দীপাবলি নিয়ে লেখা কবিতা " গরীব ছেলেটির দীপাবলি"

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago

Hello
বন্ধুরা
আশা করি, আপনারা সবাই ভালো আছেন। প্রথমে সবাইকে দেওয়ালির শুভেচ্ছা। Happy diwali. হিন্দুদের কাছে দীপাবলি একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। এই দিনে হিন্দুদের প্রতি ঘরে ঘরে নানা ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করে। দীপাবলি এই দিনটি কালী পূজা হিসেবে উদযাপন করা হয়।

IMG_20211104_174556.jpg

IMG_20211104_173951.jpg

"দীপাবলি" নামের অর্থ " প্রদীপের সমষ্টি"। এই দিনে হিন্দুরা ঘরে ঘরে ছোটো ছোটো মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে থাকে। এই প্রদীপ জ্বালানো হয় অমঙ্গলকে দূর করার জন্য। ঘর বাড়ি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে সারা রাত প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখা হয়। বাংলায় দীপাবলি কালীপূজা খুবই জনপ্রিয়। এই উৎসব আলোকসজ্জা হিসেবে পালন করা হয়। অনেক আবার দেওয়ালি বলে থাকেন।দিওয়ালির দিনে প্রদীপের আলোয় ঘর বাড়ি ঝকমক করে ওঠে। নানান রঙের বাজিতে আকাশ টা আলোয় ঝলমল করে ওঠে।যদিও করোনা পরিস্থিতির কারণে বাজি পড়ানো নিষেধ। তারপরও কিছু কিছু জায়গায় বাজি পোরাতে দেখা যায়।দিওয়ালির সারি সারি প্রদীপ জ্বেলে ওঠে।আর মোমবাতির আলোয় চারিদিক আলোকিত হয়ে যায়।

আজ সকালে আমার ঘুম থেকে অনেক টা দেরি হয়ে গিয়েছিলো। সকালে ফ্রেশ হয়ে চা খাচ্ছি হটাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো। দরজা খুলে দেখি একটা ৭ বছরের ছেলে। দেখে মনে হচ্ছে বস্তি থেকে আসছে গায়ে একটা ময়লা জামা। আমাকে বললো মোমবাতির বাকি পোড়া অংশ গুলো আমাকে দিবেন কাল সকালে। আমি বললাম কাল নেবে কেনো কাল তো দেওয়ালি নেই। ওই ছেলেটি বললো আমরা আজ কুড়িয়ে নিয়ে কাল জ্বালাবো। শুনে আমার খুব খারাপ লাগলো। আমি ও অনেক মোমবাতি ও মাটির প্রদীপ কিনেছি ভাবলাম ঐখান থেকে ২ প্যাকেট মোমবাতি দিয়ে দিই। আমার তো এত লাগবে না। তারপর ছেলেটিকে ২ প্যাকেট মোমবাতি দিয়ে বললাম এ গুলো নিয়ে আজ জ্বালাও আর কাল এসে পোরা গুলো নিয়ে যেও। ছেলেটি মোমবাতি পেয়ে খুব খুশি হলো। সেই হাসিটা সত্যি দেখার মতো ছিল। ছেলেটি চলে যাওয়ার পর বসে ভাবছিলাম। আজ সেই ছেলেটিকে নিয়ে কবিতা লিখেছি। ভাবলাম আপনাদের সাথে শেয়ার করি। আশা করি, ভালো লাগবে।

IMG_20211104_173002.jpg

"গরীব ছেলেটির দীপাবলি"

