( ডার্ক থ্রিলার ) ব্লাডি নেমেসিস | অঙ্কিতা - দ্বিতীয় পর্ব ( 10% For @shy-fox )

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

2.png
image source

মনে মনে চিন্তা-ভাবনার জাল বুনতে বুনতে একনাগাড়ে হেঁটেই চলেছিল অনিন্দ্য। প্রায় বাড়ির কাছাকাছি চলে আসতেই, আরো একবার তার চিন্তার স্রোতে বাঁধ নামল। কিছুক্ষণ আগে তার পাশ দিয়ে সাইরেন বাজিয়ে চলে যাওয়া অ্যাম্বুলেন্স টিকে ফিরে আসতে দেখল সে, বোঝাই যাচ্ছে পেশেন্ট রেখে এলো হয়ত হস্পিটাল থেকে। হঠাৎ একটা খটকা লাগে তার। অ্যাম্বুলেন্সটা এত তাড়াতাড়ি পেশেন্ট নামিয়ে যাচ্ছে মানে কাছাকাছি সামনেই কোথাও কোন কলোনিতে পেশেন্ট কে নামিয়ে গিয়েছে।

সামনে তো তাদেরই পাড়া। পাড়াতে আবার কার কি হল! এবার সে যথেষ্ট দুশ্চিন্তা অনুভব করে। তার বাবার হার্টের অবস্থা ভালো নয়, ডাক্তার কাকু বার বার সাবধান করে দিয়েছিলেন, যে কোন ধরনের উত্তেজনাই তার বাবার পক্ষে প্রাণঘাতী হতে পারে। উপরন্তু সে কাল থেকে বাড়ি ফেরেনি। তার মানে কি?... আশঙ্কার কালো মেঘ যেন তার মুখের ওপর ধীরে ধীরে নেমে আসে।

আরো দ্রুত পা চালায় অনিন্দ্য। যত দ্রুত সম্ভব তাকে বাড়িতে পৌছতেই হবে । বাড়িতে গিয়ে একবার সবাইকে সুস্থ নিরাপদ দেখতে পেলেই তার শান্তি।আর কিচ্ছু চাইনা।

কতকটা হেটে, কতকটা দৌড়িয়ে, কোনমতে প্রায় মিনিট কুড়ি পরে অনিন্দ্য হাঁপাতে হাঁপাতে নিজের পাড়ায় এসে ঢুকল।পাড়ার গলি দিয়ে যেতে যেতে পাড়াটা কেমন যেন সময়ের তুলনায় বেশি নিস্তব্ধ মনে হল । তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে বাড়ির সামনে এসে, সদর দরজা খোলা দেখে হন্ত-দন্ত হয়ে বাড়িতে ঢুকতে গিয়েই হঠাৎ থমকে যায় অনিন্দ্য। বাড়ির ভেতর থেকে ক্রমশ ভেসে আসে, সমবেত মহিলা কন্ঠের গভীর শোকে নিমজ্জিত ক্রন্দনধ্বনি, সাথে পাড়া প্রতিবেশী লোকজনের পারস্পরিক গুঞ্জন, ক্রন্দনরতাদের প্রতি বয়স্কাদের কান্না-ভেজা স্বান্তনা বাণী।

অর্থাৎ!! এতক্ষন মনের আবছা অন্ধকারে স্মৃতির যেই অগোছালো টুকরো গুলো ধরা দিয়েও দিচ্ছিলনা। সেগুলো হঠাৎই যেন সাজানো ধাঁধার মত, স্মৃতির অতল থেকে উঠে এসে মনের আয়নায় পরিস্কার ভাবে ফুটে উঠল। অনিন্দ্য এবার ধীর এবং শান্ত পদক্ষেপে বাড়ির ভেতরে এসে ঢুকল। বাড়ি ভর্তি পাড়া- প্রতিবেশীর লোকজন, তাদের মধ্যে পুরুষের দলটি দেহ-সৎকারের জোগার-যন্ত করতে ব্যস্ত। কেউ-কেউ বাঁশের মাচা বানাচ্ছে, কেউ অন্যান্য আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র এনে জোগাড় করছে। মা বোন দুজনেই তার বৌদির কাঁধে মাথা রেখে অঝোরে কেঁদে চলেছে। বৌদি কাঁদতে কাঁদতে মা আর বোন কে কোনরকমে সামলানোর চেষ্টা করছে। মৃতদেহটি উঠোনের মাঝামাঝি শোওয়ানো। পুরো দেহটাই সম্পুর্ণ সাদা কাপড়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।

তার দাদা কেমন যেন পাথরের মত ভাবলেশহীন ভাবে মৃতদেহ আগলে বসে রয়েছে। ভেতরটা কেমন যেন মোচড় দিয়ে ওঠে অনিন্দ্যর। অদৃষ্টের এই নিষ্ঠুর পরিহাস প্রত্যক্ষ করার জন্যই কি ঈশ্বর তাকে এখানে নিয়ে এসেছে? হঠাৎ পাশের ঘরের বারান্দা থেকে এক প্রায় উন্মাদ বৃদ্ধ পরি কি মরি করে উঠোনে এসে পরে, হোঁচট খেয়ে প্রায় হামাগুড়ি দিতে দিতে মৃতদেহটির ওপর ঝাপিয়ে পরে... প্রবল শোকে উন্মাদের ন্যায় হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। টানা-হেঁচড়ায় লাশের মুখ থেকে কাপড় টা সরে গিয়ে, মুখটি দৃশ্যমান হয়।

