পাবলিক বাসে মেয়েদের ভোগান্তি....

in আমার বাংলা ব্লগ7 months ago

হ্যাল্লো বন্ধুরা

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগবাসী, সবাইকে আমার নমষ্কার /আদাব। আশা করছি আপনারা সকলে ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন। আমিও মহান সৃষ্টিকর্তার আশির্বাদে ভালো আছি।


আসলে আজকে আপনাদের সাথে বেশ মন খারাপ নিয়েই পোস্ট লিখতে বসেছি। মনটা খুবই খারাপ, তাই ভাবলাম আপনাদের সাথে এই বিষয়ে একটু শেয়ার করি। আসলে গত তিনটা দিন থেকে শরীরটা একটু খারাপ যাচ্ছে। খারাপ যাচ্ছে বলতে মাথাব্যথা নিয়ে আছে তিন দিন টানা। আমার বেশ ছোটবেলা থেকেই সাইনাস আর মাইগ্রেইন দুইটারই সমস্যা আছে। এই নিয়েই চলছি। যেহেতু মাথা ব্যাথা, তাই আজ সকালে ঘুম থেকে উঠতে খুব খারাপ লাগছিলো, একটু দেরি করেই উঠেছি এবং অফিসের জন্য রওনা দিতেও দেরি হয়ে গেছে। বাস স্ট্যান্ডে যাওয়ার পর দেখি সেখানে কোন খালি বাস নেই। আমি যে স্টপেজ থেকে উঠি, সেটাই সেই রূটের বাসের স্টার্টিং পয়েন্ট। তাই একটু আগে আগে বের হলে খালি বাস সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে থাকে সবসময়। আজ যেহেতু দেরি হয়েছে, তাই খালি বাস ছিলো না। লাস্ট বাস কিছুটা এগিয়ে জ্যামে ছিলো। দৌড় দিয়ে সেটাই ধরার চেষ্টা করি। কারণ পরের বাস আসতে আসতে আরো অনেক দেরি হবে। কিন্তু যেই আমি বাসে উঠতে যাবো, ওমনি বাসের হেল্পার দরজা আটকে বলে আপনি যাইতে পারবেন না, সীট ফাঁকা নাই। আমি বললাম,আমি তো দেখছি সীট ফাঁকা নাই, দাঁড়ানোর তো যথেষ্ট জায়গা আছে, আমি দাড়িয়েই যাবো। অথচ উনি আমাকে তারপরেও উঠতে দিবে না। রীতিমতো হাত দিয়ে দরজা আটকে রেখেছেন!



সেই মুহূর্তে এত অপমানিত লাগছিলো যে কি বলবো। আমার পরেই তিন জন ছেলে লাইনে আছে, ওদের কে উঠতে বলতিসে। আমি সাধারণত চেষ্টা করি সবার সাথে ভালো ব্যবহার করতে, অযথা রাগারাগি না করতে। কিন্তু আজকে আসলে ওই মূহুর্তে নিজের টেম্পার ধরে রাখতে পারি নি। এবার আমি দরজা আটকে রীতিমতো শাউট করেই বলেছি," আপনি হাত সরান, আমি তো বললাম আমি দাঁড়িয়েই যাবো। আমি দাঁড়িয়ে যেতে পারলে আপনি কেন যেতে দিবেন না আমায়? রাস্তার অবস্থা দেখেছেন আপনি? ছেলেদের তো ঠিকই তুলছেন, তাহলে মেয়েদেরকে কেন না? মেয়েদের অফিস নাই? " আমার শাউট শুনে ভেতরের কিছু যাত্রী এবার আমাকে সাপোর্ট করেন। ফলে সেই হেলপার অনেকটা বাধ্য হয়েই দরজা ছেড়ে আমায় ভেতরে ঢুকতে দেয়।



আসলে খারাপ লাগাটার কারণ এই চিত্র প্রায় প্রতিদিনই আমি দেখি। যে মেয়েরা পাবলিক বাস প্রতিদিন ব্যবহার করে যাতায়াত করেন, তাদের সবার ই কমন অভিজ্ঞতা এটা। কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে, কেন??মেয়েরা তো এখন সমান তালেই ঘর সামলে বাহিরেও কাজ করছে। প্রায় প্রতিটি সেক্টরেই মেয়েরা কাজ করে এখন। বেশির ভাগ অফিসেই গাড়ির সুব্যবস্থা নেই, ফলে পাবলিক বাস ই ভরসা। সেখানে প্রতিদিন অফিস টাইমে এভাবেই দাঁড়িয়ে যেতে হয় হাজার হাজার মেয়েদের। কারণ সরকারের পক্ষ থেকে শুধু মেয়েদের জন্য পাবলিক বাস খুবই অপ্রতুল, সেটাকে নাই বললেই চলে। সেখানে প্রতিটি বাসে ১৩ টি আসন মেয়েদের জন্য সংরক্ষিত থাকার সরকারি নির্দেশনা আছে। সেই নিয়মও মানে না কেউ -না সাধারণ যাত্রী- না বাস কতৃপক্ষ (ড্রাইভার/হেল্পার)। সাধারণ সীট ফাঁকা থাকলেও অনেক পুরুষ ই মহিলা সীট দখল করে বসে পড়ে। যে ছবিটা উপরে দেখছেন, সেটাও কোন এক দিনে আমিই তুলেছি। সেদিনও দাঁড়িয়ে থাকা আপুটি খুব শাউট করেছিলেন, কিন্তু কোন পুরুষ ই সংরক্ষিত মহিলা সীট ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ায় নি। আপুটিকে বসতে দেন নি। সামনের মহিলারাও আপুকে সমর্থন করেছিলাম। তবে নির্বিকার ছিলো বাকি সকল পুরুষ যাত্রী এবং বাস ড্রাইভার। নিত্যদিনই অনেক মহিলা ভয়েস রেইজ করে এই নিয়ে, তারপরেও কেউ উঠে, কেউ উঠে না, ওভাবেই ঠায় বসে থাকে।তাহলে আমরা মেয়েরা আসলে কীভাবে কি করবো একটু বলে যাবেন? ঘরে বাইরে প্রতিদিন এত এত সংগ্রাম করে কীভাবে টিকা যায়? কতদিন টিকা যায়? মেয়েদের প্রতিটা পদক্ষেপেই কী এতটা কঠিন হওয়ার কোন প্রয়োজনীয়তা আছে? শুধু প্রশ্ন আর প্রশ্ন.... উত্তর দিবে কে??