কিছুদিন আগে মা দুর্গা অসুর বধ
করে কৈলাসে গেলেন।
মা লক্ষীর পুজো হলো মনটা এখন
বেশ ফাঁকা ফাঁকা।
হালকা হিমেল বাতাসের ছোঁয়ায় গাছের,
শুকনো পাতা গুলো ঝরে ঝরে পড়ছে।
আকাশে এখন মেঘ ও রোদ্দুরের লুকোচুরি খেলা,
এরই মাঝে শুরু হলো কালী পূজার মেলা।
রাস্তার মোড়ে মোড়ে বসেছে আতশবাজির দোকান।
মোমবাতি ফুলঝুরি রং বাহারি চরকি বুরিমার চকলেট
কালি পটকা আরও অনেক কিছু।
মাথায় উস্কোখুস্কো চুল ছেরা জমা পড়া
বস্তির ছেলেটা দোকানের একপাশে দঁড়িয়ে।
কত কচিকাঁচা ভির করেছে দোকানে।
কারোর বাবা, কারোর মা, কারোর দাদা কিনে দিচ্ছে।
ও কিনতে পারছে না, কারণ ওর পয়সা নেই।
তবে মনে কোনো ক্ষোভ নেই।
বাবা বলেছে সামনের বছর কিনে দেবে।
কালী পূজার দিন সকাল থেকে ছাদে
ফুলঝুরি চরকি পটকা রোদে দিচ্ছে ছেলে মেয়েরা
দিনে বার বার হাতে নিয়ে দেখছে।
পটকা গুলো কতটা গরম হয়েছে।
টুনি বাল্প দিয়ে ঘরের বারান্দা ও গাছে সাজানো হচ্ছে।
সন্ধ্যায় চারিদিকে আলোয় আলোয় সেজে উঠেছে।
ছেলে মেয়েরা নতুন পোশাক পড়েছে।
পটকা বাজির শব্দ চরকির আলো।
ছেলেটির মন বিষাদে ভরে গেল।
বস্তির ছেলেটি দৌড়ে যায় কোথাও না ফেটে যাওয়া পটকা,না গোলে যাওয়া মোমবাতির ও অবশিষ্ট অংশ
দ্রুত সংগ্রহ করতে হবে।
আজ রাতে হবে না তার দীপাবলীর রাত।
আধপোড়া মোমবাতি আর গোলে যাওয়া মোম হবেআলাদা।
কয়েকটি রংবাতি পটকা পলিথিন পেপারে
রোদে দিয়ে রাখলো।
কাল হবে তাদের দীপাবলি।
এমনি হাজার হাজার গরীব শিশু
দীপাবলীর পরের দিন উদযাপন
করে ওদের দীপাবলি।।

Sort:  

বৌদি দীপাবলির অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল আপনার প্রতি। দীপা বলি নিয়ে অসম্ভব সুন্দর একটা কবিতা আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন । আপনি দীপাবলির আজ এই উৎসবে নিজের আনন্দটা একটা গরীব অসহায় ছেলের মাঝে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। তার মুখে হাসি ফুটিয়েন এটা একটা উদারতা পরিচয় দিয়েছেন দিদি আপনি।বড় মনের মানুষ আপনি। আপনার কবিটা অসম্ভব সুন্দর হয়েছে। আপনার জন্য শুভকামনা ও অবিরাম ভালবাসা রইল। 🥰❤️❤️❤️

 3 years ago 

আপনার দেয়া মোমবাতি যে আনন্দ দিয়েছে ছেলেটি সারা জীবন মনে রাখবে। আলোর উৎসব ভাগ করে নেবার গল্প শুনে মন ভালো হয়ে গেলো। কবিতাটা দুর্দান্ত হয়েছে।

 3 years ago 

দিদি কোনটাকে বেশি সুন্দর বলব আপনার চিন্তাভাবনা টা নাকি কবিতাটা সেটা বুঝতে পারছি না। খুব সুন্দর লাগলো আপনার এই অভিজ্ঞতার কথা জেনে। এই প্রসঙ্গে লেখা আপনার কবিতাটাও অতুলনীয়। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার জীবনের এই মুহূর্ত এবং চিন্তাভাবনা টাকে লেখা এবং কবিতার মাধ্যমে আমাদের সাথে শেয়ার করে নেয়ার জন্য। শুভ দীপাবলি আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে।

 3 years ago 

ধন্যবাদ, আপনার মতামত শেয়ার করার জন্য।

 3 years ago 

আপু,,,,, আমি জানিনা আপনি আমার মনে কতোটা জাইগা করে নিয়েছেন, তবে সেটা অনেক অনেক বিশাল পরিমান একটা জাইগা, আমি আপনার কথা গুলো অনেক অনেক খুশি হয়েছি যে বলে বুঝাতে পারবনা। আপনি অসহায় বাচ্চাটির মুখে হাসি ফুটিয়ে দিলেন, বাচ্চাটির হাসিটা অল্প হলে ও আপনি প্রমাণ করে দিলেন যে আপনি একজন উদার মনের মানুষ, এই মন মানসিকতার মানুষ গুলোর কখনো খারাপ হতেই পারে না।

আপনি বরাবরের মতো কবিতা ভাল লিখেন আপু, আজকে কবিতাটি সেই শিশু বাচ্চা টিকে নিয়ে লিখা অসাধারণ কবিতা । খুবি ভাল লাগলো, অনেক অনেক ভালবাসা রইলো আপু আপনার জন্য। 🥰

 3 years ago 

ধন্যবাদ আপু। আপনার মতামত শেয়ার করার জন্য।

 3 years ago 

ছেলেটি মোমবাতি পেয়ে খুব খুশি হলো। সেই হাসিটা সত্যি দেখার মতো ছিল।

এই লাইনটি পড়েই মেরুদণ্ড দিয়ে কেমন একটা শীতল স্রোত বেয়ে গেলো। কি কষ্টে তারা জীবন চালায় এটা ভাবতেও পারিনা!আসলে ভালো মানুষ হতে ভালো কথা জানতে হয়।এই কাজ গুলোই ভালো মানুষকে অন্যদের থেকে উঁচু স্থানে পৌঁছে দেয়।
কবিতাটি পড়েই কেমন যেনো মনটা খারাপ হয়ে গেলো। আসলেই কত ভালো আছে আমরা আর ওরা!!

