গল্প:- এক আলোকিত ব্যক্তির গল্প।
আমি @tuhin002, আমি আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যগনকে আমার পক্ষ থেকে জানায় সালাম," আসসালামু আলাইকুম" সবাই কেমন আছেন ? আশা করি, মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে অনেক ভালো আছেন। আমি ও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান আল্লাহুর অশেষ রহমতে ভাল আছি। আজকে আমি আলোচনা করবো, গল্প- কষ্টের অর্জিত ফল। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। তাই শুরু করছি আমার আজকের ব্লগ...
এক আলোকিত ব্যক্তির গল্প।
আজকে আমি আপনাদের মাঝে এমন এক ব্যক্তির জীবন সম্পর্ক নিয়ে আপনাদের সামনে তুলে ধরবো, যার জীবন কাহিনী শুনে আপনারা অবশ্যই তাকে বাহবা দিবেন। তিনি আমাদের গ্রামের স্বনামধন্য একজন ব্যক্তিত্ব। যার সুনাম ছিল আমাদের গ্রামের প্রতিটা মানুষের মুখে মুখে। আজকে আমি যে ব্যক্তি সম্পর্কে আমাদের সামনে তুলে ধরব ইনার নাম হলো, আইয়ুব মাস্টার। জি তিনি একজন মাস্টার। বর্তমান যুগের মাস্টার এবং তার সাথে আকাশ-পাতল। তিনি শুধু একজন মাস্টারি ছিলেন না তিনি ছিলেন একজন আদর্শ মানুষ। যার আদর্শে অনুকৃত হয়ে আমাদের গ্রামে যুগে যুগে বহু ভালো মানের মানুষ এবং ছাত্র আজ অনেক বড় বড় জায়গায় চাকরিরত রয়েছেন। তিনি আমাদের গ্রামের আলোকবর্তিকা। তিনি আমাদের গর্ব আমাদের অহংকার।
আমি আজকে তিনার জীবনী নিয়ে সংক্ষেপে আপনাদের সামনে কিছু আলোচনা করবো, আশা করি অবশ্যই আপনাদের ভালো লাগবে ।
আমি আজকে আপনাদের মাঝে যে কথা গুলো বলবো এই কথা গুলো ১৯৯৮ থেকে ৯৯ সালের কথা। সে সময় আমি একেবারেই ছোট। মাঝে মধ্যে স্কুলে যেতাম আবার যেতাম না। স্কুল বিষয়টা তখন আমার খুব একটা ধারণা ছিল না। এরপরে কয়েক বছর যখন কেটে গেল, তখন আমি ক্লাস থ্রিতে পড়ি। তখন যথেষ্ট বুঝতে পারতাম সবকিছু। আমাদের শ্রদ্ধেয় স্যার ছিলেন প্রাইমারি স্কুলের হেডমাস্টার। তিনি এতটা সচেতন ছিলেন যদি তিনি ক্লাস টু এ ক্লাস নিয়েছেন তো পঞ্চম শ্রেণ ঘরে গিয়ে ছাত্র ছাত্রীদেরকে ধমক দিয়ে এসেছেন। তিনি সবসময় ছাত্র-ছাত্রীদের এবং শিক্ষকদের পড়ার মধ্যে রাখতেন। সেই সময় প্রতি বছরে আমাদের স্কুল থেকে এক থেকে দুইজন হলেও বৃত্তি পেয়েছেন। আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন সেই সময় বৃত্তি পাওয়াটা কিন্তু অনেক কঠিন ব্যাপার ছিল। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষকদের সময় মত স্কুলে পৌঁছাতে হবে। প্রতিদিন প্রতিটা ছাত্রদের পড়াশোনা করে আসতে হবে। শিক্ষকদের টাইম মতো ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস নিতে হবে। এক কথায় একজন হেডমাস্টার হিসাবে ভালো একটা স্কুল পরিচালনা করার জন্য যে সব গুন থাকার দরকার সব গুলো উনার মধ্যে ছিল। আর এর জন্য তিনি ছিলেন স্কুলের মধ্যমনি। প্রতিটা ছাত্রছাত্রী অভিভাবক সবাই তিনাকে খুব ভালবাসতেন।
ওই সময় আমাদের গ্রামে শুধু প্রাইমারি স্কুল এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছাড়া অন্য কোন প্রতিষ্ঠান ছিল না। এমনকি এসব স্কুলে ছাত্র-ছাত্রী আসতো এক হাঁটু কাঁদার মধ্য দিয়ে। আমাদের স্কুলে আসার যে রাস্তাঘাট গুলো ছিল খুবই খারাপ অবস্থা। এর ফলে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী অনেক কম আসতো। এইসব দিক বিবেচনা করে তিনি একদিন সবাইকে ডেকে বলেন আমাদের এই গ্রামের রাস্তা তৈরি করতে হবে। আর এর জন্য যা করার দরকার আমি করবো আপনার শুধু সহযোগিতা করবেন। ইনশাআল্লাহ তার কথাতে একদিন আমাদের গ্রামে রাস্তা হয়ে গেল। আমাদের পড়া গ্রাম ছিল অন্ধকারছন্ন। নিশ্চয় আপনারা বুঝতে পেরেছেন তারমানে আমি কারেন্টের কথা বলছি। আমাদের গ্রামে কোন কারেন্ট ছিল না আর এই কারেন্ট নিয়ে আসার পেছনে আমাদের এই শ্রদ্ধেয় ভাজনের পুরাপুরি অবদান ছিলো। শুধু এই নয় পরবর্তীতে ইউনিয়ন কমপ্লেক্স ভূমি অফিস সবকিছু এই লোকটার অবদানে আমাদের গ্রামে হয়েছে। একজন আদর্শ সচেতন মানুষ হিসাবে একটা গ্রামের উন্নয়নের জন্য যা কিছু দরকার সব দিনই করেছেন। এখন পর্যন্ত আমাদের গ্রামের মানুষ তাকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। যদিও তিনি আজ বেঁচে নেই তবুও তার কথা সবাই বলে থাকেন।
