তিতিরের মা....( শেষ পর্ব)
তিতির একদিন অফিস থেকে ফিরে তার মা কে জানালো দুইদিন পরে তাদের বাসায় একজন অতিথি আসবেন, এবং বেশ কিছুদিন তিনি তাদের বাসায় থাকবেন। উনি তিতিরের অফিসের বড় লেবেলের একজন গেস্ট, তার উপর অনেক কিছু ডিপেন্ড করছে। সুতরাং তার যেন কোন অসুবিধা না হয়, তিতির তার মা কে বেশ ভালো করে বুঝিয়ে বললো। তার অসুবিধা হলে, বা তিনি কোন কারণে অসন্তুষ্ট হয়ে রেগে গেলে তাদের অফিসের রানিং বেশ বড় একটা প্রজেক্ট এ বেশ ভালো হ্যাম্পার করবে -এই কথাটা তিতির বেশ ভালো করে তার মায়ের মাথায় গেঁথে দিলো। তিতিরের মা শুনে বেশ বেজার মুখে অনেক গুলো প্রশ্ন করলেন, এত হোটেল থাকতে বা এত কলিগ থাকতে তিতিরদের বাসাতেই কেন থাকতে হবে তাকে? তিতির বেশ গুছিয়েই তার মায়ের সব প্রশ্নের উত্তর দিলো। সেই গেস্ট স্যার নাকি অনেক রাগী, তার বাহিরের খাবার খাওয়ার অভ্যেস নেই- তাই কোন হোটেলে থাকা তার পক্ষে সম্ভব না। আবার তিনি বাচ্চাদের গ্যাঞ্জাম সহ্য করতে পারেন না- তাই অন্য কোন কলিগদের বাসাতেও তাকে রাখা যাবে না। যেহেতু তিতিরদের বাসায় শুধু তিতির আর তার মা- তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই অফিসের বস তাকে রিকোয়েস্ট করেছেন কতেকটা দিন ম্যানেজ করে নিতে এবং তাদের সেই গেস্ট এর ভালো করে খেয়াল রাখতে। অবশেষে অনিচ্ছা সত্ত্বেও তিতিরের মা কে রাজি হতেই হলো।
দুই দিন পর তিতিরদের বাসায় সেই গেস্ট এলেন। এবং এসেই তিনি তিতিরের মায়ের এটা ওটা সেটা নিয়ে হাজারটা খুঁত ধরা শুরু করলেন। তার এটা পছন্দ হয় না, ওটা পছন্দ হয় না। এতদিন যে তিতিরের মা অন্যের দোষ খুঁজে বের করতো, তিনি নিজে এখন নিজের দোষের লিস্ট অন্যের হিসেবে দেখে নিজেই ভীষণ বিরক্ত হয়ে গেলেন। কিন্তু সহ্য করা ছাড়া তার কাছে আর কোন অপশন ও নেই। কারণ গেস্টের মনমতোন না হলে তিতিরের চাকরিতেও খারাপ ইমপ্যাক্ট ফেলবে। আশ্চর্যজনক ভাবে দশম দিনের পর থেকে সেই গেস্টের ব্যবহার সম্পূর্ণ ভাবে বদলে গেলো। মানে তিতিরের মায়ের সাথে সেই দিন থেকে তার বেশ ভালো রকমের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেলো। এভাবে চললো আরো কিছু দিন। ওহো, আমাদের গেস্টের নাম ই তো বলা হয় নি। গেস্টের নাম ফজলে রাব্বী। তো এর মধ্যে ফজলে রাব্বী সাহেব তিতিরের মা এর বেশ পছন্দের মানুষ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। ওদিকে তার চলে যাওয়ার সময় উপস্থিত। তিতিরের মায়ের রীতিমতো মন খারাপ। চলে যাওয়ার দিন ফজলে রাব্বী সাহেব তিতিরের মায়ের কাছে গিয়ে তার প্রথম দিকের আচরণের জন্য আবারো মাফ চাইলেন। এবং বললেন, " আন্টি, আপনার সাথে চলে আমি বিগত কয় দিনে খুব ভালো করেই টের পেয়েছি যে, মানুষ এমন একে প্রাণী, চাইলেই মানুষের আসলে অনেক অনেক দোষ বা খুঁত খুঁজে বের করা সম্ভব। আবার চাইলেই সেই খুঁত সহ মানুষ টার সাথেই খুব ভালো ভাবে থাকাও সম্ভব। এখানে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গি। অপর মানুষ টা কীভাবে চলতে চাচ্ছে সেই বিষয়টিই অধিক গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ হিসেবে আমরা কেউই ১০০ ভাগ পরিপূর্ণ নই। সবারই কোন না কোন দিকে কিছু না কিছু আছে যেটা সকলের পছন্দ হবে না। কিন্তু আসলেই ভালো থাকার চেষ্টা চালিয়ে গেলে ভালো থাকা সম্ভব। "
