সিজারে বাবু হওয়া মায়েদের কষ্ট শেয়ার || ১০% প্রিয় লাজুক-খ্যাঁককে

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

আসসালামু-আলাইকুম


কেমন আছেন বন্ধুরা। আশা করি সবাই অনেক ভাল আছেন। আমিও আলহামদুল্লিলাহ ভালো আছি। অনেক দিন ধরে ভাবছি এমন একটি পোস্ট আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। কিন্তু সময়ের অভাবে তা আর হয়ে ওঠেনি। আজ একটু সময় পেলাম তাই শেয়ার করতে চলে এসেছি। আমার আজকের কথাগুলো আপনারা খারাপ ভাবে নিবেন না। এই সমাজে এমন কিছু মানুষ আছে যারা শুধু খারাপ দিকটাই খুঁজে বের করে কিন্তু তারা কখনো ভালো দিক চোখে দেখেনা। আমি আজ এমন মায়েদের এমন এক কষ্টের কথা শেয়ার করবো যা মনে হলো এখনো আমার কান্না পায়। আমি আজ আপনাদের সাথে সিজারে বাবু হওয়া মায়েদের কষ্ট শেয়ার করবো। তাহলে চলুন শুরু করি।


mother-429158_640.webp


Source


যখনই সিজারের কথা মনে হয় তখন যেন শরীরের সবগুলো পশম দাঁড়িয়ে যায়। আমার মনে হয় প্রতিটি মায়ের জন্য খুবই কষ্টদায়ক একটি ঘটনা। আমার নিজেরও সিজারে বেবি হয়েছে তারজন্য এই কষ্ট আমি অনুভব করতে পারি। এখনো সমাজের এমন কিছু মানুষ আছে যারা মনে করে কষ্ট সহ্য করতে পারবো না বলে নাকি আমরা সিজার করে চলে আসি। আমরা যারা সিজার করেছি তারা নাকি খুব সহজ পথ অবলম্বন করে বাচ্চা নিয়ে এসেছি। কিন্তু ঐ সব মানুষ অর্থাৎ যার সিজার নিয়ে এসব কথা বলে তাদের উদ্দেশ্যে একটাই কথা বলবো আমরা যদি দশ মাস দশ দিন সব কষ্ট সহ্য করে গর্ভধারণ করতে পারি তাহলে বাচ্চা হওয়ার কষ্টও সহ্য করতে পারবো।



আমার মনে হয় কোনো মেয়েই ইচ্ছে করে সিজার করতে যায় না। কারণ যে আগে থেকে জানে সিজার মানে কি সে কেন ইচ্ছে করে নিজের জীবন কোরবানি করতে যাবে। কথায় আছে না দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে কিছু করার থাকে না।আমাদের অবস্থা ঠিক সেইরকম হয়। হয়তো ইচ্ছাকৃত সিজার করা মায়ের সংখ্যা হাতে গুনা একটা পেতে পারেন। যেমন আমার নিজের কথাই বলি আমি কখনো চাইনি আমার সিজার হোক কিন্তু কপাল খারাপ শেষ মুহূর্তে অবস্থা খারাপ দেখে সিজারের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। তাহলে আপনারাই চিন্তা করেন যাদের সিজার হয়েছে তাদের সবার বেলাই তো এমন ঘটনা ঘটে।


infant-4025284_640.webp


Source


তাহলে কেন এই সমাজ সিজার হওয়া মায়েদের নিয়ে আলোচনা -সমালোচনা করে।আমার নিজের দিক চিন্তা করলে বুঝতে পারি সিজার হলো কতটা কষ্ট সারাজীবন সহ্য করে যেতে হয়। প্রথম যখন মেরুদণ্ডের মধ্যে ইনজেকশন দেওয়া হয় তার যে কষ্ট সেটাই তো মায়েরা সারাজীবন সহ্য করে শেষ করতে পারেনা। এরপর আবার সাত স্তর চামড়া কেটে যখন বাচ্চা বের করা হয় সেই কষ্ট না হয় নাই বললাম। হাতের মধ্যে ক্যানোলা তিন দিন যাবৎ চলতেই থাকে। এরমধ্যে আবার খিচুনি,নিথর শরীরে থরথর কাঁপুনি সেসব কথাও নায় বাদ দিলাম।



