( ডার্ক থ্রিলার ) ব্লাডি নেমেসিস | লাবন্য - তৃতীয় পর্ব ( 10% For @shy-fox )

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

3rd .png

image source

ব্লাডি নেমেসিস - তৃতীয় পর্ব

দ্বিতীয় পর্বের লিঙ্ক source

*************

“মানবিক মনস্তত্ত্বের সামাজিক তথা তৃণমূল স্তরে, ভালোবাসা, ঘৃণা, আনন্দ, জেদ ইত্যাদি বহুল আলোচিত আবেগতাড়িত চেতনা গুলির মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও বিপদজনক হল এই 'প্রতিশোধ চেতনা' ।
বিষয়টি মনস্তাত্ত্বিক গবেষণা তথা সাহিত্যের নজরেও একাধারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আকর্ষনীয়। এই প্রতিশোধ চেতনা বা প্রতিশোধস্পৃহা মানবিক জীবনে বা বলা ভালো তার মনস্তাত্ত্বিক জীবনের বিভিন্ন আঙ্গিকে, বিভিন্ন মনস্তাত্ত্বিক কাঠামো অনুযায়ী নিজের বাহ্যিক রুপ পরিবর্তন করে কাজ করে। সেরকমই একটি আঙ্গিক তথা কাঠামো হল - 'শাস্তি' বা বলা ভালো "ন্যায় দন্ড", অর্থাৎ শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কাউকে ন্যায় প্রদান করা । এই শাস্তি প্রদান আদতে কোন অপরাধের, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রতিশোধ স্বরুপ।সেই দিক থেকে বলতে গেলে এই শাস্তি, প্রতিশোধ চরিতার্থের এক অন্যতম সুনিয়ন্ত্রিত কৌশল।

আবার এই শাস্তি বা ন্যায় দন্ড দানের ভার যখন গ্রহণ করে স্বয়ং অদৃষ্ট নিয়তি, তখনই তা পরিণত হয় একটি নেমেসিস এ। 'নেমেসিস' আদতে একটি গ্রীক শব্দ। প্রাচীন গ্রীস দেশীয় ধর্মে নেমেসিস কে প্রতিশোধ বা দন্ডদানের দেবী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ভারতীয় ধর্মশাস্ত্র গুলিতেও কর্ম ফল কে অত্যন্ত প্রাধান্য দেওয়া হয়। ভারতীয় আধ্যাত্মিক সমাজদর্শন অনুযায়ী মানুষের জীবনের যাবতীয় সুখ-দুঃখ ভোগ তার পূর্বকৃত তথা বর্তমান কর্মফল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত কর্মের ভিত্তিতেই... ”

আর্টিকেল টা পড়তে পড়তে হঠাৎ মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটে অনিন্দ্যর। ফোন টা বাজছে। একটু বিরক্ত হয় সে, এই সময় আবার কে ফোন করল কে জানে। বিছানার থেকে ফোন টা নিয়ে খুলে দেখে, অঙ্কিতা কল করেছে। কলটা রিসিভ করে সে। কথা বলা শেষে ফোন টা রেখে দিয়ে, আবারও সেই আর্টিকেল টা সম্বন্ধে চিন্তিত মুখে কি যেন ভাবতে থাকে অনিন্দ্য। বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে তার কপালে। গভীর মনোযোগে কি যেন ভাবতে থাকে সে। চোখে মুখে ভয় মিশ্রিত অনুশোচনার ছাপ।

কি এমন কথা? কি এমন পুরোনো স্মৃতি আছে? যা মাঝে মধ্যেই অনিন্দ্য কে এমন ভয় আর অনুশোচনার করাতকলে ফেলে? এই রাতের অন্ধকারে যখন সে একলা ঘরে বসে থাকে, তখন কোন ফেলে আসা অতীতের ছায়া যা তার বর্তমানে এসে হানা দেয় ? সে ছায়া সত্যিই কি ফেলে অতীতেরই ছায়া? নাকি অতীতে ঘটে যাওয়া কোন নৃশংস পাপের অমর সাক্ষী যা আজ এত বছর পরেও অনিন্দ্যকে নীরবে, সকলের চোখের আড়ালে অনুসরণ করে চলেছে। তাকে প্রতি মুহুর্তে তার কৃতকর্মের কথা স্মরণ করিয়ে, তাকে ভয় ও অনুশোচনার জাঁতা কলে রোজ একটু একটু করে পিষে মারছে।