কথা গুলো আসলেই তিতিরের মায়ের মনে ভালোভাবেই প্রভাব ফেলেছিলো। তিতিরের মা ধীরে ধীরে তার আগের বদ -অভ্যেস থেকে নিজেকে বিরত করে সকলের সাথে এখন ভালো ব্যবহার করা শুরু করেছিলেন। মায়ের এমন পরিবর্তন দেখে তিতির তো বেশ খুশী। এবারে একদিন তিতিরের অফিসের বস অফিসিয়াল ভাবেই তার ছেলেকে নিজে তিতিরদের বাসায় এলেন বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।ছেলে হিসেবে ফজলে রাব্বী কে দেখে তিতিতের মা তো এবার ভীষণ খুশি!! মেয়ের জন্য এমন বুঝদার এবং যোগ্য ছেলে পেয়ে তিনি আর না করলেন না। বরং বেশ হাসিমুখেই তিনি তিতিরের সাথে ফজলে রাব্বী সাহেব এর বিয়েটা দিয়ে দিলেন। এবং এরপর তারা সকলেই একসাথে মিলেমিশে আনন্দে দিন কাটাতে শুরু করলেন।
প্রিয় আমার বাংলা ব্লগবাসী, সবাইকে আমার নমষ্কার /আদাব। আশা করছি আপনারা সকলে ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন। আমিও মহান সৃষ্টিকর্তার আশির্বাদে এখন ভালো আছি।আজ আপনাদের সাথে হাজির হলাম কিছুদিন আগের শেয়ার করা গল্পের শেষ পর্ব নিয়ে। যা ইতিমধ্যে আপনারা পড়ে ফেলেছেন৷ পুরো গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো আপনাদের সেটা জানাবেন অবশ্যই। নতুন হাতের লেখার ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো। পাশাপাশি আপনাদের গঠনমূলক আলোচনা আমার সামনের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়...
এতক্ষণ সময় নিয়ে আমার পোষ্টটি পড়ার জন্য আপনাকে 🌼 ধন্যবাদ 🌼
আমি- তিথী রানী বকসী, স্টিমিট আইডি @tithyrani। জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী। পেশায় একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। বিবাহিতা এবং বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় বসবাস করছি।২০২৩ সালের জুন মাসের ১৯ তারিখে স্টিমিটে জয়েন করেছি।
ভ্রমণ করা, বাগান করা, গান শোনা, বই পড়া, কবিতাবৃত্তি করা আমার শখ। পাশাপাশি প্রতিদিন চেষ্টা করি নতুন নতুন কিছু না কিছু শিখতে, ভাবতে। যেখানেই কোন কিছু শেখার সুযোগ পাই, আমি সে সুযোগ লুফে নিতে চাই৷ সর্বদা চেষ্টা থাকে নিজেকে ধাপে ধাপে উন্নত করার।
ফজলে রাব্বি সাহেব গেস্ট হিসেবে তিতিরের বাড়িতে সেজে এসেছিল। প্রথম কয়েকদিন তিতিরের মায়ের সব বিষয়ে খুঁত ধরলেও, পরবর্তীতে তিনি খুঁত ধরা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। আর দেখতে দেখতে তিতিরের মায়ের সাথে ভালো একটা সম্পর্ক হয়েছিল ওনার। আর যাওয়ার সময় তিতিরের মাকে এমন কিছু কথা বলেছিল, যার কারণে নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছিল। পরবর্তীতে তিতিরের অফিসের বস নিজের ছেলেকে নিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দিতে এসেছিল এবং ফজলি রাব্বী সাহেবের সাথে তার বিয়ে দিয়েছিল শুনে ভালো লাগলো। এখন তাহলে তারা খুবই আনন্দে বসবাস করতেছে। আসলে কোন মানুষেরই খুঁত ধরা ঠিক না। কারণ একটা মানুষের মধ্যে কোনো না কোনো খুঁত রয়েছে। কোন মানুষ কখনোই সব দিক দিয়ে একেবারে পারফেক্ট হয় না।