অনিন্দ্য আর অঙ্কিতা একে অপরকে ঘনিষ্ঠতম আলিঙ্গনে আবদ্ধ করে, কোন এক স্বপ্নিল ঘোরে ডুবে রয়েছে যেন।
আজ আর অনিন্দ্যর মনে কোন সংশয় নেই। সে পূর্ণ আজ। তার অঙ্কিতা শুধু তার। তার অঙ্কিতা যেন তার মন, আত্মা. শীড়া- উপশীরার প্রতিটি রক্তবিন্দুতে আজ মিশে গেছে। ভালোবাসা বোধহয় একেই বলে!
অঙ্কিতার শরীরের স্নিগ্ধ মাদকতার গন্ধে ভরে উঠছিল অনিন্দ্যর মন, প্রাণ, দেহ। এক মিষ্টি অথচ তীব্র নেশা ক্রমশ আচ্ছন্ন করছিল তাকে। ঠিক সেই মুহুর্তে অনিন্দ্যর মাথার পেছনে বীভৎস জোরে কে যেন গভীর আঘাত করে। পরক্ষনেই যেন একটা ধারালো কিছু অনিন্দ্যর পিঠে আমূল ঠেলে ঢুকিয়ে আবার পরক্ষণেই সেটাকে মোচড় দিয়ে টেনে বের করে নেয় কেউ। অমানবিক যন্ত্রণায় অনিন্দ্য চিৎকার করে ওঠে। অঙ্কিতা ভয়ে আঁতকে উঠে এক দিকে সরে যায়। মাথায় ও পিঠে সেই মরণ ক্ষত নিয়েও হিংস্র চোখে ঘুরে দাঁড়ায় সে আততায়ীর দিকে, শরীরে অসহ্য যন্ত্রণা তখন তার। মাথা ফেটে রক্ত গড়িয়ে পরছে কান ও মাথা দিয়ে, পিঠের গভীর দগদগে ক্ষত থেকে অনবরত রক্ত গড়িয়ে ভীজে উঠেছে পরনের শার্ট। চোখে ক্রমশ ঝাপসা দেখে অনিন্দ্য। বুঝতে দেরি হলেও, রাহুলকে এতক্ষনে চিমতে পারে সে। এই ছেলেটিকে কলেজ লাইফ থেকেই সে বেশ ভালো মতো চেনে। তার এমনটা করার কারনও সম্ভবত অনিন্দ্য ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে।

তবুও এখন নিজেকে নিয়ে একটুও ভাবছে না অনিন্দ্য। তার চিন্তা অঙ্কিতাকে নিয়ে। তার প্রধান ভয় এই যে ছেলেটাকে না আটকাতে পারলে সে হয়ত অঙ্কিতার কোন ক্ষতি করে বসবে । তাই যে করেই হোক একে আটকাতে হবে। কিন্তু শরীরের মারণ ক্ষত গুলো তাকে ছাড় দেবে কেন? সেগুলো যেন ক্রমড বিষিয়ে উঠছে। খুব দুর্বল লাগে অনিন্দ্যর। একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে রাহুলের হাতের ধারালো ছুরিটার দিকে। পরক্ষনেই রাহুলের ওপর আহত বাঘের মত ঝাঁপিয়ে পরে। কিন্ত আজকের দিনটা অনিন্দ্যর ছিল না। রাহুল যেন এটারই অপেক্ষা করছিল, অনিন্দ্য তার ওপরে ঝাপিয়ে পরতেই কায়দা করে ছুরিটা এক স্ট্রোকেই পুরোটা ঢুকিয়ে দেয় অনিন্দ্য পেটে, পরক্ষণেই ছুড়িটিকে পেটের ভেতরেই মুচড়ে, টেনে তার পেটে চামড়া প্রায় ফালা ফালা করে দিয়ে হ্যাঁচকা টানে ছুড়িটা বের করে আনে। তীব্র যন্ত্রণায় বিভৎস চিৎকারে নিস্তব্ধ এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে, তলপেটের সেই ভয়ানক ক্ষতস্থান থেকে গলগল করে বেরিয়ে আসে রক্ত-মাংসের ধারা। রক্ত-মাংসের আঁশটে গন্ধে ভারী হয়ে উঠেছে সেখানকার বাতাস। এরপর রাহুল আবার ছুরি হাতে উদ্যত হতেই অনিন্দ্য তার শরীরের অবশিষ্ট সবটুকু শক্তি দিয়ে ঝাপিয়ে পরে রাহুলের ওপর, ধস্তাধস্তিতে রাহুলের হাত থেকে ছুরিটা ছিটকে পরে কোথাও। এবার অনিন্দ্যর প্রবল আক্রোশে তার বুকের ওপর চেপে বসে গলা টিপে ধরে দুই হাতে। অনেক চেষ্টা করেও ছেলেটা অনিন্দ্যর হাত থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারেনা। শ্বাসকষ্টে ছেলেটা প্রায় জ্ঞান হারায় এমন সময়, প্রবল আক্রোশে একটি ছুরি, অনিন্দ্যর গলার পেছন থেকে, মাঝ বরাবর এপার ওপার করে আমুল গেঁথে দেয় কেউ। অনিন্দ্য এবার আর পারে না, অস্বাভাবিক বিষাক্ত যন্ত্রনায় মাটিতে লুটিয়ে পরে সে। মুখ দিয়ে চিৎকারের জায়গায় অস্ফুট প্রবল যন্ত্রণাসিক্ত সাঁই সাঁই শব্দ বের হয়। আর এরই সাথে পাল্লা দিয়ে খল্-খল্ খল্-খল্ শব্দে বের হতে থাকে তাজা লাল রক্ত।

