বাস্তবিক গল্প: শাহানার জীবনে কষ্টের শেষ নেই।(শেষ পর্ব)
হ্যালো বন্ধুরা,
আসসালামু আলাইকুম। সবাই কেমন আছেন? আশা করি সবাই অনেক ভালো আছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি।
গত পর্বে বলেছিলাম শাহানার স্বামী পাঁচ মাসের ছুটিতে এসে আবারও বিদেশে চলে যায়। আমরা হয়তো জানি একজন মানুষের দুটি রুপ থাকে। তেমনি শাহানার শ্বশুর বাড়ির লোকজন প্রথমে ভালো ব্যবহার করলেও আস্তে আস্তে তাদের রুপ দেখাতে শুরু করে। যেই শাহানা বাড়িতে তেমন বেশি কাজ করতো না কিন্তু সেই শাহানা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে। তবে শ্বশুর বাড়িতে কাজ করবে এটা কোনো সমস্যা নয় কিন্তু যখন বাড়ির এত সব লোক থাকতে ওকে একা সব কাজ করতে হয় এটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা।
তাদের একটি পানের ক্ষেত ছিল আর সেখানে সব মিলিয়ে প্রায় ১০ থেকে ১২জন লোক কাজ করে আর তাদের বাড়িতে রয়েছে আরও ১০ জন সদস্য। সব মিলিয়ে প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন মানুষের রান্না তাকে একা হাতে সামলাতে হতো। বাড়িতে কোনো কাজের লোক ছিল না এমন কি তার ননদ কেউ তাকে কোনো কাজে সাহায্য করেনি। প্রতিদিন বড় বড় পাতিল ভরে তিনবেলা রান্না করতে হতো। সবাইকে খাওয়ানো শেষ করে যখন সে খেতে যাবে তখন গিয়ে দেখে তারজন্য শুধু অল্প কিছু ভাত রয়েছে।
এত কষ্টের পরেও সে খুশি ছিল এই কথা ভেবে তার স্বামী ঠিক রয়েছে। এভাবে শাহানাকে হারাতে না পেরে অবশেষে তার ননদেরা অন্য পথ অবলম্বন করে। শাহানার সাথে তাদের পাশের বাড়ির একটি ছেলের নাম জড়িয়ে বদলাম করতে থাকে। বিদেশে থেকে এই কথা জানতে পেরে শাহানার স্বামী অনেক রাগ হয়। এরপর সব সত্য ঘটনা জানতে পেরে শাহানাকে শান্ত্বা দেয়। এভাবে প্রতি নিয়ত বিভিন্ন ভাবে শাহানার উপর অত্যাচার চলে। তারপর হঠাৎ জানতে পারে শাহানার স্বামী খুব অসুস্থ। তাই সে একেবারের জন্য চলে আসে।
এরপর বেশ কিছু দিন ভালো চলে আর শাহানার শ্বশুর বাড়ির সম্পূর্ণ দায়িত্ব তার ননদের হাতে। বাড়ির সবাই তার কথা মতো চলাফেরা করে। এর মধ্যে কিন্তু শাহানাও পড়ে আর সেজন্য সেই বাড়িতে তার কোনো স্বাধীনতা ছিল না। কিন্তু অবশেষে তার স্বামীও তার আসল রূপ দেখাতে শুরু করে। বোনের কথায় নড়চড় হলেই শাহানাকে মারধর শুরু করতো। তখন যেন শাহানার আর কষ্টের শেষ রইলো না। এরপর তাদের একটি মেয়ে হয় আর মেয়ে হয়েছে বলে আরো অত্যাচার শুরু হয়। এরপর সবাই বুঝতে পারে প্রথম বউ কেন চলে গিয়েছিল কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ হয়ে গিয়েছে।
এত কষ্ট সহ্য করতে না পেরে একবার শাহানা রাগ করে বাপের বাড়ি চলে গিয়েছিল কিন্তু পরে সবাই হাত পা ধরে আবার নিয়ে আসে। এরপর কয়েক মাস ভালো ছিল কিন্তু আবার অত্যাচার শুরু হয়। তারপর তাদের একটি ছেলে হয় কিন্তু কোনো কিছুতেই কিছু ঠিক হয়না। এরপর আবারও শাহানা চলে যায় আর এবার শুধু তার স্বামী আনতে যায়। তখন শর্ত রাখা হয় তারা আলাদা সংসার করার। শ্বাশুড়ি ননদের সাথে আর থাকতে পারবে না। এই শর্তে রাজি থাকলে আসবে। তার স্বামী তখন সব শর্ত মেনে নেয়।
শাহানার স্বামী তার বাড়ি থেকে অনেক দূরে গিয়ে ঘর বানায়। এরপর তাদের সংসারে আর কোনো অশান্তি ছিল না কিন্তু সেই সুখ শাহানার কপালে আর সহ্য হলো না। তার স্বামীর ডায়বেটিস সহ আরও অনেক অসুখ রয়েছে আর এখন শাহানাও কঠিন রোগে আক্রান্ত। তার জরায়ুতে ইনফেকশন হয়েছে আর এখন ডাক্তার বলছে তা কিডনিতেও ধরে গিয়েছে। অপারেশন করতে হবে কিন্তু তারপরও নাকি এই সমস্যা থেকে যাবে। এখন কি করবে কেউ বুঝতে পারছে। এত দিন পর শাহানা ভেবেছিল একটু শান্তিতে নিজের মতো করে সংসার করবে কিন্তু মনে হচ্ছে তার এই আশা পূরণ হবার নয়।