জি আপু। সব মানুষের মাঝেই কোন না কোন খুঁত রয়েছে। আমরা এভাবেই তৈরি। তাই কোন মানুষের ই খুঁত ধরে বেড়ানো টা ঠিক নয়। আপনার মূল্যবান মতামত শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ আপু।
আসলে এরকম অনেক মানুষ রয়েছে যারা অন্যের খুঁত ধরতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু অন্য মানুষ যখন তার খুঁত ধরে, তখন তার কাছে ভালো লাগে না। আর এর কারণেই সেই মানুষটা নিজের ভুলটা বুঝতে পারে। ঠিক তেমনি তিতিরের মা ও নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিল। যখন ফজলে রাব্বি তিতিরের মায়ের খুঁত ধরেছিল গেস্ট হিসেবে তাদের বাড়িতে কিছুদিন থেকে। সে ভালোভাবেই এটা বুঝিয়ে দিয়েছিল, মানুষের খুঁত অবশ্যই থাকবে, কোন মানুষ সব দিক দিয়ে পারফেক্ট হয় না। আর তাই অন্যের খুঁত না ধরাই ভালো। শেষ পর্বটা পড়ে সত্যি খুব ভালো লেগেছে। বিশেষ করে তিতিরের সাথে তার বসের ছেলের মিল হয়েছে দেখে ভালো লাগলো।
আমাদের আশেপাশেই তিতিরের মায়ের মত অসংখ্য মানুষ আছেন অন্যের খুঁত ধরতে বেশ পছন্দ করেন। অথচ নিজের ভুল বুঝতে পারেন না। তাই এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করেই আমি আমার গল্পটি লিখেছি। আপনার মন্তব্য পড়ে আমার বেশ ভালো লাগলো ভাইয়া। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান মতামত শেয়ার করার জন্য।
খুব সুন্দর একটি পোস্ট লিখেছেন। আসলে এরকম মানুষ আমাদের অনেকের সাথে বসবাস করে এবং তারা সবসময় অন্যের কোন ধরনের খারাপ গুণ রয়েছে কিনা তা নিয়ে পড়ে থাকেন। কোন ধরনের এর কাজ করতে পারে কিনা সে সকল বিষয়গুলো নিয়ে তারা অনেক বেশি পরিমাণে আলোচনা ও সমালোচনা করতে থাকে৷ এখানে ফজলে রাব্বি সাহেব অতিথি হিসেবে তিতির বাড়িতে এসেছিল৷ তিনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিতির মায়ের যে সকল ভুল বিষয়গুলো ছিল তিনি সেগুলো লক্ষ্য করতেন। পরবর্তীতে সেটি তিনি বন্ধ করে দিলেন৷ তার সাথে ভালোভাবে কথাবার্তা বলতে বলতে একটি ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠলো উনাদের মধ্যে৷ পরবর্তীতে তিতির বস তার ছেলেকে নিয়ে এসে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে শুনে খুব ভালো লাগলো এবং তাদের বিয়ে হলো৷ পরবর্তী সময়ে তারা খুব সুন্দর ভাবেই তাদের জীবন যাপন করছে শুনে খুব ভালো লাগছে৷ অসংখ্য ধন্যবাদ এরকম সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
আমার পুরো গল্পটি পড়ে আপনি বেশ গুছিয়ে আপনার মূল্যবান মতামত শেয়ার করেছেন। এ কারণে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া। আমার পোস্ট আপনার ভালো লেগেছে জেনে আমিও বেশ অনুপ্রেরণা পেলাম। আপনাকে আবারো ধন্যবাদ জানাই।