"ভূত চতুর্দশী কী ?"

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

বন্ধুরা
আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, আপনারা সবাই ভালো আছেন। দীপাবলী এসে গেছে। আর দীপাবলির আগের দিন ভূত চতুর্দশী। আজ ভূত চতুর্দশী। দেবী পক্ষ থেকে শুরু হয় উৎসব পার্বণের মৌসুম। পাঁচ দিনের পুজো পেয়ে শিবের কাছে ফিরে যান উমা। ধন সম্পদের দেবী লক্ষ্মী পাঁচালী শুনে মর্ত্য ছাড়েন। এরপর কুবেরের পুজো সম্পন্ন করে বাঙালি যখন দীপান্বিতা আমাবস্যার শক্তির আরাধনায় উদ্যত ঠিক তখনই দরজায় কড়া নাড়ে ভূত চতুর্দশী। শুধু তাই নয় সমগ্র ভারতবর্ষের জুড়ে নরক চতুর্দশী, যম চতুর্দশী, রূপচতুর্দশী নামেও পরিচিত এই দিনটি বাঙালির কাছে ভূত চতুর্দশী নামে পরিচিত।
বাঙালি হিন্দুদের কাছে প্রতিবছর আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষ অনুষ্ঠিত দীপাবলি উৎসবটি আলোর জোয়ার নিয়ে আসে। মনের সব অন্ধকার দূর করে দেবী কালী পূজায় মেতে উঠে বাঙালিরা। কালীপুজো ঠিক আগের দিন সকল বাঙালি পালন করে থাকেন ভূত চতুর্দশী। পশ্চিমবঙ্গে তো বটেই বাংলাদেশ ও হিন্দু বাঙ্গালীদের মধ্যে ভূত চতুর্দশী পালনের রীতি রয়েছে। বাংলার ঘরে ঘরে পালিত হয় ভূত চতুর্দশী।

