একটি ভূতের গল্পঃ "সন্ধ্যা রাতে ভূতের গন্ধ "(পর্ব -২)

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

বন্ধুরা
আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, আপনারা সবাই ভালো আছেন। আজ সন্ধ্যা রাতে ভূতের গন্ধ (পর্ব -২) আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। চলুন শুরু করা। আশা করি, আগের পর্বের মতো এই পর্বটি আপনাদের ভালো লাগবে।

IMG_20220904_092651.jpg
মালিক মেয়েটিকে বলল,,এই ঠান্ডার মধ্যে এই নির্জন রাস্তায় আপনি একা একা...কোথায় যাচ্ছেন?
মেয়েটি হাসলো। হাসির সঙ্গে সঙ্গে ওর শরীর থেকে ঠান্ডা জমাট বাতাসের হলকা বেরিয়ে এল। মেয়েটি বলল, "আমি তো একাই- দোকা আর কোথায় পাব"!
এটা শুনে মালিক মালিক ও বলল, "জানেন আমিও ভীষণ একা"।আমার ও কেউ নেই শুধু এই পাপ্পি ছাড়া, এই নিঃসঙ্গ জীবনে ওই আমার একমাত্র সঙ্গী।
মালিক, ওর ওর কথাটা ভাল করে বোঝো। ওরা সব সময় একা একা ঘোরে - মরণ ফাঁদ পাতে - তোমাদের মত বোকা হাদা ক্যাবলাকান্তদের জন্য। মালিক, প্লিজ বাড়ি চলো।
কিন্তু মালিক আমার কথা শুনবে কি! হা করে মেয়েটিকে দেখছে।
"বাব্বা! আপনার কুকুরটা কি ঘেউ ঘেউ করছে! আপনি ওকে আড়াল করে রাখুন। কুকুর দেখলে আমার খুব ভয় লাগে। এক কাজ করুন, আপনি কুকুরটিকে কোথাও বেধে রাখুন।"
ব্যাস ,ওমনি আমাদের মত পাঁচিলের মত দাঁড়িয়ে গেল মালিক। এমন ভাবে আমাকে ধরে রেখেছে আমি কিছু করতে ও পারছি না। তারপর মেয়েটির সঙ্গে কথা বলতে বলতে নিমতলা ঘাটের দিকে এগুলো।

মালিকের দুপাশে আমরা দুজন। তবুও চলার সময় আমি মেয়েটাকে দেখছিলাম আর চেষ্টা করছিলাম সুযোগ বুঝে ওর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার। কিন্তু পারছিনা মালিক আমাকে এমন ভাবে আড়াল করে রাখছে আমি কিছুই করতে পারছি না। তখন মেয়েটি বলল, আমি এই নিমতলা ঘাটে কাছে আমার বাড়ি। আমার নাম চন্দ্রকান্তা।
মালিক বলল, চলুন আমি আপনার বাড়ি পৌঁছায় দিয়ে আছি। মেয়েটি বলল, না - তার থেকে চলুন আমরা ওই নিমতলা ঘাটে কিছুক্ষন বসি।
ও: মালিক যে কেন বুঝতে পারছে না মেয়েটি বেঁচে নেই। ওই নিমতলা ঘাটে সে থাকে। ওখানে একবার পারলেই মালিক শেষ। আমি যে কি করে বোঝাই মালিককে।
মালিক বলল, চলুন তাহলে আপনার সাথে একটু বসতে পারা তো সৌভাগ্যের ব্যাপার।জানেন, এই কুকুরটা আমাকে সঙ্গ দেয়। একটা বড় ফাঁকা বাড়িতে আমি একা একা থাকি। বুকটা একেবারে খা খা করে। কথা বলার মতো কেউ নেই।
" তাই?" ঘাড় বেঁকিয়ে সুন্দর করে তাকালো মেয়েটা। কপাল থেকে চুলের গুচ্ছ সরিয়ে মিষ্টি করে হাসলো।
মেয়েটি বলল, মাঝে মাঝে ওই নিমতলা ঘাটে গিয়ে আমি বসি - মন ভালো করার জন্য। অন্ধকারে, নির্জন জায়গায় একা একা থাকতে আমার বেশ ভালো লাগে-।"

মালিক সন্দেহের চোখে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন....কেনো আপনার কেউ নেই ? আর অন্ধকারে থাকতে আপনার ভয় লাগে না?