তিনি একদিকে যেমন স্কুলের ভালো শিক্ষক ছিলেন। অন্যদিকে যেমন গ্রামের উন্নয়নের প্রাণকেন্দ্র ছিলেন। আবার দিনে অন্যের ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ বাড়ানোর জন্য তিনি সবই করতেন। পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন আদর্শ বাবা। বাবা হিসেবে তিনার সন্তান ছিলো পাঁচ জন। এর মধ্যে তিনজন ছেলে দুইজন মেয়ে। দুইটা মেয়ে এবং তিনজন ছেলেকে উভয়কেই সুশিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। এর মধ্যে মেজো ছেলেকে তিনি ভারতের কলকাতায় গিয়ে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। তিনার প্রতিটা মেয়ে এবং ছেলেরা আজ প্রতিষ্ঠিত। এবং ছোট ছেলে বর্তমানে খুবই বড় একটা পজিশনে রয়েছেন। সব মিলিয়ে তিনি পরিবারের একজন আদর্শ বাবা হিসেবে গড়ে উঠেছেন।
তিনি এমন একজন ব্যক্তি ছিলেন যিনি জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত শুধু মানুষের মঙ্গল কামনা করেছেন। তিনি সব সময় চাইতেন যে প্রত্যেকটা মানুষের ছেলেরা লেখাপড়া শিখুক, তারা মানুষ হোক তারা গ্রামের মুখে উজ্জ্বল করুক। তিনি যেমন নিজের সন্তানদেরকে মানুষের মত মানুষ করে তুলেছেন, ঠিক তেমনি অন্য মানুষও যেন তাদের । তিনার গুণাগুণ বলে আমি শেষ করতে পারবো না। বর্তমানে যদি এ ধরনের লোক আমাদের সমাজে আমাদের দেশে থাকতো তাহলে দেশ আরো উন্নতি হতো। এই ঘুনে ধরা সমাজ আরো এগিয়ে যেতো। তিনি আজ নেই কিন্তু আমরা সবাই এখন পর্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি এবং স্মরণ করে যাবো। আমি সর্বশেষ সেই মহান ব্যক্তির মাগফিরাত কামনা করছি এবং আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকামে পৌঁছিয়ে দেয় সেই কামনাই করি।
ভূল ত্রুটি হলে অবশ্যই ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এই প্রত্যাশায় নিয়ে শেষ করছি। আল্লাহ হাফেজ। |
---|
আজ এই পর্যন্ত। সাথে থাকার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
ডিভাইস | poco M2 |
---|---|
লোকেশন | মেহেরপুর |
ভূল ত্রুটি হলে অবশ্যই ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এই প্রত্যাশায় নিয়ে শেষ করছি। আল্লাহ হাফেজ। |
---|
👨🦰আমার নিজের পরিচয়👨🦰
আমি আবুল বাশার খায়রুল আলম তুহিন। আমার বাসা মেহেরপুর জেলা,গাংনী থানা, জুগীর গোফা গ্রাম। আমি বিবাহিত। বর্তমানে আমার একটা পুত্র সন্তান আছে। আমি গ্রাজুয়েশন শেষ করেছি রাজশাহী নিউ গভমেন্ট ডিগ্রী কলেজ থেকে। আমার পক্ষ থেকে আপনাদের জানাই প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আমার মাতৃভাষা বাংলা। আমি বাংলা ব্লগে কাজ করতে অনেক ভালোবাসি। এই ব্লগে কাজ করার মাধ্যমে আলাদা প্রশান্তি পায়। আমি ছবি আঁকতে,গান গাইতে,কবিতা লিখতে অনেক পছন্দ করি। এছাড়া আমি বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে খুব পছন্দ করি। সংক্ষিপ্ত আকারে আমার নিজের পরিচয় আপনাদের মাঝে শেয়ার করলাম। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। আমার পক্ষ থেকে আপনাদের জন্য শুভকামনা রইলো।
(১০% প্রিয় লাজুক খ্যাঁক এর জন্য )
VOTE @bangla.witness as witness
OR
!upvote 40
This post was manually selected to be voted on by "Seven Network Project". (Manual Curation of Steem Seven). Your post was promoted on Twitter by the account josluds
the post has been upvoted successfully! Remaining bandwidth: 160%
Your post has been rewarded by the Seven Team.