IMG_20221021_203106.jpg

IMG_20221021_203032.jpg
পুরাকালে দৈত্য রাজ বলি যখন স্বর্গ রাজ্য দখল করে দেবতাদের বিতাড়িত করেছিলেন। ঠিক তখন দেবগন শরণাপন্ন হয়েছিলেন ভগবান শ্রীবিষ্ণুর। তখন অত্যাচারী বলি কে দমন করতে ভগবান বামন অবতার রূপে আবির্ভূত হয়েছিল। বলি রাজের সামনে দাবি করেছিলেন তিনটি চরণ রাখার জায়গা। বলি রাজা তাকে তিনটি চরণ রাখার জায়গা দিতে সম্মত হলেন। তিনি তার এক চরণ দ্বারা সমস্ত আকাশ ব্যপ্ত করেন। দ্বিতীয় চরণ দ্বারা আবৃত করলেন সমগ্র পৃথিবী। এরপর তার শরীর থেকে তৃতীয় একটি পা বের করে বলিরাজকে জিজ্ঞাসা করলেন আর এই চরণ কোথায় রাখী? তখন বলিরাজ তার মাথা পেতে দিয়েছিলেন এই তৃতীয় চরণ রাখার জন্য। আর সেই চরণ দিয়েই বলিরাজকে পাতালে প্রেরণ করেছিলেন বামন অবতার। নিজের এমন দুর্গতি হবে জেনেও বলি রাজা তার মাথা পেতে দিয়েছিলেন বলে শ্রীবিষ্ণু, তাকে অমরত্বের বর দিয়েছিলেন। আর সেই সাথে বছরে একটি দিন তিনি তাকে ভূত, প্রেত, পিশাচ ও অশরীরী আত্মাদের সাথে নিয়ে পৃথিবীতে উঠে আসার অনুমতি দিয়েছিলেন। আর সেই দিনটি হচ্ছে ভূত চতুর্দশী। তবে ভৌতিক ব্যাপারটা এখানে শেষ নয়। পুরান মতে এই দিনে সর্ব নরকের দ্বার সাময়িক খুলে দেওয়া হয়।
পরলোকগত আত্মাদের নিজ গৃহে ফেরার জন্য পিতৃকুল ও মাতৃকুলের ১৪ জন অশরীরী পূর্বপুরুষ নেমে আসেন গৃহস্থের বাড়িতে। ি যেহেতু মৃত্যুর পর মানুষের দেহ পঞ্চ ভূত অর্থাৎ প্রকৃতিতে বিলীন হয়ে যায়, তাই প্রকৃতির থেকে ১৪ টি শাক সংগ্রহ করে খেয়ে ১৪ পুরুষের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জানানো হয়।তাছাড়া ১৪ শাক ধোয়ার পর বাড়ির প্রতিটি কোনায় ছিটিয়ে দেওয়া হয় সেই জল।এই ১৪ শাক খাওয়ার পিছনে কিছু বৈজ্ঞানিক কারণও রয়েছে। ভূত চতুর্দশীর এই সময়টা সাধারণত ঋতু পরিবর্তনের সময়। তাই নানা ধরনের রোগের উপদ্রব ও বহু মানুষের জীবন হানি ঘটে থাকে। সে কারণে আশ্বিন ও কার্তিক মাসকে প্রাচীনকালে যমদ্রষ্টা কাল ও বলা হয়। এই রোগ শোক মুক্তি থেকে এবং শীতের আগে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এই চৌদ্দ শাক খাওয়ার কথা বলা হয়েছে। এই ১৪ শাক খাওয়ার পাশাপাশি এদিন সন্ধ্যায় জ্বালানো হয় ১৪ টি প্রদীপ। মর্তের বুকে নেমে আসা ভূত,প্রেত, পিশাচ ও অশরীরী আত্মাদের পথ দেখানোর উদ্দেশ্যেই এই প প্রদীপ দান করা হয়।১৪ পূর্বপুরুষের প্রেতাত্মার ছাড়াও এদিন। মর্ত্য এ পূজো নিতে আসেন মাতা কালিকা। তবে এদিন তিনি আসেন চামুণ্ডা রূপে। সে এক ভয়ঙ্কর রূপ। তিনি সাথে নিয়ে আসেন ১৪ টি প্রেতাত্মা । যদিও মাথা চামুণ্ডা ভক্ত বাড়ি থেকে অশুভ শক্তিকে বিতাড়িত করতে মর্ত্য এ আসেন , তবু তার চৌদ্দটি অশরীরী প্রেতাত্মাকে পথ দেখানোর জন্য ১৪ টি প্রদীপ দেওয়া হয়। আর ধারনা হয় এই ভূত চতুর্দশীতে যে ১৪ শাক খেয়ে প্রদীপ দান তার আর অকাল মৃত্যু হয় না।

Sort:  
 2 years ago 

ভূত চতুর্দশী সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম বৌদি। এর আগে এই দিনটি সম্পর্কে জানা ছিল না। তবে দীপাবলিতে চারপাশে উৎসব শুরু হয়। চারপাশের আলোকসজ্জা যেন নতুন রকমের আমেজ তৈরি করে। কিন্তু দীপাবলির আগে যে ভূত চতুর্দশী হয় এটা আজকে প্রথম শুনতে পেলাম। অনেক সুন্দর ভাবে ভূত চতুর্দশী সম্পর্কে আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন এজন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি বৌদি।

 2 years ago 

দীপাবলীর অনুষ্ঠান আমার কাছে বেশ ভালো লাগে। চারিদিকে আলোকসজ্জা হয়,দেখতে অসম্ভব সুন্দর লাগে।ভূত চতুর্দশী সম্পর্কে তেমন কিছু জানা ছিল না, আপনার পোস্টের মাধ্যমে অনেক কিছু জানতে পারলাম ।তবে এই ভূত চতুর্দশী যে কালিপুজোর আগের দিন হয় এটিও আজকে জানতে পারলাম আপনার পোস্টের মাধ্যমে ।সত্যিই অনেক নতুন নতুন তথ্য জানতে পারলাম। ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