খিল খিল করে হাসলো মেয়েটি। হেসে প্রায় গড়িয়ে পড়ে আর কী!
না না আমার কোথাও কেউ নেই। সবাই আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। পৃথিবীর সব মানুষই স্বার্থপর ! আর যার কেউ নেই তার আবার কিসের ভয়।আমার জীবনটা তো অন্ধকারে ধাঁকা।

আমি চেঁচিয়ে বললাম, "ও মানুষ না।একটা পেত্নী ওর অন্ধকারে কি ভয় লাগবে।"
মালিক আমাকে ধমক দিল:" চুপ কর! চুপ কর বলছি! "
" জানেন, আজকাল লোক গুলো বড্ড গাঁয়ে পড়া।"আর শুধু সুযোগ খোঁজে।মেয়েটি হাসলো, তারপর গলা নামিয়ে বলল, " অবশ্য আপনি তাদের মতো না।" আপনাকে দেখে সেরকম মনে হয় না।
এ - কথা শুনে মালিক আমার তো আটখানা।
হঠাৎ ই এক ঝলক ঠান্ডা বাতাসের সাপটা ছুটে এলো। মালিক শিহরে উঠল। হাতে হাত ঘসে ম্যাগাজিনটা বুকের কাছে আঁকড়ে ," কী শীত! উ: - জ্যাকেটটা পড়ে এলে হত।"তারপর , এতক্ষন পর, যেন এইমাত্র খেয়াল করছে এমনভাবে বলল ," আপনার শীত করছে না?"
মেয়েটা হাসলো, উড়ে যাওয়া শাড়ির আঁচল টেনে ধরে বলল, শীতে আমার কিছু হয়না। আমি শীত ভালোবাসি।আপনি?
" আমি ও - আমি ও শীত ভালোবাসি।" শীতে কাঁপতে কাঁপতে আমার বোকা - হাদা মালিক টা বলল।
দূরে কয়েকটা দোকানের আলো দেখা যাচ্ছিল। রাস্তার ধারে কতগুলো বড় বড় লরি চুপচাপ দাঁড়িয়ে। বাঁদিকে পুরনো আমলের বিশাল মাপের বড় গোডাউন। তার গা - ঘেঁসে কয়েকটা ঝুপড়ি - সেখানে কেরোসিনের আলো জ্বলছে।
"আপনি কি রাতে বেড়াতে বের হন?" মালিক ওকে জিজ্ঞেস করল," আসলে জায়গাটা তো ভালো নয় একেবারে ফাঁকা - ফাঁকা....।"
" একা - একা থাকার এটাই সমস্যা। তাছাড়া বিকালে বিকালে বেরোলে লোকজন বড্ড বিরক্ত করে।"
"চলুন, তাহলে আপনাকে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে আসি....।"
মালিকের হ্যাংলা - উৎসাহ দেখে আমার ভীষন রাগ হচ্ছিলো।
দেখলাম, মালিকের প্রস্তাবে মেয়েটা একেবারে আঁতকে উঠল, " না, না, বাড়ি পর্যন্ত যাওয়ার দরকার নেই। কে কি বলবে তার ঠিক আছে?"
" আরে আমার বোকা হাদা মালিক, ওদের নিজস্ব কোন বাড়ি নেই। ওরা ওরা যেখানে সেখানে থাকে। তুমি ওর গাঁয়ে থেকে পঁচা গন্ধ পাচ্ছেন না। ওকে দেখে ও বুঝতে পারছেন না? অবশ্য কি করে পাবেন? তোমার তো আর আমাদের মত ঘ্রান শক্তি নেই!"
মেয়েটা আবার বলল, "এই ঠান্ডা আপনার সঙ্গে বসে এক কাপ চা কিংবা কপি খেলে বেশ হতো।" মানে... অথচ... যদি আপনার কোন আপত্তি না থাকে।
না, না আমার কেনো আপত্তি নেই।

Sort:  
 2 years ago 

গল্পের দিক টাই বদলে গেলো। হাঃ হাঃ। ভূতের গল্পের মধ্যে প্রেমের ছোঁয়া। দারুন ছিলো টুইস্ট টা।

 2 years ago 

গল্পটা কিন্তু বেশ জমে গেছে বৌদি, পড়ার আকর্ষণটা বেড়ে চলছে। মনে হলো মাত্র শুরু করলাম, কি দারুণ একটা প্রেমের ফাঁদ আর এইদিকে কুকুর তার দায়িত্ব পালন করেই যাচ্ছে কিন্তু সেদিকে তার কোন খেয়াল নেই। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম, পেত্নীর গন্ধ একটুও পাচ্ছি না আমি, হি হি হি