এই যে কষ্ট এগুলো শুধু একজন মা ই তার সন্তানের জন্য সহ্য করতে পারে। আমাকে এক ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছিল। কারণ আমার আগে থেকেই রক্ত স্বল্পতা ছিল।প্রথমে ডাক্তাররা ভয় দেখিয়ে দিয়েছিল বলেছিল প্রচুর রক্ত গিয়েছে রোগীর অবস্থা খারাপ। আপনারা তাড়াতাড়ি তিন থেকে চার ব্যাগ রক্ত জোগাড় করে রাখেন। এই কথা শুনে আমার মা কান্না শুরু করে কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমার এক ব্যাগেই হয়ে যায়। আমাকে যখন বেডে আনা হয় তখন প্রচুর কাঁপুনি হয়েছিল। ঐ সময় আমার হালকা একটু মনে আছে আমি শুধু জোরে জোরে নার্সদের বলছিলাম আমার অনেক ঠান্ডা লাগছে বেশি করে কম্বল দেন। এরপর আর তেমন কিছু মনে নেই।


baby-821625_640.jpg


Source


এই কষ্টগুলো কখনো ভুলার নয়। সিজার হলেই ডাক্তারদের একটাই কথা পাঁচ কেজি ওজনের কোনো জিনিস উঠাতে পারবেন না। কিন্তু এই নিয়ম কয়জন মেয়ে মেনে চলতে পারে। আমরা যারা শহরে থাকি তাদের না হয় কষ্ট একটু হলেও কম হয় কিন্তু যারা গ্রামে থাকে তাদের তো কষ্টের শেষ নেই। তবে হ্যাঁ সিজারের কষ্ট কাজ করলেও সহ্য করতে হবে আর না করলেও সহ্য করতে হবে। এখন আমি সম্পূর্ণ সুস্থ কিন্তু তার মধ্যে আবার অসুস্থ ধরা যায়। প্রতিটা মায়ের কাছেই তার বাচ্চাকে কোলে নিয়ে বাহিরে হাঁটাহাটি করতে ভালো লাগে।কিন্তু আপনারা তা পারেন কিনা জানিনা।আমি বাহিরে বের হলে আমার বাচ্চাকে একদমই কোলে নিয়ে হাঁটতে পারিনা। বাসা থেকে বের হতে না হতেই কোমড়ের ব্যাথা শুরু হয়ে যায়।



এমকি একদিন যদি একটু বেশি পরিশ্রম করি তাহলে রাতের বেলা কোমড়ের ব্যাথায় দাঁড়াতে পারিনা। আজ নিজেকে দ্বিখণ্ড মানুষ মনে হয়। আবার কাটা জায়গায় মাঝে মাঝে প্রচুর চুলকায় কিন্তু হাত পা বাঁধা চুলকানো যাবে না। কারণ যতই শুকিয়ে যাক ওখানে চুলকালে নখের ময়লা থেকে ইনফেকশন হবে তারজন্য সেটাও নিরবে সহ্য করে নিতে হয়। তারপর শরীরের দুর্ভলতা তো আছেই। আপনাদের সাথে যখন এই কথাগুলো শেয়ার করছি তখন নিজের অজান্তেই কখন জানি চোখের কোনায় পানি জমে গিয়েছে। এখনো সেই দিনের কথা মনে হলে অনেক কান্না পায়।


আমার এই মনের কথাগুলো এখানেই শেষ করলাম। আমার কথাতে যদি কেউ কষ্ট পেয়ে থাকেন তাহলে ক্ষমা চেয়ে নিলাম। আশা করি আপনাদের সবার কাছে অনেক ভালো লাগবে। যদি আমার পোস্টে কোনো ভুলত্রুটি হয়ে থাকে তাহলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন এবং নিরাপদে থাকবেন এই দোয়া কামনা করি।


IMG_20220215_193615.png



আমি তানজিমা। আমি একজন বাংলাদেশী। আমার মাতৃভাষা বাংলা বলে আমি নিজেকে নিয়ে অনেক গর্ববোধ করি। আমি ফিন্যান্স বিভাগ থেকে বিবিএ শেষ করেছি।

আমি ছবি আঁকতে, পড়তে, লিখতে ফটোগ্রাফি, রেসিপি এবং ডাই বানাতে খুব পছন্দ করি। আবার আমি ভ্রমণ বা ঘুরাঘুরি করতে খুব পছন্দ করি। এছাড়াও আমি বিভিন্ন ধরনের রেসিপি তৈরি করতে খুব পছন্দ করি। আমি চেষ্টা করি সব সময় যেন নতুন কোনো কিছু করা যায়।