হঠাৎ ঘরের মধ্যে একটা দমকা হাওয়ার ছোটখাটো ঘুর্ণিঝড় ওঠে। বাতাস ক্রমশ ভারী হয়ে ওঠে বিশ্রী মানুষপোড়া গন্ধে। অনিন্দ্যর কানের কাছে ক্রমাগত ফিস ফিস শব্দে দুর্বোধ্য ভাষায় অনবরত কারা যেন কিছু বলে চলেছে। অনিন্দ্য জানে না এই ভাষার অর্থ কি? কিন্তু এই গলার আওয়াজ সে চেনে.. এই মানুষ পোড়া গন্ধটাও তার ভীষন রকম চেনা। মনে মনে সে ফিরে যায় তার ফেলে আসা অতীতে। তখন অনিন্দ্যর ক্লাস 12। যখন সে লাবনীকে প্রথম ভালো ভাবে লক্ষ্য করে। আঁটোসাটো টাইট চেহারা, ঘন চুল, ভরাট গাল আর কাজল কালো দুই চোখে ঠাসা নব যৌবনের উন্মাদনা । এই উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের মেয়েটি ক্লাসের অন্যান্য ষোড়শীদের যথেষ্ট ঈর্ষার কারণ ছিল। কম কাঠ খড় পোড়াতে হয়নি তাকে লাবনীকে ছিপে তুলতে।

স্কুল শেষে ওকে একঝলক দেখার জন্য দাঁড়িয়ে থাকা। রোজ সাইকেলে বাড়ি থেকে স্কুল, স্কুল থেকে বাড়ি পৌছে দিয়ে আশা। বাপের পকেট থেকে টাকা চুরি করে ওর জন্য গোলাপ, হেয়ার ব্যান্ড, ছোট খাটো সিটি গোল্ডের চেন, কিছুই বাদ রাখেনি। এত কাঠখড় পোড়ানোর পরে তারপর গিয়ে রাজি করাতে পেরেছিল। আজ বিকেলে তাদের দেখা করার কথা আছে, ওই গার্লস স্কুলের পেছনে বাঁশ ঝাড় টার পাশে। ভেবেই হেব্বি মজা হচ্ছিল অনিন্দ্যর। অনেক দিন ধরেই নজর ছিল এই মালটার ওপর, ওর ওই টাইট ফিগারের কথা ভেবে কতবার যে বাথরুমে....

একটা বাঁকা হাসি খেলে যায় অনিন্দ্যর মুখে। আজ কিস করতে চাইবে আর ওখানেও....খিকখিক করে নিজেই হাসতে থাকে। চেহারা সুন্দর হলেই, মানুষের মনও যে সুন্দর হবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। লাবনী দেখতে, শুনতে সুন্দরী সুকায়া-বিশিষ্টা নব- যৌবনসম্পন্না হলেও, তার চরিত্রের অন্যতম নোংরা বৈশিষ্ট্য ছিল তার বহুগামিতা। কারন তার বাড়ির লম্পট বাপ আর বেশ্যা মায়ের সু-শিক্ষার ফলস্বরুপ এই মহান গুন গুলো সে অধিকার করেছিল। আর বলাই বাহুল্য, যে যৌবন দেবী তার শরীরের সর্বাঙ্গে যৌবন-উন্মাদনা কিঞ্চিৎ বেশিই অনুপ্রবেশীত হয়েছিল।

শুধু এই স্কুলের অনিন্দ্য নয়, অনিন্দ্যর মতো আরও বা বেশ কয়েকটি ছেলের সঙ্গেই তার রোজকার সম্পর্ক বা বলা ভালো ব্যাবসা ছিল। সবার সাথেই হাসি ঠাট্টা প্রেম, সুক্ষ্ণ চাপা যৌনতার অভ্যাস, একটু ক্লোজ কাট একটু ছোঁয়ায় মজিয়ে রাখা, ইত্যাদির মাধ্যমে তার নিজের টিফিন থেকে নেলপালিশ রুমাল থেকে ব্যাগ, কলম প্রসাধনী সব কিছুরই ব্যাবস্থা খুব ভালো ভাবেই হয়ে যেত। তবে খুব সন্তর্পণে। তার কোন প্রেমিকই তার অপর প্রেমিক সম্পর্কে জানত না। তবে কিনা দশ দিনের চোর একদিন ধরা পরে। লাবন্যও পরল।