অসহ্য অমানুষিক যন্ত্রণায়, কাটা পাঠার মত হাত পা ছুঁড়তে থাকে সে। ঘন গভীর অন্ধকার নামতে থাকে অনিন্দ্যর চোখে। শেষবারের মত চোখ বোজার সে দেখল তার সামনে রক্তাক্ত ছুরি হাতে, তার দেহে দিকে দাড়িয়ে আছে অঙ্কিতা, অনিন্দ্যর আদরের অঙ্কু। রাহুল জামাকাপড় ঝারতে ঝারতে হাসিমুখে অঙ্কিতার দিকে এগিয়ে যায়। রাহুল অঙ্কিতা একে অপরকে গভীর চুম্বনে ভরিয়ে তোলে।

রাহুল এবার এক বিশ্রী বাঁকা হাসি, মুখে নিয়ে অঙ্কিতাকে বল্ল, "প্ল্যান সাকসেসফুল তো ডার্লিং । চলো আর দেরি কেন? অনির খেল খতম্ ! মালটা প্রায় মরেই গেছে। চলো। "
"দাঁড়াও! এখনো কাজ শেষ হয়নি! ওই দেখো ওর ঠোঁট টা এখনো তির তির করে কাঁপছে, আধবোজা চোখে তাকিয়ে দেখছে কিভাবে আমাদের!
আহারে..চ্চু চ্চু চ্চু চ্চু ... বেচারা." - অঙ্কিতার মুখ থেকে শ্লেষ মিশ্রিত কয়েকটি শব্দ ভেসে আসে।

রাহুল অবাক হয়,জিজ্ঞাসা করে,"আর কি করবে? " অঙ্কিতা বাঁকা হেসে বলে, " জাস্ট ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ মাই ডিয়ার সুইট হার্ট " বলেই পাশের ঝোঁপের সামনে থেকে, একটি বড় পাথর তুলে আনে। কোন রকমে সেটাকে তুলে ধরে কিছুটা উঁচুতে এরপর সজোরে এনে আঘাত করে প্রায় সংজ্ঞা হারানো অনিন্দ্যর মুখের ওপর...ফিনকি দিয়ে রক্ত ছিটকে আসে, আবারও পাথর টাকে তুলে নিয়ে পুনরায় সজোর আঘাত করে অনিন্দ্য থেতলে যাওয়া মুখে ওপর। আবারও পাথর তোলে, আবার আঘাত করে এই ভাবে বেশ কয়েকবার একই পক্রিয়ার পুনরাবৃত্তি হয়। প্রতিবার আঘাতের সাথে সাথে অনিন্দ্যর রক্তাক্ত দেহ টা কেঁপে কেঁপে ওঠে! আবার পরক্ষণেই নিস্তেজ হয়ে যায়।

ওর্না দিয়ে মুখে ছিটকে আসা রক্ত মুছে, তৃপ্ত মুখে অঙ্কিতা বলে, "এবার চলো। আসলে আমি কোন রিস্ক নিতে চাই না। বুঝলে রাহুল বাবু!! অঙ্কিতার বুদ্ধিমত্ত্বায় রাহুল খুব খুশি হয়। সে গিয়ে জড়িয়ে ধরে অঙ্কিতাকে, গভীর হিংস্র যৌনাতার নেশায় ডুবে যেতে থাকে তারা।

(ক্রমশ )

moon-gb5e111fff_1920.jpg
image source

Sort:  
 2 years ago 

এমাজিং!

অসাধারণ আপনার লেখনি দক্ষতা। খুব সুন্দর ভাবে আকৃষ্ট করে ধরে রাখতে পারেন আপনার লেখনীর মাধ্যমে। গল্পটি যখন পড়া শুরু করছিলাম তখন আর এড়িয়ে যেতে পারিনি। আপনার সচ্ছল সুন্দর উপস্থাপনা দেখে পুরোটাই পড়ে ফেললাম।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.13
JST 0.029
BTC 65834.37
ETH 3292.65
USDT 1.00
SBD 2.70