বেশ লাগে। পরদিন বিকেলে চারটে নাগাদ অবিনাশ কাকুর সঙ্গে দেখা করবার জন্য রওনা হয়ে গেলাম রিক্সায় চেপে। পথ নেহাত কম নয় রিক্সায় মিনিট কুড়ি সময় লাগে। দোকান পসারি, বাজার ঘাট লোকজনে পরিপূর্ণ ঘিঞ্জি পরিবেশ পেরিয়ে রিকশা অপেক্ষাকৃত বির্জন পথ দিয়ে চলতে লাগল।
হঠাৎ দেখি সেই লোকটা! রিক্সা দাঁড় করিয়ে বলল, নমস্কার! লোকটা কে দেখে, আমার কেমন যেন অদ্ভুত একটা অনুভুতি হল।
লোকটা এক মুখ হেসে বলল, " কোথায় চলেছেন? " ওর প্রশ্নের জবাব দেওয়ার ইচ্ছা হল না। কথা না বলারই ইচ্ছে ছিল, কিন্তু তাও লোকজনের সামনে কথা বলতে অস্বীকার করলে, ব্যাপারটা দৃষ্টিকটু বোধ হয়। তাই বললাম, " আপনি এখানে? "
লোকটা বল্ল এই এখানেই একটা কাজে এসেছিলাম,আমার মশাই সর্বত্র গতি, সব জায়গাতেই আমি ঘুরে ফিরে বেড়াই।
আমার মুখ দিয়ে বার হল, তাই তো দেখছি , তা আপনি এদিকে চলেছেন কোথায়? আমি যেখানে যাচ্ছি, তা বলেই ফেললাম। শুনে সেই লোকটা বলল, "তাই নাকি! আমিও তো ওই দিকেই যাচ্ছিলাম। যদি অনুমতি দান করেন, তবে আপনার রিকিশাতেই উঠি? " রাগে আমার সাড়া শরীর জ্বলছিল, তবু 'না' বলতে পারলাম না। বল্লাম, " উঠুন"।
লোকটা উঠে এসে বসল আমার পাশে, রিকশা আবার চলা শুরু করল। রিকশায় উঠে বসেই লোক টা সেই বিশ্রী প্রশ্ন টা করে বসল, "ভূতের ওপর ওপর নিশ্চয়ই এখনো বিশ্বাস জন্মায়নি? " আমি চুপ করেই রইলাম। লোকটা বলল, " আজ নিশ্চয়ই আপনি ওদের বিশ্বাস করবেন।"
আমি বেশ চমকে উঠে বললাম, - " কি রকম"? শুনুন তবে একটা গল্প বলি, লোকটা বলতে শুরু করল ঃ
( ক্রমশ )