যাই হোক, লাভ নেই জেনেও অনেকক্ষণ বকবক করলাম।

এতক্ষণ সময় নিয়ে আমার পোষ্টটি পড়ার জন্য আপনাকে
🌼 ধন্যবাদ 🌼

VOTE @bangla.witness as witness witness_proxy_vote.png OR
@rme as your proxy
witness_vote.png

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20211205_182705.jpg

আমি- তিথী রানী বকসী, স্টিমিট আইডি @tithyrani। জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী। পেশায় একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। বিবাহিতা এবং বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় বসবাস করছি।২০২৩ সালের জুন মাসের ১৯ তারিখে স্টিমিটে জয়েন করেছি।
ভ্রমণ করা, বাগান করা, গান শোনা, বই পড়া, কবিতাবৃত্তি করা আমার শখ। পাশাপাশি প্রতিদিন চেষ্টা করি নতুন নতুন কিছু না কিছু শিখতে, ভাবতে। যেখানেই কোন কিছু শেখার সুযোগ পাই, আমি সে সুযোগ লুফে নিতে চাই৷ সর্বদা চেষ্টা থাকে নিজেকে ধাপে ধাপে উন্নত করার।



Posted using SteemPro Mobile

Sort:  
 7 months ago 

আপনি ঠিক বলেছেন আপু, পাবলিক বাসে মেয়েদের ভোগান্তি কোন শেষ নেই। আসলে এমন ঘটনা সত্যি বেশ দুঃখ জনক । যা প্রায় সময় পাবলিক বাসে মেয়েদের সাথে ঘটে থাকে । অফিস-আদালতের কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত মেয়েদের যুদ্ধ অবতীর্ণ হতে হয়। অনেক সময় বেশ ভোগান্তি শিকার হতে হয়। ধন্যবাদ আপনাকে পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।

 7 months ago 

সেটাই ভাই।

Posted using SteemPro Mobile

 7 months ago 

দারুন একটা বিষয় নিয়ে আজকে আপনি আমাদের মাঝে পোস্ট শেয়ার করেছেন আপু। আমি ঢাকা শহরে দেখেছি অনেক সময় যার কারণে আমি নিজেই দেখেছি যে পাবলিক বাসে মেয়েদেরকে অনেক ভাবে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। বিশেষ করে কিছু বখাটে মানুষেরা থাকে তারা বেশি এই সমস্যা সৃষ্টি করে।

 7 months ago 

হ্যা ভাই। পাবলিক বাসে মেয়েদের ভোগান্তির শেষ নেই আসলে। বখাটে রা তো আছেই, সাথে সাধারণ যাত্রীদের ও নৈতিকতার অভাব রয়েছে ভাই। আমাদের চিন্তাভাবনা ঠিক নেই অনেক ক্ষেত্রেই।

Posted using SteemPro Mobile

 7 months ago 

আপনার এই পোস্টটি আমি গতকাল দেখেছিলাম। কিন্তু অসুস্থতার কারনে মন্তব্য করতে পারিনি। আর বলিয়েনা মাঝে মাঝে তো উপর ওয়ালার সাথে বেশ রাগ হয়, কেন আমি ধনী হলাম না। তাহলে হয়তো একটি প্রাইভেট কিনতে পারতাম। পাবলিক বাস গুলোতে মেয়েরা বসলেও সমস্যা, আবার দাঁড়ালেও সমস্যা। আবার কথা বললেও সমস্যা। কি যে হবে! বেশ টেনশনে আছি আপু এই নিত্যদিনের ঝামেলা নিয়ে।

 7 months ago 

আসলেই খুব খারাপ লাগে আপু। কিন্তু সমাধান কি এসবের বলেন তো?

Posted using SteemPro Mobile

 7 months ago 

এই সমস্যার কোন সমাধান নেই। চাইলে বাসে উঠেন আর না উঠেন। বেশি কথা বললে আবার প্রাইভেট কার কিনতে পাঠিয়ে দিবে কিন্তু।

Coin Marketplace

STEEM 0.27
TRX 0.12
JST 0.031
BTC 67738.65
ETH 3810.43
USDT 1.00
SBD 3.74