বেশ কিছু উপহার, একটা মোবাইল, রুপোর পায়ের তোড়ার বিনিময়ে, লাবন্য এক পয়সাওয়ালা আশিকের ক্যামেরার সামনে নিজের আবরণহীন শরীর কে তুলে ধরেছিল, নির্দ্বিধায় নিজের কুমারিত্ব কে ছুড়ে ফেলে ফিয়ে উদ্দাম যৌনতায় মেতে উঠেছিল লাবন্য। সেই নগ্ন সন্ধ্যার প্রত্যেকটা মুহুর্ত ক্যামেরা বন্দি হয়েছিল। পরবর্তীতে যা ঘুরতে থাকে সমবয়সীদের, মোবাইলে -মোবাইলে। এবং শেষ পর্যন্ত অনিন্দ্যর হাতেও এসে পৌছয় সেটা। অনিন্দ্য রাগে হিংসায় জ্বলতে থাকে দাউ দাউ করে। না ভালোবাসার আঘাতে নয়। ভালো ফালো সে এমনিতেও বাসতোনা। কিন্তু সে ভালোবাসত লাবন্যর শরীর টাকে, তিল তিল করে ধৈর্য ধরে ছিল, কবে লাবন্য তাকে দেবে সেই বেডরুমের টিকিট। কিন্তু এইভাবে নিজের শিকার কে অন্য হাতে চলে যেতে দেখে, সে নিজেকে আর শান্ত রাখতে পারে না। সে একটা প্ল্যান করে। জঘন্য অপরাধের প্ল্যান।

সেদিনই সন্ধায় পুরোনো রেল কলোনির পরিত্যক্ত রেল কোয়ার্টার গুলোর একটায় সে দেখা করল লাবন্যর সাথে। লাবন্যকে দেখা মাত্র অনিন্দ্য মৃগ মাংস লোভি শ্বাপদের ন্যায় তার ওপর ঝাপিয়ে পরে, তার সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু লাবন্য পাকা ব্যাবসায়ী। জলের দরে ফলের রস দিতে সে রাজি নয়। সে তীব্র ধাক্কায় ঠেলে সরিয়ে দিল অনিন্দ্যকে। অনিন্দ্য উঠল, দাঁতে দাত চেপে রাগে গজ গজ করতে করতে বলল,
"শালি কুত্তি, তুই আমার পয়সা খেয়ে, অন্য ছেলের সাথে মারিয়ে বেড়াচ্ছিস? আর আমি চাইলেই, যত ন্যাকামো! চুপচাপ আমার কাছে আয় বলছি.."

এবার লাবন্যও মুখ খোলে। রগরগে শ্লেষাত্মক ভঙ্গিতে বলে, " থুঃ! শালা। ভিখারির বাচ্চা.. তুই কিনা আমার সঙ্গে শোওয়ার স্বপ্ন দেখিস? থোবড়া টা দেখেছিস আয়না তে? আর পয়সা? ওই সামান্য লিপস্টিক খাতাপত্রের বদলে যে তোকে ছুঁতে দিই, তোর ভাগ্য সেটা। শালা,.. রাস্তা ছাড় যেতে দে.." বলে বেরোতে যায় লাবণ্য, কিন্তু পরক্ষণেই থমকে যায়। তার পথ আটকে দাঁড়িয়ে অনিন্দ্য।

moon-g4f247370a_1920.jpg

image source

( ক্রমশ )

Sort:  
 2 years ago 

আপনার আগের পর্ব গুলো পড়ি নি।তাই এটি পড়ে বুঝলাম না। আপনার গল্প লেখার দক্ষতা অনেক।

 2 years ago 

আগামী পর্বগুলো মিস করেছি। এই পর্ব পড়ে তাই ভালো বুঝতে পারি নাই। যাই আগে আগের পর্বগুলো পড়ে আসি। আপনার গল্প লেখার কোয়ালিটি অনেক ভালো।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.15
JST 0.028
BTC 57527.13
ETH 2375.07
USDT 1.00
SBD 2.42