 3 years ago 

ঠিক বলেছেন আপু, একবার চিন্তা করে দেখুন আমরা তাদের থেকে কত ভালো আছি।কাল আমার ও ওই ছেলেটির কথা শুনে খুব খারপ লেগেছিলো। আমাদের আসে পাশে এ রকম কত অসহায় মানুষ রয়েছে। আমার মাঝে মাঝে মনে হয় আমার যা কিছু আছে তাই ওদের কে দিয়ে দিই।আর আমার সবাইকে দিতে ভালো লাগে।

 3 years ago 

হ্যা বৌদি। সাধ্যের বাইরে দিতে পারিনা বলে নিজের ই খারাপ লাগে। আসলে সবাই যদি এভাবে আপনার মতো ভাবতো তাহলে কতই না সুন্দর হতো আমাদের এই পৃথিবীটি, পৃথিবীর পরিবেশটি। ভালোবাসায় পুরো দুনিয়া ভরে উঠতে, দিপাবলীর এক দিনে যেভাবে আলোয় আলোয় ভরে উঠে সেভাবে পৃথিবীটাও সারাজীবন এভাবে আলোয় আলোকিত হয়ে যেতো। তবে আফসোস আমরা সবাই তো আর মানুষ হইনি।

আমি এটা পড়তে স্পর্শ করা হয়েছে, রিস্টিম যাতে সবাই এটা দেখতে পারে.

 3 years ago 

সমাজের অনেক কঠিন বাস্তব চিত্র কবিতার মধ্যে সহজ সারল্য ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। গরিব ছেলেটিকে মোমবাতি দিয়েছেন ।অনেক ভালো লাগলো বৌদি। সবমিলিয়ে সমাজের এই সমস্ত মানুষদের কথা ভাবলে সত্যি মন খারাপ হয়ে যায়। অসংখ্য ধন্যবাদ বৌদি বাস্তবধর্মী একটা কবিতা আমাদের মাঝে ভাগ করে নেবার জন্য।

 3 years ago 

বৌদি সর্বপ্রথম আপনাকে জানাচ্ছি দীপাবলির শুভেচ্ছা। আপনার কবিতা এবং আপনার লেখনি দুটো অসাধারণ হয়েছে বৌদি। ধনী-গরীব সকলের মাঝে উৎসব পালন করার একটি আনন্দ রয়েছে। হয়তো যারা অর্থের অভাবে সঠিকভাবে উৎসব পালন করতে পারে না তারাও চায় ভালোভাবে উৎসব পালন করতে। সকলের সাথে উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করার মধ্যে রয়েছে অন্যরকম ভালোলাগা। আপনার জন্য শুভকামনা রইল বৌদি।

 3 years ago 

দিদি, দীপাবলি নিয়ে অসাধারণ সুন্দর একটি কবিতা আপনি আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। কবিতাটি অত্যন্ত সুন্দর হয়েছে। পড়ে অনেক ভালো লাগলো দিদি। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।

 3 years ago 

আজ যে বিষয় নিয়ে লিখেছেন দিদি, এটা আমাদের সমাজের সব চেয়ে নির্মম বাস্তবতা। ওই মুখে এক চিলতে হাসি দেখলে বুকের ভেতরে একটা শীতল অনুভুতি হয় যেটা শুধু অনুভব করা যায় কিন্তু বোঝানো যায় না ওতো সহজে। মন ছুয়ে গেল দিদি আপনার লেখা পড়ে। আমার প্রণাম আর ভালোবাসা রইলো আপনার এই উদার মনের জন্য।

 3 years ago 

ঠিক বলেছেন দিদি, ছেলেটির হাসি দেখার মত ছিল। আপনার জন্য ভালোবাসা ও আশীর্বাদ দুই আছে।এ রকম ঘটনা বহু আছে আমার জীবনে। আমার গরীব শিশু ও বৃদ্ধদের দেখলে ও তাদের কষ্টের কথা কথা শুনলে খুব খারাপ লাগে। তাই আমি যা পারি তাই দিয়ে দিই।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.12
JST 0.028
BTC 65665.03
ETH 3585.68
USDT 1.00
SBD 2.53