C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNpz9QdwayY5Yi9CLY9MtT8LrEqRdgJNMVyDhfNXBpAU4Pibi529MgNWfUK56xyKKaicF23jVAW.png


C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNzq2MSXKSji21JRspt4nqpkXPR5ea7deLzvmJtuzVBwdLJUpBqtgAZ5gHtHPbayD2jR3CWqjkJ (1).png


PB8ro82ZpZP35bVGjGoE93K3E4U5KX8KtMBJ2rhmkyLqtRRZvVw9YH8hEBg7DJQKSJLWf7VJRhnjGRYSDmuGDMSHAPBRbiRis5HV4ATHTF7QvLHc.png

2r8F9rTBenJQfQgENfxADE6EVYabczqmSF5KeWefV5WL9WP87ckB6VoL3UD42BtkosJzLXYjuCC4ws3sxuihZ3nhDfd815qMJiiETpWAiutfN7bjurhaBbivMFVTYEDiv.png

|| আমার বাংলা ব্লগ-শুরু করো বাংলা দিয়ে ||

PB8ro82ZpZP35bVGjGoE93K3E4U5KX8KtMBJ2rhmkyLqtRRZvVw9YH8hEBg7DJQKSJLWf7VJRhnjGRYSDmuGDMSHAPBRbiRis5HV4ATHTF7QvLHc.png

2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9ms6NJyqDC7SoahBpoJnjzoXmRuaVTHyxffJTSjt3HCAJgZmTWQYSXVqA6yXF9TSJcoosKhzkudZxYGzUmXmso6pY5QuuDF.gif

>>>>>|| এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য ||<<<<<

PB8ro82ZpZP35bVGjGoE93K3E4U5KX8KtMBJ2rhmkyLqtRRZvVw9YH8hEBg7DJQKSJLWf7VJRhnjGRYSDmuGDMSHAPBRbiRis5HV4ATHTF7QvLHc.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP


RGgukq5E6HBM2jscGd4Sszpv94XxHH2uqxMY9z21vaqHt1rDaeRdtDvsXGmDbuRg1s1soomTEddbTFxfMMYzob4oRFK8fTZQyYP8LbQ4tbMTAd2enV3Wq9Ze3N8TTU2.png

|| Join Heroism Discord Server for more Details ||

Sort:  

পুরো লেখাটা পড়লাম। আমার হয়তো এই অনুভূতিটা পুরোপুরি অনুভব করার সামর্থ্য নেই তবে আমি এটুকু বলতে পারি এই মুহূর্তগুলো আমি নিজেও স্বচক্ষে এবং স্বশরীরে উপস্থিত থেকে দেখেছি আজ থেকে পাঁচ বছর আগে আমার দিদির ছেলে যেদিন হয়েছিল সেদিন। ঠিক প্রথম দিন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত আমার বোনকে যে যে অবস্থায় দেখেছি প্রতিটাবার অনুভব করেছি একটা মা তার সন্তানের জন্য কতখানি ত্যাগ স্বীকার করতে পারেন,, আমার মনে হয় এতখানি ধৈর্য আর এত কষ্ট সহ্য করতে কোন ছেলে কখনোই হয়তো পারবেনা। আসলে পৃথিবীর কোন কিছুর সাথেই মায়ের তুলনা হয় না সেজন্যই। আর সমাজের শিক্ষিত মূর্খরা শুধু মন্তব্য করতেই জানে। নিন্দুকের কথায় কান না দেওয়াই ভালো আপু। সাবধানে থাকবেন এবং যতটা সম্ভব নিজের খেয়াল রেখে বাচ্চার দেখাশোনা করবেন। কারণ আপনি ঠিক থাকলেই আপনার বাচ্চাটাও ঠিক থাকবে।

আর,,

হাতের মধ্যে ক্যানোলাই তো তিন যাবৎ চলতেই থাকে।

এই লাইনটাতে হয়তো কোন শব্দ মিসিং হয়েছে,, ঠিক করে দেবেন এক সময়।
অনেক শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা রইলো। পৃথিবীর সব মা যেন ভালো থাকে ❤️

 2 years ago 

ভাইয়া আমার মোবাইলে টাইপিং এ একটু সমস্যা হয় তার জন্য মিসিং হয়ে গিয়েছে। ধন্যবাদ ভুল ধরিয়ে দেওয়ার জন্য। আমার সম্পূর্ণ পোস্ট এত সময় নিয়ে পড়ে এত সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.14
JST 0.028
BTC 59484.75
ETH 2614.53
USDT 1.00
SBD 2.41