একটি ভূতের গল্পঃ "সন্ধ্যা রাতে ভূতের গন্ধ " (পর্ব - ১)

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

বন্ধুরা
আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, আপনারা সবাই ভালো আছেন। আজ একটি ভূতের গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। আমি কোনদিন গল্প লেখার চেষ্টা করিনি। তবে বেশ কিছুদিন ধরে ভাবছি একটি ভূতের গল্প লিখবো। কিন্তু কি ভাবে শুরু করবো বুঝতে পারছি না। অনেক ভাবতে ভাবতে হটাৎ একটি গল্প মনে পড়লো। আমি কলেজে পড়ার সময় একটি ভৌতিক গল্প পড়েছিলাম। সেই গল্পের অনুকরণে নিজের মতো করেই লিখেছি। আশা করি, আপনাদের ভালো লাগবে।চলুন শুরু করা।

IMG_20220904_092651.jpg

প্রথমেই বলে রাখি, আমি একটা কুকুর। আমার জীবন হল সারাদিন ঘেউ ঘেউ করা। মানে যতই কথা বলি না কেন শুধু আমার মালিকের কাছে ঘেউ ঘেউ। আমার কথা আমার মালিক বুঝতে চায়না, শুনতেও চায়না। অথচ আমি মালিকের সব কথা শুনি। বসতে বললে বসি ,হাঁটতে বললে হাটি,লাফাতে বললে লাফাই। এমনকি ভোরবেলা মালিকের দোতলার বারান্দায় যখন বসে খবর কাগজ পড়ে। তখন আমি ছুটে গিয়ে মালিকের সামনে বসে খবর কাগজ পড়া শুনি লেজ নাড়িয়ে নাড়িয়ে।

মালিক আমাকে আদর করে যত্ন করে রোজ ভালো ভালো খেতে দেয়। কারণ বাড়িতে মালিক আর আমি থাকি। মালিকের কেউ নেই। শুনেছি প্রায় পাঁচ বছর আগে মালিকের স্ত্রী মারা গেছে। তখন আমি মালিকের বাড়ি আসিনি। আমার মালিক নারী জাতিকে খুবই শ্রদ্ধা করে। তবে শ্রদ্ধার পরিমাণ টা একটু বেশি। মালিকের সঙ্গে রাস্তায় বেরোলে ই এই শ্রদ্ধার প্রবলেম কিছুটা আমাকেও ফেস করতে হয়। কেন ফেস করতে হয় সেটা বলি?

একদিন ভোরবেলা গঙ্গার ধারে কার না ভালো লাগে! আবার সন্ধ্যা বেলাও সেই একই রুটিন। সেই বাড়ানোর সময় কোন সুন্দরী মেয়ে দেখতে পেলেই হল! তখনই মালিক আমাকে নিয়ে তার দিকে এগিয়ে যাবে এবং আমাকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করতে করতে সেই মেয়েটিকে বলবে," দেখেছেন আপনাকে দেখে পাপ্পি কেমন লেজ নাড়ছে। আসলে আমার নাম হলো পাপ্পি।আরো বলবে, দেখুন পাপ্পির লোম গুলো কী সুন্দর - সফ্ট ও ফ্লাফি। ওর সেন্স ও খুব।

এবার শুরু হয়ে গেল মালিকের "কুকুর" রচনা। কী যে বোরিং লাগছে বলতে পড়ছি না।তখন আমি চেঁচিয়ে বললাম এসব না করে বিয়ে করে নিতে পারেন তো। কিন্তু ওই যে মালিক কি আমার কথা বুঝতে পারবে।
আ:, পাপ্পি এত চেঁচানোর কি হলো। বলেই আমাকে রেগে গিয়ে কোল থেকে নামিয়ে দিল। তারপর মেয়েটিকে বললো, " আপনাকে ওর খুবই পছন্দ হয়েছে। আর আপনাকে ঘেউ ঘেউ করে "হ্যালো" বলছে। ওর অনেক বুদ্ধি।" এটা শুনে আমি আবার বললাম মেয়ে দেখলেই কথা বলতে ইচ্ছা করে। মানুষের মতো মানুষ হয়ে বিয়ে ভালো থাকো আর আমাকে ও ভালো থাকতে দেও।