ভূতচতুর্দশী আমাদের বাড়িতেও পালন করা হয়। প্রতিবছর এইদিনে আমাদের বাড়িতেও চৌদ্দ শাক খাওয়া হয় এবং সন্ধ্যা বেলায় চৌদ্দ বাতি জ্বালানো হয়। ছোটবেলায় এই দিনে সন্ধ্যার পর আমরা আর বাইরে বের হতাম না কি যে ভয় লাগতো তা বলার মতো না আমাদের মা তুলসীপাতা ঘি এর মধ্যে চুবিয়ে কপালে দিয়ে দিতো আর বলতো তাহলে ভূত ধরবে না আমরা তাই বিশ্বাস করে সারারাত কপালে লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম। ভূতচতুর্দশী সম্পর্কে আরও অনেক কিছু জানতে পারলাম বৌদি আপনার মাধ্যমে।বৌদি আপনি ধর্মীয় ও বৈজ্ঞানিক দুই ভাবেই পুরো বিষয় টা ব্যাখ্যা করেছেন। খুবই ভালো লাগলো আপনার পোস্ট টি পড়ে। সুন্দর পোস্ট টি শেয়ার করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ বৌদি।

 2 years ago 

বৌদি আমাদের বাংলাদেশ ও ভূতচতুর্দশী আমাদের বাড়িতেও পালন করা হয়৷ তবে বৌদি এতো কথা আমার জানা ছিল না৷ আমি শুধু জানতাম এই সময়ে পূর্বপুরুষ বা বংশের প্রদীপ তারা এই মর্তলোকে আসে আর তাই তাদের আন্তার শান্তির জন্য ৷ এই প্রদীপ জ্বালানো হয় ৷

তবে বৌদি আমার একটা প্রশ্ন এখানে শুনেছি যারা কিনা রামের বংশ তারা এই প্রদীব জ্বালায় তাদের পূর্বপুরুষ বংশের জন্য ৷ আর কিছু মানুষ যারা কি না প্রদীব জ্বালায় না ৷ তারা নাকি রাবনের বংশধর ৷ আসলে এই বিষয়টা যদি বলতেন ????

 2 years ago 

বড্ড প্রিয় দিন এই ভূত চতুর্দশী। চোদ্দ শাক খাওয়া আর চোদ্দ প্রদীপ দেওয়া মিলিয়ে অনবদ্য। সাথে বাজি পোড়ানো তো আছেই। আপনার পোস্টে এর পৌরাণিক আখ্যান পড়ে ভালো লাগল।

 2 years ago (edited)

বলীর বিষয়ে জানলেও এতটা ডিটেইলস জানতাম না।অনেক ধন্যবাদ বৌদি এই ইনফর্মেশনগুলো শেয়ার করার জন্য। আমাদের বাড়িতে চোদ্দো শাক খাওয়ার নিয়ম নেই। চোদ্দো প্রদীপও দেয় না। তবে আমার মামাবাড়িতে এই নিয়ম আছে।

দিদিভাই দীপাবলী আসলেই বাজি পটকা নিয়ে ফাটাতে ব্যাস্ত থাকি সব সময়। কিন্তু এই দিনটাকে ঘিরে এত এত কাহিনী একদম জানতাম না। বলিরাজের ব্যাপারটা জানতাম। এত সুন্দর করে গুছিয়ে ভূত চতুর্দশী সম্পর্কে লিখেছেন 👌, মন ভরে গেল একদম। গতকাল আমরাও ১৪ শাক খেয়েছি। তবে বাড়ির চার দিকে জল ছিটানোর ব্যাপারটা জানা ছিল না।
খুব চমৎকার একটা ব্লগ উপহার দিয়েছেন দিদিভাই।

 2 years ago 

বৈজ্ঞানিক ব্যাপারটি খুব একটা জানা ছিলোনা তাই নতুন কিছু জানলাম।আর সে সাথে পৌরাণিক কাহিনীগুলো বরাবরই আমার পড়তে ভালো লাগে।বৌদি আপনাকে আবার প্রতিদিন পোস্ট করতে দেখে সত্যিই ভালো লাগছে।মাঝে খুব মিস করছিলাম।

 2 years ago 

অসাধারণ আলোচনা করেছেন দিদি আপনি ভূত চতুর্দশী সম্পর্কে। এতে করে মুসলিম সম্প্রদায়ের ভাইদের জন্য অনেক তথ্য জানা হয়ে যাবে। আপনার জন্য অনেক অনেক দীপাবলীর শুভেচ্ছা রইল।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.16
JST 0.034
BTC 64116.01
ETH 2758.41
USDT 1.00
SBD 2.65