আপনারা সবাই শাহানার জন্য দোয়া করবেন সে যেন সুস্থ হয়ে তার স্বামী সন্তান কে নিয়ে শান্তিতে সংসার করতে পারে এখানেই শাহানার জীবনের গল্প শেষ করলাম। আজ এই পর্যন্তই আবার দেখা হবে অন্য কোনো পোস্টের মাধ্যমে। ধন্যবাদ সবাইকে।
আমি তানজিমা। আমি একজন বাংলাদেশী। আমার মাতৃভাষা বাংলা বলে আমি নিজেকে নিয়ে অনেক গর্ববোধ করি। আমি ফিন্যান্স বিভাগ থেকে বিবিএ শেষ করেছি।
আমি ছবি আঁকতে, পড়তে, লিখতে ফটোগ্রাফি, রেসিপি এবং ডাই বানাতে খুব পছন্দ করি। আবার আমি ভ্রমণ বা ঘুরাঘুরি করতে খুব পছন্দ করি। এছাড়াও আমি বিভিন্ন ধরনের রেসিপি তৈরি করতে খুব পছন্দ করি। আমি চেষ্টা করি সব সময় যেন নতুন কোনো কিছু করা যায়।
জি আপু প্রতিটা মানুষের দুটি রূপ থাকে প্রথমে মানুষটি ভালো রূপ দেখায় পরে মানুষটি তার ভিতরে থাকা খারাপ রূপটি আস্তে আস্তে প্রকাশ করে। এটা খুবই খারাপ লাগার বিষয় যে সকলে মিলে যদি কাজগুলো একসাথে করা হয় তাহলে কোন সমস্যায় সমস্যা না কিন্তু মেয়েরা বিয়ে করে শ্বশুরবাড়িতে কাজ করবে এটা স্বাভাবিক। খুবই খারাপ লাগলো যে ২০ থেকে ২৫ জন মানুষের রান্না তাকে একা সামলাতে হতো। আসলে মানুষ বড় স্বার্থপর। একটা মেয়ে তখনই ভালো থাকে যে তার স্বামী যদি ঠিক থাক। যত কষ্টই হোক না কেন তার কোন কষ্টই লাগে না। যদি স্বামী অন্যরকম হয় তাহলে আর কোন কিছুই তার শান্তি লাগবে না। আসলে শাহানার স্বামী খুবই খারাপ কাজ করলো বোনের কথা শুনে তাকে মারধর করলো। এটা খুবই অন্যায়। একটা মেয়ে সবকিছু সহ্য করতে পারে কিন্তু স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে পারে না। এ কারণেই হয়তো বা প্রথম বউ চলে গিয়েছিল শাহানার স্বামীর।সত্যি কথা বলতে সৃষ্টিকর্তা মানুষকে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে থাকেন। খুবই খারাপ লাগতেছে যে তারা আলাদাভাবে বাড়ি বানিয়ে সুখ-শান্তি থাকলেও কিন্তু তারা অনেক রোগে আক্রান্ত হয়ে গেছে। এটা খুবই খারাপ লাগলো শুনে। আমি দোয়া করি তারা যেন খুব সুন্দর ভাবে সুস্থ হতে পারে এবং নিজের মতো করে সংসারটা করতে পারে।
ভাইয়া একসময় সেই স্বামীর কাছ থেকে যখন মেয়েরা অত্যাচারিত হয় তখন আর বলার কিছুই থাকেনা। তাদের জন্য দোয়া করবেন। আপনার মন্তব্য পড়ে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।
আপনার গল্পটি পড়ে খুবই খারাপ লাগলো। আসলে এমন কিছু কিছু মানুষ আছে যারা সামান্য কিছু সুখের আশায় ঘর বাঁধলেও। কিন্তু অবশেষে সেই সুখ কপালে সয়না। যা শাহানার কপালেও এমন হলো। অবশেষে সেই সংসার আলাদা করল সুখ পাওয়ার জন্য। কিন্তু সেখানেও তাকে দুঃখ ছেড়ে দিলনা। কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে গেল স্বামী-স্ত্রী দুজন। আপনারর শেয়ার করা বাস্তব গল্পটি পড়ে খুবই খারাপ লাগলো। দুইজনের জন্য দোয়া রইল সৃষ্টিকর্তার কাছে।
হ্যাঁ আপু আলাদা হয়েও শাহানা সুখের মুখ দেখতে পেলো না। তাদের দুজনের জন্য দোয়া করবেন যাতে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে সুখে সংসার করতে পারে। আপনার সুন্দর মতামতের জন্য ধন্যবাদ।
আসলেই শাহানার জীবনে সুখ নেই। কিছু কিছু মানুষ আছে তাদের কপালে মনে হয় আল্লাহ তায়ালা সুখ লিখেন নাই। শাহানা সেই দলেরই একজন। এতো অত্যাচার সহ্য করার পর স্বামী সন্তান নিয়ে আলাদা হলো ঠিকই, কিন্তু মারাত্মক অসুখ বিসুখ জীবনটাকে একেবারে শেষ করে দিলো শাহানার। আশা করি শাহানা দ্রুত সুস্থ হয়ে জীবনটাকে উপভোগ করতে পারবে। যাইহোক এতো চমৎকার একটি গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।
সবসময় সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। তাদের দু'জনের জন্য দোয়া করবেন।