মেয়েটা কোন কথা না বলে অন্য দিকে চলে গেলো। তখন আমার মালিকের বুক ঠেলে একটা বড় নিশ্বাস বেরিয়ে আসে।"দেখলি পাপ্পি, চলে গেল"। তো এইভাবে চলতেই থাকে আমার আর মালিকের দিন।

একদিন সন্ধ্যাবেলা আমরা দুজনে গঙ্গার ধারে হেঁটে বেড়াচ্ছি। আমার মালিকের হাতে একটা রঙ্গিন ম্যাগাজিন- একটু আগেই একটা বুক স্টল থেকে কিনেছে। আর অন্য হাতে আমার গলায় বাধার শেকল টা।আমরা গঙ্গার ধারে হাঁটতে হাঁটতে রেল লাইনের কাছে এসে পৌছালাম। এই রেল লাইনের দিকটা যেমন নোংরা তেমনি অন্ধকার।আর শীতকাল বলে পথে কোন লোক নেই। হটাৎ করে কেমন একটা পঁচা গন্ধ পাই। আমি তখনই ঘেউ ঘেউ করতে শুরু করি। মালিক রেগে গিয়ে বললো তোর যন্ত্রণায় শান্তিতে থাকতেও পারিনা, সারাক্ষণ শুধু ঘেউ ঘেউ করিস। একটু শান্ত হয়ে হয়ে থাক। কিন্তু আমি মালিককে বুঝাতেই পারছি না।

হটাৎ দেখি একটা মেয়ে আমাদের দিকেই আসছে। ওই মেয়েটা যত এগিয়ে আসছে তত ওই পঁচা গন্ধটা বিকট হয়ে উঠছে।আমি কিছু বোঝার আগেই আমার মালিক আমাকে চাপা স্বরে বলে, "পাপ্পি কাছে কাছে থাকিস"। যার মানে আবার সেই " কুকুর" রচনা। মেয়েটি কাছে আসতেই আরো জোরে জোরে ডাকতে লাগলাম। আরে, এ কে? এ তো মানুষ নয়।মেয়েটির পরনে ছিলো ধব ধবে সাদা রঙের পোশাক। আমি বুঝতে পেরেছিলাম। তাই চিৎকার করে বললাম, মালিক চলে এসো। এটা মানুষ নয় একটা পেত্নী। তোমার মত একজন শিকার খুঁজছে। যার রক্ত দিয়ে। তেস্টা মেটাবে। চলে এসো, মালিক চলে এসো। কিন্তু কে শোনে কার কথা! মালিক গদো গদো হয়ে মেয়েটিকে বলল, তোমার নাম কি? চলো কিছু সময় আমরা সামনের দিকে হাঁটি। আর দেখেছেন "পাপ্পি "আপনাকে হ্যালো বলছে। ও আপনাকে খুব পছন্দ করে ফেলেছে-
হু! নিজে পছন্দ করে আমার ঘাড়ে চাপাচ্ছে।
"না, না!" প্রায় আঁতকে উঠে সরে গেল মেয়েটি: " ওকে চেন দিয়ে বেঁধে রাখুন। আমি কুকুর খুব ভয় পাই।
" এইতো চেন লাগিয়ে দিচ্ছি -" চাকরের মত মেয়েটির কথা শুনলো মালিক। আমাকে চেন দিয়ে বেঁধে রেখে দিলো। আমি মেয়েটির চোখের দিকে তাকালাম। ওর চোখের তারায় নীল আলো ধক ধক করে জ্বলছে। ও বুঝতে পেরেছে, আমি ওকে চিনে ফেলেছি।

আজ এই পর্যন্তই আগামী দিন নতুন পর্ব নিয়ে আবার আসবো। সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন।

Sort:  
 2 years ago 

আসলে বোবা জাতীয় প্রাণীরা অনেক কিছু বুঝতে পারে। যা আমরা পারি না।পাপ্পির মালিক পাপ্পির কথা না শুনে সম্ভবত বিপদে পরতে যাচ্ছে।দেখা যাক পাপ্পির মালিকের কি অবস্থা হয়।তাই পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রহিলাম বৌদি।