 2 years ago 

ওরে বাপরে বাপ. এমনিতেই তো ভূতের কথা শুনলে ভয় লাগে। এত আবার দেখি ভূতের সাথে একসাথে বসে চা খাওয়া। কি সাঙ্গাতিক বিষয়।

 2 years ago 

ভূতের কথা শুনলে আমার ও ভয় লাগে। লিখতে ও একটু ভয় ভয় লাগছিলো। তাই তো রাতে লিখছি না। দিনের বেলায় লিখছি।

 2 years ago 

পেত্নী চা কফি খাওয়ার প্রস্তাব দেয়।কুকুরের ঘ্রান শক্তি প্রখর, তাই পঁচা গন্ধ পাচ্ছে,কিন্তু লোকটি পাচ্ছে না।গল্পটা বেশ মজার সাথে ভয় তো আছেই। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়।ধন্যবাদ

 2 years ago 

সে তো সুযোগের অপেক্ষা করছিলো মালিক কে মারার জন্য। তাই চা কফির প্রস্তাব দিয়েছিলো। এবং লোক টি যাতে বুঝতে না পারে যে সে মানুষ না একটা পেত্নী।

 2 years ago 

হুম,আমি বুঝতে পারছি, বৌদি।লোকটিই তার কুকুরের কথা বুঝতে পারচ্ছেনা,তাছাড়া মেয়েটির কোন ভয় নাই, সেটাও ভাবতে পারছে না।আসলে আমি হলেও হয়তো বুঝতে পারতাম না,তবে ভয় পেতাম।যাই হোক আমার কাছে গল্পটা বেশ দারুন লাগছে।মনেই হচ্ছে না আপনি প্রথম লিখচ্ছেন।ধন্যবাদ

 2 years ago 

ভূতের গল্প পড়তে অনেক ভয় লাগে আজকে আপনি খুবই সুন্দর একটি ভূতের গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করলে। ভূতের কথা শুনলেই কেমন জানি ভয় লাগে। তার পরে আবার চা খাওয়ার অফার করেছে মসত্যি গল্পটা অনেক রহস্য এবং অনেক ভয়ানক ছিল এবং কুকুরের শ্রবণশক্তি অনেক বেশি। যার কারণে কুকুর গন্ধ শুকে বুঝেছিল যাইহোক বৌদি আপনার গল্পটি অসাধারণ ছিল।

 2 years ago (edited)

খুবই সুন্দর একটি ভূতের গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করলেন। আসলে ভূতের গল্প পড়কে যেন ভয় লাগতে ছিল। আর ভূত মানুষের চা খাবার অফার করেছে। সত্যিই যদি কাউকে চা খাইতে বলে ভূত তাহলে কি রকম লাগবে।

 2 years ago 

গতকাল প্রথম পর্ব পড়ে কিছুটা ভীতির সঞ্চার হল আজ কিন্তু পুরোপুরি একটা রোমান্টিক ফিল পেলাম বৌদি। মালিকের কী দোষ যাদের জীবনে কোনো নারী নেই এমন কেউ হলে এরকমই করতো। আমি হলেও করতাম। তখন ভুত পেত্মী খেয়াল থাকত না মেয়েতো তাতেই চলবে।

 2 years ago 

হা হা হা

 2 years ago 

বৌদি তাড়াতাড়ি পর্ব দিন,মালিকের সাথে এরপরে এই চা কফি খাওয়ার টানটা কতোটুকু গড়ায় তা পড়তে চাই।দারুণ হচ্ছে।

 2 years ago 

আগামী দিন পরের পর্ব পোস্ট করে দিবো। কষ্ট করে গল্পটি পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপু।

 2 years ago 

পাপ্পি যদিও বুঝতে পারছে সব , তবে কেন যে ওর মালিকটা বুঝতে পারছে না , তাই তো বুঝতে পারছি না । কি যে হয় , তাছাড়াও সহজ সরল লোক গুলো এই ভাবেই বিপদে পড়ে বৌদি । দেখি কি হয় পরের পর্বে ?

দিদিভাই ভূতের গল্প শুনেই তো ভয় পাই,, কিন্তু আজ তো বেশ রোমান্টিক রোমান্টিক ফিল হচ্ছে 😍😍। মালিকের জায়গায় আমি হলেও তো পটে যেতাম😉। মুহূর্ত টাকে বেশ ফুটিয়ে তুলেছেন সত্যি। পরের পর্বের অপেক্ষায় আছি 😊

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.14
JST 0.028
BTC 59404.52
ETH 2610.92
USDT 1.00
SBD 2.41