Support partner witnesses
We are the hope!
https://twitter.com/ABashar45/status/1692887176978260351?t=M6-Sf6Fag5MSW65OhAMDAg&s=19
খুব সুন্দর একজন মানুষের আত্মজীবনী আমাদের সাথে শেয়ার করলেন। আসলে আমাদের প্রতিটি গ্রামে কিংবা প্রতিটি মহল্লায় এমন কিছু গুণীজন মানুষ থাকেন। যাদের আদর্শে পুরো গ্রামের মধ্যে ভালো একটি প্রভাব পড়ে। এমন মানুষ আমাদের সমাজে প্রতিনিয়ত দরকার। বর্তমান সময়ে এমন আদর্শ মানুষ খুঁজে পাওয়া খুবই মুশকিল। আপনার স্যারের কথা শুনে খুবই ভালো লাগলো। অনেক সুন্দর ভাবে আপনি বিশ্লেষণ করলেন আমাদের সাথে।
সত্যি আপু তিনি ছিলেন অনেক মহৎ একজন ব্যক্তি। আমাদের গ্রামের জন্য তার অবদানের কথা বলে শেষ করতে পারবো না। আল্লাহ তাকে বেহেস্ত নসিব করুক। আমিন
সত্যি কথা বলতে কি একজন আদর্শ মানুষ সব জায়গাতেই পারফেক্ট হয়ে থাকেন।একটা ছোট উদাহরন দেই তবে বুঝবেন।একটা অন্ধকার জায়গায় একটা ছোট আলো রাখলে যেমন তার ওই ছোট আলোতে সমস্ত ঘরের কোনায় আলো পৌঁছে যায়। ঠিক তেমনি একজন আলোকিত মানুষ যেখানেই থাক না কেন,তার আলো যব জায়গাতেই ছড়িয়ে পরে। তাইতো স্যার যেমন সফল শিক্ষক,তেমনি সফল বাবা।আবার গ্রামের মাঝেও তার প্রভাব পরে।অনেক ভালো লাগলো এমন একজন মানুষের কিছুটা জীবনী জেনে।
একটি সমাজে অনেক মানুষ বসবাস করে। অনেক ভালো মানুষও থাকে কিন্তু দায়িত্ব কয়জন গ্রহণ করে। নিজের স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে মানুষের জন্য গ্রামের জন্য কিছু করাটা এখনকার সময় অনেক কঠিন ব্যাপার। আর এত কঠিন কাজ গুলো তিনি করে দেখেছিলেন। যাহোক ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
মামা আপনি আজকে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন আপনাদের গ্রামের এক স্বনামধন্য ব্যক্তি কে নিয়ে একটি পোস্ট লিখে। আসলে সেই মানুষটার অবদান আপনাদের গ্রামের লোক কখনোই ভুলতে পারবে না আমি মনে করি। আসলে মানুষটা তার ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য এবং গ্রামের উন্নয়নের জন্য অনেক অবদান রেখেছে। গ্রামের প্রাইমারি স্কুল থেকে হাই স্কুল ইউনিয়ন পরিষদ সবকিছুই তার নিজস্ব জমির উপরে প্রতিষ্ঠিত। সে মানুষটি পৃথিবী থেকে অনেক আগেই বিদায় নিয়েছে তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। ধন্যবাদ মামা এত সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
হুম ঠিকই বলেছো ভাগ্নে তার অবদান আমাদের গ্রামের জন্য অপরসিম। কিনার মত এমন মহৎ ব্যক্তি ছিল বলেই আজকে আমাদের গ্রামটা আর দশটা গ্রামের থেকেও অনেক উন্নতি লাভ করেছে। যেকোনো কাজের জন্য মানুষ এখন আমাদের গ্রামেই আসে।