 2 years ago 

শুনেছি কুকুর এবং গাধা নাকি মানুষের না দেখা অনেক কিছুই দেখতে পারে। আর ঘ্রাণ শক্তি যে কতটা প্রখর তা তো সবার ই জানা
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। কি ঘটনা ঘটলো জানার খুবই ইচ্ছে।

 2 years ago 

বাহ্,প্রথম গল্প লিখেছেন একদমই বুঝা যাচ্ছে না,খুব সুন্দর লিখেছেন।যাই হোক এমন এক সময় গল্প থামালেন বেশ রহস্য,আসলেই কি পশুপাখিরা ভূত পেত্নী চিনতে পারে।কুকুর মানুষের কথা বুঝে আমি দেখেছি,যা বলে তাই শুনে।বেশ বিশ্বস্ত। আচ্ছা লোকটি পেত্নীর সাথে আবার কোন সম্পর্ক করবে না তো😲পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়। ধন্যবাদ বৌদি

 2 years ago 

কোন জায়গায় শেষ করলেন বৌদি। মাত্র ভয় পাওয়া শুরু করেছি আর শেষ হয়ে গেল। পশুরা নাকি জীন,ভূত দেখলে বুঝতে পারে। মালিক তো মেয়েটির কথা মত পাপ্পিকে বেঁধে দিলো। এখন মালিকের কি হবে?
প্রথম গল্প লিখেছেন তা কিন্তু মনেই হচ্ছে না। বেশ ভালো লাগলো।

 2 years ago 

কুকুরটির মালিক যদি কুকুরটির কথা বুঝতে পারতো তাহলে হয়তো বিপদে পড়তো না। শেষের লাইন গুলো পড়ে গায়ের লোম একেবারে দাঁড়িয়ে গেছে বৌদি। জানিনা পরবর্তী পর্বে আরো কি জানতে পারবো। লোকটির ভাগ্যে যে কি আছে কে জানে। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম বৌদি।

 2 years ago 

মালিক যদি মেয়েটির কথা শুনে পাপ্পিকে চেন লাগিয়ে দূরে যায় , তাহলে তো বিপদ বেড়ে যেতে পারে বৌদি । বেশ রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি । পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম বৌদি ।

 2 years ago 

বৌদি আপনার প্রথম লেখা ভূতের গল্পটি একেবারে জমে গেছে। এই লেখাটি পড়ে বোঝার মত কোন উপায় নেই এটি আপনার প্রথম লেখা। তবে ভূতের গল্পটি কিন্তু বেশ জমে উঠেছিল। কুকুরের মালিকের কপালে কি আছে কে জানে। পরবর্তী পর্বের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রইলাম বৌদি।

 2 years ago 

দাদার পর এবার আপনি বাহ বেশ দারুণ বৌদি। ভৌতিক গল্পটা দারুণ লিখেছেন বৌদি। শেষের দিকে এসে বেশ কৌতূহল সৃষ্টি হয়ে গেল। আমাদের চারপাশে থাকা কুকুর বিড়াল কোনো অশরীরী দেখলে বুঝতে পারে। ভালো ছিল গল্পটা বৌদি। অপেক্ষায় থাকলাম পরের পর্বের জন্য।।

 2 years ago 

বৌদি রাত করে ভূতের গল্পটি পড়ে মনের মধ্যে বেশ ভয় চেপে বসেছে। বৌদি গল্পটি বেশ রহস্যের দিকে চলে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে মালিক মেয়েটির কথা যতই শুনবে ততই বিপদের সম্মুখীন হবে। যাহোক বৌদি, পরবর্তী পর্বটি পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।

 2 years ago 

শুরুর কথাগুলো কিন্তু একদমই সত্যি, গল্পের ভাষায় হলেও সেটা সত্য, কুকুর বলে তার কথা বুঝতেও চায় না আবার শুনতেও চায় না। সে যাইহোক, গল্পের মোড়টা কিন্তু দারুণভাবে ঘুড়িয়ে দিয়েছেন, অনাকাংখিতভাবে হয়তো ভদ্রলোক সেই পেত্নীর সাথে এখন হাঁটা ধরবে। বাকীটুকু পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.14
JST 0.028
BTC 59401.87
ETH 2615.39
USDT 1.00
SBD 2.40